Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আওয়ারিফুল মাআরিফ গ্রন্থলেখক শেখ শাহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী

প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কে. এস. সিদ্দিকী

(১৮ মার্চ প্রকাশিতের পর)
গাউসুল আজম হযরত আবদুল কাদের জিলানী (র.)-এর সময়ে হোকামায়ে এশরাকীনের মতবাদ প্রচলিত ছিল। এশরাকীন নামে পরিচিত এ দল রিয়াজত সাধনায় লিপ্ত থাকত। তারা আত্মশুদ্ধি ও কাশফের মাধ্যমে শিয়াদের দূরে অবস্থানের শিক্ষা দিতেন। সংসার ত্যাগী ও বৈরাগ্য জীবনযাপন ছিল তাদের লক্ষ্য। এ দলের একজন বিখ্যাত দার্শনিক ও শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারীর নামও ছিল শাহাবুদ্দীন ইয়াহিয়া ইবনে হাবস সোহরাওয়ার্দী (৫৪৯-৫৮৭ হি./১১৫৪-১১৯১)। শেখ শাহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীর নামের সাথে এশরাকী শাহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীর নামের মিল থাকায় অনেকে মনে করতে পারেন উভয় ব্যক্তি এক ও অভিন্ন। কিন্তু আসলে তা নয়। এশরাকী শাহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীর জন্ম ইরানের সোহরাওয়ার্দে এবং শিক্ষকতা করেন আজারবাইজানের মোরাগায়ে। তার বিরুদ্ধে ধর্ম বিরোধিতার অভিযোগ আনা হয়। হলবের একটি দুর্গে তাকে হত্যা করা হয়। তার গ্রন্থাবলির মধ্যে ‘হিকমাতুল ইশরাক’ ও ‘হায়াকিলুন-নূর’ উল্লেখযোগ্য। হযরত গাউসুল আজমের (ওফাত ৫৬১ হি.) পরেও এ এশরাকী দার্শনিক জীবিত ছিলেন। তৎকালীন সমাজে এ দলের মতবাদ কতটুকু প্রভাব বিস্তার করেছিল অথবা আদৌ তাদের কোনো প্রভাব ছিল কিনা তা অজানা। হযরত শেখ শাহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী (র.) এশরাকী নেতার প্রায় অর্ধশতাব্দী পর ইন্তেকাল করেন। তার প্রবর্তিত সুফী তরিকা এশরাকী মতবাদের প্রভাবমুক্ত ছিল, বরং কাদেরিয়া তরিকার প্রভাব থাকাটাই স্বাভাবিক। কেননা, এক সময় তিনি চাচার সঙ্গে হজরত গাউসুল আজম (র.)-এর খেদমতেও হাজির হয়েছিলেন।
‘সোহরাওয়ার্দীয়া তরিকা’ সম্পর্কে বলতে গেলে শেখ শাহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীর প্রসঙ্গ স্বাভাবিকভাবেই এসে যায়। বাংলা ভাষায় সুফীতত্ত্বের ওপর প্রচুর বই-পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে এবং তরিকতের আলোচনায় সোহরাওয়ার্দীয়া তরিকার বর্ণনাও স্থান পেয়েছে। শেখ শাহাবুদ্দীন (র.)-এর জীবনবৃত্তান্ত অনেক ক্ষেত্রে বিক্ষিপ্ত এবং সংক্ষেপে আলোচিত হলেও সর্বত্র সঠিক ও যথার্থভাবে বর্ণিত হয়েছে বলে দাবি করা যায় না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুল ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশিত হয়েছে বলে মনে করার যৌক্তিক কারণ আছে। চারটি প্রধান তরিকার অন্যতম প্রাচীন সোহরাওয়ার্দীয়া তরিকা সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণালব্ধ তথ্যের অভাব বাংলা ভাষায় রচিত পুস্তকাদিতে বিশেষভাবে অনুভূত হয়। কথাটি অপ্রিয় হলেও সত্য, তার একটা জ্বলন্ত প্রমাণ আমরা ‘সুফী তত্ত্বের মর্মকথা’ নামক একটি পুস্তক হতে নি¤েœ তুলে দিচ্ছি : ‘সোহরাওয়ার্দীয়া তরিকা জুনায়দিয়া খানওয়াদা বা তরিকা থেকেই সোহরাওয়ার্দীয়া তরিকার উদ্ভব হয়। জিয়াউদ্দীন নজব সোহরাওয়ার্দী এ তরিকার প্রবর্তক। সুফীতত্ত্বের অন্যতম উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ আবাদুল মুরীদিন-এর প্রণেতা ইনি। ১১৬৭ সালে তার মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে।
এক প্যারা পরে লেখা হয়েছে :
‘সোহরাওয়ার্দীয়া তরিকার অন্যতম বিখ্যাত সাধক হচ্ছেন হজরত শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী। স্বীয় পিতৃব্য জিয়াউদ্দীনের শিষ্য ছিলেন তিনি এবং তার কাছে থেকেই আধ্যাত্ম তত্ত্বের শিক্ষা তিনি আহরণ করেন। ১১৪৫ সালে তার জন্ম হয় এবং ১২৩৪ সালে তার পরলোকপ্রাপ্তি ঘটে। (পৃ: ৯২) একই বিষয়ে একই পৃষ্ঠায় দুই রকমের তথ্য বিভ্রান্তিমূলক। পীর বৃত্তান্তে এ ধরনের অসংলগ্নতা ও অসামঞ্জস্যতা প্রায়ই পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।
প্রাচীনকালে যারা শেখ শাহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীর (র.) জীবনবৃত্তান্ত রচনা করেছেন তাদের মধ্যে ইবনে খালেকানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার নাম আহমদ, কনিয়াত বা উপনাম আবুল আব্বাস। তিনি আহমদ বারমাকী নামেও পরিচিত। আব্বাসীয় যুগে খালেদ বারমাকীর বংশে জন্মগ্রহণ করায় তার নামের সাথে বারমাকী ব্যবহার করা হয়। মোসেলের নিকটবর্তী ইরবিলে হিজরি ৬০৮ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং হিজরি ৬৮১ সালে ৫৩ বছর বয়সে দামেস্কে ইন্তেকাল করেন। কারো কারো মতে, তার জীবনকাল ঈসায়ী ১২১১ হতে ১২৮২ সাল পর্যন্ত। তিনি হলবে শিক্ষালাভ করেন। তিনি যুগের একজন সেরা আলেম ছিলেন। ফেকা, হাদিস, আরবি ব্যাকরণ এবং ইতিহাসসহ বহুশাস্ত্রবিদ ছিলেন। তার রচনাবলীর মধ্যে বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থের পূর্ণ নাম : ‘ওফায়াতুল আয়ান অ-আম্বাউ আবনায়িজ জামান’। ইবনে খাল্লেকানের এ গ্রন্থে আলেম, ফাজেল, কবি-সাহিত্যিক এবং মাশায়েখ-সুফী সাধকদের জীবন কাহিনীর বর্ণনা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন যাবত মিসর ও সিরিয়ায় প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ইবনে খাল্লেকান রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ ওয়াফায়াতুল আয়ানে শেখ শাহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী (র.)-এর জীবনীও স্থান পেয়েছে। লেখক শেখ শাহাবুদ্দীন (র.)-এর কাছাকাছি যুগের লোক হওয়ায় তার পরিবেশিত তথ্য অধিক গ্রহণযোগ্য ও সঠিক হওয়া স্বাভাবিক। ইবনে খাল্লেকান সূচনাতেই উল্লেখ করেছেন :
‘আবু হাফস, উমর ইবনে মোহাম্মদ, ইবনে আবদুল্লাহ, ইবনে মোহাম্মদ ইবনে আম্বুয়া অ-ইসমুহু আবদুল্লাহ আল-বাকাবি-আল-মোলাক্কাব শাহাবুদ্দীন আস-সোহরাওয়ার্দী।’ তার পিতৃব্য-চাচার নাম বলা হয়েছে আবু নাজীর আবদুল কাহের, যার নিকট তিনি শিক্ষালাভ করেন এবং তার কাছে তাসাওফও অধ্যয়ন করেন। আমরা নিবন্ধের প্রথম সংখ্যায় ইবনে খাল্লেকান পরিবেশিত তথ্য ও অন্যান্য সূত্রের আলোকে কিছু বিবরণ প্রদান করেছি।
হজরত আবদুল কাদের জিলানী (র.)-এর কাছ থেকেও তিনি তাসাওফের শিক্ষালাভ করেন। তিনি বলতেন, শাহাবুদ্দীন জাহেরী ও বাতেনী বিদ্যায় পূর্ণতা লাভ করেছেন। বলা হয়ে থাকে, হযরত খিজির (আ.)-এর সাথে তার সাক্ষাৎ হয়েছিল। অজিহউদ্দীন আবু হাফসের খলিফাদের মধ্যে নবম ধারায় তিনি খাজা হাবীব আজমীর সাথে মিলে যান। হযরত শেখ সাদী সিরাজী (র.) তরিকতে তার হাতেই বারাত হয়েছিলেন এবং পরে তার কাছ থেকে বাতেনী ইলমের খেরকা লাভ করেন এবং তারই বদৌলতে জাহেরী বিদ্যায়ও পারদর্শিতা লাভ করে ছিলেন বলে বর্ণিত হয়ে থাকে।
শেখ শাহাবুদ্দীন বাগদাদে ছিলেন শায়খুস শুয়খের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। তার ওয়াজের মজলিসে বিপুল শ্রোতার সমাগম ঘটত। তিনি বসরায় গমন করেন এবং সেখানে শেখ আবু মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও অন্য শেখদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের কাছ থেকে ফেকা ও সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেন এবং সেখানেও কয়েক বছর ওয়াজের মজলিস করেন। কোনো কোনো মজলিসে তিনি আরবি কবিতা পাঠ করতেন, যা তার সাহিত্যিক প্রতিভার পরিচয় বহন করে। তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আওয়ারিফ’-এ তার বিভিন্ন কবিতা স্থান পেয়েছে।
শেখ শাহাবুদ্দীনের তাসাওফ শিক্ষা সফরে অংশগ্রহণকারী ভক্ত-অনুসারীদের মুখে তার বহু কারামাত বা অলৌকিক ঘটনার বিবরণ শোনা যেত। বর্ণিত আছে যে, তিনি বহুবার পবিত্র হজ পালন করেন। যাত্রাপথে তার সমসাময়িক সুফী মাশায়েখ লিখিত চিঠিপত্র প্রশ্নাকারে তার হস্তগত হতো এবং তার কাছে জবাব প্রার্থনা করা হতো। তিনি জবাবে বলতেন : এ মাল, ওয়াস্তাগ ফিরিল্লাহা মিনল উজুবি। অর্থাৎ আমল কর এবং অহঙ্কার হতে আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত কামনা কর।
এবার দেখা যাক বাংলাদেশে সোহরাওয়ার্দীয়া তরিকার প্রসার-বিস্তার কীভাবে ঘটে। আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, এ সম্পর্কে সুবিন্যস্ত কোনো ধারাবাহিক ইতিহাসের অভাব রয়েছে। তবে কেউ কেউ প্রাথমিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন শেখ শাহাবুদ্দীনের পিতৃব্য শেখ আবুনজীব আবদুল কাহেরকে প্রথম প্রবর্তক গণ্য করে। উল্লেখ্য, নামটি কেউ কেউ ‘নজীব উদ্দীন আবদুল কাদির’ উল্লেখ করেছেন, যা সঠিক বলে মনে হয় না। আমরা ইবনে খাল্লেকান বর্ণিত নাম উল্লেখ করেছি, যা নিঃসন্দেহে সঠিক। তার ওফাতের পর শেখ শাহাবুদ্দীন এ তরিকার বিশেষ উন্নতি-উৎকর্ষ সাধন করেন বলে তাকে এ তরিকার আসল প্রবর্তক মনে করা হয়। বিভিন্ন বর্ণনা হতে জানা যায়, শেখ শাহাবুদ্দীনের অনেক ভক্ত-অনুসারী বাংলাদেশসহ পাক-ভারত উপমহাদেশে আগমন করেন। তাদের মধ্যে শেখ বাহাউদ্দীন জাকারিয়া মূলতনে অবস্থান করেন এবং সেখানে ইসলাম প্রচার করেন। সুলতান শামসউদ্দীন ইলতুৎমিশ তাকে শায়খুল ইসলাম উপাদিতে ভূষিত করেন। সোহরাওয়ার্দীয়া তরিকায় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের এ পর্যন্ত একটা ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যায় এবং এর পরবর্তী ধাপে বাংলাদেশে সেই ধারাবাহিকতা কতটুকু অক্ষুণœ ছিল তাই আমাদের আলোচ্য বিষয়।
সোহরাওয়ার্দীয়া তরিকার কোন সাধক প্রথম বাংলাদেশে আগমন করেন? এ প্রশ্নের জবাব অনুসন্ধান করতে গিয়ে বলা যায়, প্রথম আগমনকারী সাধকের নাম শেখ জালালউদ্দীন তবরেজী। তিনি সরাসরি শেখ শাহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীর শিষ্য বলে বর্ণিত হয়ে থাকে। তিনি মুলতান ও দিল্লির ভেতর দিয়ে বাংলাদেশে আগমন করেন। বাংলাদেশে তার শিষ্যরা জলিলিয়া বা জালালিয়া নামে পরিচিত। একটি বর্ণনা অনুযায়ী বঙ্গবিজয়ের পরপরই তিনি এদেশে আসেন। ১২২৫ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকালের পর তাকে দেওতলায় সমাধিস্থ করা হয়। তার জন্ম সাল জানা না গেলেও ১২১৩ সালে বাংলাদেশে আগমন করেন বলে জানা যায়। এটি রাজা লক্ষণ সেনের রাজত্বকালের ঘটনা। পান্ডুয়ার নিকট দেওতলায় তিনি আস্তানা স্থাপন করেন। এখান থেকেই তিনি তার প্রচারকার্য চালান। হিন্দু ও বৌদ্ধ সমাজ তখন ছিল নানাভাবে নিপীড়িত। জাতি ও বর্ণভেদের কঠোরতা তাদের জীবনকে দুঃসহ করে তুলেছিল। ইসলামের নতুন আদর্শে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের নীতিতে মুগ্ধ হয়ে দলে দলে তারা ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে।
দরবেশের আস্তানার পাশেই ছিল একটা লঙ্গরখানা। গরিব লোকজন তাতে খাবার পেত। এখানেই দরবেশের মাজার। পাশেই আছে মসজিদ ও খানকা। এসবের সংরক্ষণের জন্য অনেক ওয়াকফ সম্পত্তি দেয়া আছে। তার নামানুসারে এই অঞ্চলকে বলা হয় তাবরিজাবাদ। তিনি ছিলেন বাংলায় মুসলিম শাসন প্রবর্তনের প্রথম যুগের শ্রেষ্ঠ ইসলাম প্রচারক। ১২২৫ সালে তিনি মারা যান। (মোহাম্মদ মমতাজুল হকÑ বাংলাদেশে ইসলাম)
লেখক তার রচনার শুরুতেই আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছেন। ইরানের তাবারিজ শহরে এই দরবেশের জন্ম। বাগদাদের বিখ্যাত ওলি হযরত শেখ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীর তিনি মুরিদ। পীরের সাথে তিনি সাত বছর কাটান। খাদেমের কাজ করেন। পীরের সাথে সাতবার হজ করেন। তারই হুকুমে তিনি হিন্দুস্তানে ধর্ম প্রচারের জন্য আসেন। দিল্লির বাদশা তখন সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশ। সেখানে কিছুকাল অবস্থানের পর তিনি ১২১৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে আগমন করেন। (ঐ)
মোহাম্মদ মমতাজুল হকের পূর্ণ বক্তব্য উপরে তুলে ধরা হয়েছে। সাধক সোহরাওয়ার্দীয়া তরিকার অনুসারী ছিলেন, বক্তব্য তাই প্রমাণ করে। কিন্তু সৈয়দ মর্তুজা আলী স্পষ্ট বলেছেন, শাইখ জালালউদ্দিন তবরেজী হলেন চিশতিয়া তরিকার সুবিখ্যাত সুফী। (বাংলাদেশের ইসলামী বিপ্লব, পৃ: ৮) ডক্টর আব্দুল করীমও একই কথা বলেছেন, তবে তার ব্যাখ্যা হচ্ছে : ‘শেখ জালালউদ্দিন তবরেজী প্রথমে শেখ শাহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীর শিষ্য ছিলেন, অর্থাৎ সোহরাওয়ার্দী তরিকাভুক্ত ছিলেন কিন্তু পরে তিনি চিশতিয়া তরিকা অবলম্বন করেন।’ (বাংলার সুফী সাধক, পৃ: ১০) অবশ্য তিনি আরো বিভিন্ন স্থানে একই পুস্তিকায় শেখ তবরেজীকে সোহরাওয়ার্দীয়া তরিকার সাধক বলে উল্লেখ করেছেন। তার এ দুই রকম উক্তির মধ্যে কোনটি সঠিক বলে গণ্য করা হবে? অথচ ডক্টর করিম একই পুস্তিকায় অন্যত্র লিখেছেন : সুফীদের মধ্যে যিনি সর্বপ্রথম বাংলাদেশে এসেছিলেন বলে অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় তিনি হচ্ছেন শেখ জালালউদ্দিন তবরেজী। তিনি ইরানের অন্তর্গত তবরেজ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে তিনি শেখ আবু সয়ীদ তবরেজীর শিষ্য ছিলেন, কিন্তু শেখ আবু সয়ীদের মৃত্যুর পর তিনি শেখ শাহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। শেখ শাহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীর শিষ্য থাকাকালে তিনি শেখ মঈনউদ্দীন চিশতীর সাথে পরিচিত হন। (ঐ, পৃ: ১৮-১৯)
শেখ জালালউদ্দিন তবরেজীর পর সোহরাওয়ার্দীয়া তরিকা বাংলাদেশে কীভাবে বিস্তার লাভ করে তার সঠিক বিবরণ পাওয়া যায় না। তবে পঞ্চাদশ শতকের জৌনপুরের বিখ্যাত সুফী মীর সৈয়দ আশরাফ জাহাঙ্গীর সিমনানী কর্তৃক জৌনপুরের শর্কি সুলতান ইবরাহিম শর্কির নিকট লিখিত একখানি চিঠিতে বাংলাদেশের কয়েকটি সুফী তরিকার নাম পাওয়া যায়। রাজা গণেশের অত্যাচার থেকে বাংলাদেশের সুফীদের রক্ষা করার জন্য এই চিঠিখানা লিখিত হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয় যে, দেবগাঁও (দেবকোটে)-এ শেখ শাহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীর সওরজন শিষ্য সমাহিত আছেন এবং দিনাজপুর জেলায় মাহী সন্তোষেও সোহরাওয়ার্দীয়া তরিকার কয়েকজন সুফী সাধক সমাহিত আছেন। শেখ শাহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রচিত আওয়ারিফুল মাআরিফ গ্রন্থও সবার নিকট খুবই জনপ্রিয় এবং এর বাংলা অনুবাদও প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা যায়। (সমাপ্ত)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ারিফুল মাআরিফ গ্রন্থলেখক শেখ শাহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী
আরও পড়ুন