পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আল আকসা মসজিদের গ্র্যান্ড খতীব ড. ইকরামা সাঈদ আব্দুল্লাহ সবরী বলেছেন, মসজিদে আকসা আসমানের দরজা। এই দরজা দিয়ে বিশ্বনবী (সঃ) আসমানে গেছেন আর সকল নবীরা আসমান থেকে মসজিদে আকসায় এসে শেষ নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর ইমামতিতে নামাজ আদায় করেছেন। তিনি বলেন, মসজিদে আকসা মসজিদে হারামের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্বনবী (সঃ) মেরাজের রাতে হারাম শরীফ থেকে প্রথমে মসজিদের আকসায় গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি সকল নবীদের নিয়ে নামাজে ইমামতি করেছেন। আর মসজিদে আকসা থেকেই নবীজি আসমানে গেছেন। আল্লাহর দরবারে গেছেন। তাই মসজিদে আকসা ও জেরুজালেমের গুরুত্ব অপরিসীম। মসজিদে আকসা ও জেরুজালেম ইয়াহুদীদের ছেড়ে দেয়া হবে না। তিনি গতকাল কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ইদগাহ ময়দানে আন্তর্জাতিক ক্বেরাত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন পোকখালী জামিয়া এমদাদিয়া আজিজুল উলুম মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও সদরে মুহতামিম মাওলানা মুখতার আহমদ।
তিনি বলেন, মসজিদে আকসা মুসলমানদের প্রাণের সম্পদ। এটিকে রক্ষা করা সবার নৈতিক দায়িত্ব। আমি জানি, আমেরিকার অন্যায় আচরণে বাংলাদেশের মুসলমান ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, মুসলিম জাতি এক অঙ্গের ন্যায়। আমেরিকার অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদমুখর। মসজিদে আকসা ইহুদিদের ছাড় দেয়া হবে না। শক্তভাবে তাদের প্রতিহত করা হবে।
মসজিদে আকসার গ্র্যান্ড খতীব বলেন, মুসলমানদের প্রথম ক্বেবলা মসজিদে আকসা ও পবিত্র ভূমি জেরুজালেমের উপর ইসলামের শত্রুদের কুনজর পড়েছে। আগ্রাসী ইয়াহুদীরা জেরুজালেম গ্রাস করতে চায়। সারা বিশ্বের মুসলমানরা ইয়াহুদী নাসারাদের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার। বাংলাদেশের মুসলমানরাও এই প্রতিবাদে পিছিয়ে নেই। তাই তিনি বাংলাদেশের মুসলমানদেরকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতঃপূর্বে সফর করলেও বাংলাদেশে এটি তার প্রথম সফর। এখানে এসে তিনি জানতে পারেন বাংলাদেশের মানুষ আল্লাহর কুরআন ও নবী রাসূলদের ভালবাসেন। তারা মসজিদে আকসা ও জেরুজালেমকে ভালবাসেন। ফিলিস্তিনী মুসলমানদের সাথে তারা একাত্ম। তিনি বলেন, মুসলিম উম্মাহর দোয়ায় মসজিদে আকসা ও জেরুজালেম একদিন শত্রুমুক্ত হবে-ইনশাআল্লাহ।
তিনি ক্বেরাতর মাহফিলে এশা নামাজের ইমামতি করার কথা থাকলেও মুসাফির হওয়ার কারণে তিনি ইমামতি করেননি। সেখানে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে দোয়া করেন।
সমুদ্র শহর কক্সবাজারে দ্বিতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সম্মেলন। গত সোমবার (২৯ জানুয়ারী) কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে মিলনমেলা ঘটে বাংলাদেশসহ বিশ্বসেরা ক্বারীদের। সম্মেলন আলোকিত করেন মুসলমানদের প্রথম কিবলা মসজিদুল আকসার গ্র্যান্ড ইমাম ও খতীব শাইখ ড. ইকরামা সাঈদ আব্দুল্লাহ সবরী। তিনি এশার নামাজের আগে সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশে নসিহতমূলক বক্তব্য রাখেন। ক্বিরাত সম্মেলনে দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা ২০ জনের অধিক ক্বারী অংশগ্রহণ করেন। বিকাল ৩টা থেকে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এর আগেই অনুষ্ঠানস্থলে ভীড় করে কুরআন প্রেমিকরা। তবে, বিদেশী ক্বারীগণ তিলাওয়াত করতে মঞ্চে ওঠেন এশা নামাজের পর। ক্বারীদের গগণবিদারী কণ্ঠে বেজে উঠে মহান ঐশি গ্রন্থ আল কুরআনের সুর। সেই সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে যায় সবখানে। মাতিয়ে তুলে সমুদ্র শহর কক্সবাজার।
হৃদয় ছোঁয়া কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করেন বর্তমান বিশ্বের সেরা ক্বারী মিসরের ড. শাইখ আহমাদ আহমাদ নাঈনা, বাংলাদেশের গৌরব বিশ্বখ্যাত ক্বারী শাইখ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আযহারী, মিসরের খ্যাতনামা ক্বারী শাইখ মুহাম্মাদ মুহাম্মাদ মুরীজী, ইরানের ক্বারী সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ জাওয়াদ হুসাইনী, আরবের প্রখ্যাত সুরকার ও সিরিয়ার ইসলামী সঙ্গীত শিল্পী মুনশিদ ক্বারী মু’তাসিম বিল্লাহ আল আসালী, আলজেরিয়ার ক্বারী শাইখ রিয়াদ আল জাযায়েরী, ভারতের ক্বারী মুহাম্মদ তাইয়্যিব জামাল। রাত ১০টায় মঞ্চে ওঠেন মসজিদুল আকসার গ্র্যান্ড ইমাম ও খতীব শাইখ ড. ইকরমা সাঈদ আব্দুল্লাহ সবরী।
আন্তর্জাতিক কুরআন তিলাওয়াত সংস্থার (ইক্বরা) এবারের ক্বিরাত সম্মেলন আয়োজন করে। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল তানযিমুল উম্মাহ হিফয মাদরাসা। বাদ যুহর একই দিন হুসনে ক্বিরাত প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন হিফজ প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধশত প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়সহ সেরা ১০ জনকে দেয়া হয় নগদ অর্থ ও আকর্ষণীয় পুরস্কার। এই প্রতিযোগিতার স্পন্সর ছিলেন কক্সবাজারের প্রবীন ব্যবসায়ী আলহাজ্ব ফজল আহমদ কোম্পানী। পিতার পক্ষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সুযোগ্য সন্তান আমিনুল ইসলাম হাসান। সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ডক্টর মীম আতিকুল্লাহ। ক্বিরাত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা রইস উদ্দিন ইসলাহী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।