Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীর্ষ ঋণখেলাপী ১৯৫৬ জনের তালিকা সংসদে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দশ বছরে ৬ লাখ কোটি টাকা, ৮৭৯১ প্রতিষ্ঠান ঋণ পেয়েছে : অর্থমন্ত্রী
বিগত ১০ বছরে ১০ কোটি টাকার বেশী ঋণ নিয়েছে ৮ হাজার ৭৯১ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। দেশের ৯১টি তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের মোট ৬ লাখ ৬ হাজার ৫০৩ কোটি ঋণ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৬৫ হাজার ৬০২ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব হয়নি। জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল বুধবার এ তথ্য জানান। একইসঙ্গে তিনি বেসিক, সোনালী, ফারমার্সসহ বিভিন্ন দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যাংকের ব্যাপারে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো বর্ণনা করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের অর্থপাচারের ঘটনা বর্তমান সরকার ভোলেনি তিনি উল্লেখ করেন।
স্বতন্ত্র এমপি মো. রুস্তুম আলী ফরাজীর খেলাপী ঋণ বিষয়ক প্রশ্নের জবাবে অর্থ মন্ত্রী সংসদে ঋণদাতাদের পাশাপাশি ১ হাজার ৯৫৬ শীর্ষ ঋণখেলাপীর নাম সম্বলিত তালিকা উপস্থাপন করেছেন। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘খেলাপী ঋণ রোধ করতে সরকার খেলাপী গ্রাহকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’ সবগুলো ব্যাংকের ঋণ আদায়ের ইউনিটকে শক্তিশালী করতে বলা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) নূরুল ইসলাম মিলন এমপির প্রশ্নে অভিযোগ করেন, বিগত ৩ বছর ধরে আমরা বেসিক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের বহু দুর্নীতির কথা শুনেছি। ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালকরা সাইনবোর্ড সর্বস্ব অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে সেই অর্থ নিজেরা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। ব্যাংকটি খেলাপী ঋণ গ্রহিতাকে বার বার ঋণ দেওয়ার নজিরও স্থাপন করেছে। একইভাবে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকেও সীমাহীন অনিয়ম হচ্ছে। অনুপস্থিত পরিচালকদের স্বাক্ষর জাল করে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যানের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া হয়েছে। এবি (আরব-বাংলাদেশ) ব্যাংকের যোগসাজশে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা সিঙ্গাপুরে পাচার হয়েছে। প্রায় হাজার বাংলাদেশী মালয়শিয়ায় সেকেন্ড হোম তৈরী করেছে। একই সময়ে এ দেশীয়রা সুইচ ব্যাংকে খুলেছে নতুন ৫০০ একাউন্ট।’ এ ব্যাপারে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ জানানোর দাবি জানান কুমিল্লার এই সংসদ সদস্য। একই দলের সুনামগঞ্জের পীর ফজলুর রহমান এমপি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ফেনীর বেগম শিরীন আখতার এমপিও ব্যাংক খাতের অনিয়ম ও অব্যস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জবাবে অর্থ মন্ত্রী সংসদের সামনে সরকারের নেওয়া উদ্যোগগুলো সংসদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকে সংগঠিত দুর্নীতির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফারমার্স ব্যাংকে সংঘটিত দুর্নীতির কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে একজন পর্যবেক্ষকও নিয়োগ দিয়েছে। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও এক পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। আর্থিক অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের সাথে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলায় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) অপসারন করা হয়েছে। মন্ত্রী জানান, সম্প্রতি ফারমার্স ব্যাংকের পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সভায় ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ও নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ঋণ পুনরুদ্ধাওে বিশেষ কার্যক্রম হাতে নিয়ে আমানতকারীদেও আস্থা অর্জনে তৎপর হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনিয়মের সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের এমডিকেও অপসারণের পাশাপাশি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এবি (আরব-বাংলাদেশ) ব্যাংকের যোগসাজশে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা সিঙ্গাপুরে পাচার হওয়ার ঘটনাও দুদক তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ক তথ্যাদি সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। মালয়শিয়ায় সেকেন্ডহোম তৈরী করা বাংলাদেশীদের ব্যাপারেও বিএফআইইউ দুদক-কে তথ্য দিয়েছে। সংরক্ষিত আসনের সরকার দলীয় সানজিদা খানম এমপির প্রশ্নের জবাবে অর্থ মন্ত্রী জানান, ঋণ খেলাপী বা অনিয়মে জড়িতদের মধ্যে কেউ কেউ মারা গেছেন। অনেকে জেলে আছেন। আরো অনেকের বিচার চলছে। তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি কয়েক দিন আগেও সংসদে বলেছি - ব্যাংক ব্যবস্থায় এখনো কিছু দুর্বলতা রয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের চেষ্টা চলছে। তবে এ জন্য একটু সময় লাগবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শীর্ষ ঋণখেলাপী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ