পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে কারাদ- দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গতকাল এক রায়ে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদ-ের নির্দেশ দেয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা নেতৃত্বাধীন ৮ সদস্যের আপিল বিভাগ দুই মন্ত্রীর নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন নাকচ করে এই রায় দেন। তবে সরকারের এই দুই মন্ত্রীকে ৭ দিনের মধ্যে এই অর্থ ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল ও লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশে জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে আপিল বিভাগ। এর আগে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ১৪ বছর কারাদ- ও আদালতের রায়ের পরও আইনের ক্যারিকেচায় ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর সংসদ সদস্যপদ ধরে রেখে মন্ত্রিত্ব করলেও আদালত অবমাননার অভিযোগে কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কারাদ- এই প্রথম।
আপিল বিভাগের রায়ে আদেশে আপিল বিভাগ বলেন, দুই মন্ত্রী নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে এবং অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে যে আবেদন করেছেন তা আমরা গ্রহণ করতে রাজি নই। আবেদনকারীরা মন্ত্রী, সাংবিধানিক পদধারী। তাঁরা সংবিধান রক্ষার শপথবদ্ধ। তাঁরা যে মন্তব্য করেছেন, প্রধান বিচারপতি ও সর্বোচ্চ আদালতকে অবমাননা করে তাঁরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা আমাদের কাছে উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য বিচার প্রশাসনে হস্তক্ষেপের শামিল এবং বিচার বিভাগের মর্যাদা ক্ষুণœ করেছে। যদি তাঁদের ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে যেকোনো ব্যক্তি বিচার বিভাগ সম্পর্কে একইরকম অবমাননাকর বক্তব্য দেবেন। এ জন্য তাঁদের আমরা গুরুতর আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করছি। তবে তাঁরা প্রথম সুযোগেই নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে উদারতা দেখানো হচ্ছে।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের পক্ষে এডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের পক্ষে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আদালতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
গতকাল সকাল ৯টা ২৮ মিনিটে শুরু হয় শুনানি। শুরুতেই খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদারকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা যে জবাব দাখিল করেছেন, তা পড়ে শোনান।’ জবাবে বাসেত মজুমদার বলেন, ‘মহামান্য আপিল বিভাগ আদালত অবমাননার বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে যে আদেশ দিয়েছেন, আমরা তার জবাব দাখিল করতে আদালতে উপস্থিত হয়েছি। আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে আমরা নিঃশর্তে ক্ষমা চাইছি এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো মন্তব্য করব না বলে অঙ্গীকার করছি। সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আমাদের যথাযথ সম্মান রয়েছে। আমরা এ ধরনের আচরণ ভুলক্রমে করে ফেলেছি।’
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা অ্যাটর্নি জেনারেলকে আদালত অবমাননা ও বিচারপতিদের সম্পর্কে মন্তব্যের বিষয়ে জনকণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদটি পড়ে শোনাতে বলেন। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি পড়ে শোনান। প্রতিবেদনে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বক্তব্য দেন বলে প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর একটি লিখিত বিবৃতি ওই সেমিনারে পড়ে শোনানো হয় বলে জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়। সেমিনারে দুই মন্ত্রী প্রধান বিচারপতি এবং আদালতের কঠোর সমালোচনা করেন। প্রতিবেদনটি পড়া শেষ হলে বসে পড়েন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা জানেন ইতোপূর্বে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়ের বিষয় নিয়ে জনকণ্ঠের সাংবাদিক স্বদেশ রায় আদালতের সমালোচনা ও মন্তব্য করেছেন। তিনি ছিলেন একজন মিডিয়াপারসন। কিন্তু আপনারা তো সাংবিধানিক পদ ধারণ করেন। আপনারা কেন এ বিষয়ে মন্তব্য করলেন?’ এরপর আদালত বলেন, ‘স্বাধীনতার পর তিনজন অ্যাটর্নি জেনারেল পেয়েছে এ দেশ, যাঁরা খুবই সৎভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁরা হলেনÑ মাহমুদুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম এবং বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মীর কাসেম আলীর রায়ে আপনারা দেখবেন, কার কাছ থেকে কারা টাকা নিয়েছেন। টাকা নিয়ে খেলা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের ডিগনিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেক হাউজিং আমরা করছি। কিন্তু কারো সাথে কোনো আপস করি না। আমরা চাইলে জনকণ্ঠে প্রকাশিত অন্যদেরও ডাকতে পারতাম। কিন্তু আপনারা দু’জনেই সাংবিধানিক পদ ধারণ করেন। আপনাদের মাধ্যমেই পুরো জাতিকে মেসেজ দিচ্ছি, যদি কেউ এ ধরনের আচরণ করে তাহলে আদালত কত কঠোর হতে পারে।’ এ সময় আদালত তাদের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আবেদন খারিজ করে তাঁদের ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদ- এবং অনাদায়ে সাতদিন কারাদ- প্রদান করেন। সাতদিনের মধ্যে এই টাকা অ্যাটর্নি জেনারেলকে লিভার ফাউন্ডেশন ও ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে অনুদান হিসেবে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।
গত ৫ মার্চ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির আদেশ পাওয়া মীর কাসেম আলীর আপিল মামলা পুনরায় শুনানির দাবি জানান। কামরুল ইসলাম বলেন, যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর আপিল মামলার শুনানিতে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন দলের কাজ নিয়ে প্রধান বিচারপতির অসন্তোষ প্রকাশের মধ্য দিয়ে ‘রায়েরই ইঙ্গিত’ মিলছে। রায় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চে পুনঃশুনানির দাবি তোলেন সরকারের এই মন্ত্রী। ওই শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেলকে অংশ না নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকও প্রধান বিচারপতির মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেন।
এর তিন দিনের মাথায় আপিল বিভাগ জামায়াত নেতা মীর কাসেমের আপিলের যে রায় দেয়, তাতেও মৃত্যুদ- বহাল থাকে। ওই রায় ঘোষণার আগে পুরো আপিল বিভাগকে নিয়ে বসে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা দুই মন্ত্রীকে তলবের আদেশ দেন। দুই মন্ত্রীর দেয়া যে বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে এসেছে তা বিচার প্রশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ এবং সুপ্রিম কোর্টের সম্মান ও মর্যাদাকে হেয় করার শামিল বিবেচনা করে আদালত অবমাননার রুল জারি হয় তাদের বিরুদ্ধে। দুই মন্ত্রী ক্ষমা চেয়ে আদালতে আবেদন করার পর গত ২০ মার্চ শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, দুই মন্ত্রীর বক্তব্য ঔদ্ধত্যপূর্ণ। তারা সর্বোচ্চ আদালতের অবমাননা করেছেন। সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে তা ভঙ্গের পরিণাম কি হওয়া উচিৎÑ তাও তিনি জানতে চেয়েছিলেন দুই মন্ত্রীর আইনজীবীদের কাছে।
আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ১৫ মার্চ সকালে আদালতে হাজির হন। সরকারি কাজে বিদেশে থাকা খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এইদিন ছিলেন না। কামরুল ইসলামের আইনজীবী ব্যক্তিগত হাজিরার জন্য সময়ের আবেদন করেন। তারা দু’জনেই ওই বক্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেন আদালতের কাছে। কামরুলের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে আপিল বিভাগ দুই মন্ত্রীর হাজিরার জন্য ২০ মার্চ নতুন তারিখ ঠিক করে দেয়। ওইদিন তারা দু’জনেই হাজির হলে আদালত জানায়, কামরুলের জবাব যথাযথ হয়নি। তাকে আবার ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য ২৭ মার্চ দিন ঠিক করে দেয় আদালত। মোজাম্মেলকেও একই দিনে হাজির হতে বলা হয়। সে অনুযায়ী খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গতকাল সকাল ৯টায় নির্ধারিত সময়ের আগেই আদালত কক্ষে হাজির হন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কামরুল নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবার নতুন করে আবেদন করেন। তবে রায়ে দু’জনের আবেদনই আদালত গতকাল খারিজ করে দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।