পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
সরকারি চাকরি যেখানে সোনার হরিণ হয়ে দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছে। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের একদিনের নোটিশে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্তে কপাল পুড়ছে হাজার হাজার চাকরি প্রার্থীর। আর যেসব আবেদনকারীর চাকরির বয়স ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বা শেষ হওয়ার পথে তাদের মানসিক অবস্থা তো বর্ণনাতীত। তাই তো যে যখন যেভাবে পরীক্ষার নোটিশ পেয়েছেন রাজধানীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার চেষ্টা করেছেন। আর যাদের ঢাকায় আসা সম্ভব হয়নি তারা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরের পর থেকে ইনকিলাবের কাছে নিয়োগ প্রার্থীরা ফোন করে কেউবা আসতে না পারার কথা বলে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা বর্ণনা করেন, কেউবা বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আজ রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ায় হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। তবে একদিনের কম সময়ের মধ্যে এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার পেয়ে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বিপাকে পড়েছে হাজার হাজার পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার শুরুর আগের দিন দুপুরে (বৃহস্পতিবার) হঠাৎ করেই সোনালী, রূপালী ও জনতা ব্যাংকের পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে হাইকোর্ট যে স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন তা তুলে নেয়। পূর্ব থেকে পরীক্ষা স্থগিত থাকায় অনেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় আসার বাস ও ট্রেনের টিকেট বাতিল করেছেন। আবার অনেকে ঢাকা থেকে গ্রামে গেছেন। এছাড়া রাজধানী ঢাকায় কাল (শুক্রবার) শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানীমুখী মানুষের ঢল থাকায় অনেক পরীক্ষার্থীই নতুন করে বাস ও ট্রেনের টিকিট পাচ্ছেন না। পাশাপাশি দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ বিশ্বইজতেমার কারণে চাইলেই যথাসময়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। তাই দীর্ঘদিন থেকে অপেক্ষায় থাকা পরীক্ষার্থীদের জন্য তিনটি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ শঙ্কার মুখে পড়েছে। এদিকে হঠাৎ করে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ঝুঁকির মুখে পড়লেও বাংলাদেশ ব্যাংক নীরব। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা ১৮ মিনিটে নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন খানের সাথে এ বিষয়ে কথা বলার সময়েও জানান পরীক্ষা যথাসময়ে হবে। এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েব সাইটে পাওয়া যাবে। এতো কম সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পরীক্ষার্থীদের ঢাকায় এসে পরীক্ষা দেয়া নিয়ে সংশয়ের কথা মোশাররফ হোসেন খানকে জানালে তিনি যা ইচ্ছা তাই লিখেন বলে মোবাইল ফোন কেটে দেন। যদিও সর্বশেষ এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা ৫টা ৪৫ মিনিট) এই তিন ব্যাংকের পরীক্ষা সংক্রান্ত কোন বিজ্ঞপ্তি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেখা যায়নি।
ঠাকুরগাঁও থেকে ইনকিলাবে টেলিফোন করা মো. ফারুক হোসেন বিকাল ৫টায় জানান, কিছুক্ষণ আগে জানতে পেরেছি হাইকোর্ট তিন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছেন। খবর পেয়েই বাসটার্মিনালে টিকেটের জন্য গেলে প্রত্যেকটা বাস কাউন্টার থেকে জানানো হয় টিকিট নেই। এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। নেত্রকোনা থেকে রাসেল আহমেদ নামে এক পরীক্ষর্থীও একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। তারা জানান, দীর্ঘদিন থেকে এই পরীক্ষার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনেছি। অথচ শেষ সময়ে এসে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছিনা।
জুয়েল হোসেন নামের এক পরীক্ষার্থী জানান, হাইকোর্ট পরীক্ষা স্থগিত করায় ঢাকা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বরিশালে এসেছি। বরিশাল পৌছার আগেই জানতে পারলাম হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছে। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় বাড়িতে যাবো না ঢাকা আসবো এটাই ভেবে পাচ্ছি না। শেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার কথা জানালেন জুয়েল। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, শীত এবং কুয়াশার কারণে চাইলেই সকালের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছা সম্ভব নয়। আবার ঢাকায় গেলেও সারারাত জার্নি করে পরীক্ষায় বসার চেয়ে না বসায় ভাল।
সোনালী, রূপালী ও জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার, অফিসার ও ক্যাশ অফিসার পদে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। এর ফলে ওই তিন ব্যাংকসহ আট ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে কাল শুক্রবার নির্ধারিত সময়ে হবে বলে জানান আইনজীবীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এ আদেশ দেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রাশেদুল হক খোকন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
সূত্র মতে, ২০১৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সোনালী ব্যাংক ৭০১টি শূন্য পদে অফিসার ও অফিসার (ক্যাশ) নিয়োগে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। ওই বছরের ২৬ জুলাই রূপালী ব্যাংক ৪২৩টি শূন্য পদে সিনিয়র অফিসার ও ৩ অগাস্ট জনতা ব্যাংক ৭৩৬টি শূন্য পদে অ্যাসিসট্যান্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়।
কিন্তু এসব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির নিয়োগ পরীক্ষা না নিয়ে গত বছরের ২৩ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক ৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এক হাজার ৬৬৩টি সিনিয়র অফিসার (সাধারণ) শূন্য পদের জন্য সমন্বিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। এরপর ২৯ আগস্ট আবার তিন হাজার ৪৬৩টি কর্মকর্তা (সাধারণ) শূন্য পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। সর্বশেষ গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর দুই হাজার ২৪৬টি কর্মকর্তা (ক্যাশ) শূন্য পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে ১২ জানুয়ারি নিয়োগ পরীক্ষার দিন রাখা হয়।
কিন্তু ২০১৬ সালের বিজ্ঞপ্তির পর আবেদন করা প্রার্থীদের পরীক্ষা না নিয়ে ২০১৭ সালে আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়ায় বগুড়ার আসাদুজ্জামান, কুমিল্লার আবু বকরসহ ২৮ জন নিয়োগ পরীক্ষার সার্কুলার বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে গেলে ওইসব বিজ্ঞপ্তির নিয়োগ পরীক্ষাসহ সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়। ওই বিজ্ঞপ্তি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ২০১৭ সালের বিজ্ঞপ্তির আওতায় পরীক্ষা নেয়ার আগে ২০১৬ সালের বিজ্ঞপ্তির আওতায় নিয়োগ পরীক্ষা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন আদালত।
বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থসচিব, ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিবকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। রিটকারীদের আইনজীবী রাশেদুল হক খোকন বলেন, ২০১৬ সালের তিনটি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা না নিয়ে গত বছরের যে তিনটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে সেগুলোর নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে ১২ জানুয়ারি। ২০১৬ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যারা আবেদন করেছিলেন, তাদের মধ্যে ২৮ আবেদনকারী গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। সেই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত নিয়োগ পরীক্ষাসহ সকল কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। যা আজ চেম্বারে স্থগিত করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।