Inqilab Logo

রোববার, ০৯ জুন ২০২৪, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আমরা বিজয়ী জাতি পিছিয়ে থাকব না : শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : স্বাধীনতা দিবসে শিশু-কিশোর সমাবেশে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা এই বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছেন। সেই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। ছোট সোনামণিদের মনে রাখতে হবে, আমরা বিজয়ী জাতি। কোনো দিক থেকে আমরা পিছিয়ে থাকব না। আমরা এগিয়ে যাব।
গতকাল শনিবার মহান স্বাধীনতা দিবসে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। সেখানে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে দৃষ্টিনন্দন কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আজ জাতীয় পতাকা, বেলুন ও পতাকা উড়িয়ে শিশু-কিশোর সমাবেশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর অত্যাচারের কথা তুলে ধরেন। সে সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এরপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু দেশের মানুষকে তিনি আগেই প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। তাঁর আহ্বানে এ দেশের মানুষ অস্ত্র তুলে নেয়। যুদ্ধ করে।
শিশুদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বে আমাদের অবস্থান যাতে আরও সুদৃঢ় হয়, আত্মমর্যাদাশীল হয়, সেভাবে আমরা দেশকে গড়ব। তোমরা সোনামণিরাই নিজেদের গড়ে তুলবে। আজ তোমরা ছাত্রছাত্রী, কিন্তু আগামীদিনে তোমরাই কর্ণধার হবে। তোমরাই এ দেশ পরিচালনা করবে। তোমরাই তো আমাদের মতো মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী হবে।
ঢাকা জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. সালাউদ্দিন অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গ্যালারী এদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠ’র প্রতিকৃতি, ছবি এবং দেশের নানা প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী দিয়ে সাজানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের সময় আমরা সবসময় বৈষম্যের স্বীকার হয়েছি। এদেশের মানুষের শিক্ষার সুযোগ ছিল না, তারা চিকিৎসা পেত না, তাদের খাবার ছিল না, আশ্রয় ছিল না। আমাদের অর্থ-সম্পদ লুট করে নিয়ে যেত পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী। এমনকি আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলারও অধিকার পর্যন্ত তারা কেড়ে নিতে চেয়েছিল।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা একদিনে আসেনি। এজন্য জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুকে ২৩ বছরের সংগ্রাম-নির্যাতন, জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তখন তিনিই প্রথম রাষ্ট্রভাষার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এরপর ছয় দফা, সত্তরের নির্বাচন ও অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি দেশকে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, ’৭০ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জনের পরও পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী শাসন ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। সে সময় ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ রেসকোর্সেও ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) তার ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে সমগ্র বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। লাখো জনতার সমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনাতর সংগ্রাম। জয় বাংলা।’ বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমগ্র জাতি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে। তাঁর ডাকে পূর্ব বাংলায় শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী অতর্কিতে নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানসহ শিশু-কিশোর-নারী-বৃদ্ধ, কাউকেই রেহাই দেয়নি তারা। ইতিহাসের বর্বরোচিত গণহত্যায় মেতে ওঠে পাক সামরিক বাহিনী।
২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর পরপরই তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার আহ্বানে মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ শেষে ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ মা-বোনের সমভ্রের বিনিময়ে আমরা একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জন করি।
তিনি তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ইনশাল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। আর ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা নিজেদের দক্ষিণ এশিয়ার একটি সুখী ও সমৃদ্ধ, উন্নত দেশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হব।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী, সকাল ৮টা ৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এ সমাবেশের উদ্বোধন করেন। তিনি স্টেডিয়ামে এসে শুরুতেই টাইগার ক্যারাভ্যানে প্রবেশ করেন ও সেটা ঘুরে দেখেন। এরপর জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে পায়ে হেঁটে সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয় শিশু-কিশোর সমাবেশে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিশু সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন ডিসপ্লে প্রদর্শন করে এবং বাদ্যের তালে তালে সমাবেশ প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানায়।
ফুল ও মিষ্টি পাঠিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৬তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশের মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এ উপলক্ষে তিনি শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ফুল-ফল ও মিষ্টি পাঠিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী ব্যক্তিগত সচিব (এপিএস)-১ জাহাঙ্গীর আলম, এপিএস-২ সাইফুজ্জামান শিখর ও প্রটোকল অফিসার খুরশীদ আলম গতকাল সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্রে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এসব উপহার তুলে দেন।
মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ঈদসহ প্রতিটি উৎসবকালে তাদেরকে স্মরণ করা এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্য মোহাম্মদপুরে একটি বহুতল বিশিষ্ট আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় ৮০টি পরিবার এই ভবনে বসবাস করছে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৬তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে একটি স্মারক ডাক টিকেট, একটি উদ্বোধনী খাম এবং একটি ডাটা কার্ড অবমুক্ত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার বিকালে এখানে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে ১০ টাকা মূল্যের একটি ডাক টিকেট ও একটি উদ্বোধনী খাম এবং ৫ টাকা মূল্যের একটি ডাটা কার্ড অবমুক্ত করেন। এ উপলক্ষে একটি বিশেষ সীলমোহর ব্যবহার করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ও বাংলাদেশ ডাকঘরের মহাপরিচালক প্রভাষ সাহা এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল থেকেই ঢাকা জিপিও’র ফিলাটেলিক ব্যুরোতে স্মারক ডাক টিকেট, উদ্বোধনী খাম এবং ডাটা কার্ড বিক্রয় করা হচ্ছে। পরে, অন্যান্য জিপিও এবং সারাদেশের প্রধান ডাকঘরসমূহে এগুলো পাওয়া যাবে। চারটি জিপিওতে উদ্বোধনী খামে ব্যবহার করার জন্য ‘বিশেষ সীলমোহরের’ ব্যবস্থা করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আমরা বিজয়ী জাতি পিছিয়ে থাকব না : শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ