Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউরোপের তিন দেশে অভিযানে ১০ জন গ্রেফতার

ব্রাসেলসে ফের বিস্ফোরণ

প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে বিমানবন্দর ও পাতাল রেল স্টেশনে আত্মঘাতী বোমা হামলার পর এ ধরনের আরো হামলা রোধের প্রচেষ্টা জোরদার করার প্রেক্ষাপটে ইউরোপের তিনটি দেশে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আরো দশজনকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে বেলজিয়ামে ৭ জনকে, জার্মানিতে দুইজনকে এবং প্যারিসে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ব্রাসেলসে মঙ্গলবারের বোমা হামলার তদন্ত ও সন্দেহভাজনদেরও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত ও ২৭০ জনের মতো আহত হয়েছে। গোয়েন্দাদের অনুমান গত বছরের নভেম্বরে প্যারিসে হামলার সঙ্গে ব্রাসেলস হামলার যোগসূত্র রয়েছে। প্যারিস হামলায় ১৩০ জন নিহত হয়।
পুলিশ ব্রাসেলসের শহরতলি স্কারবিকে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। সেখান থেকে বেশকিছু বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
মিডিয়ার খবরে বলা হয়, অভিযানের সময় পুলিশের নির্দেশ মানতে অস্বীকৃতি জানানোর পর পিঠে ব্যাগবহনকারী এক ব্যক্তিকে নিষ্ক্রিয় করা হয়। মেইসার স্কয়ারের কাছে একটি এলাকা পুলিশ সিল করে দিয়েছে। বিপুল সংখ্যক সশস্ত্র পুলিশ সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। স্কারবিক হচ্ছে অন্যতম এলাকা যেখানে ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে।
ফ্রান্সের পুলিশ সূত্রগুলো বলছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্যারিসের উপকণ্ঠে অভিযানের সঙ্গে গতকালের অভিযানের যোগসূত্র রয়েছে। দৃশ্যত এই অভিযানে সন্ত্রাসীদের আরেকটি হামলার চেষ্টা নস্যাৎ করা হয়েছে। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি একটি বড় ধরণের সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা নিয়ে অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছিল।
এদিকে ব্রাসেলস সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, তথাকথিক ইসলামী স্টেট আইএসকে ধ্বংস করা হবে। বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিচেলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ কেরি ব্রাসেলস হামলায় হতাহতদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং ঘোষণা করেন, ‘আমি ব্রাসেলস।’ জন কেরি বলেন, পশ্চিমা জোট আইএস ধ্বংসে তার লড়াই চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমাদের ভীত-আতংকগ্রস্ত করা যাবেনা, আমাদের পরাজিত করা যাবেনা।
খবরে বলা হয় বেলজিয়ামের স্কারবিক ও জেটে ডিস্ট্রিক্ট এবং সিটি সেন্টার থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সপ্তম সন্দেহভাজনকে ফরেস্ট ডিস্ট্রিক্ট থেকে আটক করা হয়।
মিডিয়ার খবরে আরও বলা হয়, প্যারিসের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয আরগুয়েনতিউল শহরতলীতে অভিযান চালিয়ে ৩৪ বছর বয়সী রিদা ক্রিকেতকে আটক করা হয়। সেখানে একটি হামলা চালানোর যড়যন্ত্র চ’ড়ান্ত করা হচ্ছিল বলে পুলিশ দাবী করছে। ২০১৫ সালে ব্রাসেলসের আদালত প্যারিস হামলার মূলহোতা আবদেসালামের সঙ্গে এই আইএস রিক্রুটকেও দোষী সাব্যস্ত করেছিল।
জার্মানীতে বুধবার ও বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে ডুসেলডর্ফ ও গিয়েসেন এলাকা থেকে দুই সন্দেহভাজন জিহাদিকে আটক করা হয়। ডের স্পাইজেল পত্রিকা জানায়, এই দুইজনকে ব্রাসেলস বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। একজনের মোবাইলের সন্দেহজনক টেক্সট ম্যাসেজে ব্রাসেলসের উল্লেখ রয়েছে।
ব্রাসেলস কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে যে ব্রাসেলস হামলায় হতাহতদের মধ্যে ৪০ দেশের নাগরিক রয়েছে। নিহতদের মধ্যে তিনজন ডাচ, দুইজন আমেরিকান, একজন ব্রিটিশ ও একজন চীনা নাগরিক বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রাসেলস বোমা হামলার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হবে সুদূরপ্রসারী। এতে প্রশ্ন উঠছে যে এই হামলা ঠেকাতে আরো বেশী কিছু করা যেত কি না। তুরস্ক বলেছে, ব্রাসেলসে অন্যতম হামলাকারী ইব্রাহিম আল বাকরাউইকে তারা গত জুলাইয়ে গ্রেফতার ও দেশ থেকে বের করে দিয়েছিল। তারা বেলজিয়ামকে সতর্ক করে দিয়েছিল যে সে একজন বিদেশী যোদ্ধা। কিন্তু বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষ তাদের এই বার্তা উপেক্ষা করেছিল। ডাচ কর্তৃপক্ষকেও সতর্ক করা হয়েছিল বলে আংকারা বলছে। ব্রাসেলস বিমানবন্দরে ইব্রাহিম বাকরাউইসহ তিনজন অংশ নেয়। এখানে ১১ জন নিহত হয়।
ব্রাসেলস হামলার প্রেক্ষিতে বেলজিয়ামের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিচারমন্ত্রী পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে প্রধানমন্ত্রী তাদের পদত্যাগ গ্রহন করেননি।
বিমানবন্দরে হামলাকারী অপর দুইজনকে এখনো সনাক্ত করা যায়নি। ইব্রাহিমের ভাই খালিদ মায়েলবিক পাতাল রেল স্টেশনে একটি ট্রেনে হামলা চালায়। এতে ২০ জন নিহত হয়।
এই হামলার জন্য দ্বিতীয় এক সন্দেহভাজনকে পুলিশ খুঁজছে। একটি সূত্র এএফপিকে বলেছে, পাতাল রেল স্টেশনের সিসিটিভির ফুটেজে খালিদের পাশাপাশি বড় এক ব্যাগ নিয়ে এই ব্যক্তিকে দেখা গেছে।
এদিকে ফ্লেমিশ ভাষায় প্রচারিত টিভি ভিআরটি জানায়, তদন্তকারীরা এই ধারণা নিয়ে কাজ করছেন যে জিহাদীদের এই সেলটি প্যারিস স্টাইলে গুলি চালানো ও আত্মঘাতী বোমা হামলার সংযোগে আরো বড় ধরনের হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। তাদের এ ধরণের হামলা রুখতে গোয়েন্দারা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। প্যারিস হামলার মূল হোতা আবদেসালামের সাথে সাথে এখন বিভিন্ন যোগসূত্রও বেরিয়ে আসছে।
ব্রাসেলস হামলার ঠিক চারদিন আগে ব্রাসেলসের উপকণ্ঠে একটি ফ্ল্যাটে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আবদেসালামকে গ্রেফতার করে। এই অভিযানে পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে আবদেসালাম আহত হয়। তাকে যে বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় সেই বাসাটি খালিদ ভুয়া নাম দিয়ে ভাড়া নিয়েছিল। সূত্র : বিবিসি।
ব্রাসেলসে ফের বিস্ফোরণ : ১ সন্দেহভাজন নিহত
এদিকে টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানায়, ফের বড়সড় বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠল ব্রাসেলস। বেলজিয়ামের সশস্ত্র পুলিশবাহিনী গতকাল সন্ত্রাস মোকাবিলায় তল্লাশি অভিযান চালানোর সময় উত্তর ব্রাসেলসের শারবিক অঞ্চলে পরপর দুটি শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
বেলজিয়ান স্টেট ব্রডকাস্টার সূত্রে খবর, তল্লাশি অভিযানের সময় একজন সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হয়েছে। বিস্ফোরণে এখনও কোনো হতাহতের খবর নেই। গোটা অঞ্চলটি আপাতত ঘিরে রেখেছে পুলিশ। সন্দেহভাজন জঙ্গি একটি ট্রাম স্টপে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সে সময় তাকে গুলি করা হয়। এর পরপরই দুটি বড়সড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
পুলিশের সঙ্গে বম্ব ডিস্পোজাল স্কোয়াডও রয়েছে সেখানে। পুলিশ জানিয়েছে, এখান থেকেই মঙ্গলবার সকালে তিন জঙ্গি সুটকেসে বোমা ভরে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। তবে তিনটি বোমার মধ্যে একটি বিস্ফোরণ হয়নি। মঙ্গলবার রাত থেকে পুলিশি অভিযানে প্রায় ১৫ কেজি শক্তিশালী বিস্ফোরক রাসায়নিক উদ্ধার হয়েছে। তার সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের পতাকা এবং কাগজপত্রেও পাওয়া গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউরোপের তিন দেশে অভিযানে ১০ জন গ্রেফতার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ