পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ডিভিশন দেয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা হাতে পাওয়ার পর গতকাল কারা মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়ার পর ডিভিশন না দেয়ায় ব্যাপক বিতর্ক হয়। দু’দিন থেকে সরকারের মন্ত্রীরা দাবি করেন বেগম জিয়াকে কারাগারে সকল সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বিএনপির আইনজীবীরা অভিযোগ করেন বেগম জিয়াকে সাধারণ সাজাপ্রাপ্ত আসামীর মতোই কারাগারে রাখা হয়েছে। বেগম জিয়াকে কারাগারে ডিভিশন দেয়া না দেয়া নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে তখন গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন।
তিনি বলেন, জেলকোড অনুযায়ী সাবেক প্রেসিডেন্ট কারাগারে ডিভিশন পাবেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া নেই। তাই খালেদা জিয়াকে সাধারণ কয়েদি হিসেবে রাখা হয়েছে। সাধারণ কয়েদিদের মতো খাবার দেয়া হচ্ছে। তবে বাইরে থেকে তাকে ড্রাই ফুড (শুকনা খাবার) দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত কোনো সুবিধা দেয়া হয়নি। জেলকোডের নিয়ম অনুযায়ী কয়েদির পোশাকই খালেদা জিয়ার পরার কথা। একজন সার্বক্ষণিক নার্স রাখা হয়েছে; প্রয়োজন মনে করলে তাকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেয়া হবে। কারাগারে খালেদা জিয়াকে ভিআইপি মর্যাদা দেয়ার আহবান জানিয়ে গতকাল ঢাকা বারের ২৯২১ জন আইনজীবী গতকাল বিবৃতি দিয়েছেন। তারা বলেছেন, জেল কোডের বিধান অনুযায়ী বেগম খালেজা জিয়া বন্দীর শ্রেণী বিন্যাস অনুযায়ী মহিলা বন্দী সামাজিক মর্যাদায় ও ভাল চরিত্রের অধিকারীসহ অন্যান্য যোগ্যতা অনুযায়ী প্রথম শ্রেণীর ডিভিশন পাওয়ার হকদার। তাছাড়া জেল কোডের ৬১৭ ধারা অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়া প্রথম শ্রেণীর ডিভিশন পাওয়ার হকদার। যেহেতু বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, চলাফেরা করতে অসুবিধা হয় সেই কারণে জেল কোডের ৩৭ ধারা অনুযায়ী সুবিধা পাওয়ার হকদার। ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সি অনুযায়ী এর তালিকায় ১ নাম্বারে প্রেসিডেন্ট এবং ২ নাম্বারে প্রধানমন্ত্রী লেখা আছে। সেই কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া বন্দী হিসাবে সকল সুবিধা পাওয়ার হকদার।
এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত আইনজীবী সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে ডিভিশন পাবেন। এ জন্য আদালতের নির্দেশনার অপেক্ষা করতে হবে এগুলো ঠিক নয়। কারাগারে বন্দীদের কারা কেমন সুবিধা পাবেন সেটা জেল কোডে রয়েছে। সব দেশেই থাকে সে দেশের সম্মানিত ব্যাক্তিদের বিশেষ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং যে নেতানেত্রীদের প্রতি দেশের মানুষের অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকে। কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার ডিভিশন নিয়ে যা হচ্ছে এগুলো ঠিক নয়। শাসকদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। বেগম জিয়ার ডিভিশনের জন্য আদালতের নির্দেশনা বা জেলকোড দেখতে হবে এমন নি¤œমানের চিন্তা চেতনা দুর্ভাগ্যজনক। রাজনীতিকদের মনে রাখতে হবে সব সময় পরিস্থিতি এক থাকে না।
বেগম জিয়াকে কারাগারে ভিআইপি সুবিধার চেয়েও বেশ সুবিধা দেয়া হচ্ছে গত দুদিন এমন বক্তব্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু কারা মহাপরিদর্শন বেগম জিয়াকে সাধারন বন্দী হিসেবে রাখা হয়েছে বক্তব্য দেয়ার পর নিজের বক্তব্য ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গিয়ে ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেন, জেল তো জেলই, আরাম আয়েশের জায়গা নয়। খালেদা জিয়া কারাগারের বিধি অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তাকে কোনো অমর্যাদা করা হচ্ছে না।
সাবেক ডিআইজি প্রিজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর শামছুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, কোন সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাজাপ্রাপ্ত হলে জেলকোড অনুযায়ী ডিভিশন দেয়ার বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই। ডিভিশন পাওয়ার জন্য হয় আদালতে আবেদন করতে হবে অথবা জেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে। পরে জেল কর্র্তপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী বা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ডিভিশন প্রদান করবে। ‘একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেন ডিভিশন পাবেন না’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেল কোডে এ ব্যাপারে ডিভিশন দেয়ার কোন নির্দেশনা নেই। তাছাড়া তিনি যে রাজনৈতিক দলের প্রধান সে দলের কোন সদস্য জাতীয় সংসদের সদস্যও নন, এ জন্য ডিভিশন পাওয়ার সুযোগ নেই। তবে তার পক্ষ থেকে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে দ্রæত সময়ের মধ্যে তিনি ডিভিশন পেতে পারেন। যেহেতু তিনি নৃশংসতা, নৈতিক স্খলন এবং ব্যক্তিগত প্রতিহিংসামূলক অপরাধ বা বিস্ফোরক আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে রাখা, সম্পত্তি সংক্রান্ত মারাত্মক অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত নন।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়ার বলেন, জেলকোডের ৬১৭ ধারা অনুযায়ী খালেদা জিয়া ডিভিশন পান। গত তিন দিন আমরা ডিভিশনের আদেশ দিতে পারিনি (কারা কর্তৃপক্ষকে), কিন্তু আইন অনুযায়ী জেল সুপার নিজেই ডিভিশন দিতে পারতেন। তিনি কেন এটা দেননি, সেটা আমরা জানি না। আমরা কোর্টে আবেদন করার পর আজকে (সোমবার) কোর্ট ডিভিশনের অর্ডার দিয়েছেন। ইতোমধ্যে আদালত তার প্রসেস সার্ভারের মাধ্যমে অর্ডার কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমরাও ডিআইজি প্রিজনের সঙ্গে দেখা করে অর্ডার পৌঁছে দিয়েছি। এখন খালেদা জিয়া জেলকোডের বিধান অনুযায়ী প্রথম শ্রেণীর বন্দি হিসেবে সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন। খালেদা জিয়া অসুস্থতার কারণে আমরা তার সহযোগী রাখার আবেদন করেছিলাম। আদালত জেলকোড অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
কারাবিধি ঃ জেলকোডের ৬১৭ বিধি- ‘যারা ভালো চরিত্রের অধিকারী ও অনভ্যাসগত অপরাধী; সামজিক মর্যাদা, শিক্ষা এবং অভ্যাসের কারণে যাদের জীবন যাপনের ধরন উচ্চমানের এবং যারা নৃশংসতা, নৈতিক স্খলন এবং ব্যক্তিগত প্রতিহিংসামূলক অপরাধ বা বিস্ফোরক আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে রাখা, সম্পত্তি সংক্রান্ত মারাত্মক অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত নন বা অন্য কাউকে এসব অপরাধ করতে প্ররোচিত বা উত্তেজিত করেনি তারা ডিভিশন-১ প্রাপ্তির যোগ্য হবেন’। এছাড়া বিধি ৬১৭ (২), ‘নাগরিকত্ব নির্বিশেষে সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা এবং অভ্যাসের কারণে জীবন যাপনের ধরন উচ্চমানের বন্দিগণ ডিভিশন-২ প্রাপ্তির যোগ্য হবেন। অভ্যাসগত বন্দিগণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই শ্রেণির বহির্ভূত হবে না, সরকারের অনুমোদন বা পুনর্বিবেচনার শর্তে শ্রেণি বিভাজনকারী কর্তৃপক্ষকে বন্দির চরিত্র এবং প্রাক পরিচিতির ভিত্তিতে এ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য ক্ষমতা দেওয়া হবে। যেসব বন্দি ডিভিশন ১ ও ২ এর অন্তর্ভুক্ত নয় তারা তৃতীয়টির অন্তর্ভুক্ত হবেন। যেখানে বলা হচ্ছে, আদালত কোনও বন্দিকে ডিভিশন ১ ও ডিভিশন ২ প্রদানের জন্য প্রাথমিক সুপারিশটি সরকারের অনুমোদন কিংবা পুনর্বিবেচনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন এবং মন্ত্রণালয় সেটি অনুমোদন বা পুনর্বিবেচনা করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।