পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এমএ ছালাম, মহাদেবপুর (নওগাঁ) থেকে : এটা সেই আত্রাই নদী, একসময় যে নদীর প্রশস্ততা ছিল প্রায় আধা কিলোমিটার। পানি ছিল থৈথৈ। সে পানি আজ হাওয়া হয়ে গেছে। আত্রাইর পানি এখন মাত্র ১০ থেকে ১২ হাত জায়গার মধ্যে এসে ঠেকেছে। হেঁটে গেলে পায়ের তালুও ডুবেনা। বাস্তব চিত্র দেখে এটাকে আর আত্রাই নদী না বলে কেউ বলেন আত্রাই বালুচর, কেউ বলেন আত্রাই ফসলের মাঠ আবার কেউ বলেন আত্রাই নালা। দেশে এমন অনেক নদী আছে যেগুলো এখন নামেই নদী। কিন্তু নওগাঁর মহাদেবপুরের এ আত্রাই নদীকে মানুষজন আর নামেও নদী বলতে নারাজ। এখন নালায় পরিণত হলেও খুব বেশী আগের কথা নয়, যখন এটা ছিল উত্তাল আত্রাই। আশির দশক জুড়েই ভরা যৌবনা ছিল আত্রাই। সে সময় আত্রাইয়ের তর্জন-গর্জনে মানুষের বুকে কাঁপন সৃষ্টি হতো। নব্বইয়ের দশক থেকে ক্রমেই যৌবন হারাতে থাকে এ নদী। এখন এসে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সব হারিয়ে নদীটির আর হারানোর কিছুই নেই। সরু নালায় পরিণত হয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেই অতীতে নওগাঁর মহাদেবপুরের এ আত্রাই নদীতে ঢেউয়ের তালে চলাচল করেছে পালতোলা অসংখ্য নৌকা। ভাটিয়ালী আর পল্লীগীতি গানের সুরে মাঝিরা নৌকা নিয়ে ছুটে চলেছে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা এবং নদী কেন্দ্রীক ব্যবসা কেন্দ্রগুলোতে। এ নদীকে ঘিরে বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা বড় বড় হাটবাজার সমূহে ব্যবসার জন্য ধান, পাট, আলু, বেগুন, সরিষা, কালাই ও গমসহ নানান কৃষি পণ্য নিয়ে সওদাগররা নৌকায় পাল তুলে মাঝিমাল্লা নিয়ে ছুটে চলতেন। শুধু কৃষি পণ্যই নয় হাটগুলোতে বিক্রির জন্য তারা নিয়ে যেতেন গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও অন্যান্য পণ্য। ওই সময় আত্রাই নদী ছিল পূর্ণ যৌবনা। এ নদীকে অবলম্বন করে অসংখ্য মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবন-জীবিকার রাস্তা খুঁজে পেয়েছিল। শুধু হাটবাজারই নয় এ নদী কেন্দ্রীক গড়ে উঠেছিল অনেক জনপদ। নদীর অথৈ পানি দিয়ে কৃষক দুই পাড়ের জমিগুলোকে ঊর্বর করে ফসল ফলাতেন। প্রকৃতির অফুরন্ত পানিতে নানা ফল-ফসলে ভরে উঠেছিল কিলোমিটারের পর কিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত আত্রাই নদীর দুইধারের জমি। সে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। জীবিকার সন্ধানে নদী সংলগ্ন ও আশপাশ এলাকার অসংখ্য জেলে পরিবারের বসতী গড়ে উঠেছিল। ছোট বড় নানা প্রজাতীর মাছেরও অফুরন্ত উৎস ছিল এ নদী। মাছ পাওয়া যেত সারা বছর। জীবিকার জন্য মাছের আশায় জেলেরা রাতদিন ডিঙ্গী নৌকায় জাল-দড়ি নিয়ে চষে বেড়াতেন নদীর এ প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। ধরাও পড়তো প্রচুর মাছ। সেই সোনালী দিন শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। সময় গড়িয়ে চলার সাথে সাথে সেই ভরা যৌবনা নদী এখন নালায় পরিণত হওয়ায় আত্রাইকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অসংখ্য হাটবাজার এখন হয়েছে বিরাণ অঞ্চল, কৃষি জমিগুলো পরিণত হয়েছে ধুধু প্রান্তরে, জেলে পরিবারগুলো হয়ে গেছে বীলিন আর সে সময়ের ব্যবসা-বাণিজ্যের উৎসগুলো হয়ে গেছে চিরতরে বন্ধ। এসবই এখন কালের স্বাক্ষী। ঐতিহ্যের দিক থেকেও এ এলাকার নদ-নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল আত্রাই নদী। ভৌগলিকভাবেও নদীটি ছিল চমৎকার অবস্থানে। নদীটি কোনদিন খনন ও ড্রেজিং করাতো হয়ইনি এমনকি রক্ষণাবেক্ষণেরও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি কখনোই। সরকারের নজর না দেয়ার সুযোগে এক শ্রেণীর দখলবাজ এখন নদীটির অনেক স্থান দখলে নিয়ে খুশিমত ভরাট করে ফেলেছেন। কেউ কেউ বর্জ্য ফেলে দূষণ ও ভরাট অব্যাহত রেখেছেন। মানুষজন এসবে মেতে ওঠার ফলে নদীটি এখন তার নিশানাও হারাতে বসেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।