Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

চালের কেজি ৪০ টাকা যুক্তিযুক্ত

নিরাপদ খাদ্য দিবসের উদ্বোধনীতে অর্থমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, খাদ্য উৎপাদন ব্যয় এবং ক্রেতার ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, চালের কেজি ৪০ টাকা হওয়া যুক্তিযুক্ত। এ কারইে চালের দাম সর্বনিম্ন ৪০ টাকা রাখার ক্ষেত্রে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যকে আমি সমর্থন করছি। গতকাল শুক্রবার ওসমানী মিলনায়তনে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষে এ সমর্থন জানান।
অনুষ্ঠানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব শাহাবুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশ উপ-প্রতিনিধি ডেভিড ডুলান প্রমুখ।
এর আগে চালের উচ্চমূল্য নিয়ে সমালোচনার মধ্যে উৎপাদনে ‘কৃষকের আগ্রহ ধরে রাখতে’ চালের দাম ৪০ টাকার নিচে না নামানোর পক্ষে বৃহস্পতিবার মত জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। একদিন বাদেই মন্ত্রিসভার সহকর্মীকে সমর্থন জানান মুহিত।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী সঠিকই বলেছেন, চালের দাম ৪০ টাকার মধ্যে থাকবে। সেই ৪০ টাকা থাকাটা আমার মনে হয় উচিত। হাওরে আকস্মিক বন্যা এবং পরে উত্তরাঞ্চলে বন্যার মধ্যে গত বছরের মাঝামাঝিতে সরকারের চাল মজুদ তলানীতে ঠেকার পর দাম হু হু করে বেড়ে যায়। এরপর আমদানি বাড়িয়ে দিলেও চালের দাম আগের পর্যায়ে নামেনি। সরকারি সংস্থা টিসিবির শুক্রবারের ঢাকার বাজার দরেও সবচেয়ে কম দাবি চালের কেজি ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা দেখানো হয়। কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া নিশ্চিতের জন্য অর্থমন্ত্রী এর আগেও চালের দাম বেশি হওয়ার পক্ষে বলেছিলেন; তবে দাম বাড়লেও তার ভাগ কৃষক পায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। মুহিত বলেন, খাদ্য উৎপাদন ব্যয় এবং ক্রেতার ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করে চালের কেজি ৪০ টাকা শ্রেয় মনে করছেন তিনি।
চাল নিয়ে সরকার এখন ‘স্বস্তির’ মধ্যে আছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের এবারের যে সঙ্কট, সেটাকে সঙ্কট বলা উচিত হবে না; এটা একটি সাময়িক সমস্যা। সমস্যার সমাধান আমাদের খাদ্য মন্ত্রণালয় করে দিয়েছে ইতোমধ্যে। তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত আমদানি করেছে। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের উপস্থিতিতে ওই অনুষ্ঠানে চাল ও গম আমদানি করেও বাংলাদেশ কীভাবে খাদ্যে ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ’ সেটার ব্যাখ্যা দেন মুহিত। তিনি বলেন, আমরা বলি, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কেউ কেউ সেখানে বলেন, যদি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণই হলেন, তাহলে কেন আপনারা আটা অথবা গম আমদানি করেন?
এটা একটি অনুধাবনের বিষয়। আমরা চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং স্বয়ংসম্পূর্ণের চেয়ে বেশি। আমরা চাল রফতানি করতেও সক্ষম। আমরা প্রচুর ভুট্টা উৎপাদন করি, আটা হয়তো কমÑ দেড় লাখ টনের বেশি আমরা গম উৎপাদন করতে পারি না। সবমিলিয়ে যদি আমরা নেই, তাহলে আমরা সত্যিকারভাবে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্য শুধু চাল না; ভুট্টা, গম, মাছ, সবজি, ফলÑ সবই খাদ্য। একটা যখন যথাযথভাবে পাওয়া যায় না, আরেকটি দিয়ে ক্ষুধা নিবৃত্ত করা যায়।
বছরে ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজিতে চাল সরবরাহে সরকারের প্রকল্পের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এবার বোধহয় খাদ্যমন্ত্রীর চাপে পড়ে আমরা এটাকে ১০ টাকায় সরবরাহ করছি। এটা হচ্ছে মানুষের জীবন রক্ষার জন্য। সুতরাং আমার মতে, এখানে আপত্তি করার কারণ নাই এখন। আমাদের সামর্থ্য আছে, আমরা ভর্তুকি দিতে পারি।
অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পিরানহাসহ অন্যান্য বিপজ্জনক মাছ বা খাবারের বিষয়ে সবাইকে সাবধান হতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে একটি বিষয়ে আমাদের সাবধান হওয়া দরকার। সেটি হচ্ছেÑ খাদ্যের কিছু শত্রæ আছে, সেগুলো যেন আমরা কোনো মতেই আমদানি না করি। মাঝেমধ্যে কোনো কোনো দুষ্কৃতকারী এসব করে। পিরানহাকে ‘খাদ্যের শত্রæ’ হিসেবে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্রাজিলে একটা মাছ আছে পিরানহা। সেটা মানুষকেও খেয়ে ফেলে। মানুষখেকো। এ ব্যাপারে আমাদের সাবধান হতে হবে। যেন বাইরে থেকে এ রকম কোনো শত্রæ, খাদ্যের শত্রæ আনতে না পারে। খাদ্যের আরেকটা শত্রæ মহামারী। সাবধানতার সঙ্গে সব ধরনের মহামারীও প্রতিরোধ করতে হবে।
পিরানহা মাছ অন্য মাছ খেয়ে সাবাড় করে, সুযোগ পেলে এরা মানুষও খেয়ে থাকে। এদের হাত থেকে কুমিরও রেহাই পায় না। ব্রাজিলের আমাজন নদীর অববাহিকায় এ ধরনের পিরানহা মাছ প্রচুর পাওয়া যায়। প্রতি বছর সেখানে উল্লেখযোগ্য মানুষ পিরানহার আক্রমণে আহত ও নিহত হন, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা। এই ভয়ঙ্কর পিরানহা মাছ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় গোপনে চাষ হয় এবং রাজধানীসহ বিভিন্ন বাজারে রূপচাঁদা মাছ নামে বিক্রি করে। অনেকে না জেনে এই মাছ কেনেন, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের ও অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী। এই মাছ চাষ ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, আমরা মাঝেমধ্যে হয়তো ধাক্কা খাই, প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে। তবে আমরা সেটা মোকাবেলা করতে পারি। গত বছর হাওর এলাকায় ঢল এবং উত্তরাঞ্চলে বন্যায় ফসলহানি ঘটলেও কৃত্রিমভাবে সঙ্কট তৈরি করা হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, জনগণকে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে সচেতন করার কাজ আমরা করছি। বাংলাদেশের মানুষ যেন নিরাপদে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে, সে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণসহ সব জায়গায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই আমরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাল

১১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ