পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শপথ নেবেন আজ : অপেক্ষাকৃত জুনিয়র বিচারপতি প্রধান বিচারপতির পদে আসীন হলেন
প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। আজ (শনিবার) প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেবেন তিনি। এতে করে বিচার বিভাগের অভিভাবকের পদটির শূন্যতার অবসান হলো। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আইন মন্ত্রণালয় প্রধান বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর আগে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত পত্রে স্বাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগের পর থেকে এ পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। তবে এবারো সিনিয়র বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি না করে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি করা হয়েছে। যদিও সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে প্রেসিডেন্ট আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে যে কাউকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন। আইনসচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক ইনকিলাবকে বলেছেন, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর করা চিঠিটি আইন মন্ত্রণালয়ে এসেছে। এ নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। শনিবার বঙ্গভবনে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন শপথ নেবেন।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যার্টনি জেনারেল) মাহবুবে আলম ইনকিলাবকে বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পর একটা অপেক্ষার প্রহরের অবসান হলো। আশা করছি, হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগের পথও সুগম হলো। তিনি আরো বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগে সিনিয়রিটি লঙ্ঘন হলেও তাতে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হবে না। কারণ প্রেসিডেন্ট সংবিধান অনুুযায়ী প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
সরকারের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে গত বছরের ১০ নভেম্বর ২১তম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ৮১ দিন আগেই প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর থেকেই ওই পদ খালি ছিল। তবে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। বেশ কিছুদিন ধরেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। এর মধ্যেই গতকাল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন প্রেসিডেন্ট।
এরপর দুুপুরে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত পত্রে স্বাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বলেছেন, প্রধান বিচারপতির নিয়োগ সংক্রান্ত পত্রে প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর করেছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠক বসেন। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। এর ঠিক একদিন পরই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হলো।
আইন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারি : প্রেসিডেন্ট প্রধান বিচারপতির নিয়োগ সংক্রান্ত সই করার পর তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর শুক্রবার সন্ধ্যায় পর মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেছেন। এই নিয়োগ তার শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
নতুন প্রধান বিচারপতির পরিচিতি :
বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সৈয়দ মুস্তফা আলী এবং মায়ের নাম বেগম কাওসার জাহান। তিনি বিএসসি ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া লন্ডন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ওরিয়েন্টাল আফ্রিকান স্টাডিজ এবং ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড লিগ্যাল স্টাডিজ থেকে ছয় মাসের ‘কমনওয়েলথ ইয়াং ল’ইয়ার্স কোর্স’ করেন। বিএসসি ডিগ্রি নেয়ার পর এলএলবি ডিগ্রি নিয়ে ১৯৮১ সালে আইন পেশায় যুক্ত হন তিনি। ১৯৮৩ সালে ওকালতি শুরু করেন হাইকোর্টে। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে নিয়োগ পাওয়া সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিএনপি সরকার আমলে ২০০৩ সালে হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারক হন। ২০১১ সালে তিনি আপিল বিভাগের বিচারক পদে উন্নীত হন। এ ছাড়াও তিনি নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রেসিডেন্ট গঠিত দুটি সার্চ কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি পদে থাকবেন। তিনি অবসরে যাবেন ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর।
নিয়োগে সিনিয়রিটি লঙ্ঘন সাতবার :
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ পর্যন্ত ২১ জন প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব পালন করেছেন। সবশেষ দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি পদে এলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। প্রথা অনুযায়ী, আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করার প্রথা যেমন রয়েছেÑ তেমনি তাকে ডিঙিয়ে অপেক্ষাকৃত কনিষ্ঠ বিচারপতিকে নিয়োগ দেয়ারও নজির রয়েছে। তবে গত ২০১৫ সালে আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি এস কে সিনহাকে প্রধান বিচাপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এবার আবার সিনিয়রকে না দিয়ে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র বিচারপতিকে নিয়োগ করা হলো। যদিও বিষয়টি নির্ভর করে প্রেসিডেন্টের উপর। কারণ প্রেসিডেন্ট সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রধান বিচারপতি নিয়োগে সাতবার সিনিয়রিটি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৫ বছরের (২০০৩-২০১৮) এসব ঘটনার মধ্যে বিএনপি সরকারের সময় ঘটেছে দুইবার, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময় একবার এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ঘটল চারবার। সর্বশেষ ২২তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হলো আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতিকে ডেঙিয়ে। বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞার দুই বছর পর ২০০১ সালের শুরুতে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকের দায়িত্ব শুরু করেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
আপিল বিভাগে বর্তমানে পাঁচজন বিচারপতি রয়েছেন। ক্রম অনুযায়ী প্রথমে আছেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। তিনি অবসের যাবেন চলতি বছর ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। তার পরের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অবসরে যাবেন ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এর পর ক্রম অনুযায়ী রয়েছেন বিচারপতি মো. ইমান আলী, তিনি অবসরে যাবেন ২০২৩ সালে। এরপর আছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, তিনি অবসরে যাবেন ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর। আর পঞ্চম স্থানে আছেন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার, তিনি অবসরে যাবেন ২০২১ সালে ২৮ ফেব্রæয়ারি। অবশ্য এদের মধ্য থেকে যে কাউকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার আইনগত কোনো বাধা নেই। সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া প্রেসিডেন্ট অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন।
বিব্রতকর পরিস্থিতি হবে না Ñঅ্যাটর্নি জেনারেল :
প্রধান বিচারপতি নিয়োগে সিনিয়রটি লঙ্ঘন হলেও তাতে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। গতকাল রাজধানীর বেইলি রোডে মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টে সাংবাদিকরা তার কাছে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে এ কথা বলেন তিনি। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রাষ্ট্রপতি সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন। এতে সংবিধানের কোনো কিছু লঙ্ঘিত হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত ১ আগস্ট উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নিয়ে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণ রায় প্রকাশ করা হয়। রায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারপন্থী আইনজীবীরা। তারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগেরও দাবি তোলেন। যদিও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতারা ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা রায়টিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। এরই মধ্যে গত ২ অক্টোবর হঠাৎ করেই এক মাসের ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি। তিনি আবেদনে ৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে যাওয়ার কথা জানান প্রেসিডেন্টকে। পরে গত ১৩ অক্টোবর রাতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন এস কে সিনহা। ১০ নভেম্বর ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার দিনই দেশের বাইরে থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠান এস কে সিনহা। এরপর বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।