Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফখরুলের জামিন বাতিল ২ ঘণ্টার কারাবাস অতঃপর মুক্তি : ফুল ছিটিয়ে অভিনন্দন

মির্জা ফখরুল বিএনপির মহাসচিব রিজভী সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব

প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:১২ পিএম, ৩০ মার্চ, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : সকল জল্পনাকল্পনার অবসান শেষে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব পেল বিএনপি। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে ‘ভারপ্রাপ্ত’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব হিসেবে মনোনীত করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। একইসাথে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ও কোষাধ্যক্ষ হিসেবে মিজানুর রহমান সিনহাকে মনোনীত করেছেন তিনি।
গতকাল সকালে বিএনপির এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। নেতাকর্মীদের কাক্সিক্ষত এ ঘোষণার দেড় ঘণ্টা পর দুপুর সাড়ে ১২টায় নাটকীয়ভাবে পল্টন থানার তিনটি মামলায় জামিন নাকচ করে মির্জা ফখরুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এতে করে বিক্ষোভে ফেটে পরেন নেতা-কর্মীরা। কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেয় দলটি। জামিন নাকচের ৩ ঘণ্টা পর আবার জামিন পান নবনিযুক্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল।
সন্ধ্যা সাতটার কিছু আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পর নেতাকর্মীরা শ্লোগানের সঙ্গে সঙ্গে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে নতুন মহাসচিবকে জানান অভিনন্দন। এসময় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল দেশবাসীর দোয়া চান।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন সফল পরিণতির লক্ষ্যে নতুন নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কারাগার থেকে বেরিয়ে সরাসরি তিনি দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় যান। এসময় ফুল দিয়ে চেয়ারপারসনকে অভিনন্দন জানান তিনি।
এদিকে কারাগার থেকে চেয়ারপার্সনের বাসায় যাওয়ার পথে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া মির্জা ফখরুল ইনকিলাবকে বলেন, দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার চলমান আন্দোলন সফল করাই আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ।
গতকাল সকাল পৌনে ১১টায় নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুলকে মহাসচিব হিসেবে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন রুহুল কবির রিজভী। একইসাথে তিনি জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ও কোষাধ্যক্ষ হিসেবে মিজানুর রহমান সিনহাকে মনোনীত করেছেন।
এ ঘোষণার পর নয়া পল্টনে মির্জা ফখরুলকে অভিনন্দন জানানোর প্রস্তুতি শুরু করেন নেতা-কর্মীরা। ওই সময়ে পল্টন থানার নাশকতার তিন মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান মির্জা ফখরুল। শুনানি শেষে দুপুর সাড়ে ১২টায় দুই মামলায় জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম নবী।
মির্জা ফখরুলের আইনজীবীরা এসময় সাংবাদিকদের বলেন, পল্টন থানার নাশকতার ৪/১-২০১৫ নম্বর মামলায় জামিন দিলেও ৫/১-২০১৫ ও ৭/১-২০১৫ নম্বর মামলায় জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মির্জা ফখরুলকে ১৫ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী পল্টন থানার নাশকতার ওই তিন মামলায় মির্জা ফখরুল তিন তিন মাসের জামিনে ছিলেন।
সদ্য মনোনীত দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলমাম আলমগীরকে কারাগারে প্রেরণের খবর দলীয় কার্যালয়ে এসে পৌঁছলে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
এসময় মির্জা ফখরুলকে মুক্তি না দিলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, নেতাকর্মীরা যখন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে ফুলে তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল, সেই সময় অবৈধ সরকার নগ্ন হস্তক্ষেপ করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম বিএনপির মহাসচিব হওয়ায় সরকার ভয় পেয়েছে। তারা জঘণ্য কাজ করেছে।
এদিকে ফখরুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া পুনর্বিবেচনায় জামিনের আবেদন করেন। আদালতে আইনজীবীরা মির্জা ফখরুলের অসুস্থতার কথা তুলে ধরেন। আদালত তাদের আবেদন মঞ্জুর করে জামিন দেন। তবে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পরপরই ফখরুলকে কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। জামিনের কাগজপত্র পৌঁছার পর কারা কর্র্তৃপক্ষ তাকে পৌঁনে ৭টায় মুক্তি দেন।
এসময় জেল গেটে তার সঙ্গে ছিলেন, মির্জা ফখরুল ইসলামের সহধর্মিনী রাহাত আরা বেগম, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব হাসান, যুবদল নেতা এসএম জাহাঙ্গীর ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান।
গুরুত্বপূর্ণ তিন মনোনয়ন
তিন মনোনয়ন সম্পর্কে জানাতে সকাল সাড়ে ১০টায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে সকল সদস্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দায়িত্ব দিয়েছেন, ক্ষমতা দিয়েছেন, তিনিই জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করবেন। সেই জাতীয় কাউন্সিলরদের দেয়া ক্ষমতাবলে চেয়ারপারসন জাতীয় নির্বাহী কমিটির কিছু পদে নেতৃবৃন্দকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এরপর তিন পদে মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও কোষাধ্যক্ষ পদে মিজানুর রহমান সিনহার নাম ঘোষণা করা হয়। রিজভী বলেন, আমি আপাতত এই তিনটি নাম ঘোষণা করলাম। পরে ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য পদে নেতৃবৃন্দের নাম ঘোষণা করব।
গত ১৯ মার্চ ঢাকার ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একাংশে আয়োজিত বিএনপির কাউন্সিলে চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পদে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নির্বাচিত করা হয়। সেখানেই কাউন্সিলরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দায়িত্ব চেয়ারপাসনকে দেন।
মূলত তিন নেতার মনোনয়নের মধ্য দিয়েই কার্যক্রম শুরু করল বিএনপি নতুন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি।
মির্জা ফখরুল বিএনপির সপ্তম মহাসচিব :
দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির সপ্তম মহাসচিব হলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে রাজনীতিতে আসা মির্জা ফখরুল ১৯৮৮ সালে এইচএম এরশাদ সরকারের সময়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের চাকরি  ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন।
২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে চার দলীয় জোট সরকারের আমলে প্রথমে কৃষি মন্ত্রণালয়ে এবং পরে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১১ সালের ১৬ মার্চ বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর এক সাপ্তাহের মাথায় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্বে থাকা ফখরুলকে দেওয়া হয় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব। এরপর দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত হিসেবেই দায়িত্ব পালন করে আসছিলে তিনি। ষষ্ঠ কাউন্সিলের আগে ও পরে কে মহাসচিব হবেন তা নিয়ে দলের ভিতরে বাইরে ছিল নানা আলোচনা,  গুঞ্জন।  অবশেষে সব গুঞ্জনকে পেছনে ফেলে মির্জা ফখরুলের হাতে মহাসচিবের দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন বিএনপি প্রধান।  
রিজভী আহম্মেদের পদন্নোতি :
গত কমিটিতে সাবেক ছাত্র নেতা রুহুল কবির রিজভী দলের যুগ্ম মহাসচিব ও দপ্তরের দায়িত্ব ছিলেন। এবার তিনি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হলেন। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আনতে এই পদটি সৃষ্টি করা হয় ২০০২ সালে ।
২০০৯ সালে ৮ ডিসেম্বর পঞ্চম কাউন্সিলে সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যানের নতুন পদ তৈরি করে তারেক রহমানকে সেই দায়িত্ব দেয়া হয়। আর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব করা হয় ফখরুল ইসলামকে। ওই পদে এখন রিজভী আহম্মেদ।
খালেদা জিয়া ওই সময়ই কোষাধ্যক্ষ পদে মিজানুর রহমান সিনহাকে আনেন, যিনি ২০০১-২০০৬ মেয়াদের চার দলীয় জোট সরকারের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।



 

Show all comments
  • Hasan ৩১ মার্চ, ২০১৬, ১০:৩৫ এএম says : 0
    i think it is a perfect committee
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফখরুলের জামিন বাতিল ২ ঘণ্টার কারাবাস অতঃপর মুক্তি : ফুল ছিটিয়ে অভিনন্দন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ