এ দেশে কোন দস্যুতা সন্ত্রাসবাদ জঙ্গিবাদ চলবে না -স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বরিশালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ৩৮টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং প্রায় ৩ হাজার রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গোলা বারুদ জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে সুন্দরবনের জলদস্যু ‘বড়ভাই, ‘ভাইভাই’ ও ‘সুমন বাহিনীর’ প্রধান সহ ৩৮ সদস্য। অন্ধকার জীবন ছেড়ে আলোর পথে আসার জন্য গতকাল বরিশালে র‌্যাব-৮ এর সদর দফতরে এক অনুষ্ঠানে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পন করে। আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে সুন্দরবনের ভয়ঙ্কর নৌদস্যু বাহিনী ‘বড় ভাই বাহিনী’ প্রধান আব্দুল ওয়াহিদ মোল্লা তার অতীত কৃতকর্মের জন্য সরকার তথা জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। তাকে সহ অন্যদের ভবিষ্যতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে ভাল হবার সুযোগ দেয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীসহ র‌্যাবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ওয়াহিদ মোল্লা বলেছে, তার মতো বড় দস্যু গ্রুপ সরকারের দেয়া ভাল হবার সুযোগ গ্রহন করেছে। এখনও যে সব ছোট ছোট দস্যু গ্রুপ সুন্দরবন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তাদেরও তার পথ অনুসরন করার আহ্বান জানায় কুখ্যাত নৌদস্যু ও বনদস্যু বাহিনী প্রধান ওয়াহিদ মোল্লা।
গতকাল(মঙ্গলবার) আত্মসমর্পনকারী ‘বড়ভাই বাহিনীর’ ১৮ জনে ১৮টি অস্ত্র ও ১৪ শ’ ২২ রাউন্ড গোলাবারুদ, ‘ভাইভাই বাহিনীর’ ৮ জনে ৮টি অস্ত্র ও ৩শ’ ৩১ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং ‘সুমন বাহিনীর’ ১২ জনে ১২টি অস্ত্র সহ ১২শ’ ১৫ রাউন্ড গোলা বারুদ জমা দিয়েছে।
২০১৬ সালের মে মাস থেকে এ নিয়ে মোট ১৭ জলদস্যু বাহিনীর ১৯০ জন সদস্য ৩২০ টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১৬ হাজার ৮৯০ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দিয়ে র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পন করল।
র‌্যাব-৮ পরিচালক উইং কমান্ডার হাসান ইমন আল রাজিবের সভাপতিত্বে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশে কোন দস্যুতা, কোন সন্ত্রাসবাদ, কোন জঙ্গিবাদ চলবে না। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের শেকর উপরে ফেলবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, কেউ দস্যুতা করবে, আর সরকার বসে থাকবে সে দিন আর নেই।
তিনি স্বভাবিক জীবনে ফিরে আসা দস্যুদের উদ্যেশ্যে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও নারী নির্যাতনের মতো মামলা আছে, তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে। আর অন্যদের বিষয়টি সরকার সহানুভুতির সাথে বিবেচনা করবে। তিনি বলেন, এখনও যারা সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত আছে, তারা বাঁচতে চাইলে অবিলম্বে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, সুন্দরবন বিশ্ব ঐহিত্য। এখানে দেশী-বিদেশী বহু পর্যটক আসে। এছাড়া লাখ লাখ মৎস্যজীবী, বনজীবী ও বাওয়ালী সুন্দরবনের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের নিরাপদ রাখার জন্য সুন্দরবনে র‌্যাবের আরো ৪টি ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে। সুন্দরবন দাপিয়ে বেড়ানো দস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, যারা ইতোমধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন, কেউ যদি ফের তাদের দস্যুতায় যেতে বাধ্য করে কিংবা প্ররোচনা দেয়, তাহলে সেসব গডফাদারদেরও কঠোর আইনের আওতায় আনবে র‌্যাব।
অনুষ্ঠানের আরেক বিশেষ অতিথি বরিশাল সদর আসনের এমপি জেবুন্নেছা আফরোজ সুন্দরবনে র‌্যাবের দস্যু বিরোধী অভিযানের ভূয়সী প্রসংসা করে এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। ইতিপূর্বে আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের পুনর্বাসন সহ তাদের যথাযথ তদারকি করার জন্যও সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম, বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমীন, র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মো. মাহমুদ হাসান খান, র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম, র‌্যাবের অপারেশন শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মাহবুব হাসান, র‌্যাবের পরিচালক উইং কমান্ডার আব্দুল আহাদ ও বরিশালের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।