Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নয়নাভিরাম ফুলরাজ্য

দেশের ৭০ ভাগ ফুল উৎপাদন হয় যশোরে, প্লাস্টিক ফুলে বাজার নষ্ট করছে

প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১০:৩৩ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

মিজানুর রহমান তোতা : ফুলরাজ্য যশোরের গদখালীর মাঠে মাঠে এখন ফুলের চাদর বিছানা। সে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। মাঠ ভরে গেছে নানা রঙের ফুলে। সবুজের মাঝে সাদা রজনীগন্ধা আর লাল, হলুদ, কমলা, খয়েরী ও মেজেন্ডা রঙের জারবেরা, ঝাউ কলম ফুল, গøাডিওলাস, লিলিয়াম, লাল গোলাপ, সাদা গোলাপ, কালো গোলাপ, হলুদ গোলাপ, গাঁদা, জবা ও জুইসহ বিভিন্ন ফুলের উৎপাদন হচ্ছে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে কৃষির এই খাতটিতে সফলতা এসেছে বিরাট। সর্বপ্রথম যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীতে রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ফুল উৎপাদনে বিপ্লব ঘটার পর এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার হেক্টর জমিতে ফুল উৎপাদন হচ্ছে। এটিকে সৌন্দর্যের চিহ্ন ও রঙিন ইতিহাস হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, যশোর, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গাসহ ২৪টি জেলায় ১০ সহস্রাধিক হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। যার প্রায় ৭০ ভাগ ফুল উৎপাদন হয় ফুলরাজ্য হিসেবে চিহ্নিত যশোরের গদখালি এলাকায়। প্রতি বছর প্রায় ২শ’ কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হয় শুধু যশোরে। উৎকর্ষতার প্রতীক ফুল সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের জীবনের সঙ্গে মিশে আছে। ফুল ভালোবাসেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। শুধু সৌন্দর্য কিংবা মিষ্টি সুবাতাস ছড়ানো নয়, এখন ফুল থেকে আসছে কাড়ি কাড়ি বৈদেশিক মুদ্রা। যা কিছুদিন আগে কল্পনাও করা যায়নি। যশোর-বেনাপোল সড়কের গা ঘেঁষা ঝিকরগাছার গদখালী ফুলের রাজ্য ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে নানা জাতের ফুল আর ফুল। মনমাতানো এক অভূতপূর্ব নয়নাভিরাম দৃশ্য। যা দেখলে পাষাণ হৃদয়ও নরম হয়ে যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিভাগ ও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আসলেই বিপ্লব ঘটেছে ফুল চাষ ও উৎপাদনে। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি জানায়, সারাদেশে ফুলকে ঘিরে চলছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। যারা ফুল চাষ, পরিচর্যা, ফুল তোলা, বান্ডিল করা, সংরক্ষণ, পরিবহন, ক্রয় ও বিক্রয় কাজে নিয়োজিত। তবে ফুলের মান বৃদ্ধি, সংরক্ষণ, চাষিপর্যায়ে আধুনিক পদ্ধতি ও কলাকৌশলের জ্ঞানের অভাব এবং সুষ্ঠু বাজারজাতকরণে বহুমুখী সমস্যার কারণে বিরাট সম্ভাবনার খাতটির আশানুরূপ অগ্রগতি হচ্ছে না। প্লাস্টিকের ফুলে বাজার নষ্ট করায় প্রচÐ ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমরা বাদ প্রতিবাদ সত্তে¡ও প্লাস্টিকের ফুল আমদানি বন্ধ হয়নি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফুলচাষিরা। এমনিতেই তো উৎপাদকদের পর্যাপ্ত ঋণ দেয়া, বিপণন ব্যবস্থার সহায়ক অবকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা রয়েছে তা মাঠপর্যায়ে তদন্ত করে সমাধানের ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি অনুপস্থিত রয়েছে। অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ একটু নজর দিলে অনায়াসেই খাতটির সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব। এটি হলে স্বাচ্ছন্দ্যে খাতটির সঙ্গে জড়িতরা স্বপ্ন পূরণ করতে পারতেন। চাষিপর্যায় থেকে শুরু করে ক্রয়-বিক্রয়সহ বাণিজ্য নতুন মাত্রা যোগ হতো। আর্থিক দিক দিয়েও সংশ্লিষ্টরাসহ দেশ লাভবান হতো।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম আরো জানান, আশার কথা ঢাকায় ফুলের একটি স্থায়ী পাইকারী মার্কেট স্থাপন ও বিদেশে রফতানি বৃদ্ধির ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চেষ্টা করে প্রাথমিক সফলতা এসেছে। তাছাড়া ফুলের রাজ্য যশোরের গদখালিতে একটি ফুল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। এ ব্যাপারে ইউএসএইড সাপোর্ট দিচ্ছে। তারা স্টাডি শুরু করেছে। তিনি জানালেন, ফুল সংরক্ষণের উপযোগী একটি আধুনিক কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন অত্যন্ত জরুরি। সংরক্ষণের অভাবে পিকসিজনে অনেক সময় ফুল নষ্ট হয়। সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রতিবছর গড়ে প্রায় আড়াইশো’ কোটি টাকার ফুল রফতানি হচ্ছে। এই অংক অনায়াসেই হাজার কিংবা দেড় হাজার কোটিতে উন্নীত করা সম্ভব। যার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে। জাপান ও হল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশে যেভাবে কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয় ফুল উৎপাদনে। বাংলাদেশে সেটি অনায়াসেই করা যায়। বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকার মাটি রকমারী ফুল উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শুধুমাত্র যশোর থেকে ৩টি বড় দিবসে ১শ’ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়ে ফুল উৎপাদন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, শুধু দেশে ফুল বিক্রি করে তো খাতটি এগিয়ে নেয়া যাবে না, দরকার বেশী করে বিদেশে রফতানি করা। কিন্তু আমরা পিছিয়ে পড়ছি রফতানির নীতিমালার অভাবে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় একচেটিয়া ফুল ব্যবসা করে লাভবান হওয়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বেঙ্গালোর, পুনা ও তামিলনাড়–র চেয়ে যশোরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে উৎপাদিত রজনীগন্ধাসহ প্রায় সব ফুলের মান খুবই উন্নত এবং রং উজ্জ্বল ও হৃষ্টপুষ্ট। সংশ্লিষ্টদের মতে, ফুল রফতানির নীতিমালা হলে সম্ভাবনাময় ফুল শিল্পটির বিশাল উন্নতি হবে। রাখতে পারবে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা। সমৃদ্ধ হবে বৈদেশিক মুদ্রাভাÐার।



 

Show all comments
  • ফারজানা ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৩:৩৫ এএম says : 0
    বিদেশে রফতানি বৃদ্ধির ব্যাপারে আরো জোর দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • রিমন ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৩:৩৬ এএম says : 0
    এই বিষয় নিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের ভাবা উচিত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফুলরাজ্য

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ