পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আফজাল বারী : এবার কী বিএনপি তার যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করবে? না-কি ‘বুর্জোয়া’ গ্রুপিংয়ের রাজনীতিতে হেরে যাবেন তারা- ঘুরে ফিরে আসছে এই প্রশ্ন। তবে জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য প্রতিষ্ঠাকালীন অনেক নিবেদিত নেতাকে আশান্বিত করছে। তারা ভিশন-২০৩০ সামনে রেখে গঠিত কমিটির দিকে তাকিয়ে আছেন। অপেক্ষায় আছেন দলীয় আদালতের প্রধান বিচারক খালেদা জিয়ার রায়ের।
বিএনপি প্রধান ইতোমধ্যে দলের সর্বোচ্চ ফোরামে স্থান দিয়ে সম্মানিত করেছেন তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। তাদের মন্ত্রিত্বও দিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি প্রাপ্তি মির্জা আব্বাসের। সমালোচনাও আছে ঘরে-বাইরে। এখন পদের মূল্যায়নে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে বাকি চারজন। বরকত উল্লাহ বুলু, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, রিজভী আহমেদ ও খায়রুল কবির খোকন। প্রতিষ্ঠাকালীন কিংবা সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে যাদের রাজনীতি শুরু বিএনপি দিয়েই। দলের দুঃসময়ে জীবনবাজি রেখেছেন। শীর্ষ নেতৃত্বের হুকুম তামিল করেছেন। এখন বাইরে তাদের হাস্যোজ্জ্বল দেখালেও ভেতরে দহন অব্যাহত। নানা প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে। নীরবে নিভৃতে কাজ করে যাওয়া এই নেতাদের মূল্যায়ন হবে নাকি গ্রুপিংয়ের রাজনীতিতে হারিয়ে যাবেন- এ জিজ্ঞাসা তাদেরই। তারা তাকিয়ে আছেন শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়ার দিকে।
জানা গেছে, ত্যাগী নেতাদের যোগ্য পদে স্থান করে দিতে চাইছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। সেক্ষেত্রে বুলু, সালাহ উদ্দিন, রিজভী আহম্মেদ ও খোকনকে যোগ্য পদে রেখে ছক সাজাচ্ছেন তিনি। রিজভীকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব করা হলে বুলু ও সালাহউদ্দিনকে স্থায়ী কমিটিতে রাখার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনে ষষ্ঠ কাউন্সিলে প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে স্থায়ী কমিটির আকারও বাড়াতে পারেন তিনি। যুগ্মমহাসচিব পদে রাখতে চান খোকনকে। এর মধ্যে স্থায়ী কমিটি ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে কয়েকজনের নাম শোনা যায়, যারা কখনোই জাতীয় রাজনীতিতে পরিচিত মুখ ছিলেন না। কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও পাকা নন।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, ত্যাগী, যোগ্য ও প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে যারা দলের সঙ্গে বেঈমানী করেননি, তাদের জন্য গত কয়েক বছর খুব বেশি সুখকর না হলেও এবার ভিন্ন পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে। কেননা, দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নিজেই বলেছেন, তিনি বেঈমান ও মুনাফেকদের দলে রাখবেন না।
প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে বিএনপির কয়েকজন নেতা খালেদা জিয়ার ওপর শতভাগ আনুগত্য রেখে কাজ করছেন। গুম-খুন, অপহরণ, শারীরিক নির্যাতন, জেল, হামলা-মামলা উপেক্ষা করে দলীয় প্রধানের ওপর আনুগত্য রেখেছেন। বিপরীত রাজনীতির মেরু থেকে লোভনীয় প্রস্তাব নাকচ করেছেন। সরকারের মন্ত্রিত্ব, গাড়ী-বাড়ি এমনকি আধিপত্য বিস্তারের সোপান- সবই ছিলো প্রস্তাবের বান্ডেলে। দলের প্রতিষ্ঠাতার আদর্শ, বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি পর্বতসম অবিচল আস্থায় ক্ষত তৈরি করতে পারেনি ওইসব লোভনীয় প্রস্তাব। ১/১১-তে মাইনাস ফর্মুলার প্রতিরোধে সোচ্চার ছিলেন তারা। খালেদা জিয়া ও তাদেরক রহমান তৎকালে গৃহবন্দি এবং কারাবন্দি থাকলেও সবই ছিলো তাদের মনোদর্পণে।
সিনিয়র নেতাদের পথে হাঁটছেন যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদ ও রিজভী আহমেদ। এছাড়াও সাবেক ছাত্রনেতাদের কয়েকজন নানা ত্যাগ স্বীকার করেও যোগ্য পদ পাননি।
জিয়াউর রহমান শহীদ হবার পর দলের নেতৃত্বে আসেন বেগম খালেদা জিয়া। তারপর এরশাদ জামানায় বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্রে যোগ দেন অনেকেই। টাকার কাছে অনেকে নৈতিকতা বিসর্জন দিয়েছেন। কিন্তু তরিকুল ইসলাম, আব্বাস, গয়েশ্বর, বুলুরা ওই সময় দলের সম্মুখে থেকে নেতৃত্ব দেন। পর্দার আড়ালে অঘোষিত দলীয় নীতিনির্ধারক ছিলেন তারা। সম্মুখে খায়রুল কবির খোকনরা।
দলে নানা সময় তাদের অবমূল্যায়ন হলেও ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিলের পর গঠিত স্থায়ী কমিটিতে তরিকুল আব্বাস, গয়েশ্বরদের মূল্যায়ন করা হয়। শিক্ষাঙ্গনের লড়াকু খোকনকে শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক করা হয়। যদিও ৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বিস্তর ফারাক ছিল।
যুবদলের সাবেক সভাপতি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু নোয়াখালীতে দলের সংগঠনকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে কাজ করেছেন নিরসল। ২০০১ সালে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। মনোনয়নবঞ্চিত বুলু দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্ত মেনে কাজ করেছেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় দলের দুর্দিনে তথাকথিত কুশীলবদের চাপে পড়েও মাথা নত করেননি। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের ভাই জাভেদের বিরুদ্ধে যখন কেউ প্রার্থী হতে চাননি, তখন তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন। বিজয়ী হয়েছেন বিপুল ভোটে। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি ২০১৪ সালে সরকার বিরোধী আন্দোলনে ছিলেন সামনের কাতারে। ২০১৫ সালে রিজভী ও সালাহ উদ্দিন গ্রেফতারের পর যখন অনেকে মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করতে ভয় পাচ্ছিলেন, তখন চেয়ারপার্সনের নির্দেশেই বিনা আপত্তিতেই মুখপাত্রের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। শুধু এ দায়িত্ব নেওয়ার কারণেই তার বিরুদ্ধে ৬৫ টি মামলা হয়েছিল। বর্তমানে ৮৬ মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার আসামিও তিনি।
সালাহ উদ্দিন আহমদের নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া এবং তারপর ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে উদ্ধার হন তিনি। নানা নাটকীয় ঘটনা এবং মৃত্যুর কাছ থেকে ফেরা এই নেতা অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলায় জামিন নিয়ে এখনো দিল্লিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির পর সরকারি চাকরি আবার রাজনীতিতে ফিরেন তিনি। জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে সহকারির দায়িত্ব পালন করেছেন সালাহ উদ্দিন। সব দিক থেকেই পছন্দের অনুজ ছিলেন খালেদা জিয়ার।
আরেক ছাত্রনেতা রিজভী আহমেদ। যখনই রাজনৈতিক ও দলীয় সঙ্কট তখনই রিজভীর উপস্থিতি। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অতন্দ্র প্রহরী। আন্দোলনের সময় যখন ওই কার্যালয়ে কেউ যেতে ভয় করেন, তখন তিনি একাই কার্যালয়ে। ২০১৪ সালে মধ্য রাতে কার্যালয় থেকে তাকে আট করা হয়। ২০১৫ সালেও কার্যালয়ের ভেতর থেকে তাকে আটক করে কার্যালয় তালাবদ্ধ করে পুলিশ। মামলা গ্রেফতার এবং রিমা- সব খড়গই নেমে এসেছে তার বিরুদ্ধে। তিন দশকের রাজনীতিক মামলায় রিজভী-ই সর্বোচ্চ সময় (৪৮দিন) রিমা-ে ছিলেন। ৮৬’র এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। যার কারণে এখনো খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয় তাকে। স্বাভাবিক খাবারও খেতে পারেন না। এ ত্যাগ থেকেই বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে রিজভী আহম্মেদকে পরিবারের সদস্য মনে করে জিয়া পরিবার। বিশ্বস্ততার মাপকাঠিতে দলের শীর্ষ দুই নেতার মনের শিখরে আছেন রিজভী।
নব্বইয়ের আন্দোলন-উত্তর সময়ে চড়াদামে কেনা-বেচার বাজারে ‘বিক্রেতা’ ছিলেন না রিজভী-খোকন। এখন যথাযথ মূল্যায়নের প্রত্যাশায় তারা। ৯০’এর মতো ২০১৪ সালের আন্দোলনেও অনেক খোকন জমেছে বিএনপির প্রাপ্তিতে। ভিশন-২০৩০ সামনে রেখে গঠিত কমিটির দিকে তাকিয়ে আছেন দলীয় আদালতের প্রধান বিচারক খালেদা জিয়ার প্রতি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।