পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাহবুব আলম, জাবি থেকে : ঘড়ির কাটা তখন ১২টা ছুঁই ছুঁই করছে। চারদিকে হিমেল হাওয়া আর চাঁদের আলো রাতের আবহাওয়া জানান দিচ্ছে। এমন মধ্য রাতে একটি রুমে ৬০ জন বসা। বাহিরের সিড়িতে বসে আছে আরো বেশ কয়েকজন। তারা সবাই দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নতুন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্বাভাবিক ভাবেই তাদের প্রথম দিন থেকেই হলে একটি সিট বরাদ্দ পাওয়ার কথা। ক্লাস শুরুর আগের দিন এমন ধারণা নিয়েই হলে উঠতে এসেছিল তারা। কিন্তু সিট পাওয়া তো দূরে থাক গণরুমে গাদাগাদি করে থাকার জায়গাও নেই। কারণ আগের ব্যাচের শিক্ষার্থীরা রুম না পাওয়ায় গণরুম ছাড়তে পারেননি। অনোন্যপায় হয়ে ক্লান্ত শরীরে বসে বসেই ঘুমাচ্ছেন কেউ কেউ, আবার কারো চোখ ভেঙে আসছে ঘুমে। গত রবিবার রাতে এমনই চিত্র দেখা গেল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে।
এরকম আবাসন সংকটের চিত্র দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি হলেই। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীর থাকার জায়গা না করেই ক্লাস শুরু করে দিয়েছে প্রশাসন। যারফলে পরিবার পরিজন ছেড়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য ছুটে আসা এসব শিক্ষার্থী মুখামুখি হয়েছে করুণ পরিস্থিতির। তাদের জীবন যাপন শুরু হয়েছে গণরুমের মেঝেতে বিছানা পেতে। তাও কোন কোন হলে সে জায়গাটুকুও হয়নি। যেসব রুমকে গণরুম হিসেবে ব্যাবহার করে শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যাবস্থা করা হয়েছে, তা মূলত থাকার জায়গানা। হলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গণরুম হিসেব ব্যাবহারকৃত এসব রুম মূলত রিডিং রুম, গেস্ট রুম, রান্না করার রুম, হল সংসদের রুম, টিভির রুম, পত্রিকা পড়ার রুম, ডাইনিং ও ক্যান্টিনের রুম। আর এসব রুমেই ঠাঁই হয়েছে ১ম বর্ষের এসব শিক্ষার্থীদের। হল প্রশাসন বলছে, এসব রুমেই ১ম বর্ষের প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীকে থাকতে হবে ১ বছরের মত।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের ৪০ ধারায় বলা আছে, প্রত্যেক শিক্ষার্থী আবাসিক হলে অবস্থান করবে। বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের বিশেষ অনুমোদন ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে পারবে না। আরও বলা আছে, হলের আসন সংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হবে।
কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বলছেন, গত কয়েকবছর ধরে আবাসনের ব্যবস্থা না করে অপরিকল্পিতভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। অন্যদিকে ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও র্যাগ অনুষ্ঠানের অজুহাতে হল ছাড়ছেননা বিপুল সংখ্যক অছাত্ররা। তাই নতুন হল নির্মাণ করেও এ সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছেনা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, ‘ছেলে ও মেয়েদের জন্য দুটি করে মোট ৪টি হল নির্মাণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সঙ্গে কার্যক্রম চলছে। এ হলগুলো নির্মাণ হলে আবাসন সংকট কমে আসবে।’
এদিকে গাদাগাদি করে গণরুমে থাকা নবীন এসব শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করছে মানসকি নির্যাতন (র্যাগিং) আতঙ্ক। বিগত বছর দেখা গেছে এক জায়গায় ১ম বর্ষের এসব শিক্ষার্থীদেরকে পেয়ে আচার-আচরণ শিখানোর নামে মানসিক নির্যাতন ও গালাগালি করে থাকে হলের জুনিয়র ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ বছর নবীন শিক্ষার্থীদের উপর সব ধরনের মানসিক নির্যাতন বন্ধের দাবিতে সেচ্চার রয়েছে সবাই। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থায় থাকবে ছাত্রলীগ। যদি কেউ র্যাগিং দেয় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা নবীন শিক্ষার্থীদের পাশে আছি।’ তবে বিকেলে বিভিন্ন হল থেকে নবীন এসব শিক্ষার্থীদেরকে দিয়ে মিছিল (শোডাউন) বের করে হল ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মীরা।
এদিকে র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘যদি কোন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে র্যাগিংয়ে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আজীবন বহিষ্কারাদেশসহ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, ‘সব সময় আমরা র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে। কোনো শিক্ষার্থী যাতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার না হয়; এ জন্য প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা সবসময় সতর্ক অবস্থানে আছে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।