পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1719627314](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করে গেলেন ভাই-বোনসহ পরিবারের চার সদস্য : কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার
বিশেষ সংবাদদাতা
জেলে ভয়হীন আত্মবিশ্বাসী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের নীচ তলায় অফিস ভবনের একটি কক্ষে রাখা হয়েছে তাকে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ভাই-বোনসহ পরিবারের চার সদস্য দেখা করে এসেছেন বেগম খালেদা জিয়া সাথে। এটি ছিল তাদের পারিবারিক স্বাক্ষাত। যারা দেখা করেছেন তারা হলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা ও তাদের ছেলে অভিক ইস্কান্দার। স্বাক্ষাতের সময় কোন রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি সেখানে। পরিবারের সদস্যরা প্রায় দেড় ঘণ্টা কারাগারের ভেতরে অবস্থান করলেও সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলেননি। তারা অন্যদিকে দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান। একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে, বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দারকে বলেছেন, নেতা-কর্মীরা যেন ধয্যধারন করে, জেল জুলুম তিনি ভয় করেন না। এদেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য অটল অবিচয় থাকবেন তিনি। তার এ আন্দোলন মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠান আন্দোলন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠান আন্দোলন। অন্যদিকে গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বিএনপির দুই নারী কর্মী এক ঝুড়ি ফল নিয়ে তাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করার অনুমতি চান। কিন্তু অনুমতি না পাওয়ায় তাদের ফিরে যেতে হয়।
কারা অধিদপ্তরের ডিআইজি মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তাদের চারজনকে ভেতরে গিয়ে দেখা করার অনুমতি দেয়া হয়। এরপর বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে কারাগারের ফটক দিয়ে গাড়ি নিয়ে বের হন। পরে চকবাজার হয়ে চলে যান তারা। এর আগে বেলা তিনটার দিকে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে দেখা করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি চান। অনুমতি পাওয়ার পর তারা কারাগারে প্রবেশ করেন।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারে নেয়ার পর তাকে পেপের শরবত ও কিছু ফল পরিবেশন করা হয়। তাকে কারাগারের মুল ফটকের পাশের যে কক্ষে রাখা হয়েছে, সেখানে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ (এসি) ব্যবস্থা রয়েছে ও টিভিতে ডিস সংযোগ দেয়া হয়েছে গতকাল।
কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারাগারে বেগম খালেদা জিয়া সঙ্গে রয়েছে তার ব্যক্তিগত গৃহকর্মী ফাতেমা। কারাগারে নেয়ার পর কারা চিকিৎসক আহসান হাবিব তার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেন। এ সময় বেগম খালেদা জিয়ার রক্তচাপ স্বাভাবিক ছিল। এরপর তাকে অল্প চিনিযুক্ত ফলের জুস পরিবেশন করা হয়। এসব ফলের মধ্যে ছিল পেঁপে, আপেল, কমলা ও আঙুর। কারাগারের এক কর্মকর্তা জানান, কক্ষটি একদম ঝকঝকে করা হয়েছে। কক্ষটিতে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ, ডিসের লাইনের ব্যবস্থা ও আরামদায়ক বিছানা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কক্ষের পাশে রান্নাঘর এবং স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিষ্কার শৌচাগারের ব্যবস্থা রয়েছে। তাকে পুরোনো কারাগারে ডে কেয়াার সেন্টারের কাছে মহিলা ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত হতে পারেন।
গতকাল সকালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য ফল নিয়ে যাওয়া বিথিকা বিনতে হোসাইন ও রওশন আরা নামে দুই নারী কর্মী সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের মা গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে কারাগারে আছেন। তিনি কি খেয়েছেন বা তাকে কি কি খেতে দেয়া হয়েছে তা আমরা জানি না। সে কারণেই আমরা মায়ের পছন্দের ফল নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের যেতে দেয়নি। ফলগুলো দিতে পারলে মা কিছুটা খেতে পারতেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর স্ত্রী বিথিকা বিনতে হোসাইন। অন্যজন রওশন আরা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীর স্ত্রী।
গতকাল কারাগার ঘুরে দেখা গেছে, পুরানত কেন্দ্রীয় কারাগার ঘীরে কটোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। কারাগারের চারপাশের যে রাস্তা রয়েছে তার একশত গজ দূর থেকে বেষ্টনি গড়ে তুলেছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব ও সাদা পোষাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সারাক্ষন অবস্থান করছেন। নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে সংবাদকর্মীসহ কাউকেই প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি দলীয় নেতা-কর্মীরা দেখা করতে গেলেও অনুমতি মিলছে না কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। নাজিমউদ্দিন রোড থেকে ঢাকা কেন্দ্র্রীয় কারাগার দুই বছর আগে কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেয়ায় পুরনো কারাগারে এখন তিনিই একমাত্র বন্দি। কারা কর্তৃপক্ষ এখন ভবনটিকে বলছে, বিশেষ কারাগার। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার আগে থেকেই কারাগার ঘিরে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা। একজন জেলার, একজন ডেপুটি জেলার ও কয়েকজন কারারক্ষী রয়েছে কারাগারের ভেতরে।
ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেছেন খালেদা জিয়া
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের কারাদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিলের জন্য ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিচারিক আদালতের রায়ের সার্টিফায়েড কপি পেলে রোববারেই হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল করা হবে বলে জানান, বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে আমরা গতকালকেই (বৃহস্পতিবার) ওনার ওকালতনামায় স্বাক্ষর নিয়ে এসেছি। কারা কতৃপক্ষ ওকালতনামা সত্যায়ন করেছেন।
সকলের মনোযোগ পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে
একদিনের মধ্যে বদলে গেছে কারাগারের আশপাশের চিত্রও। গতকাল পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে ঘীরে শত শত মানুষের আগম ছিল চোখে পড়ার মতো। কারাগারের প্রধান ফটক থেকে দুই পাশে একশ গজ দূরে রয়েছে পুলিশের ব্যারিকেড। গতকাল চকবাজার হাজী সেলিম টাওয়ারের সামনের রাস্তা, বেগমবাজার মোড়, প্রধান ফটকের সামনে আবুল হাসনাত রোডে এবং নাজিমউদ্দিন রোডের সামনেও ব্যারিকেড দেখা গেছে। ব্যারিকেডের ভেতরে প্রবেশ বন্ধের পাশাপাশি ছবি তুলতে গেলেও বাধা দেয় আইনশৃংখলা বাহিনী। এদিকে আইনৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বৃহস্পতিবার বন্ধ করে দেয়া নাজিমউদ্দিন রোডের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুক্রবারও খোলেনি। মানুষজনকে চলতে হচ্ছে ওই এলাকা এড়িয়ে, বিকল্প পথে। বাসা থেকে খুব দরকার না হলে কেউ বের হচ্ছেন না। স্থানীয়ভাবে জেলখানার ঢাল হিসেবে পরিচিত ওই এলাকার বন্ধ একটি দোকানের মালিক জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে পুলিশের ব্যারিকেড বসলেও সকাল থেকেই এই রাস্তায় মানুষজন চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। শুক্রবারও একই অবস্থা। আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে।
কারাফটকে ৩ আইনজীবী
বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থানের বিষয়ে আবেদন নিয়ে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে যান তার তিন আইনজীবী। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে তারা কারাফটকে পৌঁছান। এ তিন আইনজীবী হলেন-ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন ভূঁইয়া ও অ্যাডভোকেট এস এম জুলফিকার আলী জুনু। জাকির হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানান, বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থানের বিষয়ে আবেদন নিয়ে তারা জেলারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। কারা কর্তৃপক্ষের কাছে জেলারের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। পৌনে এক ঘণ্টার মতো তারা কারাফটকে অপেক্ষার পর দায়িত্বরত পুলিশের পক্ষ থেকে কারা অধিদফতরে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তখন তারা সেখান থেকে হেটে অদূরে কারা অধিদফতরের দিকে যান। পরে তারা কথা বলে ফিরে আসেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।