পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালেক মল্লিক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার বিরুদ্ধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপিল গ্রহণ করে নিন্ম আদালতের দেয়া অর্থদন্ড স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ মামলায় নথি তলব করেছেন উচ্চ আদালত। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নথি হাইকোর্টে পাঠাতে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি আগামী রোববারের দিন ধার্য করে দিয়েছেন হাইকোট। খালেদা জিয়ার আপিলের গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এসময় আদালত আরো বলেছেন, আপিলকারীর সাজা তো কম। আদালতের প্রথা আছে সাজা কম হলে জামিন দেয়ার। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট আব্দুর রেজাক খান, জয়নুল আবেদীন,ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরোদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল, আতিকুর রহমান, ফাইয়াজ জিবরান, এ একে এম এহসানুর রহমান প্রমুখ। এছাড়াও বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ কয়েকজন বিএনপি নেতাকেও আদালতে দেখা যায়।
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহম্মেদ। দুদকের পক্ষে খুরশিদ আলম খান । এছাড়াও আওয়ামী ও বিএনপি সর্মথিত সিনিয়র, জুনিয়র আইনজীবীরা ও বিভিন্ন গণম্যাধ্যমের কর্মরত সাংবাদিকদের উপস্থিত আদালতে ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আপিলের গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি শুরু হয়। এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আপিল গ্রহণের জন্য আবেদন জানালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রস্তুুতির জন্য দুই ঘণ্টা সময় চান। আদালত দুপুর ১২টায় শুনানি শুরুর আদেশ দেন। এরপর দুপুর ১২টার দিকে শুনানি শুরু হয়।
আপিল শুনানিতে যা হল:
শুনানির শুরুতেই অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দাঁড়িয়ে বলেন, আমাদের সিনিয়র আইনজীবীরা উপস্থিত রয়েছেন। তবে আপিলের শুনানি করবেন অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী। এরপর সিনিযর আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী শুনানি শুরু করেন। তিনি বলেন, ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডম্যান্ট অ্যাক্ট ১০ (১) ধারায় আপিলটি করা হয়েছে। আমি আপিল শুনানির জন্য গ্রহণের আবেদন করছি। আপিল গ্রহণ হলে জামিন আবেদন দেয়া হবে। ৪০৯ ধারায় আপিলকারীকে সাজা দিয়েছেন আদালত। এ সময় আদালত বলেন, আপিলে কি কি চেয়েছেন নাকি শুধুই আপিল অ্যাডমিশন চেয়েছেন? অ্যাডমিশন পরে আর কী প্রেয়ার আছে?’ এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, একটা আপিল অ্যাডমিশনের আবেদনে নরমালি যা যা থাকে আমরা তাই চেয়েছি। তখন নথি দেখে আদালত বলেন, ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী কনভিকশন কি স্থগিত করা যায়? ক্রিমিনাল অ্যাক্ট ল অ্যামেন্ডম্যান্ট অ্যাক্টে কনভিকশন স্থগিতের বিধান নাই। আপনারা তো কনভিকশনও স্থগিত চেয়েছেন। এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, এটা গতানুগতিক, এটা ঠিক করে দেব। সাধারণত এটা একটা প্রথা। সেজন্য এটা আমরা চেয়েছি।
এরপর আদালত আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। আদেশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে মামলার নথি তলব করেন এবং আদালত বলেন, আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়ার অর্থদন্ড স্থগিত রাখা হলো। এ পর্যায়ে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ১৫ দিন ধরে তিনি (খালেদা জিয়া) কাস্টডিতে আছেন। যেহেতু তাকে শর্ট সেনটেন্স দেয়া হয়েছে, সেজন্য আমরা তার বেইল চাচ্ছি (জামিন, বয়স, সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় জামিন পাওয়ার হকদার তিনি)। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আপিল ইতোমধ্যে আদালত গ্রহণ করেছেন। আজকে সকালে আমরা জামিন আবেদন পেয়েছি। রেকর্ড আসার পরই বিষয়টি লিস্টে এনে শুনানি করা হোক।
আদালত বলেন, আপিলকারীর সাজা তো কম। আদালতের প্রথা আছে সাজা কম হলে জামিন দেয়ার। এই মামলায় মেরিট আছে।এ কারণে এটা আমরা কার্যতালিকায় এনে শুনানি করতে চাই।
এ সময়ে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, আমরা অ্যাডমিশনের শুনানি করতে পারি নাই। আদালত বলেন, যখন শুনানির প্রয়োজন তখনই আপনাকে সুযোগ দেয়া হয়েছে। এরপর দুদক আইনের ৩৩ (৫) ধারা দেখিয়ে খুরশিদ আলম খান বলেন, এ ধরণের বিশেষ আইনের মামলার ক্ষেত্রে দুদককে যুক্তিসঙ্গত সময় দিয়ে শুনানি করতে হবে। আর আমরা আজ ৯টা ৩১ মিনিটে জামিনের আবেদনের কপি পেয়েছি।
আদালত বলেন,তারা তো অন মেরিট জামিন চাচ্ছেন না। পুরো রেকর্ডের কি দরকার আছে?’ খুরশিদ আলম খান বলেন, ফৌজদারী আইন ব্যবস্থায় নারী বলে আদালত জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। কিন্তু দুদক আইনে সে সুযোগ নেই। জামিনের আবেদন অনেক বড়, গ্রাউন্ডও অনেক। এ সময় বেঞ্চের সিনিযর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম হেসে বলেন, এ কারণেই তো টকশোতে আপনি আলোচনার সুযোগ পেয়েছেন। খুরশিদ আলম খান বলেন, আমরা চাচ্ছি কার্যতালিকায় এনে শুনানি করা হোক। এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, সাধারণত কম সাজা হলে আপিল করলে জামিন দিয়ে দেয়া হয়। আদালত বলেন, আপিল বিভাগের অনেক আদেশ আছে কম সাজা হলে জামিন দিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু সেগুলো বিশেষ আইন প্রণয়নের আগে। যেহেতু দুদক আইনে আছে তাদের যুক্তিসঙ্গত সময় দেয়ার তাই আমরা রোববার দুপুর ২ টায় শুনানির জন্য রাখলাম।
জামিন আবেদনের যুক্তি:
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, ৩২টি গ্রাউন্ডে জামিন আবেদনটি করা হয়েছে। ৪৮ পৃষ্ঠার গ্রাউন্ড ও মামলার আনুষঙ্গিক নথিপত্রসহ জামিন আবেদনটি মোট ৮৮০ পৃষ্ঠার। জামিন আবেদনের যুক্তিতে বলা হয়েছে, আবেদনকারীর বয়স ৭৩ বছর। তিনি শারীকিভাবে বিভিন্ন জাটিলতায় ভুগছেন। তিনি ৩০ বছর ধরে গেঁটেবাত, ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিস, ১০ বছর ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে আয়রন ঘাটতিতে ভুগছেন। ১৯৯৭ সালে খালেদা জিয়ার বাঁ হাঁটু এবং ২০০২ সালে ডান হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ কারণে তার গিঁটে ব্যথা হয়, যা প্রচন্ড যন্ত্রণাদায়ক। এ কারণে তাকে হাঁটাহাঁটি না করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। শারীরিক এসব জাটিলতার কারণ বিবেচনায় নিয়ে জামিন মঞ্জুর করার আর্জি জানানো হয়েছে আবেদনে। আরেক যুক্তিতে বলা হয়েছে, উপমহাদেশ ও দেশের উচ্চ আদালতের দীর্ঘ ঐতিহ্য অনুযায়ী, আসামি নারী হলে তার অনুকূলে জামিন বিবেচনা করা হয়।পরে খালেদা জিয়ার প্যানেল আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদিন ও দুদকের আইনজীবী গণমাধ্যমকে আলাদাভাবে ব্রিফ করেন এবং আদালতের এই বক্তব্য তুলে ধরেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেন, সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিযা একজন বয়স্ক নারী, সেই বিবেচনায় তাঁকে জামিন দেয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন আদালত।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীর জামিনের বিরোধিতা করে দুদক পক্ষ থেকে সময়ের আবেদন করা হলে আদালত বলেন, সাত বছর পর্যন্ত সাজপ্রাপ্ত যেকোনো ব্যক্তিকে এই আদালত জমিন দিতে পারেন। খালেদা জিয়া পাঁচ বছরের জন্য সাজা পেয়েছেন। তাই তাঁকে আদালত জামিন দিতে পারেন। তারপর তিনি নারী ও বয়স্ক, তিনি জামিন পেতে পারেন।
আইনজীবীদের উপচেপড়া ভিড়:
সকাল ৯টার পরপরই দুদকের আইনজীবী আদালতে চলে আসেন। এরপরই খালেদা জিয়ার আইনজীবীরাও এজলাসে আসতে থাকেন। সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত হন। শতশত আইনজীবীর সঙ্গে আপিল আবেদনের খবর সংগ্রহ করতে আসা প্রায় অর্ধশতাধিক গণমাধ্যমকর্মীও আদালত প্রাঙ্গণে আসেন। একপর্যায়ে হাইকোর্টের এনেক্স ভবনের বারান্দায় এবং এজলাসের ভেতরে দেখা দেয় উপচেপড়া ভিড়। ১২টার পর আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পূর্ব থেকে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের সামনে জড়ো হতে থাকেন বিএনপি সমর্থিত ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। বেলা সাড়ে ১১টায় কানায় কানায় পূণ হয়ে যায় আদালত কক্ষ। খালেদা জিয়ার সিনিয়র আইনজীবীদেরও ওই ভিড় পেরিয়ে এজলাসে পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়। এক পর্যায়ে আদালত কক্ষে প্রবেশ করার সময় আইনজীবীদের মধ্যে হট্রগোল তৈরি হয়। এই পর্যায়ে বিচারপতিরা এজলাসে এসে বসেন। দুই পক্ষের আইনজীবীদের আদালতে উপস্থিত দেখে সিনিয়র একজন বিচারপতি বলেন, যেহেতু দুই পক্ষই উপস্থিত আছে,সেহেতু আগেই শুনানি শুরু হতে পারে। কিন্তু আসামিপক্ষ এ সময় একজন সিনিয়র আইনজীবীর জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার কথা বলেন। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল দাঁড়িয়ে আদালতকে বলেন, এভাবে শুনানি করা সম্ভব না। তিনি দুই পক্ষেই আইনজীবীর সংখ্যা সীমিত করে দিতে অনুরোধ করেন। বিচারপতিক এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এরপর বিচারপতিরা এজলাস ত্যাগ করেন। আদালত ১৫ মিনিট সময় দিয়ে এর মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলেন। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে বেলা ১২টায় আপিলের গ্রহণযোগ্যতার শুনানি শুরু হয়।
প্রসঙ্গ, ৮ ফেব্রæয়ারি বিশেষ জজ আদালত-৫ এই মামলার রায় দেন। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির জন্য পাঁচ বছরের সাজা এবং তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। পাশাপাশি ছয় আসামির সবাইকে মোট ২ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই অর্থ সবাইকে সমানভাবে ভাগ করে পরিশোধ করতে বলা হয়। রায়ের দিন আদালত ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ পড়েন। রায়ের অনুলিপি ১ হাজার ১৭৪ পৃষ্ঠার। রায়ের পর থেকে নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে রয়েছেন খালেদা জিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।