Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রাত পোহালেই ৬৪৩ ইউপিতে ভোট

প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আজিবুল হক পার্থ : রাত পোহালেই দ্বিতীয় ধাপের ৪৭ জেলায় ৬৪৩ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোট। দলীয় প্রতীকে এই ভোটের প্রথম ধাপে ২৭টি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্লেষকদের মতে, তৃণমূলের এই নির্বাচনে সহিংসতা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। গ্রাম-গঞ্জে তীব্র সংঘর্ষের শঙ্কার মধ্যেও নির্ভার ইসি। সব পক্ষ থেকে সহিংসতার দায় ইসিকে দেয়া হলেও ইসি তা নিতে নারাজ। সহিংসতা চাপানোতে ব্যস্ত থাকায় ভোটের মাঠ উত্তপ্ত হচ্ছে। প্রথম ধাপের পর কিছু প্রদক্ষেপ নেয়ার উদ্যোগ ইসি নিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। উল্টো সৃষ্টি হয়েছে ধূ¤্রজাল। গাছাড়া দিয়েছে ইসি। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে সংঘাত-সংঘর্ষের পথেই রইল ভোটের মাঠ।
জানা গেছে, প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে ২৭ জন নিহত হয়েছে। শুধু ভোটের দিনেই নিহত হয়েছেন ১১ জন। আহত হয়েছেন প্রায় দুই সহস্রাধিক নেতাকর্মী। নির্বাচন নিয়ে হাজারো অভিযোগ থাকলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয় ইসি। পরের ধাপে নানা শঙ্কা, হামলা ও সহিংসতার মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের ৬৪৩টি ইউপি নির্বাচনের জন্য ৪৭ জেলায় ব্যালট পেপারসহ অন্যান্য সামগ্রী পাঠিয়েছে কমিশন। এসব ইউপিতে
আজ মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে প্রার্থীদের সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। এ ধাপের জন্য বাড়তি কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। মঙ্গলবার সকাল থেকেই নির্বাচনী এলাকায় নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচনী অপরাধের সাজা দিতে সাথে থাকছেন নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচনী এলাকায় সোমবার মধ্যরাত থেকেই মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
ভোটের দিন এগিয়ে আসার সাথে সাথেই সহিংসতা বেড়ে চলেছে। দলীয়ভাবে ইউপি নির্বাচন নিয়ে অনেক এলাকায় সংঘর্ষ ও সহিংসতার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। ক্ষমতাসীনদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাঁচ শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে ইসিতে। লিখিতভাবে ইসিতে কি অভিযোগ এলো, গোলযোগ-সংঘর্ষ কোথায় কোথায় হয়েছে তার কোনো তথ্য ইসি সংরক্ষণ করছে না।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ইসি ব্যর্থ। যেসব উদ্যোগ তাদের নেয়া উচিত ছিল সে সাহসিকতা তারা দেখাতে পারেননি। বরং দায় এড়ানোর চেষ্টা করে নির্বাচনী সহিংসতা বৃদ্ধি করেছে। প্রথম ধাপের ভোটের আগের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যের কারণেই রক্তপাত বেশি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে বরাবরের মতো হুঙ্কার গর্জন শুনিয়েছেন ইসি। প্রথম ধাপের অনিয়মের কারণে দু-একটি শাস্তি ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ভোটের এক সপ্তাহ পার হলেও দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় সন্ত্রাসীদের আরো উসকানি দেয়া হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। এছাড়া সাতক্ষীরার এসপিকে তলবের বিষয়ে ইসি ও এসপির বিপরীতমুখী বক্তব্যে নতুন করে সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে।
৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপের ইউপি ভোটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর থাকতে এ সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে গতকাল সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার মো: শাহনেওয়াজ অপরাধ না ঠেকিয়ে ভোটকেন্দ্রে আঙুল চুষলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পরিস্থিতি দেখে কঠোর ভূমিকা রাখার তাগিদ দিয়ে শাহনেওয়াজ বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে অপরাধ হবে, আর সেখানে তারা আঙুল চুষবেÑ এ ধরনের কোনো বিষয় প্রশ্রয় দেবো না। প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে সিল মেরে যাবে আর তখন হা করে দাঁড়িয়ে থাকবেÑ সেটাও আমরা সহ্য করব না। এক কথায় নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য যা যা করা দরকার সবই করতে হবে।
প্রথম ধাপের অভিজ্ঞার প্রসঙ্গে শাহনেওয়াজ বলেন, প্রথম ধাপে কিছু অনিয়ম পেয়েছি, ব্যবস্থাও নিয়েছি। এখন সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে বলতে চাই, দায়সারা কাজ করে দায়িত্ব এড়াতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনিয়ম করলে চরম ব্যবস্থা নিতে পিছন না হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।
পরিস্থিতি দেখে আইনগতভাবে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। ব্যর্থতার জন্যও কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। অপরাধ করলে সে যেই হোক তাকে গ্রেফতার ও তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি- সবার জন্য এটা একটা সতর্কবার্তা।
তিনি বলেন, ‘নির্বাহী হাকিম ও ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসারের সব ধরনের ক্ষমতা আছে। তারা যেকোনো বিষয়ে ইসিকে সরাসরি অবহিত করতে পারবেন। নির্বাচনে কাউকে সুযোগ দেয়ার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হামলা-মামলা প্রচারণায় বাধা, সহিংসতার মাধ্যমে গত রাতে শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। নির্বাচনী আইনানুযায়ী কোনো নির্বাচনী এলাকার ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্ববর্তী ৩২ ঘণ্টা, ভোট গ্রহণের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা এবং ভোট গ্রহণের দিন রাত ১২টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে উক্ত নির্বাচনী এলাকায় কোনো ব্যক্তি কোনো জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান করতে এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা সংঘটিত করতে বা তাতে যোগদান করতে পারবেন না।
এদিকে, সকাল থেকে দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে মাঠে নামছে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। একইসঙ্গে ৪৭ জেলায় এসব ইউপির দায়িত্বে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরাও অপরাধ তদারকিতে মাঠে থাকবেন।
ইসি সচিবালয়ের উপ-সচিব সামসুল আলম জানান, ভোটের দু’দিন আগ থেকে মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে আগের ধাপের মতোই এ ধাপে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে। সহিংসতা রোধে বাড়তি কোনো নিরাপত্তা নেয়া হয়নি বলেও জানান তিনি। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনার মো: শাহনেওয়াজও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, আগের ধাপের মতোই এ ধাপে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
এদিকে দ্বিতীয় ধাপের ৪৭ জেলায় ৬৪৩ ইউপির ভোটের জন্য রোববার ও সোমবার ব্যালট পেপারসহ প্রয়োজনীয় মালামাল জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। ব্যালট পেপারের সঙ্গে সিল, গালা, দড়ি, ব্যাগসহ অন্যান্য নির্বাচনী সামগ্রী মাঠপর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। আজ সকাল থেকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তা সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রিজাইডিং অফিসাররা কেন্দ্রে কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন।
ইসি সচিবালয়ের উপ-সচিব রকিব উদ্দিন ম-ল বলেন, দ্বিতীয় ধাপের ৬৪৩টি ইউপি নির্বাচনের জন্য চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদের জন্য প্রায় চার কোটি ব্যালট পেপার জেলা নির্বাচন অফিসে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মঙ্গলবার থেকে মাঠে নামছে।
এদিকে গত সোমবার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আজ (বুধবার) রাত থেকে ৩২ ঘণ্টা সব ধরনের যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে ইসি। নির্বাচন কমিশনের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভোটগ্রহণের পূর্ববর্তী দিন থেকে ভোটগ্রহণের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। এছাড়াও ভোটগ্রহণের পূর্ববর্তী মধ্যরাত থেকে অর্থাৎ সোমবার মধ্যরাত থেকে ভোটের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত অটোরিকশা/ইজিবাইক, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক ও টেম্পো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষক ও অনুমোদিত সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে তা শিথিল থাকবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, দ্বিতীয় ধাপেও আওয়ামী লীগের ৩১ জন চেয়ারম্যান বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ধাপে ৬৪৩ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে ২ হাজার ৬৮৪ জন। এর মধ্যে ১৭টি রাজনৈতিক দলের এক হাজার ৫০৭ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে এক হাজার ১৭৭ জন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাত পোহালেই ৬৪৩ ইউপিতে ভোট
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ