পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : রেলের ভাড়া বেড়েছে, সেবার মান বাড়েনি। কয়েকদিন ট্রেনের সিডিউল ঠিক থাকলেও হঠাৎ করেই বিপর্যয় দেখা দেয়। সময়মতো চলাচলকারী ট্রেনের টিকিট পেতে পোহাতে হয় সীমাহীন ঝক্কি-ঝামেলা। তার ওপর ট্রেনের বগিতে বিনা টিকিটের যাত্রী, হকারদের উৎপাত এবং হিজড়াদের চাঁদাবাজি তো আছেই। রেল সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও উদাসীনতায় দূরপাল্লার বেশ কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন বিলম্ব করতে করতে নিজস্ব স্বকীয়তা হারাতে বসেছে। ঢাকা থেকে লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রে এমন অবস্থা হয়েছে। ওই ট্রেনে চলাচলকারী যাত্রীরা ন্যূনতম সেবাও পাচ্ছে না। সব মিলে ভাড়া বাড়ার পর রেলযাত্রীরা সেবার মান নিয়ে অসন্তুষ্ট। ভাড়ার সাথে সেবার মান বাড়ানো উচিত ছিল বলে মনে করছেন বেশ কয়েকজন সচেতন যাত্রী। রেলওয়ের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, জিনিসপত্রের দামের সাথে সঙ্গতি রেখেই রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এর সাথে সেবার মান জড়িত থাকলেও একসাথে মেলানো ঠিক হবে না। তারা দাবি করেন, দিন দিন রেলের যাত্রী যেমন বাড়ছে তেমনি সেবার মানও বাড়ানো হচ্ছে।
আলাপকালে বেশ কয়েকজন যাত্রী জানান, ভাড়া বাড়ানোর পর রেলের সেবার মান বেড়েছে বলে তাদের জানা নেই। আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে প্রায়ই সিডিউল বিপর্যয় ঘটে। একবার বিপর্যয় ঘটলে তা পুষিয়ে উঠতে এক সপ্তাহ সময় লেগে যায়। আবার কোনো কোনো ট্রেন মাসে দু-চার দিন সময় মেনে চলে। ওই সব ট্রেনে যাত্রীরা সব সময়ই হয়রানির শিকার হন। ঢাকা থেকে লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রমকারী ট্রেনের মধ্যে দ্বিতীয়। আসা-যাওয়া মিলে এই ট্রেন প্রতিদিন ৮৯২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। অথচ সব সময় ট্রেনটি ঢাকা বৈষম্যের শিকার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্রেকিং পাওয়ার এর সমস্যা থাকার কারণে এই ট্রেনের গতি বাড়ানো সম্ভব হয় না। যে কারণে বিলম্ব (লেট) যেন ট্রেনটির নিয়মিত সঙ্গী। মাসখানেক আগে কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের বগী শেয়ার এর মাধ্যমে ট্রেনটির বিলম্ব কমানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়। কিন্তু গত এক মাস যাবত ট্রেনটি বিলম্বে চলাচল করছে। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবারেও লালমনি এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৫ ঘন্টা বিলম্বে অর্থাৎ রাত ৩ টায় ঢাকা থেকে রওনা করে। গতকাল বুধবার এই ট্রেনটি ২ ঘন্টা ২০ মিনিট বিলম্বে লালমনিরহাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করে। সূত্র জানায়, কোনো কোনো ট্রেনে আগে এসি বগী থাকলেও এখন তা দেয়া হচ্ছে না। এতে করে যারা এক সময় এসিতে চলাচল করেন তারা টিকিট কাটতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছেন। ঢাকা থেকে নিয়মিত সিলেট ভ্রমণ করেন এমন একজন যাত্রী জানান, আগে পারাবত এক্সপ্রেসে এসি কোচ থাকতো। কোনো প্রকার ঘোষণা ছাড়াই সেটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন সিলেটের যাত্রীরা এসি কোচ থেকে বঞ্চিত।
বেশ কয়েকজন যাত্রী জানান, নিয়ম মেনে ট্রেন না চললেও যাত্রীদেরকে নিয়ম মেনেই স্টেশনে উপস্থিত হতে হয়। কিন্তু স্টেশনে গিয়ে যাত্রীরা দেখেন যে ট্রেনে তারা ভ্রমণ করবেন সেটি এখনও এসে পৌঁছেনি। এই সময়টা যাত্রীদের রেল স্টেশনে কাটাতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ স্টেশনে যাত্রীদের বিশ্রাম নেয়ার মতো কক্ষ নেই। নেই পরিচ্ছন্ন বাথরুম। প্রথম শ্রেণির বিশ্রামাগার নামে কক্ষটি বেশিরভাগ সময় বন্ধ রাখা হয়। মানসম্পন্ন কোনো খাবারের দোকানও পাওয়া যায় না। প্লাটফরমগুলোতে কুকুর, বিড়াল, ছাগল ঘোরাফেরা করে, সাথে হকার ও ভিক্ষুকতো আছেই।
কমলাপুর রেল স্টেশনের একজন যাত্রী জানান, সিএনএস (কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম) কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে স্টেশনের বিভিন্ন স্থানে লাগানো টিভি স্ক্রিন মনিটরে বেশির ভাগ সময় ট্রেন ছেড়ে যাওয়া ও আসার গন্তব্যের সময় ঠিকমতো ভেসে ওঠে না। যে সব ট্রেন আসছে বা ছেড়ে যাচ্ছে সেসব ট্রেনের ঘোষণা দেয়া হয় মাইকে। কিন্তু কোন ট্রেন কতো বিলম্বে আসছে বা ছাড়বে সেটা বলা হয় না।
যাত্রীদের অভিযোগ, যেসব ট্রেন সময়মতো চলাচল করে সে সব ট্রেনের টিকিট পেতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়। কমলাপুর রেল স্টেশনে তদবির ছাড়া টিকিট মেলে না বললেই চলে। রেলের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দোহাই দিয়ে বিলাসবহুল ও বিরতিহীন ট্রেনগুলোর টিকিট ব্লক করে রাখা হয়। সাধারণ যাত্রীরা টিকিট ছাড়ার দিনের প্রথম ভাগে গেলে হয়তো দু-চারটি টিকিট পান। এরপর আর কেউই পান না। কাউন্টারগুলোতে গেলেই কম্পিউটার মনিটরের দিকে ইঙ্গিত করেন বুকিং ক্লার্করা। যেখানে ভেসে ওঠে ‘সিট খালি নেই’। বহু চেষ্টায় টিকিট জোগাড় হলেও ট্রেনে উঠে একেবারে শান্তি নেই। এটেনডেন্ট নামে প্রতিটি বগীতে একজন করে যাত্রীদের সেবাদানকারী থাকলেও তারা মূলত যাত্রীদের কোনো কাজেই আসেন না। বরং টাকার বিনিময়ে বিনা টিকিটের যাত্রী তুলে ভোগান্তি বাড়িয়ে দেয়। ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী সবগুলো ট্রেনেই এমন অভিযোগ নিত্যদিনের। অন্যদিকে, ট্রেনের মধ্যে হকার ও ভিক্ষুকদের উৎপাত ইদানিং কয়েকগুন বেড়েছে। ঢাকা থেকে ছাড়ার পর টঙ্গী স্টেশন থেকে শুরু হয় এদের ট্রেনে ওঠা। এদের ভিড়ে যাত্রীরা অতিষ্ঠ হলেও এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। যাত্রীদের অভিযোগ, হকারদের নিয়ে অভিযোগ করলে বরং রেল কর্মী ও পুলিশের উল্টো কথা শুনতে হয়।
যাত্রীদের অভিযোগ, বহুদিন ধরেই ট্রেনে হিজড়াদের অত্যাচার ও চাঁদাবাজি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে রাতের ট্রেনগুলোতে হিজড়াদের উৎপাতে অনেকেই এখন নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে করেন। হিজড়াদের নিয়ে ট্রেনে থাকা পুলিশকে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয় না বলে কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করেন। জানা গেছে, রাতে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে হিজড়ারা দলবেঁধে উঠে যাত্রীদের সাথে অসভ্য আচরণ করে। তারা কৌশলে যাত্রীদেরকে বিভিন্ন কায়দায় জিম্মি করে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। লজ্জা ও ভয়ে যাত্রীরা তখন বাধ্য হয়ে তাদের সাথে একটা আপস রফা করে। কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, এরা শুধু চাঁদাবাজি করেই ক্ষান্ত হয় না, যাত্রীদের সাথে অশ্লীল, নোংরা আচরণ করে। মাঝেমধ্যে গায়েও হাত তোলে। নীলফামারী থেকে ঢাকাগামী নীলসাগর এক্সপ্রেসে প্রায়ই হিজড়ারা উঠে যাত্রীদের নাজেহাল করে বলে বেশ কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।