পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : এক টুকরো তাজা ফল খেতে চায় না এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু এক টুকরো তাজা ফল খেতে পায় না এমন সাধারণ মানুষের সংখ্যা অনেক বেশী। আম, জাম, কাঠাল, লিচু থেকে শুরু করে বাংলাদেশী সকল ফলেরই ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বাঙালী সমাজে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী ফল খেতে পারছে না স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষ। বাঙালী সমাজে এমন অনেক পরিবার রয়েছে যারা মৌসুমে আম-কাঠাল ছাড়া অন্য কোন সময় ফল খাওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারে না। সমাজের ধনিক শ্রেণীর মানুষেরা ফল খায় প্রতিদিন। পক্ষান্তরে স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষ ফল খায় শুধুমাত্র অসুস্থ হলে। তাও এক টুকরো আপেল আর হাতে গোনা কয়েকটি আঙুর ছাড়া আর কোন ফল তাদের ভাগ্যে জোটে না। অথচ দেশে প্রতিবছর ১০ হাজার কোটি টাকার বিদেশী ফল আমদানী হয়। এসব আমদানীকৃত বিদেশী ফল প্রায় সবই চলে যায় ধনিক শ্রেণীর মানুষের পেটে। মজুদ রাখা হয় দামী ফ্রিজের গহŸরে। অস্বাভাবিক দামের কারণে সাধারণ মানুষ বিদেশী ফল খেতে পারে না। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে একজন মানুষের দৈনিক ফলের চাহিদা রয়েছে ১৫০ গ্রাম। এই হিসেবে বছরে দেশে কমবেশী এক কোটি মেট্রিক টন ফলের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ গড়ে খেতে পারছে মাত্র ৪০ গ্রাম ফল। তাও এই ৪০ গ্রামের বেশীই হচ্ছে দেশী ফল। বিদেশী ফল খাওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। সাম্প্রতিককালে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন ইত্যাদি দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে বিদেশী ফল আমদানী হচ্ছে। এসব বিদেশী ফল সাধারণত রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামেই বেশী বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু ইদানীং দেশের জেলা শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে এসব বিদেশী আমদানীকৃত ফল। এসব ফলের মধ্যে আপেল, আনার, আঙুর, কমলা, ইত্যাদি ছাড়াও রয়েছে শ্যারন বা গাব, কিউইর, নাট ফল, এভাকাডোর, নেকটারিন, বেবী ম্যান্ডারিন, ডুরিয়ন, হানি মেলন, পাম ফল, আনার, চেরি ইত্যাদি। বিক্রেতাদের দোকানে এসব বিদেশী ফলের বাহার দেখে সাধারণ মানুষ ভীড় জমাচ্ছে। বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসা করছে এসব ফলের নাম। কিন্তু বিক্রেতারা এসব বিদেশী ফল-ফলাদির নাম শুদ্ধভাবে বলতে পারছে না। বিকৃত নাম বলছে ক্রেতা সাধারণের কাছে। বিক্রি করছে অস্বাভাবিক দামে। এক কেজি শ্যারন বা গাব বিক্রি হচ্ছে ৬ শত টাকা দরে। এক কেজি কিউইর বিক্রি হচ্ছে ৮শ টাকা দরে। এক কেজি হানি মেলন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা দরে। এক কেজি ডুরিয়ন বিক্রি হচ্ছে ১২ শ টাকা দরে। এক কেজি পাম ফল বিক্রি হচ্ছে ৬ শ টাকা দরে। বিদেশী ফলের এই অস্বাভাবিক দাম শুনে সাধারণ মানুষের চোখ কপালে উঠে যাচ্ছে। কিন্তু ভাগ্যবান ব্যক্তিরা অনায়াসেই কিনে নিচ্ছে এসব দামী বিদেশী ফল। ধনিক শ্রেণীর লোকেরা যখন এসব দামী বিদেশী ফল কিনে নেয় তখন সাধারণ মানুষ অপলক নেত্রে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর একটি দীর্ঘশ^াস ছেড়ে চলে যায়। এসব দেখে সচেতন মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তারা জানায়, বিদেশী ফলের আমদানী শুল্ক বেশী হওয়ায় দাম পড়ে অনেক বেশী। যার জন্যে অস্বাভাবিক মূল্যে বিদেশী ফল বিক্রি করতে হয়। একজন ফল ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বিদেশী ফলের আমদানী শুল্ক হচ্ছে শতকরা ৯২ ভাগ। যার ফলে ১০০ টাকার আমদানীকৃত ফলের মূল্য দাড়ায় ১৯২ টাকা। আমদানীকারকরা কয়েকশ’গুণ লাভ ছাড়া বিদেশী ফল বিক্রি করে না। যার ফলে খুচরা বিক্রেতারা অস্বাভাবিক মূল্যে বিদেশী ফল বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এক্ষেত্রে সাধারণ সচেতন ক্রেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, ফল খাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। ধনী, নির্ধন সকলের জন্যই ফল সমান হারে প্রযোজ্য। কিন্তু এক্ষেত্রে ফল খাচ্ছে শুধু সমাজের ধনিক শ্রেণীর লোকেরা। কেউ খাবে, কেউ খাবে না এটা হতে পারে না। সাধারণ গরীব মানুষের মূল খাদ্য হচ্ছে দুবেলা দুমুঠো ভাত। এ থেকে তারা কার্বোহাইড্রেড পেয়ে থাকে। এর বাইরে তাদের ভাগ্যে অতিরিক্ত কিছুই জোটে না। যার ফলে তাদের শরীরে বিভিন্ন ভিটামিন তথা দেহ উপকরণের ঘাটতি থেকে যায় সবচে বেশী। ভারসাম্যপূর্ণ খাবারের অভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় সাধারণ মানুষ। যার ফলে তাদের শরীরের সাধারন কর্মক্ষমতা লোপ পায়। অকাল মৃত্যুর শিকার হয় সাধারণ মানুষ। সমাজে অকাল বৈধব্য ও এতিমের সংখ্যা বেড়ে যায়। এর উপর অসম বন্টনের কারণে সমাজে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। সমাজ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। ফলে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও বিভিন্ন ঔষুধী গুণ। নিয়মিত ফল খেলে সমাজ থেকে বহু সংখ্যক রোগের প্রার্দুভাব কমে যায়। কাজেই সাধারণ স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যই ফলের প্রয়োজন সবচে বেশী। কিন্তু তারা তা পাচ্ছে না। ফল চলে যাচ্ছে ভাগ্যবানদের ঘরে। তারা অনেকটা বিলাসিতা করে প্রয়োজনের চেয়েও বেশী পরিমাণ ফল খেয়ে থাকে। দেশের সকল নাগরিকদের যদি সমান অধিকার হয়ে থাকে তবে ফলের ক্ষেত্রেও এই সমান অধিকার কায়েম রাখা রাষ্ট্রের একান্ত কর্তব্য। ৯২ শতাংশ আয়কর নির্ধারণ করে এনবিআর বছরে বিদেশী ফল আমদানী থেকে কত কোটি টাকা রাজস্ব পায়, তার সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এনবিআর আপেল ও কমলা আমদানী থেকে শুল্ক হিসেবে ১৩২৬ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যান্য ফল-ফলাদী আমদানী থেকে যদি আরো ৬/৭ শ কোটি টাকা রাজস্ব পায় তাহলে ধরে নেয়া যায় যে, আমদানীকৃত বিদেশী ফল থেকে বছরে ২ হাজার কোটি টাকা আয় করতে পারে এনবিআর। এক্ষেত্রে সরকার যদি আমদানীকৃত ফলের শুল্ক হার অর্ধেক কমিয়ে দেয় তবেই বিদেশী ফল দেশের বেশীরভাগ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে। বর্তমান বাজারে এক কেজি আপেল বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এক কেজি কমলা বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এক কেজি আঙুর বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। শুল্ক হার অর্ধেক কমানো হলে আপেল, কমলা আঙুরসহ বিভিন্ন ফলের দাম অর্ধেক কমে যাবে। এই দামে এসব ফল-ফলাদী বিক্রি হলে দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ না খেতে পারলেও বেশীরভাগ মানুষ এসব ফল কিনতে পারবে। ফলের দাম কমলে গরীব মানুষের ঔষুধের ব্যয়ও কমে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।