পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলী খানের একটি বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের কোটা পদ্ধতিকে ‘উদ্ভট’ আখ্যায়িত করে তা তুলে দেওয়ার দাবি জানানো তাঁর বক্তব্য দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া এবং বেকার তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সাবেক এই ঝানু আমলার বক্তব্যের সমর্থনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে ব্যাপকভাবে পাঠক মতামত।
সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব ড. আকবর আলি খান অর্থনীতিবিদ হিসেবে যেমন সুনাম কুড়িয়েছেন; তেমনি গবেষক হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। বাংলাদেশের প্রশাসনের ‘চালচিত্র’ এক সময়ের ঝানু এই আমলার নখদর্পণে। তিনি ২০ জানুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের চারতলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ আয়োজিত ‘প্রেজেন্ট সিভিল সার্ভিস সিস্টেম ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক সেমিনারে বক্তৃতা করেন। বক্তৃতায় কোটা পদ্ধতির কুফল তুলে ধরে সরকারি চাকরিতে কোটা তুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ক্যাডার চাকরিতে নিয়োগে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কোটা সিস্টেম। এর কারণে মেধাবীরা চাকরি পাচ্ছে না। পৃথিবীর কোনো দেশেই এমন উদ্ভট সিস্টেম নেই। বাংলাদেশের সংবিধানে কোটা চালু হয়েছে দরিদ্রদের উপরে তুলে আনার জন্য; কাউকে পুরস্কৃত করার জন্য নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা সিস্টেম চালু হয়েছিল কারণ তাদের অবস্থা তখন খারাপ ছিল। কিন্তু এখন মুক্তিযোদ্ধার নামে যে কোটা দেওয়া হয় তা নিতান্তই অমূলক।’ কোটা পদ্ধতির কুফল নিয়ে তিনি আরো কিছু প্রণিধানযোগ্য মন্তব্য করেন। তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের তরুণ-তরুণী ও শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের বক্তব্য মন্তব্য করেছেন। তারা কোটা পদ্ধতির আকবর আলী খানের বক্তব্য বিবেচনার আহবান জানান।
প্রশাসনকে দলীয়করণ করার চলমান বাস্তবতায় ‘ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না’ এমন ধারণা মানুষের মধ্যে বিদ্যমান। আবার কোটা পদ্ধতিতে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে দেখা যায় পরীক্ষা দিয়ে মেধার ভিক্তিতে মাত্র ৪৪ জন চাকরি পান। সেটাতেও ঘুষ দিতে হয় ঘাটে ঘাটে। অথচ শতকরা ৫৬ ভাগ নিয়োগ দেয়া হয় কোটা পদ্ধতিতে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ ও জেলা ১০ শতাংশ নিয়োগ দেয়া হয়। এই কোটার কারণে অনেক কম মেধার তরুণ-তরুণীরা চাকরি পেলেও আসন না থাকায় ভাল রেজাল্ট করা মেধাবীদের অধিকাংশই চাকরি থেকে হন বঞ্ছিত। যদিও কোটাপূরণ না হওয়ায় প্রশাসনে অনেক পদ শুন্য থেকে যায়। সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি প্রসঙ্গে সাবেক কূটনীতিকদের মতামত হলো- প্রশাসনে দক্ষ জনবলের প্রচন্ড অভাব। কোটায় চাকরি নিয়ে অযোগ্য লোকজন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসছেন। কিন্তু তারা প্রশাসনকে গতিশীল করতে পারছেন না। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়াকে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত অবিহিত করলেও মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন-ভারত-রাশিয়া-নেপালসহ বন্ধু দেশগুলো বাংলাদেশের পক্ষ্যে অবস্থান না নেয়া কূটনৈতিক ব্যর্থতাকে দায়ী করেন। সাবেক কূটনীতিকদের মতে বর্তমানে যে অবস্থা কোটা পদ্ধতি বাদ দিয়ে মেধাবীদের নিয়োগ না দেয়া হলে সামনে দক্ষ কর্মকর্তার অভাবে প্রশাসন বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
কোটা পদ্ধতিকে ড. আকবর আলী খানের ‘উদ্ভট’ বলাকে সমর্থন জানিয়ে পাঠক মতামতে রাইহানুল হক লিখেছেন, ‘তিনি (আকবর আলী খান) একেবারে ঠিক কথা বলেছেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে কোটা রাখতে হবে, যেমন প্রতিবন্ধীদের জন্য।’ আমিনুল শিমুল লিখেছেন, ‘কোটা পৃথিবীর সব দেশেই বিদ্যমান, তবে কোথাও এটা চিরস্থায়ী নয়----’। আদিল আল সাজিন লেখেন, ‘৫৬ শতাংশ কোটা তরুণদের স্বপ্নভঙ্গের জন্য যথেষ্ট। আর অনেক কোটাধারীরা স্বল্প মেধাবী হয়েও সরকারি চাকরির বাজারে সবার চেয়ে এগিয়ে!’ সোহেল আহমেদ কোটাব্যবস্থাকে বৈষম্য হিসেবে দেখছেন। তাঁর মতে, সারাদেশের তরুণদের জন্য ৪৫ শতাংশ চাকরি আর কয়েক হাজারের জন্য ৫৫ শতাংশ চাকরির ব্যবস্থা থাকা উচিত নয়’। শাহাদাত শাকিল লিখেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা বৃদ্ধি করা হোক। যোগ্যতার বলে চাকরি নিক। সংবিধানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের সব নাগরিক সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। তাহলে কেন এই পদ্ধতি বাতিল হবে না?’ মোহাম্মদ সোহেল লিখেছেন ‘কোটা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রয়োজন ছিল কিন্তু স্বাধীনতার প্রায় ৪ যুগ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ৫৬ শতাংশ কোটা থাকা সঠিক বলে মনে করি না। কিছু কিছু কোটা থাকতে পারে, তবে তা ১৫ শতাংশের বেশি নয়।’ সাজ্জাদ হোসেইন মেহেদি লিখেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁরা রাষ্ট্র থেকে সুযোগ-সুবিধা পেতেই পারেন। তাই বলে তাঁদের নাতি-নাতনিদের কোটায় চাকরি দিতে হবে এটা কেমন কথা!’ সাহেব উদ্দিনের মতে- ‘যদি কখনো কোটা প্রথা উঠে যায় সেটা হবে নতুন বাংলাদেশ। এ দেশের মেধাবীরা তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবে’। ড. আকবর আলী খানের বক্তব্যের সমর্থন জানিয়ে আরো অসংখ্য শিক্ষার্থী-তরুণ-তরুণী বক্তব্য-মন্তব্য দিয়েছেন।
শুধু কি সরকারি চাকরি! স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও কোটা পদ্ধতি ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। সে কারণে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা ভাল ফলাফল করেও স্কুল-কলেজ-পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন না। অথচ কোটা পদ্ধতির সুযোগ নিয়ে কম মেধাবী এমনকি ভর্তি হওয়ার অযোগ্য ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হচ্ছেন। স্বাধীন দেশে এই কোটা পদ্ধতি আর কতদিন চলবে কে জানে? সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক যৌথ ভাবে দেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম-ঢাকা-রাজশাহী-জাহাঙ্গীরনগর-ব্র্যাক-নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উপর এক জরীপ করেছেন। জরীপের পর তারা বলেছেন ছাত্রছাত্রীরা অধিকাংশই বিষন্নতায় ভোগেন। এর মূল কারণ লেখাপড়া শেষ করে চাকরির অনিশ্চয়তা। যে তরুণ-তরুণীদের বলা হয় ‘আগামীর স্বপ্ন’ কোটা পদ্ধতির কারণে চাকরি নামের সোনার হরিণের জন্য তাদের আর কতদিন অনিশ্চয়তায় ভুগতে হবে? যোগ্যতার মাফকাঠিতে চাকরি এই নিশ্চয়তা পেলে দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়য়া ছাত্রছাত্রীদের আর হতাশায় ভুগতে হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।