Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয়

জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় বেগম খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

শেখ হাসিনার অধীনে কোন জাতীয় নির্বাচন হবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সংসদ রেখে, শেখ হাসিনার অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন অতীতে হয়নি, আগামীতেও হবে না। এজন্য তার অধীনে কোন নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। গতকাল (শনিবার) জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় দৃঢ়তার সঙ্গেই তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনার অধীনে কেন নির্বাচন নয় তার ব্যাখ্যা দিয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে জাতীয় নির্বাচন বাদই দিলাম। তার সময়ে যে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও জেলা পরিষদের নির্বাচন হয়েছে তার কোনটিই সুষ্ঠু হয়নি। এসব নির্বাচনে অস্ত্র ও পেশিশক্তি দিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। নিজেরাই ভোট দিয়ে বাক্স ভরে রেখেছে। তাই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। শুধু নিরপেক্ষ সরকার হলেই হবে না জনগণ যাতে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারে সেরকম পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসার সুযোগ দিতে হবে। তারা সেই সুযোগ দিতে চায় না। অথচ মহিলা থেকে শুরু করে দেশের তরুণ ভোটাররাও অপেক্ষা করছে বিএনপিকে ভোট দেওয়ার জন্য।
‘মানুষ বর্তমানের এই দু:শাসন থেকে মুক্তি চায়’ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, জেল-জুলুম, গুম, খুন থেকে মানুষ মুক্তি চায়। মানুষ দেশে পরিবর্তন চায়। সে পরিবর্তন আসতে হবে অন্য কোনভাবে নয়, গণতন্ত্রের মাধ্যমে। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে পরিবর্তন আসতে হবে। সেজন্য আমরা বলছি ভোট হতে হবে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছি নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। এজন্য সত্যিকারের নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হলে মাঠে পুলিশ প্রশাসন অবশ্যই থাকবে, তার সাথে এর আগে সব সময় সেনাবাহিনী ছিল। সেনাবাহিনীকে অবশ্যই মোতায়েন করতে হবে। তারা ভোট কেন্দ্রের বাইরে ঘুরবে, দেখবে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে নির্বিঘেœ আসতে পারছে কিনা, কোথাও তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে কিনা, অস্ত্রের মহড়া চলছে কিনা। এজন্য বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে তাদের রাখতে হবে। ভোটে ইভিএম চলবে না জানিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ নিজের ভোট নিজে দিবে। সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে। কারণ এই পার্লামেন্ট বৈধ নয়, জোর করে ক্ষমতায় আছে। তবেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আর সেই নির্বাচন হবে সকল দলের অংশগ্রহণে।
নৌকা ডুবে গেছে কিনা জানতে চেয়ে খালেদা জিয়া বলেন, বলা হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। যদি ডিসেম্বরে নির্বাচন হয়ই তাহলে এতো আগেই নির্বাচনী প্রচারণা কেন? এতো আগে তো ক্যাম্পেইনের প্রয়োজন হয় না। আর নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে নৌকায় ভোট চেয়ে ওয়াদা করার প্রয়োজন হচ্ছে কেন? নৌকা এমনই ডুবা ডুবছে যে তার জন্য এখন থেকে ক্যাম্পেইন করে মানুষকে জাগাতে হবে। আর হাত তুলে মানুষের কাছে ওয়াদা নিতে হবে। মানুষকে ভয় দেখিয়ে ওয়াদা আদায় করা যাবে কিন্তু তাদের মনে কখনো স্থান পাওয়া যাবে না। মনের কথা জানতে পারবে না।
নিম্ন আদালত এখন সরকারের কব্জায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালত বলছে দেশের নিম্ন আদালত সরকারের কব্জায়। বিচারকরা বুঝতে পারছে যে এটা সঠিক নয়, কিন্তু তারপরও তারা নিজেদের চিন্তা থেকে রায় দিতে পারবে না। সরকারের ক্ষমতার বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা বিচারকদের নাই। সঠিক রায় দিলে কি রায় হবে তা জানেন। তারেক রহমানের একটি রায় সঠিকভাবে দিয়েছিলেন একজন বিচারক। এরপর ওই দেশকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। সরকারের জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতনের কথা সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ষোড়শ সংশোধনীতে তুলে ধরেছিলেন। অবজারভেশনে সত্য কথা বলেছিলেন। এতে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে যায়। এজন্য তাকে প্রথমে বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়, এরপর যখন দেশে ফিরতে চাইলেন তখন তাকে পদত্যাগ করানো হলো। অস্ত্রের মুখে তাকে পদত্যাগ করানো হয়েছে।
ডিজিটাল আইনের নামে নতুন কালা কানুন করছে জানিয়ে বিএনপি প্রধান বলেন, সাংবাদিকরা, টকশোতে যারা কথা বলে সরকারের বিভিন্ন অনিয়মের সমালোচনা করে, সত্য কথা বলে, দেশ, জাতি ও মানুষের কথা তুলে ধরে সেগুলো তাদের খুব গায়ে লাগে, সহ্য হয়না। এজন্য এগুলোও এখন বন্ধ করে দিতে চায়, কথা বলার, সত্য প্রকাশ করার অধিকার হরণ করেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করেছে। দেশে যদি গণতান্ত্রিক অধিকার না থাকে তাহলে নির্বাচন হবে কিভাবে।
মঈন উদ্দীন-ফখরুদ্দীন ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ১/১১’র পর মঈনউদ্দীন-ফখরুদ্দীন অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা দখল করেছিল। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের কথা বলে আর এখন অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা দখল করছে। জোর করে স্বীকারোক্তি নিচ্ছে তা না হলে জেলে দিয়ে দিচ্ছে। বন্দি রাখছে, গুম করছে, খুন করছে। নিজেদের গণতান্ত্রিক বলে কিন্তু আওয়ামী লীগ ও মঈন-ফখরুদ্দীনের কোন পার্থক্য নেই। আওয়ামী লীগ দাবি করে নির্বাচনে বিজয়ী। আমরা ২০০৮ সালে নির্বাচনের কথা জানি কি নির্বাচন হয়েছিল। তারপরও আমরা মেনে নিয়েছি। বলেছি সহযোগিতা করবো গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য। আমরা সহযোগিতা করেছি। কিন্তু তারপরও সংবিধান সংশোধন করে সবকিছু তাদের পক্ষে নিয়েছে। সংশোধনের পর আর সংবিধানে কিছুই রাখেনি। এমনভাবে সংশোধন করেছে যাতে তারা পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারে। তারপরও তাদের ভয় ছিল জনগণ যদি ভোট দিতে পারে তাহলে তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এজন্য তারা আরেকটা নির্বাচন করলো।
বেগম জিয়া বলেন, তত্ত¡াবধায়ক সরকার আমাদের দাবি ছিল না। এই দাবি ছিল আওয়ামী লীগ-জামায়াতের। এজন্য তারা আন্দোলনও করেছিল। আন্দোলনের নামে ভাঙচুর, জ্বালাও পোড়াও করেছে। ১৭৩ দিন হরতাল করেছে। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল। দেশকে ধ্বংস করতে দেবোনা চিন্তা করেই আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছি। তত্ত¡াবধায়কের অধীনে নির্বাচন হয়েছে কিন্তু আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এরশাদের সাথে সমঝোতা করে সরকার গঠন করে। সবচেয়ে বিরোধী দল তখন আমরা ছিলাম ১১৬টি আসন পেয়ে। বুঝতে হবে আমাদের সম্পর্ক মাটি, মানুষের সাথে। এটা ছিন্ন করা সম্ভব নয়। জোর করে সাক্ষ্য নিতে পারে কিন্তু ভোট নয়।
বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, গত কয়দিনে ৪০০ নেতাকর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর করেনি তারপরও বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজা হচ্ছে। না পেলে পরিবারের সদস্যদের ভীয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা ভয় পায়না কারণ তাদের সাথে জনগণের সম্পর্ক রয়েছে। সারাদেশে নেতাকর্মীদের মামলা বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাড়ে ১৮ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সারাদেশে ৭৮ হাজার মামলা করা হয়েছে। কারো কারো বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা করা হয়েছে। বিএনি নেতাকর্মী দেখলেই তাদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়, দেশে নেই এমন নেতাকর্মীদেরও মামলা দেওয়া হচ্ছে। আগে থেকে মামলা তৈরি থাকে শুধু নাম বসিয়ে দেয়।
প্রশাসনের ওপর ভরসা করে লাভ নেই জানিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ প্রশাসনের ওপর অনেক ভরসা করে। নিজের মতো করে নিজস্ব লোক দিয়ে সাজিয়েছে। প্রশাসনকে দলীয় ও আঞ্চলিকীকরণ করে ধ্বংস করে দিয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের মত প্রশাসনকে ব্যবহার করছে। মনে করছে তাদের মাধ্যমে নির্বাচনী বৈতরণী পার করবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে প্রশাসন নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুযোগ পেলে কেউ আর কথা শুনবে না। তারাও গণতন্ত্র চায়, এতে তাদের মূল্যায়ন হয়। অতীতে আমরা দল নয়, যোগ্যতা দেখে মূল্যায়ন করেছি। আগামীতেও করবো। তিনি বলেন, এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়। ১৫৪ জন বিনাভোটে এমপি হয়েছে। বিএনপি’র আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করে এসব আসনে কেউ প্রার্থীই হয়নি। এমনকি স্বতন্ত্রও কেউ প্রার্থী হয়নি। ভোটাররাও বিএনপির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ভোট দিতে যায়নি। ভোট কেন্দ্র পাহারা দিয়েছে পুলিশ আর কুকুর। ভোটও তারা দিয়ে দিয়েছে। তবে পুলিশও চায় দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ঠিক থাকুক তারা সেটা চায়। তারাও এদেশের মানুষ, এজন্য তারা এগুলো রক্ষা করতে চায়। কিন্তু তাদের ভয় দেখিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। অন্যায়ভাবে, বাধ্য করে দলীয় স্বার্থে পুলিশকে ব্যবহার করা হয়। বিএনপির কোন ভয় নেই, কারণ আমাদের সাথে পুলিশ আছে, প্রশাসন আছে, সেনাবাহিনী আছে, জনগণ আছে। ভয় আওয়ামী লীগের। সেজন্যই ভীত হয়ে কিভাবে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যায় তার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ।
নিজের রায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, যে অপরাধ হয়নি তার কি বিচার হবে। তারপরও গায়ের জোরে তারা কথা বলছে। বিচার করতে চায়। এই মামলার যে পিপি তিনি মঈনের সময় থেকে ছিলেন এখনো আছেন। তাকে বাধ্য করা হয় মিথ্যা কথা বলার জন্য। এমন জোর দিয়ে উচ্চস্বরে কথা বলবেন যাতে তার কথা শুনে যারা (বিচারক) রায়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন তারা যেন বুঝতে পারে কোথা থেকে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। কোথাকার নির্দেশনায় কথা বলছে।
অর্থনীতিতে লুটপাট চলছে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক লুটপাট ও দখল হয়েছে। দেশের সব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো লুট ও ধ্বংস রোধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তদন্ত পর্যন্ত করা হয়নি। কেন করেনি? তদন্ত হলে সত্য বেড়িয়ে আসতো। দেশবাসী সত্য জেনে যেতো। এজন্য বেশি নড়াচড়া করেনি। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা সুইস ব্যাংকে জমা হয়েছে। এর আগে কোনদিন শুনিনি আমাদের এখানকার কারো টাকা সুইস ব্যাংকে আছে। বিএনপির লোকজনের তো সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার সার্থই নাই। তাহলে কারা রাখছে? অনেকগুলো নাম অবশ্য বের হয়েছে। সরকারি দলের অনেকেই সরকারি প্রজেক্টের টাকা লোপাট করে বিপুল অর্থ-সম্পদ বানিয়েছে। এই টাকা দিয়ে তারা বিদেশে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছে। এই টাকা তো কাজে লাগাতে হবে। লুটের টাকা দিয়ে বিদেশে সেকেন্ড হোম বানাচ্ছে। অনেকের পরিবার দেশের বাইরে। নিজেরা আছেন চাকরি করছেন, পকেটে টিকেট আছে, পাসপোর্টে কয়েকদেশের সিল আছে। সরকারি দলের ঘনিষ্টজনদের হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করার পরও ঋণ খেলাপি বাড়ছে। সরকারি লোকের ঋণ নিতে কিছুই লাগে না। ব্যাংকে গিয়ে একটা স্বাক্ষর করলেই ঋণ দিয়ে দেওয়া হয়।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশে প্রকৃত দেশিবিদেশী বিনিয়োগ হচ্ছে না। গুম-খুন, হত্যা, নির্যাতনের চিত্র বিদেশীরা দেখছে। হিউম্যান রাইটসের রিপোর্টসহ বিভিন্ন রিপোর্টে এর চিত্র ওঠে আসছে। বিদেশীরা এসব দেখছে বিনিয়োগ করার কোন পরিবেশ নাই। দেশের মানুষও বিনিয়োগ করতে চায় না। শিল্প প্রতিষ্ঠান হচ্ছেনা, কর্মসংস্থান হচ্ছে না, বেকারত্ব বাড়ছে। আওয়ামী লীগ ২০০৮ বলেছিল ক্ষমতায় গেলে ঘরে ঘরে চাকরি দিবে, মানুষ আশা ও বিশ্বাসও করেছিল। কিন্তু এখন সরকার দলীয় লোক না হলে পিয়নের চাকরিও হয় না। আবার ঘুষ না দিলে পিয়নের চাকরিও পাওয়া যায় না। সরকারি দলের লোকদেরকেও ঘুষ দিয়ে চাকরি নিতে হচ্ছে। পিয়নের চাকরি পেতে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দেওয়া হচ্ছে। এ কথা বলার সাথে সাথে উপস্থিত বিএনপি নেতারা বলে ওঠেন আরও বেশি আরও বেশি। মধ্যবিত্ত দরিদ্র হচ্ছে, দরিদ্র লোক আরও দরিদ্র হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ বারবার অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে অভিযোগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসেনি। মঈনউদ্দীন-ফখরুদ্দীনদের সাথে সমঝোতা করেই সেবার ক্ষমতা গ্রহণ করে। কিন্তু তার আগে মঈন-ফখরুদ্দীনদের লক্ষ্য ছিল মাইনাস টু ফর্মুলা। তারা অনেক চেষ্টা করেছিল কিন্তু জনগণ তাদের পক্ষে ছিল না। মানুষকে বিভ্রান্ত করেনি। ফলে বাধ্য হয়ে এই ফর্মূলা থেকে বের হতে হয়। তবে পুরোটা তো বের হওয়া যায় না। সেজন্য তারা আমার সাথেও কথা বলে শেখ হাসিনার সাথেও কথা বলে। খন (১/১১ এর পর) আমার নামে ৪টি মামলা করা হয়। আর শেখ হাসিনার নামে ১৫টি মামলা। এসব মামলায় শেখ হাসিনা জামিন না নিয়েই পেরোলে চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছিল। ফিরে এসে সে অবস্থাতেই নির্বাচন করেছিল যেহেতু সমঝোতা করেছিল। আমরা তো তাদের সাথে সমঝোতা করিনি, কারণ আমরা জনগণকে ধোকা দিতে চায়নি। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর তার বিরুদ্ধে করা মামলা হাওয়া হয়ে যায়। আর আমার বিরুদ্ধে মামলা বাড়তে থাকে। আমাকে বালুর ট্রাক দিয়ে বাড়িতে বন্দি করে রাখলো আর মামলা কুমিল্লায় আমি গাড়ি পুড়িয়েছি। এসব জ্বালাও-পোড়াও তাদের পক্ষেই সম্ভব। কারণ অতীতে তারা এসব করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আওয়ামী লীগে শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে অন্যদের বিরুদ্ধে সাড়ে ৭ হাজার মামলা ছিল। তা প্রত্যাহার করার জন্য আবেদন চাওয়া হয়। বলা হয় আবেদন করলেই মামলা প্রত্যাহার করা হবে। আর আমাদের দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। তিনি বলেন, আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন আওয়ামী লীগের মহিলারা রাস্থায় থেকেছে, শুয়ে পড়েছে, রান্নাবান্না করেছে, খেয়েছে, পুলিশ তুলে দিতে চাইলে কামড়ও দিয়েছে। কিন্তু বিএনপির মহিলারা এমন অভদ্র আচরণ করেনা। কিছু না করেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়, রিমান্ডে নেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ দেশে একক নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ করে বেগম জিয়া বলেন, ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কিভাবে দেশে একক নির্বাচন করবে। তারা আগে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে বলতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে হিন্দুরা ভাল থাকে। কিন্তু এবার আমার কাছেই অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক এসে বলেছে, পত্রপত্রিকায় দেখি হিন্দুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি, জমি দখল করে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। শশানের জায়গাও দখল করা হচ্ছে। তাদের মন্দির ভাঙচুর করছে। আওয়ামী লীগ আসলে ধর্মে বিশ্বাস করেনা। দাঁড়ি টুপি দেখলেই জঙ্গী খোঁজে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা আমার কাছে এসে অভিযোগ করেছে যে, আগে ভুল করেছি আমরা আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করেছিলাম। সুযোগ পেলে আগামীতে আর নৌকার কাছে যাবো না। তারা আমাদের সর্বস্ব লুট করে নিয়েছে। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের কারণে শান্তিতে ঘুমাতেও পারে না। কারণ কখন কে আসবে, নিয়ে যাবে। জেলে নিয়ে গেলে তো তাও ভাল। আর যদি গুম করে দেয় তাহলে লাশও পাওয়া যায় না। গত কয়েকদিনে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীর বাসায় রাতে গিয়েছে। সাবেক স্পিকার জমিরউদ্দীন সরকারকে রাতে বের হতে বলেছে কিন্তু তিনি বের হননি।
শিক্ষাঙ্গনে বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাস চলছে উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সরকার উন্নয়নের ফিরিস্তি দেয়। কিন্তু দেশে যে গুম, খুন, দুর্নীতি দিয়ে সয়লা করে দিয়েছে সেটা তারা বলেনা। শিক্ষাঙ্গনের আজকে ভয়াবহ চিত্র। বিশৃঙ্খলা-সন্ত্রাস চলছে। দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের লোকেরা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলা করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও এখন শিক্ষার্থীরা নিরাপদ না। মিছিলে না যাওয়ায় ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতার দাপট যে আজকে কোথায় গেছে তার কোন হিসেব নেই। এই হচ্ছে তাদের চরিত্র। যখন তখন যাকে ইচ্ছা গ্রেফতার করছে, চাকরি খাওয়া, বদলি, গুম-হত্যা, অত্যাচার করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার হুমকই হলো এখন শেষ কথা। তিনি নিজেকে আল্লাহর পরেই মনে করেন। শিক্ষামন্ত্রীর প্রশংসা করে খালেদা জিয়া বলেন, শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন সহনশীল পর্যায়ে ঘুষ নেন। পরামর্শ দিয়েছেন। এর আগেও শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, এমপি চোর, মন্ত্রী চোর, আমিও চোর। শিক্ষামন্ত্রী ভাল ও ভদ্র মানুষ সহজসরল মানুষ। এজন্য সত্য কথা বলে দিয়েছেন। যে সবাই তো চোর। তাদের রাজত্বে সবাই চোর।
ঢাকার একটি হোটেলে গতকাল অনুষ্ঠিত নির্বাহী কমিটির এই সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। এসময় নির্বাহী কমিটির সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মিজানুর রহমান মিনু, জয়নাল আবেদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, প্রফেসর সুকমল বড়–য়া, আব্দুস সালাম, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহাজাহান, এড. খন্দকার মাহবুব হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম, প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ, শামসুজ্জামান দুদু, এড. জয়নাল আবেদিন, এড. নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুন অর রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, মাহবুবুর রহমান শামীম, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ডা. শাখাওয়াৎ হোসেন জীবন, এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিন, শামা ওবায়েদ, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, এড. মাসুদ আহমেদ তালুকদার, এড. ছানাউল্লাহ মিয়া, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, প্রফেসর ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, কামরুজ্জামান রতন, সালাউদ্দিন আহমেদ, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, এড. গৌতম চক্রবর্তী, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, এড. আব্দুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, হারুনুর রশিদ হারুন, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, মো. আ: আউয়াল খান, সেলিমুজ্জামান সেলিম, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল হোসেন, আমিরুল ইসলাম আলিম, শামীমুর রহমান শামীম, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, মুনির খান, অপর্ণা রায়, আফরোজা আব্বাস, দীপেন দেওয়ান, অমলেন্দু অপু, আব্দুল বারী ড্যানী, কাদের গনি চৌধুরী, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সাইফুল ইসলাম শিশির, প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খান, ডা. ফরহাদ হোসেন ডোনার, ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম (বাচ্চু), ডা. শাহাদাৎ হোসেন, রমেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, সুশীল বড়–য়া, প্রফেসর মামুন আহমেদ, ডা. আব্দুল কুদ্দুস, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, ফরিদা মনি শহীদুল্লাহ, আ ক ম মোজাম্মেল হক, কাজী আবুল বাশার , নির্বাহী কমিটির সদস্য জেড এম মর্তুজা চৌধুরী তুলা, মুন্সী বজলুল বাসিত আনজু, টি এস আইয়ুব, নূরুল ইসলাম নয়ন, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, শেখ মোঃ শামীম, আবু বকর সিদ্দিক, হেলাল খান, তাবিথ আওয়াল, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দীন দিদার, এড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের পর এটিই বিএনপির প্রথম জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা।



 

Show all comments
  • সোহরাব হোসেন ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:১৪ এএম says : 0
    বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • Neel ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৩:৪৮ পিএম says : 0
    ধন্যবাদ ম্যাডাম। দেশের জনগণের মনের কথা বলেছেন আপনি।
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদুল জামান ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৩:৪৯ পিএম says : 0
    যুক্তি সংগতো কথা
    Total Reply(0) Reply
  • Alamgir Kabir Khan ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৩:৫০ পিএম says : 0
    সরকার তো একটাও মানবো না
    Total Reply(0) Reply
  • Russell Mahmud ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:০০ পিএম says : 0
    বেগম জিয়ার সাথে আমিও সহমত
    Total Reply(0) Reply
  • Iftekhar Alam Mithu ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:০১ পিএম says : 0
    একটাও মানবে না আওয়ামী লীগ
    Total Reply(0) Reply
  • Mohiuddin Khan Melon ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:০২ পিএম says : 0
    আওয়ামীলীগ এর তো অনেক জন সমর্থন । তাই এই শত` তাদের মেনে নেওয়া ভালো।।
    Total Reply(0) Reply
  • Abul Kasem ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:০৩ পিএম says : 0
    সুন্দার কথা আমরা সবাই এক মত
    Total Reply(0) Reply
  • Sanjida ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৫:১৭ পিএম says : 0
    জনগণের মনের কথাই বলছেন। কিন্তু আওয়ামী’লীগ কিছুই মানবে না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ