পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সায়ীদ আবদুল মালিক : উন্নয়ন কাজের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। একটি প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই শুরু হয় আরেকটি প্রকল্পের জন্য রাস্তা খনন। এভাবেই বছর পার হয়ে যায় কিন্তু খনন কাজ শেষ হয় না। চলে আসে আরেকটি বছর। এমন কোনো বছর নেই, যে বছর খোঁড়াখুঁড়ির কাজ হয় না। তবুও সমস্যার সমাধান হয় না। ঢাকায় জনদুর্ভোগ যেন মানুষের নিত্য দিনের সঙ্গী। এদিকে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ঢাকার বাতাসে দূষণ প্রতিদিনই বাড়ছে। এই দূষণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে মাত্রাতিরিক্ত ধুলার কারণে।
রাজধানীর এমন কোনো সড়ক বা অলিগলি নেই, যেখানে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে না। এরমধ্যে দুয়েকটি সড়ক দিয়ে কোন রকম চলাফেরা করা গেলেও অনেক রাস্তাই এখন চলাচলের অনুপযুক্ত। সিটি কর্পোরেশন, মেট্টোরেল স্থাপনের কাজের জন্য, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকোসহ সবাই মিলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়ক, অলিগলি খুঁড়ছে। এ সমস্ত খোঁড়াখুঁড়ির ব্যপারে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নেই কোন সঠিক তদারকি। ঠিকাদাররেরা যে যেমন খেয়ালখুশি মত কাজ করছে। একটু বৃষ্টিতেই কাদা-পানিতে একাকার হয়ে রাস্তায় চলাচলের উপায় থাকে না। রাস্তার মাঝখানে যখন তখন বিকল হয়ে যাচ্ছে গাড়ি। প্রতিনিয়তই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। অফিস আদালত মুখি মানুষ ও স্কুল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সকাল বেলায় ঘর থেকে বের হয়েই পড়ছে চরম ভোগান্তিতে। কোথায়ও অসহনিও যানজটে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে আবার কোথায় যানবাহনেরে সঙ্কটে পড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্ট। ইচ্ছা থাকলেও ময়লা, কাদা-পানি ও পিচ্ছিল রাস্তায় পায়ে হাটাও সম্ভব হয় না।
অন্যদিকে রোদ উঠলে বাতাসে ধুলা-বালি উড়ে চোখ-মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিশ্বাসের সাথে ধুলা-বালি নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট ও এজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের চর্ম ও যৌন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. আহম্মাদ আলী ইনকিলাবকে বলেন, বাতাসের সাথে মিশে থাকা ধূলা-বালী শ্বাসপ্রশ্বাসের সাথে মানুষের ফুসফুসে গিয়ে পৌঁছায়। এতে করে মানুষ কাশি, যক্ষা, শ্বাসকষ্ট ও এজমাসহ নানা জটিল কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যে কারণে মানুষের ফুসফুস অস্তে আস্তে কর্মক্ষম হয়ে পড়ে। যা মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।
নাগরিকদের প্রয়োজনে নগরীর উন্নয়ন কাজ হবে এটাই স্বাভাবিক। সেই কাজের কারণে নগরবাসীকে যদি দীর্ঘ মেয়াদে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তা কোন ভাবেই কাম্য নয়। গত কয়েক মাস ধরেই রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে চলছে ড্রেনের উন্নয়ন কাজ। কিন্তু সেই ড্রেন নির্মাণের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করলেও সেই রাস্তা সংস্কারের কাজ যেন শুরুই হচ্ছে না। তবে নাগরিকরা কাজের এই দীর্ঘসূত্রতার জন্য ঢাকার দুই সিসি কর্পোরেশন ও ঠিকাদারদের দায়ী করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ সমস্ত প্রকল্পের মেয়াদ থাকে ৯ মাস। সেই সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হওয়ার কথা। এতে কারও কোন গাফিলতি নেই। নগরবিদরা বলছেন, উন্নয়ন কাজে ধীরগতি নাগরিকদের বিড়ম্বনা আরও বাড়াবে। অল্প কিছু দিন পরেই বৃষ্টির মৌসুম। ফলে দুর্ভোগের অন্ত থাকবে না নাগরিকদের।
শুষ্ক মৌসুমে রাজধানীর উন্নয়ন কাজের জন্য বিভিন্ন সেবদানকারী সংস্থাকে রাস্তা কাটার সীতিম পরিসরে অনুমোদন দেয়ার কথা থাকলেও এ জন্য রয়েছে কঠোর নিয়ম নীতি। এ নিয়ম নীতি তদারকি করার মূল দায়ীত্বে রয়েছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন।
গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকার চলমান উন্নয়ন কাজ সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উন্নয়ন কাজের নেই কোন সুনির্দিষ্ট তদারকি। যে কারণে নগরবাসী পড়েছে চরম দুর্ভোগে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ইনকিলাবকে বলেন, নগরবাসীর নাগরীক সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেইতো সিটি কর্পোরেশনকে উন্নয়নমূলক কাজ করতে হয়। এধরণের কাজ করতে গেলে কিছু সমস্যাতো হতেই পারে। এ জন্য নগরবাসীকেও কিছুটা ভোগান্তি সহ্য করতে হবে। উন্নয়ন কাজ চলা সময়ের ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে মেয়র নগরবাসীর সহযোগীতা কামনা করেন।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর পুরানা পল্টন লাইন এলাকার ভেতরের সড়কে নতুন করে গর্ত করে বড় পাইপ বসানো হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য রাস্তা খুঁড়ে ড্রেনের পাইপ বসানোর কাজ শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে। কিন্তু সড়কের সংস্কার কাজ হয়নি আজও। এসব রাস্তা দিয়ে যানবাহন তো দূরের কথা, মোটরসাইকেলও যাতায়াত করা সম্ভব নয়। এটা শুধু পল্টন কিংবা বিজয়নগরে চিত্র নয়, এই চিত্র ঢাকা দক্ষিণ সিটির আরও অনেক এলাকায় দেখা গেছে।
ঢাকা উত্তর সিটির তেজগাঁও পূর্ব তেজতুরী বাজার এলাকায় ড্রেন নির্মাণ কাজের পর দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার করা হচ্ছে না রাস্তা। সড়ক উচুঁ নিচু হওয়ায় এ এলাকার বাসিন্দারা গাড়ি কিংবা অন্য যানবাহন নিয়ে প্রবেশ করতে পারেন না। একই চিত্র রাজধানীর মনিপুরী পাড়ায়। গভীর গর্ত করে ফেলে রাখা হয়েছে পাইপ। ডিসেম্বরে কাজ শুরু হলেও পাইপ বসানো এখনও শেষ হয়নি। দুই পাশে উঁচু করে মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। মধ্যখানে গভীর গর্ত। ফলে ঝুঁকি নিয়েই চলাফেরা করতে হয় শিশু শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীকে। রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন সেকশন, বনশ্রী, মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, খিলগাঁও, নতুনবাজার, ভাটারাসহ অধিকাংশ এলাকায় চলছে ড্রেন নির্মাণের উন্নয়ন কাজ।
রাজধানীর মণিপুরী পাড়ার ৬ নং সড়কে বাসিন্দা শামছুদ্দিন বলেন, এ দুর্ভোগের শেষ হবে কবে? ৫-৬ জন লোক দিয়ে কাজ চলছে। ফলে একমাসে ছোট একটি রাস্তার ৩ ভাগের একভাগ কাজও শেষ হয়নি। পুরানা পল্টন এলাকার বাসিন্দা মাহমুদা বলেন, রাস্তা দিয়ে হেটে চলাই দায়। এর শেষ যে কবে হবে, একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজগুলো যতদ্রæত সম্ভব শেষ করার চেষ্টা করছি। নিয়ম অনুযায়ী কাজ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নিদের্শনা দেয়া আছে। যাতে নাগরিক দুর্ভোগ এড়ানো যায় সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক করা আছে। তিনি বলেন, অন্যদিকে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন সেবা সংস্থাকে অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু তারা অনেক ক্ষেত্রে শর্তমত কাজ করে না। এতেই সমস্যা হয়। তিনি বলেন, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি যাতে নগরবাসীর ভোগান্তি কিছুটা কমানো যায়।
মেট্রোরেল প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত প্রায় সোয়া তিন কিলোমিটার সড়কের দুপাশে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) রাস্তা খননের কাজ শুরু হয়েছে বছর খানেক আগে। প্রকল্পের শেওড়াপাড়া থেকে কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কের দুই পাশেই গর্ত খোঁড়া। নিরাপত্তাবেষ্টনী নেই। কোথাও কোথাও একটা করে বাঁশের খুঁটি দিয়ে সীমানা চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। মানুষের এপার-ওপার হওয়ার জন্য বাঁশ-স্টিলের পাত ফেলা হয়েছে। গর্তের মাটি সড়কেই পড়ে আছে। যানবাহনের চাকার সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে ধুলা হয়ে চারদিকে উড়ছে। আশপাশের ভবন-দোকানগুলো ধুলার রঙে ধূসর।
মিরপুর শ্যাড়ওয়া পাড়ার বাসিন্দা আমিনুর রহমান বলেন, সড়ক খোঁড়া হয়েছে ৫ ফুট কিন্তু যন্ত্রপাতি, মাটি, রাবিশ ফেলে সড়কের ১৫-২০ ফুট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। উন্নয়ন হবে ভালো কথা, জনগণের চলাচল বন্ধ করা তো ঠিক নয়। দুর্ভোগের তো একটা সীমা আছে।
মেট্রোরেল ও উড়ালসড়ক প্রকল্পের শুরুতেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয়েছে। ওই ছাড়পত্রে নির্মাণকালীন পরিবেশ ও শব্দদূষণ না করা, মানুষের যাতায়াত বাধাগ্রস্ত না করা, নির্মাণসামগ্রী দিয়ে সড়ক দখল না করাসহ বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। স¤প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর উড়ালসড়ক ও মেট্রোরেল নির্মাণকারী সংস্থাকে শব্দ ও ধুলাদূষণ কমানোর বিষয়ে চিঠি দিয়েছে। মেট্রোরেলের বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, তাঁরা টাকা দিয়েছেন। কাজ করছে সরকারি-বেসরকারি পাঁচ-ছয়টি সংস্থা। কাজটা জটিল। মানুষের ভোগান্তি কমাতে সংস্থাগুলোর ওপর তাঁরা চাপ রাখছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরাতুল্লাহ বলেন, বিশেষ প্রয়োজনে সড়ক খননের অনুমোদন দেয় ওয়ানস্টপ সেল থেকে। তবে সেল থেকে এই দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়, খননের কারণে যেন জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।