Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

খালেদা জিয়ার নির্দেশনা মেনেই বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলন

প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৯:৫৬ এএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

ফারুক হোসাইন : শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই সারাদেশে জনমত গঠন, জনসমর্থন আদায় এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে চায় দলের নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়াকে কারাগারে প্রেরণের ফলে মানুষের মাঝে তৈরি সহমর্মিতা এবং ইতিবাচক কর্মসূচিতে তাদের সমর্থনের মাধ্যেই সফলতা দেখছেন তারা। এজন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নির্দেশনা মেনে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চায় বিএনপি। কারাদ- হওয়ার আগে এবং কারাগার থেকেও এই বার্তায় দিয়েছেন বিএনপি প্রধান। স্থায়ী কমিটি, ভাইস-চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা, ২০ দলীয় জোটের সভাতেও ভিডিও বার্তায় শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। দুই নেতাই নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সারাদেশের তৃণমূল নেতাদের কাছেও বার্তা দেওয়া হয়েছে কেউ যাতে সহিংসতা সৃষ্টি করতে না পারে। মানুষের জান-মালের ক্ষতি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে নেতাকর্মীদের। কোন উস্কানীতে পা দিয়ে সরকারকে সুযোগ না করে দিতে বলা হয়েছে তাদের। এছাড়া অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়েও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদ- হওয়ার আগের দিন ৭ ফেব্রুয়ারি দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে নির্দেশ দিয়ে যান যে, তার জেল হলেও নেতাকর্মীরা যেন শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করে। কোন ধরণের সহিংসতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সরকারকে সুযোগ তৈরি না করে দিতে তিনি বার্তা দেন। যে কোন কর্মসূচিই ঐক্যবদ্ধভাবে পালনের কথাও বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। পরবর্তীতে ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারদা- দিয়ে নাজিমউদ্দীন রোডের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। সেখানে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেখা করতে গেলে তাদের মাধ্যমেও তিনি একই বার্তা দিয়েছেন। বিশেষ করে সরকারের পাতা ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য তিনি নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ও প্রতিবাদ করতে বলেছেন। খালেদা জিয়াকে কারাগারে প্রেরণের পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় তারেক রহমানকে। তিনি লন্ডনে থাকায় দলের শীর্ষ নেতা ও জোটের সভায় ভিডিও বার্তায় তিনি খালেদা জিয়ার নির্দেশনাকেই স্মরণ করিয়ে দেন। দুই নেতার একই সুরে ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপি নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও অনশনের মতো শান্তিপূর্ণ ও অহিংস কর্মসূচি পালন করে চলেছেন তারা। সপ্তাহজুড়ে এসব কর্মসূচি পালনে দেখা গেছে ভিন্ন বিএনপিকে। সুশৃঙ্খল ও অনুগত নেতাকর্মীরা ধৈর্য্যরে পরিচয় দিচ্ছেন। গণগ্রেফতার, পুলিশের লাঠিপেটা, বাধা প্রদান করলেও কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়াচ্ছেনা কেউই। এছাড়া চলমান আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের নির্বাচনী প্রচারের কাজ সমানতালেই চলছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে যে কর্মসূচি পালন হচ্ছে, তার প্রতিটিতেই জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ আসছে। সবাই বলছেন, চেয়ারপারসনকে নিয়ে তারা নির্বাচনে যাবেন। এসব কর্মসূচিতে স্থানীয় নেতাকর্মীসহ সম্ভাব্য প্রার্থীরা বেশি তৎপর। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দল সম্পর্কে ভালো বার্তা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনের বিষয়ে দলটি যে ইতিবাচক, সে খবরও যাচ্ছে দেশবাসীর কাছে।
সূত্র জানায়, ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর শনিবার বিকালে দলের নীতিনির্ধারকরাসহ ৫ আইনজীবী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। দলের ভবিষ্যৎ করণীয় ও তার মুক্তির ব্যাপারে সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আগামী দিনের আন্দোলনে করণীয় সম্পর্কে আইনজীবীদের মাধ্যমে কিছু নির্দেশনা পাঠান দলের চেয়ারপারসন। চেয়ারপারসনের নির্দেশনা মেনেই আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণোয়ন করে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম স্থায়ী কমিটি। ঘোষণা দেওয়া হয় মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও অনশনের। বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, গত কয়েকদিনের ধারাবাহিক কর্মসূচিতে সারাদেশেই নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করে। চলতি মাসে একই ধরণের আরও কিছু কর্মসূচি আসবে বলে তিনি জানান। এর মধ্যে এই মাসে রাজধানীসহ সারাদেশে বেশ কিছু শান্তিপূর্ণ র‌্যালী করবে বিএনপি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে প্রত্যেকটি জেলার ডিসি, উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান, গণস্বাক্ষর অভিযান, লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিও ঘোষণা করতে পারে দলটি। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে জনসমর্থন আদায়, জনমত গঠন এবং সরকারের উপর চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, সরকার বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দেখে হতাশ হয়েছে। তারা মনে করেছিল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা সহিংসতা চালাবে এবং সুযোগ নেবে সরকার। সহিংসতা ও জ্বালাও-পোড়ায়ের ফলে নতুন করে মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের জেলে নিবে। কিন্তু খালেদা জিয়ার নির্দেশনা মেনে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় হতাশ হয়েছেন সরকার ও আওয়ামী লীগ। তারা আরও জানান বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ফলে জনসমর্থন বাড়ছে। সাধারণ মানুষ এটিকে ইতিবাচক হিসেবে নিচ্ছে এবং সরকার যে বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় সাজা দিয়েছে তা সাধারণ মানুষের আলোচনাতেই ফুটে ওঠছে। অন্যদিকে চাপ বাড়ছে সরকারের ওপর। এজন্য ইতিবাচক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিই অব্যাহত রাখতে চায় দলের নেতারা।
গত মঙ্গলবার কূটনীতিকদের সাথে বৈঠকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার কারাদ-, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতারসহ নানা বিষয়ে কূটনীতিকদের অবহিত করেছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার মামলার সকল ডকুমেন্টও দেওয়া হয়েছে তাদের হাতে। কারাদ- দেওয়ার পর প্রাপ্য ডিভিশন না দেওয়া, রায়ের কপি দিতে গরিমসি, জরাজীর্ণ-পরিত্যাক্ত ভবনে সুযোগ-সুবিধাবিহীন রাখাসহ সার্বিক বিষয় তুলে ধরা হয় তাদের সামনে। সরকারের এমন আচরণে অনেক কূটনীতিক উষ্মা প্রকাশ করেছেন বলে জানান বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা। কূটনীতিকরা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থারও খোঁজ-খবর নিয়েছেন। তবে বৈঠকে কূটনীতিকরা বিএনপি নেতাদের পরামর্শ দিয়েছে দেশে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখতে। খালেদা জিয়ার মামলা এবং কারাদ- ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়ায় এগুতে বলেছেন তারা। যে কোন মূল্যে সহিংসতার পথ এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। এখন পর্যন্ত বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের প্রশংসাও করেন তারা।
এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলকে কেন্দ্র করে দল আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। নেতাকর্মীরা সক্রিয় হচ্ছেন। তারা রাজপথে নেমে আসছেন। তারা আত্মগোপন থেকে প্রকাশ্যে চলে আসছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে আন্দোলন ইস্যুতে কথা বলছেন। তাদের এ সক্রিয়তা ও চাঙ্গাভাব আগামী আন্দোলন ও নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন রাজপথমুখী। আগে যেখানে তাদের নামানোই যেত না, এখন তারা পথে নামছেন। একসময় তৃণমূলের নেতারা কেন্দ্রের অনেক নেতার প্রতি অভিযোগের আঙুল তুলতেন। কেন্দ্র থেকে দায় চাপানো হতো অন্যদের ওপর। অনেক দিন থেকেই এভাবে পাল্টাপাল্টি চলছিল। কিন্তু দলের চেয়ারপারসনের কারামুক্তির দাবিতে সবাই আগের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামছেন। পালিয়ে থাকা, দায় চাপানো বা অভিযোগ করার প্রবণতাও কমছে। নেতাকর্মীরা বুঝতে পারছেন তাদের রাজপথে নামার বিকল্প নেই।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশনেত্রীর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে। দেশনেত্রী কারাগারে যাবার আগে বলে গেছেন, ধৈর্য ধরতে, শান্ত হতে এবং শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যেতে। দেশনেত্রীর নির্দেশ মেনে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানেরও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। নেত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়ে গেছেন, আমরা হরতাল-অবরোধের মতো কোনো কর্মসূচিতে যাব না। নিয়মতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের যে প্রতিবাদ চলছে, তা অব্যাহত থাকবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার মনে করেছিল বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নিলে বিএনপিতে ভাঙন ধরানো যাবে। কিন্তু তাদের সেই আশায় গুড়ে বালি হয়েছে। বিএনপি অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। বিএনপিতে ভাঙন ধরানোর ক্ষমতা এখন তাদের নাই। আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা। আর সেটি আমাদের নেত্রীর নির্দেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে।
ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিসহ অন্যান্য যে নির্দেশনা আমাদের দিয়েছেন আমরা সারাদেশে সেই বার্তা দিয়ে দিয়েছি। কেউ যাতে পাতা ফাঁদে পা না দেয় এবং সকলতে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সব কর্মসূচিই শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হবে, একটি ঢিলও ছুড়বেনা বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির প্রতি জনসমর্থন বাড়ছে এবং সরকারের উপর চাপ বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলে নেয়া এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কারণে বিএনপির প্রতি জনসমর্থন অনেতগুণ বেড়ে গেছে। জনতাকে সাথে নিয়েই আমরা দেশনেত্রীকে মুক্ত করে আনবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ