Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ডিএনএতে গণতন্ত্র

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান

প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:১৪ পিএম, ৩০ মার্চ, ২০১৬

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নির্বাচনে প্রত্যেক নাগরিকের ভোট দেয়ার অধিকার নিশ্চিত করার প্রতি জোর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মতোই বাংলাদেশের মানুষের ডিএনএতে গণতন্ত্র প্রবহমান। জনগণের ভোটের অধিকার খর্ব হওয়ায় অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজমান। আর মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকায় উগ্রবাদ/চরমপন্থা মাথাচাড়া দিচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে এই উগ্রবাদ দমন করার চেয়ে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে উগ্রবাদ দমন অধিকতর সহজ। গতকাল বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত আলোচনা সভায় দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল ও ঢাকা সফররত মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি সারাহ সুয়লের বক্তব্যে এ চিত্রই উঠে এসেছে। পাশাপাশি মুক্তভাবে কথা বলা, মুক্তভাবে ধর্মচর্চা, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে বলেও তারা জানান।
ঢাকা সফররত মার্কিন জননিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি সারাহ সুয়ল গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে আয়োজিত ‘সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত সংগ্রাম’ শীর্ষক এক বিশেষ জনবক্তৃতা অনুষ্ঠানে বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে উগ্রবাদ বা চরমপন্থা মাথাচাড়া দেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে এই উগ্রবাদ দমন করার চেয়ে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে তা দমন করা সহজ। এক্ষেত্রে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুুম বার্নিকাট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এহসানুল হকও বক্তৃতা করেন।
মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে কাজ করে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিন দিনের সফরে তিনি ঢাকা এসেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরে তিনি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সংখ্যালঘু ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ওই বৈঠকের পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে সব ধর্মের লোকজনের প্রতি আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত হওয়া দরকার।
বৈঠকে ধর্মীয় নেতারা সারাহ সুয়লকে জানিয়েছেন, দেশে আইন আছে তবে এই আইন সবার প্রতি সমানভাবে প্রয়োগ হয় না। যেটি খুবই জরুরি। তিনি বলেন, যারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরে আক্রমণ করে, তাদের ব্যাপারে কোনো দায়মুক্তি নেই। তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
অন্যদিকে গত ২৯ মার্চ বাংলাদেশ দূতাবাসে আয়োজিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের আলোচনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দানকালে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেছেন, সুষ্ঠু ও প্রতিশ্রুতিশীল নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের ভোট দেয়ার অধিকারকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি মুক্তভাবে কথা বলা, মুক্তভাবে ধর্মচর্চা, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র দু’দেশের মানুষের ডিএনএতেই রয়েছে গণতন্ত্রের বসবাস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ কথা বলা হয়েছে।
ওই অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের স্বাগত জানান রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ছাড়াও হোয়াইট হাউজের প্রতিনিধি, মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা, জেমস মরিয়ার্টি, রাষ্ট্রদূত তেজি ও হাউয়ি শফার, সুশীল সমাজ ও সিনিয়র সাংবাদিক, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং প্রবাসের বিশিষ্টজনেরা অংশগ্রহণ করেন।
নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশি পণ্য বেশি কেনে না। প্রতি বছর ৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থের পণ্য বাংলাদেশ থেকে কেনে যুক্তরাষ্ট্র। এসব পণ্য বাংলাদেশে তৈরি। এর ফলে লাখ লাখ মানুষের জীবনমানের সহায়ক হয়। ঢাকাস্থ ইউএস এইড মিশন প্রতি বছর ২০০ মিলিয়ন ডলার করে ব্যয় করছে বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে, জীবন-মানের উন্নয়নে।
নিশা দেশাই বলেন, আমেরিকার জনসাধারণ সবসময় বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। সেজন্যেই আজ আমি এখানে এসে জানান দিচ্ছি যে, আমেরিকা সবসময় বাংলাদেশের মানুষের পাশে রয়েছে।
তিনি বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাস বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য অনেক সমাজের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এসব জঙ্গি বা সন্ত্রাসী কর্মকা- মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো হরণ করছে। এর বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে আমরা বাংলাদেশের পাশে থাকবো। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামেও আমরা বাংলাদেশের পাশে থাকবো।
নিশা দেশাই বলেন, উগ্রপন্থী এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ একযোগে কাজ করছে। দেশের নাগরিকদের রক্ষা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে আমরা কাজ করছি। আগামী দশকগুলোতে আমাদের জন্য রয়েছে নতুন নতুন ক্রমবর্ধমান জটিল চ্যালেঞ্জ। সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদেরকে ন্যায়নিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে হবে ও সমস্যার সমাধান করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ ৪৫ বছর ধরে একে অন্যের সঙ্গে আছে। আমি দৃঢ় আস্থাশীল যে, হাতে হাত ধরে আমাদের দু’দেশের মানুষ কাজ করার কারণে এমন কোন সমস্যা থাকবে না যার সমাধান করা যাবে না, আমরা সমাধান করতে পারব না।



 

Show all comments
  • Tania ৩১ মার্চ, ২০১৬, ১১:০০ এএম says : 0
    বাংলাদেশে সব ধর্মের লোকজনের প্রতি আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত হওয়া দরকার। kintu musolmanra bade baki sobi basi subida passe
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডিএনএতে গণতন্ত্র

৩১ মার্চ, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ