Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কোটি ছাড়িয়েছে গণস্বাক্ষর

শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেই খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় বিএনপি

| প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মার্চে লিফলেট বিতরণ, মহাসমাবেশের প্রস্তুতি
ফারুক হোসাইন: বিএনপি চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হলেও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করে আনতে চায় দলের নেতাকর্মীরা। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করা এবং আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমেই সফল হতে চায় দলটি। এজন্য বিএনপি চেয়াপারসনের নির্দেশে ৮ ফেব্রæয়ারি থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদ এবং মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছেন নেতাকর্মীরা। এই মুহুর্তে কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যাওয়ার চিন্তাও নেই দলটির। দলের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন সরকার ও আওয়ামী লীগ বিএনপি নেতাকর্মীদের নানাভাবে উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করছে। কঠোর আন্দোলন না করা, আন্দোলনে বিএনপির সামর্থ নিয়ে প্রশ্ন তোলাসহ নানাভাবেই আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ্যে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে। বিএনপির শীর্ষ কয়েকজন নেতা বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলন এবং এসব কর্মসূচিতে জনসমর্থন দেখে আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এজন্য তারা বিএনপিকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা চায় বিএনপি মাঠে নামুক আর আওয়ামী লীগ নিজেদের নীল নকশা বাস্তবায়ন করবে। তবে কোনো ষড়যন্ত্র বা উসকানিতে পা না দিয়ে সরকার যতই কঠোর হোক শেষ পর্যন্ত ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী জনমত তৈরি এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই তাদের মূল লক্ষ্য। ইতিমধ্যে মানববন্ধন, অনশন, স্বারকলিপি প্রদান, প্রতিবাদ মিছিলসহ কয়েকদফা কর্মসূচি পালন করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে চলছে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি। বিশ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারাও বিএনপির কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়ে অংশগ্রহণ করছেন। ধারাবাহিক আরও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি। এসব কর্মসূচির মধ্যে আগামী ১ মার্চ ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপির বক্তব্য সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করা হবে। মার্চের মাঝামাঝি বিএনপি ঢাকায় একটি মহাসমাবেশ করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে গত ১৭ ফেব্রয়ারি থেকে শুরু হওয়া বিএনপির গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন পেশার মানুষজনও স্বাক্ষর দিচ্ছেন। গতকাল পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে বিএনপি এক কোটির বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে। চেয়ারপারসনের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা। নীতিনির্ধারকরা চাইছেন- দুই কোটি স্বাক্ষর সংগ্রহ হলে প্রেসিডেন্ট, প্রধান বিচারপতি এবং সরকারকে স্মারকলিপি আকারে তা দেয়া হবে। সেইসাথে বিপুলসংখ্যক মানুষের স্বাক্ষরের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরেও আনবে বিএনপি। বিদেশী দূতাবাস/হাইকমিশনেও দেয়া হতে পারে গণস্বাক্ষরের তালিকা।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি অব্যাহত আছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে ব্যাপক সারা পেয়েছি আমরা। এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে সময়মতোই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান। এদিকে গতকাল বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী ১ মার্চ রাজধানীসহ সারাদেশে বিএনপির বক্তব্য সম্বলিত লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, লিফলেট বিতরণ ছাড়াও কয়েকদিনের মধ্যে আরও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এসব কর্মসূচির মধ্যে থাকবে দেশজুড়ে ফের মানববন্ধন এবং মার্চের মাঝামাঝি ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ। ওই নেতা আরও জানান এরমধ্যে লিফলেট ছাপানো এবং তৃণমূলে তা পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এই নেতা বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মার্চের ৩ তারিখে ওয়ার্কার্স পাটির এবং ৭ মার্চ আওয়ামী লীগ সমাবেশ করবে। সেজন্য পুলিশ বিএনপিকে আগের সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। ফলে তারা মার্চের মাঝামাঝিতে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর তার মুক্তি দাবিতে দ্বিতীয় দফায় তিন দিনের কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি। এরমধ্যে ছিল দেশব্যাপী গণস্বাক্ষর অভিযান, সারা দেশে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি ও ঢাকা মহানগর ছাড়া জেলা-মহানগরগুলোয় বিক্ষোভ সমাবেশ। প্রথমদিনে স্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীদের বাইরেও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ব্যাপক সাড়া মেলে। পরে ওই দিনই দলের মহাসচিবকে হাইকমান্ড এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন। ফলে সারাদেশে বিএনপি এবং বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দফতরের তথ্য মতে সারাদেশে গণস্বাক্ষর কর্মসূচীতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। দলমত নির্বিশেষে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য স্বাক্ষর করছেন। তাদের এই স্বাক্ষর গণতন্ত্রের নেত্রীর মুক্তির দাবিকে আরো বেগবান করবে।
দলটির সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, সারাদেশে আমাদের দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি চলছে। তৃণমূলের নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে আমরা এরইমধ্যে সারাদেশে এক কোটির বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে পেরেছি। তাদেরকে স্বাক্ষর বই কেন্দ্রে পাঠাতে বলা হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই তা দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি শেষে সেগুলো দলের হাইকমান্ড স্মারকলিপি আকারে সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের কাছে দিবেন।
ঢাকা বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝেও ব্যাপক আগ্রহ দেখছি আমরা। তারা ইমেইলের মাধ্যমে গণস্বাক্ষরের ফরম নিয়ে পূরণ করে আবার পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কেউ কেউ অনলাইনে স্বাক্ষর করছেন। শুধু ঢাকা বিভাগে প্রায় ২০ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ হয়েছে।
ঢাকা সহ সারাদেশে চলছে বিএনপির গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, তাদের এই কর্মসূচী গণমানুষের নজর কেড়েছে। অনেকেই বেগম জিয়ার সাজা ও কারাবন্দী জীবনকে মানতে পারছেননা। নেতাকর্মীরা স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষের কাছে। নেত্রকোণা জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ডা. আনোয়ারুল হক বলেন, গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে মানুষের অবিশ্বাস্য সারা দেখেছি। রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে দোকানদারসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নিচ্ছেন।
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান বলেন, তার এলাকায় খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগ পরিবারের অনেক সদস্যও স্বাক্ষর করেছেন। এখন পর্যন্ত তার উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ হয়েছে। পুলিশ ও সরকারি লোকজনের হয়রানি উপেক্ষা করে তারা এলাকায় স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন।
দিনাজপুরের কাহারোল থানা বিএনপির নেতা মো: মেহেদী হাসান সুমন বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে সর্বস্তরের মানুষ স্বাক্ষর করছেন। তার থানায় এখন পর্যন্ত অর্ধলক্ষাধিক মানুষ স্বাক্ষর করেছেন। তারা এক লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ করবেন বলে জানান তিনি।



 

Show all comments
  • amirul ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ২:২৪ পিএম says : 0
    i want all party joint the next election.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ