পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে/ রাতের বাসরে দোসর হয়ে তাই সে আমায় টানে/-----/ আকুল ভ্রমরা বলে সে কথা বকুলের কানে কানে’। তালাত মাহমুদের এই গানের মতো চাঁদ জানুক না জানুক; ভ্রমরেরা বকুলের কানে কানে কথা বলুক না বলুক ফাগুনের প্রথম দিনে পরীরা যেন আকাশ থেকে নেমে এসেছিল ইট-পাথরের রাজধানীর এই মাটিতে। বাংলা একাডেমী, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, টিএসসি, দোয়েল চত্বর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বকুল তলায় যেন চাঁদ-পরীদের বসেছিল মিলনমেলা। যানজট ও বায়ু দুষনের এই রাজধানী ঢাকায় বসবাসরত মানুষের যান্ত্রিক জীবনে হা-পিত্যেষের অন্ত নেই। সেখানে একদিনের জন্য হলেও লেগেছিল ফাগুনের বসন্ত উৎসব। বাংলা একাডেমীর বইমেলার আনন্দ বারতা, নারীর খোঁপায় গোঁজা ফুল, টায়রা, হাতভর্তি রেশমি চুড়ি, বাসন্তী শাড়ি পরিহিত ঝাকে ঝাঁকে তরুণীর কলকাকলি দেখে কোনো বাউÐুলে কবি যদি মনের অজান্তে গেয়ে ওঠেন ‘বসন্ত বাতাসে...সই গো /বসন্ত বাতাসে/বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ/ আমার বাড়ি আসে...’ (শাহ আবদুল করিম) তাহলে তাকে কি দোষ দেয়া যায়? জাতীয় কবি কাজী নজরুল তো লিখেছিলেন ‘তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সেকি মোর অপরাধ’। তরুণ নজরুলের এই চাহনিকে সেদিন যদি অপরাধ হিসেবে ধরে নিতাম তাহলে তাঁর মতো ক্ষণজন্মা কবিকে কী আমরা পেতাম?
‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক/ আজ বসন্ত’ (সুভাষ মুখোপাধ্যায়)। পশ্চিম বাংলার এই কমরেড কবি যখন কবিতাটি লেখেন তখন প্রকৃতি কেমন সাজে ছিল জানি না। তবে এবার বসন্তের প্রথম ফাগুনে সত্যিই প্রকৃতি সেজেছিল বর্ণিল সাজে। শীতের রুক্ষতা ঝেড়ে ফেলে গাছেরা সেজেছে নতুন সবুজ-সজীব পাতায়। এতো বসন্তের আগমনী বারতা! শিমুল-পলাশের ডালে ডালে আগুন রাঙা ফুলের সমাহার। বর্ণিল, আলোক উজ্জ্বল, প্রাণ প্রাচুর্য্যময় ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করতে হৃদয়ের সকল উচ্ছ¡লতা ঢেলে দেয় রাজধানীর তরুণ-তরুণী কিশোর-কিশোরীরা। আহা কিশোরী! তোমার ডাগর ডাগর চোখ!! গতকাল বসন্তের প্রথম দিনে পূর্ব আকাশে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী নর-নারীর ঢল নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুল তলায়। বিকেলে বাংলা একাডেমীর বই মেলায়। মেয়েরা বাসন্তী শাড়ি, রঙিন চুড়ি, রঙিন জামা, খোপায় বেলি-গোলাপ ফুল; আহা ! আহা!! আহা !!!
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘আহা আজি এ বসন্তে /কত ফুল ফোঁটে কত বাঁশি বাজে/কত পাখি গায়...’। কাজী নজরুল ইসলাম ‘এলো বনান্তে পাগল বসন্ত’। বাংলা ভাষার হাজারো কবি পহেলা ফাগুন ও ঋতুরাজ বসন্তের রুপ-যৌবন-সৌন্দর্যের আবির কবিতা-গীতিতে ছিঁটিয়েছেন। বাংলা ভাষার কবি-শিল্পীদের ফাগুনকে নিয়ে আক্ষেপেরও শেষ নেই। কণ্ঠশিল্পী তপন চৌধুরীর ‘পলাশ ফুটেছে শিমুল ফুঠেছে/ এসেছে দারুন মাস/ আমি জেনে গেছি তুমি আসিবে না ফিরে/ মিটিবে না পিয়াস---’ এমন মর্মবেদনা কতভাবেই না ফুটিয়ে উঠেছে। ফাগুন তোমাকে ঘিরেই!
আহা বসন্ত! এই নগরের তরুণ-তরুণীর প্রাণের উচ্ছাসের বসন্ত!! হুমায়ূণ আহমেদের হিমুদের বসন্ত!!! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় গতকাল জাতীয় বসন্ত উদযাপন পরিষদ আয়োজন করে বসন্ত উৎসব। সকালে গিটারে রাগ বসন্ত বিহারের মূর্চ্ছনায় শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। গান, কবিতা আর সম্মিলিত নৃত্যে ভরে উঠে মঞ্চ। যেন সুরো মূর্চ্ছনায় একঝাক পরীর নৃত্য। সেখানে বাসন্তী রঙ শাড়ি পরিহিত তরুণী এবং বাসন্তী রঙ এর হুমায়ুন আহমেদের হিমু জামা কাপড় পরিহিত তরুণ, বাসন্তী রঙ বেরংয়ের জামা পরিহিত শিশুদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে বকুলতলা। বিকেলে এই ছোঁয়া লাগে অমর একুশে বইমেলায়ও। বইমেলা মুখরিত হয়ে উঠে বাসন্তী রঙের পোশাকিদের পদচারণায়। বিকেল ৩টায় বই মেলার গেইট খোলার সঙ্গে সঙ্গে নগরীর বিভিন্ন প্রান্তের তরুণ তরুণীসহ সব বয়সী মানুষ বইমেলায় ভিড় জমায় বাসন্তী সাজে। কেউ ঘুরেছেন একা, কেউ দলবেধে, কেউ পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে, আবার কেউ প্রিয় মানুষটি আঙুলে আঙুল জড়িয়ে। গতকাল মেলায় যারা গেছেন তারা জানান, বর্ষাকালে নদীতে বান এলে মাছেরা যেমন ঝাকে ঝাকে ঘুরে বেড়ায়; নারীরাও যেন সেভাবেই দল বেঁধে লাগামহীন ঘুরেছেন বইমেলার এখানে ষেখানে। বইয়ের স্টলের চেয়ে মূল সড়ক আর মেলার ভেতরে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় অনেককে। অনেকে পছন্দের জায়গায় সেলফি তুলছেন। কেউ আবার চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। একই পরিবারের যারা মা-বাবা-ভাই-বোন নিয়ে এসেছেন তারা প্রেমে সেলফি তুলেছেন। ফাগুনের প্রথম দিনে সব তরুণীই নিজেদের রাঙিয়েছেন বাসন্তী শাড়িতে। মেলায় লাল, হলুদ শাড়ি পরিচিত তরুণীদেরও দেখা গেছে। খোঁপায় ফুলের মুকুট, হাতভর্তি রেশমি চুড়ি। তরুণরাও হলুদ-বাসন্তী পাঞ্জাবিতে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে বেশ। অনেকেই নিজের ছোট্ট সোনামণিটাকেও সঙ্গে নিতে ভোলেননি। তাকেও সাজিয়েছেন প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে। বইমেলার প্রায় প্রতিটি স্টলে ছিল বসন্তের ছোঁয়া।
উত্তুরের হিমেল হাওয়া থেমে গেল; দখিনা বাতাসে ঘুচে গেল পাতা ঝরার রিক্ত-বেদনা; বছর শেষে নগরে ফিরে এলো যেন ফাগুনের আগুন-বসন্ত। হঠাৎ করে এক দিনের জন্য যেন পাল্টে যায় রাজধানীর গুমোট চেহারা! গতকাল দু’চোখ যেদিকে গেছে সেদিকেই বাসন্তী, হলুদ, সবুজ, লাল চারপাশ। ভয়-আতঙ্ক যাদের নিত্যসঙ্গী; মাসের পর মাস, বছরের পর বছর অনিশ্চয়তায় কেটেছে; তারা সবাই যেন জীবন রাঙিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন রাস্তায়। বসন্ত উৎসব প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে একাকার করে সবাই গেয়েছেন জীবনের গান ‘আহা আজি এ বসন্তে -- ’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।