পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : আমাদের গৌরবময় ইতিহাস ও কৃষ্টিকে কেউ যেন ভুলে না যায় সেজন্য তা সংরক্ষণ এবং মর্যাদা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা একটা জাতি। বাঙালি জাতি। আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি-আমাদের গৌরবের অনেক কিছু রয়েছে। সেই সব আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি-সেগুলি কেউ যেন ভুলে না যায় সেজন্য এর যথাযথ মর্যাদাও আমাদের দিতে হবে।
আগামী প্রজন্মের জন্য এগুলো প্রচার ও সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপও করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আলাদা হয়েছে। বাংলাদেশ এখন স্বাধীন একটি দেশ। এ দেশে এখনও পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা রয়ে গেছে। যে কারণে মাঝে মধ্যে আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপর আঘাত আসে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ২১ জন দেশ বরেণ্য ব্যক্তিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ একুশে পদক-২০১৮ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। পুরস্কার হিসেবে পদক বিজয়ীদের হাতে সোনার মেডেল, সম্মাননা পত্র এবং ২ লাখ টাকার চেক তুলে দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বায়নের যুগে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে বাঙালি জাতি হিসাবে স্বকীয়তা যাতে হারিয়ে না যায় সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের ভাষা, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্য-সেটা যেন কখনো ভুলে না যাই। বিশ্বায়নের যুগে অনেক কিছুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদের হয়তো অনেক ভাষা শিখতে হবে। অনেক কিছু জানতে হবে, অনেক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু, আমাদের স্বকীয়তা; সেটা কিন্তু আমাদের বজায় রাখতে হবে। সেটা বজায় রেখেই আমরা কিন্তু এগিয়ে যেতে পারি।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার যে আন্দোলন-সংগ্রাম ছিল; তা ছিল জাতি হিসেবে আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অধিকার অর্জনের মধ্যদিয়েই আমরা অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে পারি। আর আমাদের সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্র প্রসারিত হতে পারে। কাজেই আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই সবসময় এগিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই বিশ্ব দরবারে একটা মর্যাদাপূর্ণ দেশ হিসেবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বাংলাদেশ এক সময় ক্ষুধা ও দারিদ্রে জর্জারিত ছিল, আজকে আমাদের প্রচেষ্টায় আমরা তা থেকে মুক্তি পেয়েছি। তিনি বলেন, যে জাতি রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা আনতে পারে তারা কারো কাছে ভিক্ষা করে চলবে না। বিশ্ব দরবারে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে চলবে। সেটাই আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সেই চেষ্টাটাই আমরা করে যাচ্ছি। এ সময় জাতীয় উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপনে দেশবাসীর জন্য সরকারের ভাতা প্রদানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি অর্জনের পেছনেই কিন্তু রক্ত দিতে হয়েছে। অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। কিছুই এমনি এমনি হয় নাই। তিনি বলেন, বাংলা ১৪শ’ সাল উদযাপনের সময় তৎকালিন ক্ষমতাসীন বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উদযাপনের অনুমতি না দিয়ে পুলিশি ঘেরাও দিয়ে রাখে। অথচ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলে এই একটি দিন আমরা উদযাপন করি। সেই ব্যারিকেড ভেঙ্গে প্রয়াত কবি সুফিয়া কামালকে সঙ্গে নিয়ে ট্রাকের ওপর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উৎসবের অনুষ্ঠান করার কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানের কাছ থেকে আমরা আলাদা হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করলেও ওই পাকিস্তানীদের কিছু প্রেতাত্মা এখনও এ মাটিতে রয়ে গেছে যারা ওই প্রভুদের ভুলতে পারে না। যেজন্য আমাদের ঐতিহ্যের ওপর আঘাত আসে। ভাষার ওপর আঘাত আসে। রাজনৈতিক অধিকারের ওপর আঘাত আসে। বারবার আমাদেরকে সংগ্রাম করতে হয়। তবে, আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে। নিজস্ব প্রচেষ্টায় বিশ্বে আমরা সেই মর্যাদাটা অর্জনে সক্ষম হয়েছি। যাতে কেউ আমাদের এখন আর করুণা করার সাহস পায় না। সেই মর্যাদাটা ধরে রেখেই আমাদের বিশ্ব সভায় এগিয়ে যেতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, আজকে যাঁদেরকে আমরা এখানে পুরস্কৃত করলাম, আপনারা লক্ষ্য করেছেন আমাদের শিল্প-সাহিত্য, কলা থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে আমাদের অনেক রতœ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বাংলাদেশে। সেগুলো শুধু খুঁজে নিয়ে আসা এবং মর্যাদা দেয়া। এই মর্যাদাটা দেয়া একারণে যে, আমাদের আগামী প্রজন্মও যেন আমাদের এই ঐতিহ্যগুলি ধরে রাখতে পারে। আমাদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে পারে। আমাদের শিল্প-সাহিত্যকে ধরে রাখতে পারে, আমাদের কলা-কৌশলকে ধরে রাখতে পারে এবং তারা যেন উৎসাহিত হয়।
পদক বিজয়ীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যাঁরা একুশে পদক পেলেন আমি তাঁদেরকে আমার শ্রদ্ধা ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আগামীতে আমরা এভাবে আরো অনেককে মর্যাদা দিতে চাই। যেহেতু এটা একুশে ফেব্রæয়ারি তাই আমরা বেছে ২১ জনকেই নিয়েছি। কিন্তু আমরা জানি আমাদের আরো যোগ্য অনেকেই আছেন। পর্যায়ক্রমিকভাবে তাঁদেরকেও এই মর্যাদা আমরা দিতে পরবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ১৯৫২’র মহান ২১ শে ফেব্রæয়ারি ভাষার দাবিতে রফিক, সালাম, বরকতদের রাজপথ রঞ্জিত করার গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস স্মরণ করে এই আন্দোলন গড়ে তোলার পেছনে জাতির পিতার অনন্য অবদানের সংক্ষিপ্ত বর্ননা দেন। তিনি বলেন, ভাষার দাবিতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গঠিত রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ ‘বাংলা ভাষা দাবি’ দিবস পালনের ঘোষণা দেয়। সেই থেকেই প্রকৃতপক্ষে ভাষার দাবি রাজপথে গড়ায়। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ ঐদিন ইডেন বিল্ডিং, জেনারেল পোস্ট অফিস এবং অন্যান্য জায়গায় ব্যাপক পিকেটিং করে। পুলিশ ছাত্রদের লাঠিচার্জ করে এবং বঙ্গবন্ধুসহ অনেক ছাত্রকে আটক করে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের প্রচেষ্টায় ইউনেস্কো কতৃর্ক একুশে ফেব্রæয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের ঘটনারও বৃত্তান্ত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘প্রায় কুড়ি বছর আগে প্রয়াত রফিকুল ইসলাম, আবদুস সালামসহ কয়েকজন প্রবাসী বাঙালির উদ্যোগে এবং ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো কর্তৃক একুশে ফেব্রæয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আমাদের একুশ এভাবে পরিণত হয় পৃথিবীজোড়া মানুষের মাতৃভাষা দিবসে।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীদের সহযোগিতায় সমাবেত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত এবং অমর একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো’ পরিবেশিত হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠানে সভাপত্বি করেন। মন্ত্রী পরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম পদক বিতরণ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এবং পদক বিজয়ীদের সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত পাঠ করেন। এছাড়া সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইব্রাহিম হোসেইন খান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, জাতীয় সংসদের সদস্য, বিচারপতি, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও অধ্যাপক, রাজনীতিবিদ, কূটনিতিক, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিকসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।