পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাজার বিরুদ্ধে জামিন আবেদনের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শেষ হয়েছে। নিন্ম আদালতের নথি আসার পরই জামিন আবেদনের ওপর আদেশ দেবেন হাইকোর্ট। গতকাল রোববার জামিন আবেদনের ওপর এক ঘন্টার বেশি সময় উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালত বলেছেন, জজ আদালত থেকে এ মামলার নথি এলে তা দেখে আদেশ দেবেন।
গত ২২ ফেব্রæয়ারি খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে আদেশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছিল একই বেঞ্চ। এছাড়াও নিন্ম আদালতের দেয়া খালেদা জিয়াকে দেয়া অর্থদন্ড আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেছিলেন। আর জামিন আবেদনের রোববারের দিন ধার্য করে দেন। ১১৬৮ পৃষ্ঠার ওই রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর গত ২০ ফেব্রæয়ারি হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এর আগে আপিল করার জন্য মামলার রায়ের সার্টিফাইড কপির জন্য তাদের ১০ দিন অপেক্ষা করতে হয়।
৮৮০ পৃষ্ঠার জামিন আবেদনের মধ্যে ৪৮ পৃষ্ঠাজুড়ে ৩২টি যুক্তিতে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়া হয়। খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবীরা সাবেক বয়স, অসুস্থতা ও সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে জামিন আবেদনের আর্জি করেন। অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। এছাড়াও অ্যাটর্নী জেনালেরও জামিন আবেদের বিরোধীতা করে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থপনা করেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, হাসান আরিফ, এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট আব্দুর রেজাক খান, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরোদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল, এ একে এম এহসানুর রহমান প্রমুখ। এছাড়াও কয়েকজন বিএনপি নেতাকেও আদালতে দেখা যায়। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহম্মেদ। দুদকের পক্ষে খুরশিদ আলম খান ও মোশাররফ হোসেন কাজল। আওয়ামী ও বিএনপি সর্মথিত সিনিয়র, জুনিয়র আইনজীবীরা। জামিন আবেদন সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে ও বিভিন্ন গণম্যাধ্যমের কর্মরত সাংবাদিকদের উপস্থিত হতে থাকেন। এছাড়াও সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ছিলেন সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়। হাইকোর্ট এলাকায় প্রতিটি প্রবেশ গেটে সর্তত অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের।
শুনানি শুরুতেই ১০ মিনিটির জন্য এজলাস ছাড়েন বিচারপতি :
দুপুর ২ টা ১২ মিনিটের দিকে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিম বেঞ্চে বসেন। এসময় আদালতকক্ষ ছিল আইনজীবীদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ। কোথাও কোনো তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। এ অবস্থায় দেখে আদালত দুই পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আদালত কক্ষ কানায় কানায় আইনজীবী দিয়ে পূর্ণ। এ রকম হলে তো শুনানি করা যাবে না। তখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদা জিয়ার প্যানেল আইনজীবী জয়নাল আবেদীন বলেন, আদালত, এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলা। দেশের সব মানুষ তাকিয়ে আছে আজকের জামিন শুনানির দিকে। উৎসুক আইনজীবীরাও এজন্যই ভিড় করছেন। আইনজীবীরা কেউ কোনো শব্দ করবেন না। আদালত বলেন, দেখে মনে হচ্ছে প্রেশার তৈরির একটা চেষ্টা। তখন আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, না, না। আইনজীবীরা কেউ কোনো আওয়াজ করবেন না। আদালত এই পর্যায়ে বলেন, তাহলে আপনার সিনিয়র আইনজীবীরা কক্ষে থাকেন। বাকিরা বাইরে চলে যেতে বলেন। তখন জয়নাল আবেদীন বলেন, এই জামিনে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল একাই শুনানির ক্ষমতা রাখেন। আদালত তখন সমিতির সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দিয়ে বলেন, পরিবেশ শান্ত করুন। আমরা ১০ মিনিট পর এজলাসে বসব। তখন দুই বিচারপতি এজলাস ত্যাগ করে খাস কামরায় চলে যান। আদালত কক্ষ থেকে জুনিয়ার আইনজীবীরা বেরিয়ে যান। আড়াইটায় ফের আদালত বসলে শুনানি শুরু হয়।
শুনানিতে যা হল:
শুনানির শুরুতে খালেদা জিযার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আপিলকারী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এটা লুঘু প্রকৃতির দন্ড। কোর্টের প্রথা রয়েছে কেউ নারী হলে এবং সাজা কম হলে আদালত জামিন দিয়ে থাকে। তিনি জামিন আবেদন থেকে খালেদা জিয়ার শারীরিক জটিলতার বিষয়গুলো তুলে ধরেন। এরপর জামিনের বিরোধিতা করে দুদক কৌসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, আপিল বিভাগের রায় রয়েছে এ ধরনের লুঘু দন্ডের ক্ষেত্রে দ্রæত আপিল নিষ্পত্তি করতে হবে। আর জামিনও দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, আপিলকারীর শারীরিক অবস্থার বর্ণণা দিয়ে জামিন চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এর স্বপক্ষে কোন মেডিকেল সার্টিফিকেট তারা আদালতে দাখিল করেননি। এসময় আদালত বলেন, উনারা তো শারীরিক অবস্থার বিষয়টি এফিডেভিট আকারে দিয়েছেন। আপনি যদি অস্বীকার না করেন তাহলে ধরে নিতে হবে এটা ঠিক আছে। দুদক কৌসুলি বলেন, দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় এই মামলার আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করেছে। কিন্তু জেনারেল ক্লজেস এ্যাক্টের ২৬ ধারা বিবেচনায় নিয়ে ৪০৯ ধারায় সাজা দেয়া হয়েছে। আপিল বিভাগ সাবেক রাষ্ট্রদূত এটিএম নাজিমউল্লাহর মামলার রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।
এসময় আদালত বলেন, এ বিষয়টি তো বিচারিক আদালতের আদেশের অংশে দেখতে পাচ্ছি না। যদিও বিচারক রায়ে অনেক কথাই বলেছেন। দুদক কৌসুলি বলেন, আগে তো দোষী সাব্যস্ত করতে হবে। এরপর আসে দন্ড দেয়ার বিষয়টি। তিনি বলেন, আপিলকারীর জামিন আবেদন থেকে দেখতে পাচিছ তার কাস্টডি পিরিয়ড হচেছ ২ মাস ৫দিন। আসামির কাস্টডি পিরিয়ড এবং অপরাধের গভীরতা দেখে তাকে জামিন দেয়া যায় না। তবে খালেদা জিয়ার বয়স নিয়ে আমাদের কোন বিরোধিতা নেই। আর জামিন দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে আদালতের এখতিয়ার।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, দেশের ইতিহাসে এ মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ। কারন এখানে এতিমের টাকা খোয়া গেছে। আর রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে কেউ তার দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। খালেদা জিয়া ছিলেন সরকার প্রধানও। অরফানেজ মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিলম্বের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, এই মামলাটি ২০০৮ সালে দায়ের করা হয়। ২০০৯ সালে মামলাটি বাতিলের আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ওই আবেদন ২০১১ সালে নিষ্পত্তি হয়েছে। এ জন্য আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, নিষ্পত্তি তো দ্রæতই হয়েছে। অনেক মামলা তো বছরের পর বছর পেরিয়ে যাচেছ নিষ্পত্তি হচেছ না। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিচারিক আদালতের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ, সাক্ষ্য বাতিল, পুনরায় তদন্ত এবং বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে কয়েকবার হাইকোর্টে আসলেন আপিলকারী।
মামলার বিচার বিলম্বিত করতে এমন কোন ধাপ নেই যে তার আশ্রয় নেয়া হয়নি। এ কারনে সাড়ে নয় বছর লেগেছে মামলাটি নিষ্পত্তি হতে। ২৩৭ কর্মদিবসের মধ্যে ১০৯ বার খালেদা জিয়া সময় নিয়েছেন। ২৬ বার দ্বারস্থ হয়েছেন উচচ আদালতের। ফলে এই মামলায় আজকে খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হলে এই মূল আপিলের শুনানি আর কখনই সম্ভব হবে না।
আদালত বলেন, এটা আপনি কিভাবে বলেন? এামলার দু’পক্ষ পদক্ষেপ শুনানি কেন হবে না? অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রেসিডেন্ট কয়েক বছর জেল খেটে মুক্তি পেয়েছেন। এ বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। এখনই খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হলে বৈষম্য হবে।
এরপর আদালত বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এটা কোন উদাহরণ হলো? একজন এতদিন জেল খেটেছেন বলেই কি আরেকজনকে এতদিন জেল খাটতে হবে? অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ভারতের বিহারের মূখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব ৮৯ লক্ষ টাকা তছরূপের কারনে সাড়ে তিন বছর জেল হয়েছে। আর এই মামলায় ২ কোটি টাকার উপরে অর্থ আত্মসাত হয়েছে। উভয় পক্ষের শুনানি শুনানি শেষে দুই বিচারপতি পরামর্শ করেন। এরপর শেষে বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি বলেন, জামিন বিষয়ে শুনানি শেষে হয়েছে। বিচারিক আদালতের নথি এলে পরে এ বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে বলে আদেশ দেন। পরে খালেদা জিয়ার সিনিয়র আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কনফারন্স রুমে বৈঠক বসেন। যদিও তারা বলেছেন এটা কোন বৈঠক ছিল না। শুধু মাত্র চায়ের জন্য বসা। অপরদিকে অ্যাটনী জেনারেল ও দুদকের আইনজীবী গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন এবং আদালতের বক্তব্য তুলে ধরেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।