Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফোর-জি লাইসেন্স পেতে আবেদন করেছে ৫ অপারেটর

‘লাইসেন্সিংয়ে বাধা নেই’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ফোরজি সেবার লাইসেন্স নিতে আবেদন করেছে পাঁচটি মোবাইল ফোন অপারেটর। এর মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া সিটিসেলও রয়েছে। গতকাল (রোববার) টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) কার্যালয়ে ফোরজি লাইসেন্স নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কমিশনের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ। তিনি বলেন, আগামী মার্চ শেষে দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে ফোর জি সেবা চালু করা হবে। ফোর জির লাইসেন্সের আবেদন করার শেষ দিন ছিল রোববার। বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, এ পর্যন্ত ৫টি প্রতিষ্ঠানের থেকে দরখাস্ত পেয়েছি। এসব প্রতিষ্ঠান হচ্ছে-টেলিটক, সিটিসেল, বাংলালিংক, গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর টেলিযোগাযোগের ফোর জি সেবার লাইসেন্স ও তরঙ্গ নিলামের নীতিমালা ২৯ নভেম্বর হাতে পায় টেলিযোগাযোগ বিভাগ। তরঙ্গ বরাদ্দের জন্য গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও সিটিসেল আবেদন করেছে বলেও জানান বিটিআরসি চেয়ারম্যান। ফোর জি লাইসেন্স ও তরঙ্গ নিলামের আবেদন যাচাইয়ে দুটি মূল্যায়ন কমিটি করা হয়েছে। তারা আগামী ২৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন কমিশনের কাছে দাখিল করবে। ফোরজি লাইসেন্স আবেদন যাচাইয়ের পর কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রতিবেদনটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো হবে। সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি তরঙ্গ নিলামের পরদিনই অর্থ জমা দেওয়ার সাপেক্ষে ফোর জি লাইসেন্স হস্তান্তর করা হবে বলে জানান বিটিআরসি প্রধান।
আগামী মার্চ শেষে নাগাদ ফোর জি সেবা শুরুর আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, অপারেটররা ফোর জি সেবা দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে এবং খুব দ্রুত তারা এ সেবা দিতে পারবে। বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, ফোরজি লাইসেন্সের জন্য নিলাম হবে না। আবেদন করে নির্দিষ্ট অর্থ জমা দিয়ে লাইসেন্স নেওয়া যাবে। অপারেটরদের আবেদন ফি হিসেবে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। লাইসেন্স পেতে দিতে হবে ১০ কোটি টাকা। আর বার্ষিক নবায়ন ফি হবে ৫ কোটি টাকা। এ লাইসেন্স নিতে অপারেটরদের ১৫০ কোটি টাকা ব্যাংক গ্যারান্টিও দিতে হবে। রেভিনিউ শেয়ারিংয়ে সরকারকে দিতে হবে আয়ের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অপারেটরগুলোকে ফোর জি তরঙ্গ বরাদ্দ পেতে অংশ নিতে হবে নিলামে। নীতিমালায় এক হাজার ৮০০ মেগাহার্টজের তরঙ্গ নিলামের ভিত্তিমূল্য ঠিক করা হয়েছে প্রতি মেগাহার্টজে ৩০ মিলিয়ন ডলার। আর থ্রি জির দুই হাজার ১০০ মেগাহার্টজের প্রতি মেগাহার্টজ ২৭ মিলিয়ন ডলার এবং ৯০০ মেগাহার্টজের প্রতি মেগাহার্টজ ৩০ মিলিয়ন ডলার ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর টু জি ও থ্রি জি সেবার জন্য বরাদ্দ করা তরঙ্গে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা পেতে (যাতে ওই তরঙ্গ যে কোনো প্রযুক্তিতে ব্যবহার করা যায়) প্রতি মেগাহার্টজের জন্য চার্জ দিতে হবে। দুটি নতুন অপারেটর আসার কথা থাকলেও তাদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানান শাহজাহান মাহমুদ। তিনি বলেন, নতুন কোনো অপারেটর আসলে তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তারা আসবে। তবে এই না যে তারা আর আসতে পারবে না, তাদের আসার সুযোগ রয়েছে। নতুন অপারেটর আসতে চাইলে আশা করি সরকার অনুমোদন দেবে, রাস্তা বন্ধ হয়নি এখনও। দেনার দায়ে গত বছর বন্ধ হয়ে যাওয়া সিটিসেল সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর তরঙ্গ ফিরে পেলেও তাদের কার্যক্রম রয়েছে বন্ধ। সিটিসেলের কাছে সরকারের পাওনা আছে, এর পরও সিটিসেল আবেদন করেছে এবং লাইসেন্স কীভাবে পেতে পারে- প্রশ্ন করা হলে বিটিআরসি মহাপরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্স) এ কে এম শহিদুজ্জামান বলেন, সিটিসেলের বকেয়া অধিকাংশ টাকা জমা দিয়েছে, কিছু অংশ কোর্টের হেয়ারিংয়ে রয়েছে, যদি তারা পুরো টাকা দিয়ে দেয় বা কোর্টের নির্দেশনা অ্যাপ্লাই করে, তাহলে আইনগত বাধা থাকবে না। তাদের থ্রি জি লাইসেন্স নেই, পর্যাপ্ত তরঙ্গও নেই, এক্ষেত্রে তাদের তরঙ্গ নিলামে অংশ নিয়ে তরঙ্গ নেওয়ার পর ফোর জি লাইসেন্স নিতে হবে। এর আগেও ২০১৩ সালে থ্রিজি নিলামে সিটিসেল আবেদন করলেও বিড আর্নেস্ট মানি জমা না দেওয়ায় নিলামে অংশ নিতে পারেনি।
সংবাদ সম্মেলনে শাহজাহান মাহমুদ বলেন, আজ নতুন দিনের সূচনা ও নতুন অধ্যায় যোগ হচ্ছে। বিটিআরসি এই সেক্টরে যুগোপযোগী করতে বিদেশে টেলিফোনে যে সুবিধা আনা যায় সে সুবিধা আনতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা ফোর জি স্থাপন করতে যাচ্ছি এবং এ সেবা জনগণকে দিতে পারব।
ফোর-জি লাইসেন্সিংয়ে বাধা নেই
ফোর-জি লাইসেন্সিং গাইডলাইন এবং তরঙ্গ নিলামের বিষয়ে বিটিআরসির বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত রেখেছেন আপিল বিভাগ। ফলে ফোর-জি লাইসেন্সিং এর নিলাম কার্যক্রমে আর বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। গতকাল রোববার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে বিটিআরসির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব। মামলার বাদী বাংলা-লায়ন কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রমজান আলী সিকদার।
গত বৃহস্পতিবারফোর-জি লাইসেন্সিং গাইডলাইন এবং তরঙ্গ নিলামের জন্য বিটিআরসি আবেদন আহŸান করে জারি করা বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করেন হাইকোর্ট। রিট আবেদন করা হলে তার শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ওই আদেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে বিটিআরসি আবেদন করে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জানুয়ারি চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে এ বিষয়ে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানো হয়।
ব্যারিস্টার ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব বলেন, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছিলেন চেম্বার আদালত। এ স্থগিতাদেশ বহাল রেখে হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তি করতে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে ফোর জি লাইসেন্সিং নিয়ে বিটিআরসির কার্যক্রমে আর কোনো বাধা নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ