Inqilab Logo

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

লড়াইয়ের খরচ না জোগালে সউদি তেল কেনা বন্ধ করে দেব : ট্রাম্প

প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:২০ এএম, ৩১ মার্চ, ২০১৬

ইনকিলাব ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের অগ্রগামী প্রার্থী ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে সউদি আরব ও অনান্য মিত্রদের কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দেবেন যদি তারা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য স্থলসৈন্য না পাঠায় বা জিহাদিদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের লড়াইয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খরচ না জোগায়।
শুক্রবার পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে সিএনএনের লাইট ফক্সের সাথে ১০০ মিনিটের সাক্ষাৎকার কালে ট্রাম্প বলেন, সউদি আরব আমেরিকার প্রতিরক্ষা ছায়ার বাইরে রয়েছে বলে কি ধারণা? আমার মনে হয় না।
তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়া ও চীনের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য আমেরিকার পারমাণবিক ছত্রছায়ার উপর নির্ভরশীল থাকার চেয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রভা-ার গড়ে তোলার অনুমতি দেবেন। যদি যুক্তরাষ্ট্র তার বর্তমান পথ চলা বজায় রাখে যা কিনা দুর্বল পথ চলা ছাড়া কিছু নয়, তাহলে আমার সাথে আলোচনা করে বা না করে যেভাবেই হোক তারা তা পাওয়ার ইচ্ছা করতে পারে। তিনি বলেন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যদি তাদের দেশে মোতায়েন আমেরিকান সৈন্যদের আবাসন ও খাদ্যের উল্লেখযোগ্য বহন না করে তাহলে তিনি দু’টি দেশ থেকেই মার্কিন সৈন্যদের প্রত্যাহার করতে ইচ্ছুক। তিনি বলেন, বিষয়টি সুখকর নয়, কিন্তু জবাবটি হচ্ছে হ্যাঁ।
তিনি আরো বলেন, তিনি আমেরিকার মিত্রদের সাথে স্বাক্ষরিত বহু মৌলিক চুক্তি নিয়ে পুনরায় আলোচনা করতে চান। এর মধ্যে সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্ত হল জাপানের সাথে ৫৬ বছরের চুক্তি যাকে তিনি একপক্ষীয় বলে মনে করেন।
ট্রাম্পের বিশ্বদৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্র এক দুর্বল শক্তিতে পরিণত হয়েছে। যে প্রধান পন্থায় তিনি বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান তাহল অর্থনৈতিক দরকষাকষি। তিনি প্রতিটি বর্তমান আন্তর্জাতিক সংঘাত আলোচনার আয়নায় আনতে চান, এমনকি তিনি যদি তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য সম্পর্কে নিশ্চিত না হন, তবুও। তিনি গত বছর ইরানের সাথে আলোচনায় ওবামা প্রশাসনের পদক্ষেপকে ফের ত্রুটিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করে বলেন, এটা খুবই ভাল হত যদি তারা দু’একবার আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসতেন। তিনি কি করে বিষয়ের পরিবর্তন ঘটাতে পারতেন সে বিষয়ে তার একমাত্র নতুন ধারণা হল : উত্তর কোরিয়ার সাথে ইরানের বাণিজ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা।
ট্রাম্প একই মনোভাবের পরিচয় দেন ন্যাটোর ভবিষ্যৎ নিেেয় তার আলোচনায়। তিনি ন্যাটোকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অর্থনৈতিকভাবে অন্যায্য বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, তিনি সন্ত্রাস বিরোধী একটি বিকল্প সংস্থার উপর গুরুত্ব দিতে চান। তিনি যুক্তি দেখান যে দক্ষিণ চীন সাগরে সাগরে সৃষ্ট কৃত্রিম দ্বীপগুলোতে চীনের সামরিক বিমান ক্ষেত্র নির্মাণ ও বিমানবিধ্বংসী ব্যাটারি মোতায়েন থামানোর সর্বোত্তম পন্থা হল আমেরিকার বাজারে তাদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করা। তিনি বলেন, চীনের উপর আমাদের বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষমতা রয়েছে। আর তা হল বাণিজ্য ক্ষমতা। তিনি বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষমতা সম্পর্কে কিছু বলেননি।
ট্রাম্পের প্রকাশিত মতামত রিপাবলিকান পার্টির ইতিহাসের সাথে মেলে না। তিনি বলেন, আমি বিচ্ছিন্নতাবাদী নই। আমেরিকা আমার কাছে প্রথম। আমি মত প্রকাশ পছন্দ করি। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী আমেরিকার বাহিনীর উপস্থিতি রয়েছে। সে জন্য যদি অংশীদাররা নগদ অর্থ ও সৈন্য দিয়ে সাহায্য করতে আগ্রহী না হয় তাহলে তিনি ঐতিহ্যবাহী আমেরিকান জোটের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, আমরা আর ক্ষতিগ্রস্ত হব না।
গত সপÍাহে ব্রাসেলসে বোমা হামলা ও ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার মার্কিন নির্বাচনী প্রচারণার মনোযোগকে পুনরায় এদিকে ফিরিয়ে এনেছে এবং প্রার্থীরা এ প্রশ্নের সম্মুখীন যে তারা কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধান করবেন এবং তারা বিশ্বব্যাপী কী ধরনের কূটনীতি অনুসরণ করবেন।
ট্রাম্প তার চিন্তাভাবনাকে সংহত ও সহজপাচ্য পন্থায় ব্যাখ্যা করেছেন, তবে তাতে সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে সামান্যই বিবেচনা করা হয়েছে বলে মনে হয়। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ও সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের সাথে প্রায় একই ভাবে তিনি ব্যবহার করেন, তিনি বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে কীভাবে সম্পর্ক গড়বেন তাকে ব্যক্তিগত বিষয় করেছেন, বলেছেন তার মনোভাব নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কতটা বন্ধুত্বপূর্ণ তারা, শুধু জাতীয় স্বার্থ বা জোটের ভিত্তিতে নয়।
কোনো পর্যায়েই তিনি এমন বিশ্বাস ব্যক্ত করেননি যে বিশ্বব্যাপী সামরিক ঘাঁটিগুলোতে মোতায়েন মার্কিন সৈন্যরা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মূল্যবান, যদিও রিপাবরিকান ও ডেমোক্র্যাট প্রশাসনগুলো বহু দশক ধরেই বলে আসছে যে কেেিনা সামরিক হঠকারিতা রুখতে এবং বাণিজ্য সুরক্ষা ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে তারা অত্যাশ্যক।
সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড এম. নিক্সনের মত ট্রাম্পও কোনো আমেরিকান প্রেসিডেন্টের ‘ আনপ্রেডিক্টেবিলিটি’র উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র ও উন্মুক্ততার ঐতিহ্য যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকান্ডকে শত্রু ও বন্ধুদের জন্য খুবই সহজ করেছে।
দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপগুলো নিয়ে বিরোধ তিনি কতদূর নিয়ে যেতে চান সে বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, আমার আসল চিন্তাভাবনা আমি তাদের জানতে দিতে চাই না। এসব দ্বীপ বহুদূরে ও স্বল্প জনঅধ্যুষিত হলেও একটি প্রধান নৌ চলাচলপথের উপর তা চীনের নিয়ন্ত্রণকে সম্প্রসারিত করেছে। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে দরকষাকষির উপকরণ হিসেবে আমি নিশ্চিতভাবে বাণিজ্যকে ব্যবহার করব।
যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি কখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল জিজ্ঞেস করা হলে ১১৬ বছর আগে ২০ শতকের শুরুতে ফিরে যান তিনি যখন আরেক অপ্রথাসিদ্ধ রিপাবলিকানদের আমল ছিল যখন থিওডোর রুজভেল্ট দলত্যাগের মাধ্যমে ইতি টানেন। আমেরিকার ইতিহাসে তার প্রিয় ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন দু’জন জেনারেল, ডগলাস ম্যাক আর্থার ও জর্জ এস. প্যাটন যদিও তিনি বলেন যে ম্যাক আর্থারের মত তিনি পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার চান না, তিনি তা চান শুধু সর্বশেষ পন্থা হিসেবে। ( তিনি বলেন, ম্যাকআর্থার কোরিয়া যুদ্ধকালে আলোচনায় বসার পন্থা হিসেবে চীনের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। ট্রাম্প বলেন, তিনি পারমাণবিক তাস খেলেছিলেন কিন্তু তা ব্যবহার করেননি)।
পরামর্শ দেয়ার জন্য পররাষ্ট্রনীতি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কাউকে পেতে তিনি সমস্যায় পড়েছেন এ কথা অস্বীকার করে ট্রাম্প বলেন, তাদের অনেকেই বিভিন্ন নেটওয়ার্কের সাথে চুক্তি ভিত্তিতে কাজ করেন বলে ব্যস্ত।
এ সপ্তাহের প্রথম দিকে ঘোষিত ৫ জন ছাড়াও আরো তিন জন উপদেষ্টার নাম ঘোষণা করেন তিনি। তারা হচ্ছেন Ñ অবসরপ্রাপ্ত মেঃ জেনারেল গ্যারি এল.হ্যারেল, মে. জে. বার্ট কে. মিজুসাওয়া ও রিয়ার অ্যাডমিরাল চার্লস আর. কুবিক। বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কূটনীতিক ও পন্ডিতদের না রেখে সাবেক সামরিক অফিসার নিয়োগের ফলে এ নিয়ে অব্যাহত বিতর্কেরই প্রতিফলন ঘটেছে। মে. জেনারেল হ্যারেল মার্কিন স্পেশাল ফোর্সের সদস্য, তিনি ১৯৯৩ সালে সোমালিয়ার ব্যর্থ ব্ল্যাক হক ডাউন মিশনের একজন কমান্ডার ছিলেন। রি. অ্যাডমিরাল কুবিক বর্তমানে একটি প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট। তিনি লিবিয়ায় হামলা চালিয়ে গাদ্দাফিকে অপসারণের প্রেসিডেন্ট ওবামার পদক্ষেপের তীব্র সমালোচক।
পররাষ্ট্র বিষয়ে কি ধরনের ব্রিফিং পেয়েছেন এবং কি ধরনের বই পড়েছেন জিজ্ঞেস করা হলে ট্রাম্প বলেন, তার তথ্যের প্রধান উৎস সংবাদপত্র, তার বৈদেশিক নীতি ঘোষণার বেশির ভাগেরই ভিত্তি স্লোগান : ‘তেল নিয়ে নাও,’ ‘দেয়াল নির্মাণ কর’এবং কমপক্ষে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও মুসলিম অভিবাসী ও পর্যটকদের আগমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ। কিন্তু যতই তিনি মনোনয়ন লাভের নিকটবর্তী হচ্ছেন ততই তার অবস্থান বিশদ করার দাবি উঠছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেটের নিয়ন্ত্রিত তেল নিয়ে নেয়ার আহবান বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ট্রাম্প স্বীকার করেন যে এর জন্য প্রয়োজন হবে স্থল সেনা মোতায়েন করা যা তিনি ঠিক পছন্দ করেন না। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক অধিকারের কথা স্মরণ করে বলেন, আমাদের এটা নেয়া উচিত হয়েছে এবং আমাদের এটা থাকা উচিত ছিল। এখন আমাদের তেল ধ্বংস করে দিতে হবে। (অসমাপ্ত) সূত্র দি নিউইয়র্ক টাইমস।



 

Show all comments
  • কাওসার আহমেদ ৩০ মার্চ, ২০১৬, ২:৩৪ পিএম says : 0
    মুসলমানদের বুঝা উচিত এখন তাদের কি করতে হবে, বিশেষ করে সউদি আরবের।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লড়াইয়ের খরচ না জোগালে সউদি তেল কেনা বন্ধ করে দেব : ট্রাম্প
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ