Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সর্বত্রই আতঙ্ক

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ২:১৭ পিএম

৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশের সর্বত্রই আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্কুল ছাত্র থেকে শুরু করে শ্রমিক-মজুর, রিকশাচালক, দোকানদার, ব্যবসায়ী চাকরিজীবীসহ সবধরনের পেশাজীবীর মধ্যে। রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে গণগ্রেফতার, তল্লাশির নামে হয়রানিসহ নানা কারণেই ইতোমধ্যে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে গেছে। আবার রায় নেতিবাচক হলে রাজপথে প্রতিক্রিয়া দেখাবে বিএনপি। ওইদিন ভোর ৪ টা থেকে রাজধানীতে যে কোন ধরণের সভা-সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। নিরাপত্তার স্বার্থে রাজধানীতে মোতায়েন করবে ৩৫ হাজার পুলিশ সদস্য। পুলিশের পাশাপাশি রাজপথে থেকে বিএনপির প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে সর্বত্রই একধরণের আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সন্তানকে বাইরে যেতে বারণ করছে বাবা-মা, বাবা-মা বাইরে গেলে ভয়ে থাকেন সন্তানরা, কাল অফিস না গেলে হয়না? স্বামীর কাছে স্ত্রীর আবদার। কারণ যে কোন ধরণের অপ্রীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হলে দোষীদের পাশাপাশি পথচারী সাধারণ মানুষকে থানায় ধরে নিয়ে গিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। এতেই আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ।

ঢাকা কলেজের ছাত্র ফেরদৌস জানান, জরুরী কাজে গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে এসেছিলাম। এখন সামনে ৮ ফেব্রুয়ারির রায়ের কারণে বাবা-মা বাড়ি থেকে ঢাকা যেতে দিচ্ছে না। বলছে ৮ তারিখ পার হয়ে যাক তারপর ঢাকা যাবি। তিনি বলেন, বাবা-মায়ের মনে ভয় ওই দিন আবার কি হয়ে যায়। কারণ ঢাকায় তো কোন ঘটনা ঘটলে কে অপরাধী তার বাছবিচার না করে যাকে পায় তাতেই তুলে নিয়ে যায়।

রাজধানী সেগুনবাগিচা হাইস্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আব্দুল হালিম বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি নিয়ে যে ধরণের ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তাতে সন্তানদের ওইদিন স্কুলে-কোচিংয়ে পাঠানো যাবে বলে মনে হয় না। নিজেও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন জানিয়ে হালিম বলেন, আমরা নিজেরাই সেদিন কর্মস্থলে যেতে পারবো কিনা সন্দেহ হচ্ছে। কারণ কখন কোথায় কি ঘটনা ঘটে কে জানে?

পথে পথে তল্লাশি : খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের দুই দিন আগে থেকেই রেল, সড়ক ও নৌপথসহ সর্বত্রই চলছে তল্লাশি। সতর্কতা হিসেবে ইতোমধ্যে ৮ ফেব্রুয়ারি সভা-সমাবেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশেই চলছে গ্রেফতার অভিযান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার প্রতিটি প্রবেশ পথেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকার সাতটি প্রবেশ পথে ১৩টি চৌকি বসিয়েছে পুলিশ। এসব পথে ঢাকায় বাসা বাস,পিকআপ, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলসহ সবধরনের যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকা আসা যাত্রীবাহী বাসগুলোতে তল্লাশি করছে পুলিশ। যাত্রীদের জিজ্ঞেস করা হচ্ছে ঢাকায় আসার নির্দিষ্ট কারণ। এতে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার বিএনপি নেতাকর্মী সন্দেহ হলেই তাদের ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অনেকেই। রাজধানীর প্রতিটি প্রবেশ মুখেই যাত্রীবাহী বাসে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। খুলনা থেকে ঢাকা আসা রেজওয়ান আলী বলেন, তিনদিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলাম। ছুটি শেষে ঢাকায় আসতেই পড়তে হলো নতুন ঝামেলায়। ঢাকায় কেন আসলাম, কতদিন হলো ঢাকায় থাকি, সত্য বলছি না মিথ্যা বলছি, বিএনপির রাজনীতি করি কিনা নানান রকম প্রশ্ন। আবার প্রশ্নের সাথে মাঝে মাঝে কাউকে কাউকে ধমকও দিচ্ছে। রেজওয়ানের প্রশ্ন নিজের দেশের রাজধানী প্রবেশ করতে যদি বিদেশী ইমিগ্রেশনের মতো জবাবদিহিতা করতে হয় তাহলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কি আছে। সাধারণ মানুষ ও ভুক্তভোগীরা বলেন, অপরাধীদের ধরতে গিয়ে সাধারণদের হয়রানি করা হচ্ছে। শুধু রাজধানীর প্রবেশ পথেই নয়, ভেতরেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। যাকেই সন্দেহজনক মনে করছে তাকেই তল্লাশি করছে পুলিশ। অন্যান্য দিনে রাজধানীতে ৮ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হলেও রায়ের আগের দিন বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আর রায়ের দিন এর সংখ্যা ৩৫ হাজার হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ