Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আগাম কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির শঙ্কা এ মাসেই

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

এক ধাক্কায় ৬৪ বছরের রেকর্ড ভেঙে বিদায়ের পথে শীত
৬৪ বছরের রেকর্ড ভেঙে প্রচন্ড শীত এক ধাক্কা দিয়ে ‘বাঘ পালানো’ মাঘ মাসেই এখন প্রায় বিদায়ের পথে। গত ৮ জানুয়ারি উত্তর জনপদের পঞ্চগড়ে তাপমাত্রার পারদ নেমে যায় ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গত মাসে সারাদেশে গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম ছিল। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের উপর দিয়ে একটি মৃদু ধরনের (সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সে.) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে হাঁড় কাঁপানো কনকনে শীতের আর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কেননা এ মাসে দেশের গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশী থাকতে পারে। তবে চলতি ফেব্রুয়ারি (মাঘ-ফাল্গুন) মাসেই দেশের বিভিন্ন স্থানে আগাম বা অকাল কালবৈশাখী ঝড় (বজ্র-ঝড়) একই সাথে শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। সারাদেশের আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস প্রদানের লক্ষ্যে গত ১ ফেব্রুয়ারি আবহাওয়া বিভাগের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকে চলতি মাসের উপরোক্ত পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ। পূর্বাভাসে আরও জানা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে দেশের নদ-নদীর অববাহিকা ও অন্যত্র সকালের দিকে হালকা থেকে মাঝারী ধরনের কুয়াশা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে । এ মাসে দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে। দৈনিক গড় বাষ্পীভবন ২.৫০ থেকে ৩.৫০ মিলিমিটার এবং গড় সূর্য কিরণকাল সাড়ে ৫ ঘণ্টা থেকে সাড়ে ৬ ঘণ্টাকাল স্থায়ী থাকতে পারে।
পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। গত জানুয়ারি মাসে (পৌষ-মাঘ) স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৫ দশমিক ৪ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। যদিও গত মাসে সার্বিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। গত ডিসেম্বর মাসে সারাদেশে স্বাভাবিক হারের তুলনায় ৩৮৫ শতাংশ অস্বাভাবিক বেশি বৃষ্টিপাত হয়। গত নভেম্বরে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭০ ভাগ কম বৃষ্টিপাত হয়। অথচ অক্টোবরে ৭৬ ভাগ বেশি বৃষ্টিপাত হয়।
এদিকে গত জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ) মাসের সামগ্রিক আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে উক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় জানানো হয়, গেল মাসটিতে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমই (৬৫.৪ শতাংশ) বৃষ্টিপাত হয়েছে। প্রাপ্ত বৃষ্টিপাতের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, পুরো গত মাসজুড়ে শুধুই চট্টগ্রাম বিভাগে ৮.৭ মিলিমিটার ও সিলেট বিভাগে ১৭ মিমি বৃষ্টিপাত ছাড়া দেশের অপর ৬টি বিভাগে অর্থাৎ বেশিরভাগ এলাকায় কোনো বৃষ্টিই ঝরেনি। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি নিম্নচাপের প্রভাবে গত ১ ও ২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়। ৩ তারিখে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয় এবং তা ৪ তারিখে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ আকারে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও খুলনা বিভাগে বিস্তার লাভ করে। ৭ জানুয়ারি বিরাজমান শৈত্যপ্রবাহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তীব্র আকার ধারণ করে। ৮ তারিখে এই তীব্র শৈত্যপ্রবাহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও এর পাশ্ববর্তী এলাকায় বিস্তার লাভ করে এবং দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্য প্রবাহ আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ওইদিন (৮ জানুয়ারি) উত্তর জনপদের পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রার পারদ নেমে যায় ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা বিগত ৬৪ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করে গেছে।
১০ জানুয়ারি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ পরিস্থিতি কিছুটা প্রশমিত হয়ে যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে বিরাজ করে এবং দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকে। ১১ থেকে ২৪ জানুয়ারি দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকে। গত ২৮ থেকে ৩১ জানুয়ারি আবারও দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ পরিস্থিতি বিরাজ করে। জানুয়ারি মাসে বাতাসের নিম্ন স্তরে জলীয়বাষ্পের পরিমান কিছুটা বেশী থাকায় দেশের নদ-নদী অববাহিকা ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয় এবং তা অনেক জায়গায় দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। গত মাসে গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম ছিল। তাপমাত্রা, শৈত্যপ্রবাহ, কুয়াশা, কৃষি আবহাওয়া এবং দেশের নদ-নদীর অবস্থা জানুয়ারি মাসের পূর্বাভাসের সাথে সংগতিপূর্ণ ছিল বলে দাবি করে আবহাওয়া বিভাগ।
এদিকে গতকাল (শনিবার) তাপমাত্রা দেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহের পর্যায়ে ছিল না। সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ১০.৮ ডিগ্রি সে.। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল পটুয়াখালী ও খেপুপাড়ায় ২৮.২ ডিগ্রি সে.। ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ২৫.৮ এবং ১৬ ডিগ্রি সে., চট্টগ্রামে ২৬ ও ১৫.৩ ডিগ্রি সে.।
সর্বশেষ আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সাথে সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
ঘন কুয়াশায় দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ও নৌ যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত
বরিশাল ব্যুরো জানায়, মাঘের শেষভাগের কুয়াশায় গতকাল পুনরায় দেশের প্রধান সবগুলো ফেরিসহ যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলেও ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। প্রায় আড়াই হাজার যানবাহনে ১০ হাজারেরও বেশী যাত্রী ছাড়াও সহ¯্রাধিক টন পণ্য নিয়ে আটকা পরে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, কাঠালবাড়ী-শিমুলিয়া, চাঁদপুর-শরিয়তপুর, ভোলা-ল²ীপুর ও ভোলা-বরিশাল ফেরি গুলোতে। এর ফলে রাজধানীর সাথে দেশের দক্ষিন ও দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পরে। একইভাবে চট্টগ্রাম-বরিশাল ও খুলনা বিভাগ ছাড়াও মোংলা ও বেনাপোল বন্দরের সাথেও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। চলতি রবি মওশুমে কয়েক দফার লাগাতার শৈত্য প্রবাহের সাথে ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলা কোল্ড ইনজুরীতে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও গোল আলুর উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।
মধ্যরাতের পর থেকে ভোর পর্যন্ত এসব ফেরি পদ্মা, মেঘনা ও তেতুঁলিয়ার বুক ঘন কুয়াশায় ঢেকে যেতে শুরু করে। মেঘনা অববাহিকায় ঘন কুয়াশায় রাজধানীর সাথে দক্ষিনাঞ্চলের সবগুলো রুটের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলও বিপর্যস্ত হয়ে পরে। ফলে শতাধিক যাত্রীবাহী নৌযানে অন্তত ৩০ সহ¯্রাধিক যাত্রী ঘন্টার পর ঘন্টা আটকা পড়েছিল। নির্ধারিত সময়ের ৩-৫ঘন্টা পরে এসব নৌযান গন্তব্যে পৌছে। গতকাল কুয়াশায় রাত ২টা থেকেই শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়। এ সময় পদ্মার বুকে বিভিন্নস্থানে প্রায় ৫০টি যানবাহন নিয়ে ৩টি ফেরি আটকা পরে। টানা ৯ঘন্টা পরে সকাল ১০টা ৫০মিনিটে পুনরায় কাঠালবাড়ী-শিমুলিয়া রুটে ফেরি সার্ভিস চালু হলেও ততক্ষনে ঐ ঘাটগুলোতে প্রায় ৭শ যানবাহন আটকা পরে। একইভাবে ভোর ৫টার দিকে দেশের প্রধান আরিচা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিতে হয় ঘন কুয়াশার কারনে। পদ্মা বক্ষে অন্তত ৪টি ফেরি আটকা পারে। সকাল ৯টার পরে যানবাহন পারপার পুনরায় শুরু হলেও এ সময় পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়ার ঘাটগুলোতে ৮ শতাধিক যানবাহন আটকে ছিল। পদ্মার দুপাড়ে নারী ও শিশুসহ হাজার হাজার যাত্রী চরম বিড়ম্বনায় পড়ে।
চাঁদপুর-শরিয়তপুর রুটেও সকাল সাড়ে ৪টা থেকে প্রায় পৌনে ১১টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল । চট্টগ্রাম-বরিশাল-মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ভোলা-ল²ীপুর ও ভোলা-বরিশালের মধ্যবর্তী ফেরিঘাট গুলোতেও ৫টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। আবহাওয়া বিভাগ থেকে আজসহ আগামী কয়েকদিনও শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারী কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানান হয়েছে। সে সাথে সারা দেশেই রাত ও দিনের তাপমাত্রার পারদ আরো ওপরে ওঠার কথাও বলা হয়েছে। গতকাল বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে তা ফেব্রæয়ারীর স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমত্রার নিচে থাকলেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দক্ষিনাঞ্চলে ইতোমধ্যে ২৭ডিগ্রী অতিক্রম করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ