Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকার রাস্তার বেহাল দশা

সিটি করপোরেশন জরিপ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে

| প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : রাজধানীর অভিজাত এলাকা উত্তরার জসীম উদ্দীন রোড হয়ে বিমানবন্দর আসার পথে প্রধান সড়কটিতে গর্ত ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। খিলক্ষেত রেলগেট-ডুমনী সড়কটি খানাখন্দে ভরা। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে কচুক্ষেত সড়কটির অবস্থাও নাজুক। গাবতলীর আমিনবাজার থেকে সদরঘাট বাবুবাজার পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ফুলবাড়িয়া মাজার থেকে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট চত্বর থেকে চানখাঁরপুল পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। কদমতলীর পাটেরবাগ, কোদারবাজার এলাকার রাস্তা সেই বর্ষায় পানিতে তলিয়ে গেছে। এখনও পানি জমে আছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার অধিকাংশ সড়কে একটু পর পর ছোট-বড় গর্ত থাকায় ঠিকমতো গাড়ি চলতে পারছে না। অধিকাংশ সড়কের বেহাল অবস্থা। কিছু এলাকায় প্রধান সড়ক ভাঙা থাকলেও শাখা সড়কগুলো প্রায় সবই ভাঙাচোরা। দুই সিটি করপোরেশনের জরিপে ঢাকার রাস্তার এসব বেহাল চিত্র ফুটে উঠেছে।
এসবের বাইরে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে ওয়াসার ড্রেনেজের কাজ চলছে। মধ্য বাড্ডা ও মেরুল বাড্ডা এলাকায় রাস্তায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। শুধু তাই নয়, বড় আকারের পাইপ রাস্তার উপর ফেলে রেখে ব্যস্ত এ সড়কটিতে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়ে রাতদিন যানজট লেগেই থাকছে। মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভার উদ্বোধনের আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও মালিবাগে এখনও এই ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তাটি সংস্কার করা হয়নি। এসব কারনে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নগরবাসী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুই সিটি কর্পোরেশন ভাঙাচোরা রাস্তার উপর জরিপ চালিয়ে সেগুলো নির্মাণের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প (ডিপিপি) করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে, রাজধানীতে দুই হাজার ২৮৯ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণের আওতায় রয়েছে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার ও উত্তরের আওতায় রয়েছে এক হাজার ৩০ কিলোমিটার সড়ক। এর মধ্যে দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় এবার ৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি সড়ক নষ্ট হয়েছে। গত অর্থবছরে দুই সিটি করপোরেশন ৫২০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করেছে। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা। চলতি বছর ৫১৯ কিলোমিটার সংস্কারের জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে প্রায় ১৮৩১ কোটি টাকা।
জানা গেছে, চলতি বছরের অতিবৃষ্টি ও উপর পানি জমে থাকায় আয়ু কমে গেছে রাজধানীর সড়ক মহাসড়কের। ৭ বছর মেয়াদে মেরামত করা সড়ক এক বছরের ভেঙে একাকার হয়ে গেছে। উঠে গেছে পিচ ঢালাই সড়কের উপরের পাথর কুচির প্রলেপ। বড় রাস্তাগুলোতে তৈরী হয়েছে বিশাল বিশাল গর্ত। দীর্ঘদিন পানির নিচে তলিয়ে থাকা বিভিন্ন পাড়া মহল্লার রাস্তাও খানাখন্দে ভরে গেছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ছোট বড় সব ধরনের যানবাহন চলাচল।
মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রাস্তাগুলোকে ৫টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে ৬৪টি রাস্তার ৪৪ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশা। দ্বিতীয় ভাগে ৫২টি রাস্তায় ভাঙাচোরা ৮০ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার। তৃতীয় ভাগে ১১৬টি রাস্তার ৭৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার, চতুর্থ ভাগে ১৪টি রাস্তার ৮ দশমিক ৩১ কিলোমিটার ও পঞ্চম ভাগে ১৭টি রাস্তার ১৬ দশমিক ০৩ কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশা। এগুলোর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে তিনশ ৬০ কোটি ২৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, চলতি বছরে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এতে সিটি করপোরেশন এলাকার অধিকাংশ রাস্তাঘাট ভেঙেচুরে একাকার হয়ে গেছে। আমরা ভাঙাচোরা রাস্তার ওপর একটা জরিপ করে সেগুলো নির্মাণের জন্য একটি ডিপিপি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আগামী সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে মিটিং আছে। মিটিংয়ের পরে এটি প্লানিং কমিশনে যাবে। তারপরে ক্রমান্বয়ে একনেক হয়ে প্রজেক্ট পাস হবে। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করতে। আশা করছি আগামী বর্ষা আসার আগেই তা শুরু করে শেষ করতে পারবো। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এক প্রকৌশলী বলেন, সিটি করপোরেশন কোন রাস্তা নির্মাণ বা মেরামতের পর টিএন্ডটি, ডিপিডিসি, তিতাস বা অন্যান্য সরকারি সংস্থা আবার সেই রাস্তায় খোঁড়াখঁড়ি করে। অথচ আমরা রাস্তা করার আগে সংশ্লিষ্ট সরকারি রসবা সংস্থাগুলোকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে রদই। রযন তারা আগেই কাটাকাটি করে কাজ করে রাখে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার রাস্তাঘাটেরও একই অবস্থা। ডিএনসিসি সূত্র জানায়,এবার অতিরিক্ত বৃষ্টি ও পানি জমে থাকায় ডিএনসিসির ২৫ শতাংশ রাস্তা নষ্ট হয়েছে। এসব সড়ক সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। সিটি করপোরেশন ও জিওবি প্রকল্পে ৬৫ শতাংশ রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। আর ৩৫ শতাংশ সড়কের জন্য অতিরিক্ত ২০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলোর সংস্কারের কাজ শেষ হবে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরো রাজধানীর রাস্তা সংস্কার করতে চলতি বছরের অর্ধেকের বেশি সময় লেগে যেতে পারে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, আগে সাধারণত ১০ বছর মেয়াদে রাস্তা করা হতো। পরে ভারি যান চলাচল ও পানি জমে থাকার কারণে রাস্তাগুলো দ্রæত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ৭ বছর মেয়াদে নির্মাণ করা হতো। এ ক্ষেত্রেও ভারি যান চলাচল ও পানিবদ্ধতা নিরসন না হওয়ায় রাস্তাগুলো ৪/৫ বছরেই নষ্ট হয়ে যেতো। কিন্তু ইদানীং কোনো মেয়াদই কাজে আসছে না। বিভিন্ন সরকারি সেবা সংস্থার খোঁড়াখুঁড়িতে এবার আরও নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রভাবশালী ঠিকাদারদের বেপরোয়া তৎপরতা ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সংস্কারকাজ করার কারনে নগরীর রাস্তা সংস্কার করার পর বেশিদিন টিকছে না। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করার এক বছরের মধ্যে ভেঙেচুরে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
ভাঙা রাস্তায় কোনো যানবাহনই স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। সৃষ্টি হয় যানজটের। তার উপর প্রধান সড়কগুলোতে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ লেগেই আছে। রামপুরা থেকে বাড্ডা হয়ে কুড়িল পর্যন্ত ড্রেনেজের কাজ করছে ওয়াসা। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না করায় এই ড্রেনেজের কাজের জন্য কুড়িল থেকে রামপুরা পর্যন্ত রাস্তাটি এখন নগরীর যানজটের প্রধান উৎস। ভুক্তভোগিদের মতে, ওয়াসার কাজটি চলছে খুবই ঢিমেতালে। বিকল্প ব্যবস্থা না করায় প্রতিদিনই এই সড়কে ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়ে হাজার হাজার যাত্রীকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, মেরুল বাড্ডা এলাকায় রাস্তার উপর রাখা হয়েছে বড় বড় পাইপ। আবার কোথাও কোথাও বড় বড় গর্ত করে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, ওয়াসার কাজের কারনেই মালিবাগ এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তাটি এখনও সংস্কার করা হয়নি। অথচ ফ্লাইওভার উদ্বোধনের পর আড়াই মাস কেটে গেছে। মালিবাগ হাজীপাড়া এলাকায় ড্রেনের পানি উপচে রাস্তায় উঠেছে। দুর্গন্ধে মানুষ ওই এলাকা দিয়ে চলাচল করতে পারছে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিদিনই নতুন নতুন রাস্তা ড্রেনের পানিতে ডুবে যাচ্ছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে কোনো মাথাব্যাথা নেই।



 

Show all comments
  • শরীফ ১০ জানুয়ারি, ২০১৮, ২:২৮ এএম says : 0
    আমাদের দুই সিটি করপোরেশন কি করতেছে ?
    Total Reply(0) Reply
  • সোহেল ১০ জানুয়ারি, ২০১৮, ২:২৮ এএম says : 0
    নিউজটি করায় দৈনিক ইনকিলাবকে ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • ইশিতা ১০ জানুয়ারি, ২০১৮, ২:৩০ এএম says : 0
    বড় বড় ভাষণ আর উন্নয়নের গল্প শুনি কিন্তু বাস্তবতা ঠিক উল্টো
    Total Reply(0) Reply
  • Rahman Sadman ১০ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:৪৭ পিএম says : 0
    এটা আবার নতুন কি---- মনে হয় আপনারা এর চেয়ে ভাল দেখেছেন আগে ---?
    Total Reply(0) Reply
  • রশিদ ১০ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:১১ পিএম says : 0
    কাটা ছেড়া ও ভাঙ্গাচুড়া রাস্তা, জলাবদ্ধতা, জ্যাম এটা ঢাকার রাস্তার নিত্যদিনের চিত্র
    Total Reply(0) Reply
  • লোকমান ১০ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:১১ পিএম says : 0
    কবে যে আমরা এর থেকে মুৃক্তি পাবো ?
    Total Reply(0) Reply
  • মাহমুদ ১০ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:১৩ পিএম says : 0
    ঢাকায় যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • ইশিতা ১০ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:১৪ পিএম says : 0
    এভাবে চলতে থাকলে খুব শিঘ্রই ঢাকা বসবাসের অযোগ্য শহরে পরিণত হবে বলে আমি মনে করি।
    Total Reply(0) Reply
  • রাসেল ১০ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:১৬ পিএম says : 0
    আমি বুঝি না যে, আমাদের দু’টি সিটি করপোরেশন কী সব সময় চোখ বুজে থাকে । যদি তারা একটু চোখ খোলা রাখতো তাহলেও ঢাকার এই করুণ অবস্থা হওয়ার কথা না।
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ ১০ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:১৮ পিএম says : 0
    যেহেতু সামনে উত্তরের নির্বাচন, তাই সকলকে এমন প্রার্থী বাছাই করতে হবে যিনি প্রকৃত পক্ষেই ঢাকার জন্য কাজ করবেন, শুধু চাপাবাজি করে বেড়াবেন না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঢাকার রাস্তার বেহাল দশা

১০ জানুয়ারি, ২০১৮
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ