Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রিয়ার মান ভাঙাতে চাই ফুল...

প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা/ খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি/ দু’টি যদি জোটে তবে/ একটিতে ফুল কিনে নিও হে অনুরাগী’। ফুল নিয়ে কবি’র এই পংক্তি যুতসই বটে। ফুল ভালবাসেন না পৃথিবীতে এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। অপার সৌন্দর্যের প্রতীক এই ফুল। প্রিয়ার মান ভাঙাতে চাই ফুল, ভালবাসতেও চাই ফুল। কোন অনুষ্ঠান, উৎসব-পার্বণ, সে তো ফুল ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। পৃথিবীর সব প্রান্তের সব ভাষাভাষীর কবিই এই সৌন্দর্যের প্রতীক ফুল নিয়ে যে কতশত কবিতা লিখেছেন তার হিসাব নেই। জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘আমি কবি, তাই আঘাতও করি ফুল দিয়ে।’ ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে শহীদ মিনার ও জাতীয় স্তৃতিসৌধে ফুল দিয়ে আমরা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বাংলাদেশে নিহত এক ইংরেজ সৈনিকের বোনের আকুতি নিয়ে প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘ফুলের মূল্য’ গল্প পড়লে এখনো গা শিউরে ওঠে। হাজার হাজার মাইল দূরে থাকা বোন রক্তের বাঁধন ভাইয়ের কবরে একটি ফুল দেয়ার কি যে আকুতি.....।
ফুল মানুষের মনে প্রশান্তি আনে। সেই ফুল এখন আর মনের প্রশান্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; রীতিমতো অর্থকরী কৃষিপণ্য। ফুল চাষ করে দেশের কৃষকরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। আশির দশকে রাজধানী ঢাকার শাহবাগের ঢাকা ক্লাবের সামনে ‘মালঞ্চ’ নামে একটি মাত্র ফুলের দোকান ছিল। এখন ঢাকায় শত শত ফুলের দোকান এবং কোটি কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়। শাহবাগ ও ফার্মগেটে ফুলের পাইকারী মার্কেট। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে নানা দিবসকেন্দ্রিক উদযাপনে ফুল খুবই প্রয়োজনীয় পণ্য। রজনীগন্ধা, গোলাপ, গ্ল্যাডিওলাস, গাঁদা, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, অর্কিড, কামিনী, পাতালহর, বকুল, দোলনচাঁপা, পদ্ম, জিপসি আহা! কত বাহারী ফুল।
দেশে হরেক কিসিমের উৎসব হলেও এতোদিন ফুলের উৎসব হতে দেখা যায়নি। এবার প্রথম শুরু হয়েছে দু’দিনব্যাপী পুষ্প উৎসব। রাজধানীর খামারবাড়ি বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে (কেআইবি) এ উৎসব চলছে। গতকাল সন্ধ্যায় ‘বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার ফেস্ট’ নামে দুই দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। এর আয়োজক বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি। অনুষ্ঠানে ‘ফুল চাষের সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির উপদেষ্টা ড. গয়ানাথ সরকার। আয়োজকরা জানান, মেলায় স্টলের সংখ্যা ২০টি। ৩০ মার্চ রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলা উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে ফ্যাশন শো, গোলটেবিল বৈঠক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
মেলায় এক ছাদের নিচে হরেক রকম ফুলের সমাহার নিয়ে বসেছে এ প্রদর্শনী। মিলছে ফুল চাষ, বাজারজাতসহ নানা বিষয়ে পরামর্শ। নানা জাতের ফুলের দেখা পেয়ে দর্শনার্থীরাও দারুণ মুগ্ধ। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ফুলের মেলা দেখাতে নিয়ে এসেছেন তাদের বাবা-মায়েরা। শিশুরা মুগ্ধ হচ্ছেন এবং তাদের পিতামাতারা জানছেন নিজের পছন্দের ফুল সম্পর্কে নানা তথ্য। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ফুল চাষি ও বাজারজাতকারীরা স্টলগুলো সাজিয়েছেন নানা ফুল দিয়ে। গোলাপ, গাঁদা, জারবেরা, রজনীগন্ধাসহ নানা ফুলের রাজ্যে প্রবেশ করে অনেকেই পছন্দের ফুলের সঙ্গে নিজেকে ছবিতে আটকে রাখছেন। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম জানান, ৮০’র দশকের পরই দেশে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ শুরু হয়। এরপর শুধু ফুলের বিস্তৃতির গল্প। বর্তমানে ফুলকে কেন্দ্র করে হচ্ছে কর্মসংস্থান। দেশের ২৮টি জেলায় ফুলের বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে। তবে যশোরেই উৎপাদন হয় চাহিদার সিংহভাগ ফুল। তিনি জানান, প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ১৬ হাজার কৃষক সরাসরি ফুল চাষ করছেন। বর্তমানে দেশে প্রতিবছর ৮০০ কোটি টাকার ফুল উৎপাদিত হয়। ফুল চাষের মাধ্যমে ভাগ্য বদলের গল্প শোনা গেলো ফুল চাষিদের মুখে। নাটোর থেকে আসা ফুল চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, গত দশ বছর ধরে তিনি ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি ১০০ বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করছেন। এক সময়ে বেকার থাকা এই ফুল চাষি বলেন, ফুল চাষ আমার সংসারের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। নিজের পাশাপাশি প্রায় দশ জনের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছি। তবে সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় ক্ষোভ ও অভিযোগ জানালেন বেশ কয়েকজন ফুল চাষি। তাদের দাবি, ফুল বিক্রি করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই বিপদে পড়তে হয়। চাঁদাবাজী তাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা ফুল কেনার কথা বলে আর কেনেন না। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দাবি করে ফুল ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ফুল চাষী ও ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান, ফুল সংরক্ষণে আধুনিক ব্যবস্থা ও ফুলের উন্নত জাত ও মান উন্নয়নে গবেষণা জোরদার করতে হবে। এছাড়া বিদেশে বাজার তৈরিতে সহযোগিতা করতে হবে। যে ফুল নিয়ে এত গুণকীর্তন কাব্যে, সাহিত্যে-তারই বাণিজ্যিক গুরুত্ব নিয়ে অপার সম্ভাবনা দেখছেন দেশের কাঠখোট্টা অর্থনীতিবিদরাও।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রিয়ার মান ভাঙাতে চাই ফুল...
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ