দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
কোম্পানীর শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয। তবে শর্ত থাকে যে, হালাল কাজের উদ্দেশ্যে গঠিত কোম্পানী হতে হবে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হারামের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকলে, তার শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করা এবং তা থেকে প্রাপ্ত ডিভিডেন্ট বা লভ্যাংশ জায়েয হবে না। যেমন মদ তৈরির কারখানা, সুদভিত্তিক ব্যাংক ও সুদভিত্তিক বীমা কোম্পানী ইত্যাদির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় এবং তা থেকে প্রাপ্ত লাভ বা ডিভিডেন্ট জায়েয হবে না। “ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত মাস্লা-মাসায়েল, সম্পাদনা পরিষদ, ইফারা প্রকাশন, মে-২০০৫”। কোন ব্যক্তি যদি ষ্টক মার্কেট থেকে শেয়ার ক্রয় করে তবে এ ক্ষেত্রে তাকে ৪টি শর্তের দিকে নজর রাখতে হবে। (১) কোম্পানীর যাবতীয় কারবার হালাল হতে হবে। কোম্পানী কোনরূপ হারাম কাজের সাথে জড়িত হতে পারবে না। (২) কোম্পানীর গোটা অর্থ সম্পদ (খরয়ঁরফ অংংবঃং) নগদ হতে পারবে না বরং তার কিছু স্থায়ী সম্পদ থাকা আবশ্যক। কোম্পানীর যদি কোন স্থায়ী সম্পদ না থাকে তবে শেয়ারসমূহ তার অভিহিত মূল্যের চেয়ে কম বা বেশি মূল্যে বিক্রি করা জায়েয হবে না। (৩) কোম্পানী যদি নিজেদের ফান্ড বাড়ানোর জন্য ব্যাংক থেকে সুদ ভিত্তিক ঋণ গ্রহণ করে অথবা নিজেদের অতিরিক্ত অর্থ সুদী ব্যাংকে জমা রাখে তবে এমতাবস্থায় কোম্পানীর শেয়ার খরিদ করা জায়েয হবে না। (৪) মনে রাখতে হবে, কোম্পানীর মূল ব্যবসা যদি হালাল হয় এবং পরবর্তীতে এর মধ্যে যদি কোন সুদী পয়সা এসে যায় তবে লভ্যাংশ বন্টনের সময় যতটুকু সুদ ঢুকেছে তা পৃথক করে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে হবে। এবং সুদের অংশ বিত্তহীন গরীবদের মাঝে বণ্টন করে দিতে হবে। “ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত মাস্লা-মাসায়েল, পৃষ্ঠা-৫৭, সম্পাদনা পরিষদ, ইফারা প্রকাশনা, মে-২০০৫”।
(ঘ) কোন কোন প্রপার্টিজ ও এর্পামেন্টের ব্যবসা যার মধ্যে প্রতারণা, প্রতারণাপূর্ণ দালালী, মিথ্যা শপথ, লোভনীয় কৃত্রিমতা অবলম্বন ও দোষত্রæটি গোপন করার মত নিষিদ্ধ কাজ রয়েছে। কোন কোন কোম্পানী পত্রিকায় প্রকাশিত লক্ষ লক্ষ টাকার বাহারী বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্রেতা সাধারণকে তাদের প্রতারণার জালে আটকিয়ে বছরের পর বছর ঘুরাতে থাকে। বুকিং দেয়ার পর বিজ্ঞাপনে প্রতিশ্রæতি বিভিন্ন লোভনীয় সুযোগ-সুবিধার কোন একটিও দেখা মেলে না। হাতে গোনা কিছু প্রপার্টিজ ও কোম্পানী সততার পরিচয় দিলেও, একটি বিষয় প্রায় সকলের মধ্যেই সাধারণভাবে দেখা যায়। সেটি হলো: ডাউন পেমেন্ট বা বুকিং মানি, মাটি ভরাট, রাস্তা-ঘাট, গ্যাস-বিদ্যুৎ ইত্যাদির নাম করে গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রীম টাকা আদায় করা হয়। শত শত ব্যক্তির কাছ থেকে নেয়া এ টাকায় অন্য একটি পজেক্টে বিনিয়োগ করে, এভাবে সেখান থেকেও উল্লেখিত অজুহাতে টাকা আদায় করা হয়। বছরের পর বছর চলে যায়, জনগণের টাকায় আরো ৪/৫টি প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়, কিন্তু কোন প্রজেক্টের কাজ শেষ হয় না। বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে নেয়া টাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ২/১ বছরে আঙ্গুল ফুলে বিরাট গ্রæপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজের মালিক বনে যান। অথচ তিন কাঠার প্লটের মালিকটি ঘুমের অঘোরে পত্রিকার বিজ্ঞাপনে দেয়া প্রশস্ত রাস্তার দুপাশে সারি সারি বাড়ির মাঝে নিজের বাড়িটি খুঁজে ফেরে। এভাবে স্বপ্নে স্ব্েন কেটে যায় গ্রাহকদের দুঃস্বপ্নের প্রহরগুলো।
(ঙ) শুফাআ একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন। ইসলামের এ গুরুত্বপূর্ণ আইনটি আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় কার্যকর না থাকায় আজকাল জমি ক্রয়-বিক্রয়ে অনেক জুলুম-নির্যাতন পরিলক্ষিত হয়। এ জন্য সামাজিক ফেতনা-ফাসাদ থেকে শুরু করে অনেক মূল্যবান প্রাণহানিও ঘটতে দেখা যায়। জমির মালিক এবং প্রতিবেশী উভয়ের পক্ষ থেকেই এ প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এক দিকে জমির মালিক প্রতিবেশীকে বিপদে ফেলার নিমিত্তে তাকে না জানিয়ে অন্যত্র জমি বিক্রি করে দেয়। ফলে নতুন প্রতিবেশী পুরাতন প্রতিবেশীর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।আর তখনই সৃষ্টি হয় বাক-বিতন্ডা থেকে শুরু করে পেশী শক্তির প্রদর্শন। পর্যায়ক্রমে এটি সমাজকেও আক্রান্ত করে। ব্যক্তি সীমানা পেরিয়ে সমাজের বিবেকবান এবং বিবেকহীন লোকগুলোকে উভয় পক্ষেই এনে দাড়করায়। সামাজিক বিশৃংখলা তখন অনিবার্য হয়েঠে। আবার এমনটিও লক্ষ করা যায় যে, কোন কোন প্রতিবেশী জমির কম মূল্য হাকিয়ে অন্য প্রতিবেশীর জমি বিক্রিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বাইরের কোন খরিদ্দার এলে তাকে হুমকী ধমকী দিয়ে তাড়িয়ে দেয়, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলো প্রতিবেশী যেন স্ব্ল্প মূল্যে তার কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এবং শেষাবধি বিক্রেতাকে সেটিই করতে হয়। অত্যন্ত কম দামে বিক্রি করে তাকে চলে যেতে হয়। ফল সে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার এমনটিও লক্ষ করা যায় যে কোন ক্রমে প্রতিবেশী অন্যত্র বিক্রি করে দিলেও, নতুন প্রতিবেশীটি পুরাতন প্রতিবেশীর নির্যাতনের শিকার হয়। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়। শুফাআ আইনের অনুপস্থিতিতেএ সমস্ত চিত্র আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে হলে স্থায়ী প্রকৃতির কোন কিছু বিক্রি করার সময় অবশ্যই সর্বপ্রথম শাফী তথা অংশীদার ও প্রতিবেশীকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে হবে। তাছাড়া দূরবর্তী কোন ক্রেতার জমি ক্রয় করার সময় শুফআর বিষয়টি বিবেচনায় এনে যাচাই করা উচিত। তাতে অনেক অনাকাংখিত বিষয় এড়ানো সম্ভব হবে। হযরত যাবের রা. বলেন, প্রতিটি অবিভক্ত অংশীদারী সম্পত্তিতে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুফআ নির্ধারণ করেছেন। চাই তা ঘর হোক কিংবা বাগান। কারো পক্ষে হালাল নয় যে, তার অংশীদারকে অবগত না করে তা বিক্রি করে। সে ইচ্ছা করলে তা রেখে দেবে, অন্যথায় ছেড়ে দেবে। আর যদি তাকে না জানিয়ে বিক্রি করে তাহলে সে সকলের চেয়ে বেশি হকদার।
(চ) মাপে বা ওজনে কমবেশী করাও আয়াতে উল্লেখিত ‘অন্যায়ভাবে’ এর অন্তর্ভুক্ত। ওজনে কমবেশি করা আমাদের সমাজে অনেকটা মহামারীর মতই সংক্রমিত।অথচ কুরআন ও হাদীসে ওজনে কমবেশি করার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় ধমকি দেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।