Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সরকারি কোম্পানি এগিয়ে

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে বেসরকারি উদ্যোক্তারা পিছিয়ে থাকলেও এগিয়ে রয়েছে সরকারি কোম্পানিগুলো। এখন পর্যন্ত বেসরকারি উদ্যোক্তারা কোনও কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরই করতে পারেনি। সরকারি উদ্যোগে এখন পর্যন্ত তিনটি বিদুৎকেন্দ্রর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবি সূত্রে তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস ইনকিলাবকে বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে বেসরকারি উদ্যোক্তারা পিছিয়ে থাকলেও এগিয়ে রয়েছে সরকারি কোম্পানিগুলো। এখন পর্যন্ত বেসরকারি উদ্যোক্তারা কোনও কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরই করতে পারেনি। সরকারি উদ্যোগে এখন পর্যন্ত তিনটি বিদুৎকেন্দ্রর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন. আগামীতে সরকারিভারে আরো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প নেয়া হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, এক হাজার মেগাওয়াটের বিদুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রায় দুই শ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। এরমধ্যে ২০ ভাগ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মূলধনী বিনিয়োগ থাকতে হয়। আর বাকি ৮০ ভাগ ঋণ দেয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এখানেই বেসরকারি উদ্যোক্তারা পিছিয়ে রয়েছে। বিদেশি ব্যাংক ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানির আর্থিক স্ক্ষমতা যাচাই করে। এর ফলে দেশের যেসব কোম্পানি কাজ পেয়েছে, সেগুলোর অনেকের ক্ষেত্রে দেনার পরিমাণ বেশি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, কোনও একটি কেন্দ্র নির্মাণে যদি দুই শ কোটি ডলার বা ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়, তাহলে এর মূলধনী বিনিয়োগ হচ্ছে তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে এগিয়ে এলেও এখনপর্যন্ত বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর পুঁজি বিনিয়োগে ঘাটতি দেখতে পেয়েছে। অন্যদিকে সরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে যারাই কাজ করছে, তাদের পূঁজির জোগান দিচ্ছে সরকার। এছাড়া এ ধরনের ঋণ ফেরতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্যারান্টি দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনও কারণে সরকারের কোম্পানিটি ঋণ ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার কোম্পানির পক্ষে ঋণের পুরো অর্থ ফেরত দেবে। বেসরকারি কোম্পানির ক্ষেত্রে এই সুযোগও নেই। ফলে বিপুল পরিমাণ পুঁজির যে সমাহার ঘটাতে হয়, তার সংস্থান করতে পারছেন না বেসরকারি উদ্যোক্তারা। অন্যদিকে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সম্পন্ন বিদুৎকেন্দ্রের জন্য অন্তত ৫০০ একর জমির প্রয়োজন। কিন্তু বেসরকারিভাবে বিদুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ যারা পেয়েছেন, তারা কেউই এখন সম্পূর্ণ জমি সংস্থানের বিষয়টিও সরকারকে নিশ্চিত করতে পারেনি। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারিভাবে এ পর্যন্ত ৭টি কোম্পানি কয়লাভিত্তিক বিদ্যূৎকেন্দ্র স্থাপনের আগ্রহ দেখিয়েছে। এরমধ্যে এস আলম গ্রæপকে ৬১২ মেগাওয়াট করে দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি করেছে। ভূমি অধিগ্রহণে কাজ চলছে, অস্থায়ী ফেন্সিং, রাস্তা ও জেটি নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। দেশের অন্য একটি বড় কোম্পানিকে চারটি বড় কেন্দ্র নির্মাণের কাজ দেওয়া হয়। চারটি কেন্দ্রের মধ্যে আছে মুন্সীগঞ্জে ৫২২ মেগাওয়াট মেঘনাঘাটের চর বলাকিয়ায় ৬৩৫ মেগাওয়াট, ২৮২ মেগাওয়াটের দু’টি। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৫ সালের এপ্রিলের মধ্যে মুন্সীগঞ্জ এবং ২০১৪ সালের মধ্যে মেঘনাঘাট ও চট্টগ্রামের কেন্দ্রগুলোর উৎপাদনে আসার কথা। কিন্তু তাদের কাজের গতি খুবই ধীর। এ ছাড়া বরিশালে ৩০৭ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহপত্র (এলওআই ইস্যু) দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি। এখন পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে স্থাপিতব্য কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সব থেকে এগিয়ে রয়েছে পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ। এরইমধ্যে কেন্দ্রটির ৩০ ভাগের ওপর কাজ শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও চীনের সিএমসি কেন্দ্রর সমান অংশীদার। দুই কোম্পানি মিলে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল) গঠন করেছে। বাংলাদেশ ও চীন সরকার প্রকল্পটির মালিক। চীনের এক্সিম ব্যাংক প্রকল্পটিতে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১৯ সালে উৎপাদনে আসবে। এদিকে বিতর্ক থাকলেও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু করেছে সরকার। আলোচিত এই কেন্দ্রটির মালিক বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পওয়ার লিমিটেড (এনটিপিসি)। বাংলাদেশ ভারত ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি (বিআইএফসিএল) ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। কেন্দ্রটির টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখন পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ চলছে। শিগগিরই কেন্দ্রের মূল পাইলিংয়ের কাজ শুরু হবে। এ ধরনের একটি কেন্দ্রের জন্য সাড়ে সাত থেকে আট হাজার পাইলিং প্রয়োজন হয়। কেন্দ্রটিতে ঋণ সহায়তা দিয়েছে এক্সিম ব্যাংক। বাংলাদেশ সরকারের কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ মাতারবাড়িতে নির্মাণ করছে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী গত ২৮ জানুয়ারি কেন্দ্রটি নির্মাণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরমধ্যে অবশ্য কেন্দ্রটি নির্মাণের ১৭ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি জাইকা প্রকল্পটিতে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ