Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আপনাদের জিজ্ঞাসার জবাব

| প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

প্রশ্ন : প্রতিটি ভাল কথা ও কাজ কি সাদকা স্বরূপ?
উত্তর : মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষ অপর মানুষের উপকারে এগিয়ে আসবে এটাই ইসলামের নীতি। মানবোপকার মহৎ গুণ হিসেবে ইসলামে স্বীকৃত। আর্থিক, শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ইত্যাকার সর্বপ্রকার সাহায্য সহযোগিতা একে অপরের জন্য প্রয়োজন। সাহায্য করার কিছুই না থাকলে একজন মানুষ অপর মানুষকে মধুর ভাষা ব্যবহার করে শান্তনা দিতে পারে। এটিও তার জন্য সাদকা হিসেবে পরিগণিত হবে বলে নবী (স.) সকলকে উৎসাহিত করেছেন। একবার নবী (স.) জাহান্নামের আগুনের কথা উল্লেখ করলেন। তারপর তা থেকে পানাহ চাইলেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিলেন। পরে আবার জাহান্নামের আগুনের কথা উল্লেখ করলেন, তারপর তা থেকে পানাহ চাইলেন এবং তাঁর মুখ ফিরিয়ে নিলেন। শুবা (র.) বলেন- দুবার যে বলেছেন এতে আমার কোন সন্দেহ নেই। তারপর নবী বললেন- “তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাক এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও। যদি তা না পাও, তাহলে মধুর ভাষা বিনিময়ে।” (সাহীহুল বুখারী, হাদীছ নম্বর-৫৬৭৭)।
একটি ভাল কাজের দরজা বন্ধ হয়ে গেলে অপর দরজা খোলা থাকে। কারণ ভাল কাজের দরজা অনেক। যখন কোন মানুষ ভাল কাজ সম্পাদন করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন সে মুখের ভাল কাজ চালিয়ে যাবে। তথা সে মানুষকে ভাল কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। এটিও করতে অক্ষম হলে তার জন্য এর স্থলাভিষিক্ত হল খারাপ থেকে বিরত থাকা। খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকলে সেটিও হবে তার জন্য সাদকাহ স্বরূপ। (ইবন বাত্তাল, শারহু সাহীহিল বুখারী, নবম খন্ড, পৃ. ২২৪)। আল মুহাল্লাব বলেন- উপরোক্ত বক্তব্য নবী (স.) বর্ণিত একটি হাদীছের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ। নবী (স.) বলেন- “যে ব্যক্তি খারাপ কাজের ইচ্ছা পোষণ করল, কিন্তু তা করল না, এ জন্য সে একটি সাওয়াব পাবে।” (আল বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নম্বর-৩৩৪)। অপর এক হাদীছে নবী (স.) বলেন- “প্রত্যেক মুসলিমের উপর সাদকা করা কর্তব্য। সাহাবীরা বললেন- যদি তার (আর্থিক) সামর্থ না থাকে। নবী (স.) বললেন-তাহলে সে নিজ কর্মের মাধ্যমে নিজের এবং অপরের সাহায্য করবে। তারা বললেন- যদি সে এটি করতে সক্ষম না হয় বা না করে। তিনি (স.) বললেন- তাহলে সে অসহায় মুখাপেক্ষীকে সাহায্য করবে। তারা বললেন- যদি সে তা না করে। তিনি (স.) বললেন- তাহলে সে অন্যকে ভাল কাজের আদেশ করবে। তারা বললেন- যদি সে তা না করে। তিনি (স.) বললেন-তাহলে সে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে, এটিই তার জন্য সাদকা স্বরূপ।” (সাহীহুল বুখারী, হাদীছ নম্বর-৫৬৭৬)।
আর্থিক সাহায্য যেমন একজন মানষকে খুশী করে, তেমনি ভাল কথাও একজন মানুষকে সন্তুষ্ট করে। এ জন্য নবী (স.) বলেন- “ভাল কথা সাদকা স্বরূপ।” (আল বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা, হাদীছ নম্বর-৬০৮৬)। ভাল কথা একটি মহান আমল। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন- “খারাপ কথাকে তুমি ভাল কথা দিয়ে প্রতিহত কর।” (সূরাতুল মুমিনুন, আয়াতঃ ৯৬)।
ভাল কথা ব্যাপকার্থক। যেমন কাউকে আস সালামু আলাইকুম বলা, তার জবাবে ওয়া আলাইকুম আস সালাম বলা ইত্যাদি। একদা নবী (স.) সাহাবীদের সাথে বসেছিলেন। এক ব্যক্তি এসে বললেন- আস সালামু আলাইকুম। সাহাবীরা তার সালামের উত্তর দিলেন। নবী (স.) বললেন- ‘দশ’। দ্বিতীয় এক ব্যক্তি এসে বললেন- আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। সাহাবীরা তার সালামের উত্তর দিলেন। নবী (স.) বললেন- ‘বিশ’। তৃতীয় এক ব্যক্তি এসে বললেন- আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। নবী (স.) বললেন- ‘ত্রিশ’। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন- হে আল্লাহর রাসূল! দশ, বিশ ও ত্রিশের তাৎপর্য কি? নবী (স.) বললেন- প্রতিটি ভাল কাজের বিনিময় দশগুণ। কাজেই প্রথম ব্যক্তি একটি বাক্য বলেছিলেন, ফলে তিনি দশগুণ সাওয়াব পাবেন, দ্বিতীয় ব্যক্তি দুটি বাক্য বলেছিলেন, ফলে তিনি বিশগুণ সাওয়াব পাবেন, আর তৃতীয় ব্যক্তি তিনটি বাক্য বলেছিলেন, ফলে তিনি ত্রিশগুণ সাওয়াব পাবেন। (আন নাবাবী, শারহুল আরবাঈন, জুয, ৫৮, পৃ. ৬)।
উত্তর দিচ্ছেন : ড. মোহাঃ এমরান হোসেন



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ