পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : সিরিয়া থেকে আসা টেলিফোন সেলসম্যান মোবারক মুসা ১০ বছর ধরে সউদী আরবে কাজ করছেন। তিনি যা আয় করেন তার একটি অংশ দেশে পাঠান বাবা-মা ও ৩ ভাইয়ের ভরণপোষণের জন্য। সউদী শ্রম নীতিতে পরিবর্তনের অর্থ তিনি আর তা করতে সক্ষম হবেন না। খব রয়টারস।
মার্চের প্রথম দিকে সউদী শ্রম মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে যে সউদী নাগরিকদের জন্য আরো চাকরির সুযোগ খোলা রাখার লক্ষ্যে ৬ মাসের মধ্যে বিদেশীদের মোবাইল ফোন বিক্রি ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ নিষিদ্ধ করা হবে।
এর ফলে এ বছর মুসার মত সউদী আরবের লক্ষ লক্ষ বিদেশী শ্রমিক তাদের কাজ হারাতে পারে ও তাদের দেশে পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে। কারণ তেলের নি¤œ মূল্যের কারণে দেশের অর্থনীতি মন্থর হয়ে পড়ায় তা সরকারকে প্রবাসীদের কাজের সুযোগ নিষিদ্ধ করায় উৎসাহিত করেছে। মুসার বয়স তিরিশের কোঠায়। রিয়াদের কেন্দ্রস্থলে একটি মোবাইল ফোন মার্কেটে তার একটি ছোট দোকান রয়েছে। তিনি বলেন, আমি কোথায় যাব জানি না। তাছাড়া আমি আর কোনো কাজও জানি না। বিগত দশকগুলোতে সউদী আরবের অর্থনৈতিক বিকাশের ফলে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও অন্যান্য স্থান থেকে বহু লক্ষ বিদেশী কাজের সন্ধানে দেশটিতে ভিড় জমায়। তারা তেল শিল্প, নির্মাণ শিল্পের স্বল্প বেতনের চাকরির সাথে সাথে বহু মধ্য-ব্যবস্থাপনা ও পেশা ভিত্তিক পদে নিয়োজিত হয়।
সরকারী উপাত্ত অনুযায়ী ২০১৪ সালে সউদী আরবের ৩ কোটি ৮০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে বিদেশীদের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১০ লাখ। তারা দেশে যে অর্থ পাঠায় তা তাদের স্ব স্ব দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৫ সালের তৃতীয় কোয়ার্টারে তারা দেশে ৯শ’ ১০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে।
সউদী আরবে বিদেশী শ্রমিকের আগমনের স্রোত এখন উল্টো রূপ নিতে পারে। তেলের মূল্য হ্রাসের কারণে গত বছর বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১০০ বিলিয়ন ডলার। বহু বিশ্লেষকই এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ হ্রাসের আশংকা করছেন। ২০০৬ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ শতাংশের বেশি।
এদিকে সরকার অর্থের অভাবে আগের মত অবাধে সরকারী খাতে কর্মসংস্থান করতে পারছে না। তাই সরকারী হিসেবে বেকারত্বের হার ১১.৫ শতাংশ থেকে আরো বাড়তে পারে। যার ফলে শ্রম বাজারে সরকারের বড় রকম হস্তক্ষেপ ঘটবে ও যেসব চাকরি বিদেশীরা করত তার প্রতি সউদীরা হাত বাড়াবে।
একটি বড় সউদী কোস্পানির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এ বছরের শেষ নাগাদ যদি ১০ লাখ বিদেশী শ্রমিককে এ দেশ ত্যাগ করতে হয় তাতে তিনি অবাক হবেন না।
বিশিষ্ট সউদী অর্থনীতিবিদ ফযল আল বোয়াইনিয়ান বলেন, অর্থনৈতিক পরিবর্তন শ্রম বাজারের উপর চাপ ফেলতে শুরু করেছে। এর ফলে বিদেশী শ্রমিকদের একটি বড় অংশ অভিবাসী হতে শুরু করেছে।
নির্মাণ খাতে প্রায় ৪৫ শতাংশ বিদেশী শ্রমিক নিয়োজিত ছিল। এতদিন পর্যন্ত এ খাতকে ঘিরেই চাকরিচ্যুতি সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ভাবে নির্মাণ কাজ সংকোচন ও সরকার কর্তৃক অর্থ পরিশোধে বিলম্বের কারণে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো গত বছর থেকে হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করছে।
রিয়াদের এক বিরাট নির্মাণ কোম্পানিতে চাকরিরত ছিলেন ফিলিস্তিনি-লেবাননী প্রকৌশলি আবু ফাদি। তিনি বলেন, একটি বড় কোম্পানিতে ১২ বছর স্থিতিশীল চাকরির পর আমি আমার সিভি হালনাগাদ করে অন্যান্য নিয়োগকারীদের কাছে পাঠাতে শুরু করেছি। আমার কোম্পানি সেপ্টেম্বর থেকে কর্মচারিদের বেতন দিতে পারেনি।
নিজের ভবিষ্যত পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে বিলম্বিত করা ফাদি বলেন, তার কিছু সংখ্যক সহকর্মী দেশ থেকে তাদের পরিবারকে সউদী আরবে নিয়ে আসেন। এখন তারা বাড়ি ভাড়া দিতে পারছেন না। তার কোম্পানির ৫ হাজারের মত টেকনিক্যাল শ্রমিক কাজ ছেড়ে চলে গেছে।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খালেদ আবাল খায়েল বলেন, মোবাইল ফোন বিক্রেতাদের উপর নিষেধাজ্ঞার ফলে ২০ হাজার শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যান্য শিল্পের ক্ষেত্রেও এ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি রয়টারসকে বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয় ১৩ লাখ সউদীর জন্য কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। ক্রমান্বয়ে অন্যান্য খাত যেমন ট্যাক্সি, ভ্রমণ ও পর্যটন, রিয়েল এস্টেট, জুয়েলারি ও সব্জি বাজারও সউদীকরণ করা হবে।
আবালখায়েল বলেন, চাকরিচ্যুত বিদেশীরা অন্যান্য খাতে চাকরির চেষ্টা করতে পারবেন। কিন্তু অর্থনীতির মন্থরতার কারণে অনেকের জন্যই তা কঠিন হবে। যদি তারা ৯০ দিনের মধ্যে চাকরি যোগাড় করতে না পারেন তাহলে তাদের সউদী আরব ত্যাগ করতে হবে।
এ অবস্থায় উচ্চ বেতনে চাকরিরত বিদেশী পেশাদাররাও তেলের অর্থ সংকুচিত হয়ে আসার প্রেক্ষিতে সউদী আরব ত্যাগের কথা বিবেচনা করছেন।
সউদী আরবের তেল উৎপাদক পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে ৯ বছরেরও বেশি সময় চাকরি করা ব্রিটিশ পেট্রোকেমিক্যাল কনসালট্যান্ট প্রকল্প স্থগিত ও বাজেট অনুমোদন বিলম্বিত হওয়ায় দেশে ফিরে যাওয়ার কথা বিবেচনা করছেন। তিনি বলেন, গত বছরের বেশির ভাগ সময়ই ভালো ছিল। কিন্তু শেষের দিক ও এ বছর আমার দেখা সবচেয়ে খারাপ সময়।
পেশাদারদের জন্য অনলাইন নিয়োগ পোর্টাল গালফ ট্যালেন্ট এ মাসের রিপোর্টেৃ জানায়, তেল রাজস্বের উপর বিপুল নির্ভরতা এবং পরিকল্পিত কৃচ্ছ্রতা পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে প্রবাসীদের আকর্ষণের শীর্ষ তালিকা থেকে সউদী আরব ক্রমেই বিদায় নিচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।