পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা আরও অনেক দূর যেতে চাই। আমরা চাই বাংলাদেশকে একটা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে। এই বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহারা থাকবে না, কেউ ক্ষুধায় কাতর হবে না। প্রতিটি মানুষ রোগের চিকিৎসা পাবে, প্রতিটি মানুষ শিক্ষা পাবে, উন্নত জীবন পাবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্য নিয়েই আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজের আহŸান জানিয়ে বলেছেন, সকল বাধা উপেক্ষা করেই মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমরা দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তুলতে সক্ষম হব। কেউ আমাদের অগ্রগতিকে রুখতে পারবে না। আমারা সকল বাধাকে উপেক্ষা করে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলদেশকে গড়ে তুলে লাখো শহীদের আত্মত্যাগের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনে সমর্থ হব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। এজন্য দেশকে গড়ে তোলা আমাদের কর্তব্য। এজন্য আমি সকলকে আহŸান জানাইÑএ দেশ আমরা পেয়েছি লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে। কাজেই এই স্বাধীনতার সুফল যেন বাংলার প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছায়। এদেশের মানুষ যেন একটা সুন্দর জীবন পায়, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে গৌরবময় ও অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পদক ২০১৬-তে ভূষিত করেন। ৭ জন মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক বিজয়ীর পক্ষে তাদের সহধর্মিণী, সন্তান এবং পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হচ্ছেন ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী ও প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সংগঠক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ১৯৭১ সালে ভারতের মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প, অপারেশন ক্যাম্প ও শরণার্থী ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। সফল রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট সমাজসেবক মরহুম মৌলভী আচমত আলী খান। সুপারসনিক এয়ার ক্রাফট এফ-৬-এর সফল পাইলট ও মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ এয়ারফোর্স গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারী স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) বদরুল আলম বীর উত্তম। ১৯৭১ সালে রাজশাহী জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণ প্রতিরোধে পুলিশ বাহিনীকে সংগঠিত করার কাজে নেতৃত্বদানকারী শহীদ শাহ্ আব্দুল মজিদ। রাঙামাটিতে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে নেতৃত্বের জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শাহাদাত বরণকারী রাঙামাটির তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এম আবদুল আলী। ১৯৭১ সালে লন্ডনে পাকিস্তান হাইকমিশনে কর্মরত থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী ও বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান স্বহস্তে লেখক মরহুম এ কে এম আবদুর রউফ। ১৯৭১ সালে দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনে কর্মরত থাকাকালে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী ও দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রথম মিশন স্থাপনকারী কে এম শিহাব উদ্দিন। স্বাধীনতার সপক্ষে সাংস্কৃতিক কর্মকাÐ পরিচালনায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনকারী সৈয়দ হাসান ইমাম। একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী মরহুম রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম। স্বনামধন্য কৃষি গবেষক এবং তোষা পাট ও দেশি পাটের জীবনরহস্য আবিষ্কারক মরহুম অধ্যাপক মাকসুদুল আলম।প্রথিতযশা শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ রফি খান (এম আর খান)। সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখা কবি নির্মলেন্দু গুণ। স্বনামধন্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ও রবীন্দ্রসংগীত গবেষক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান এবং দেশের জলসীমায় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবার স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছে।
নৌ-বাহিনীর প্রধান বাহিনীর পক্ষে ভাইস অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং অন্যরা নিজ নিজ পুরস্কার গ্রহণ করেন। মরণোত্তর পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে মরহুম মৌলভী আজমত আলী খানের পক্ষে তার ছেলে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, শহীদ শাহ আবদুল মজিদের পক্ষে তার ছেলে মামুন মাহমুদ শাহ, শহীদ এম আবদুল আলীর পক্ষে তার মেয়ে নাজমা আক্তার লিলি, মরহুম এ কে এম আবদুর রউফের পক্ষে তার স্ত্রী শাহানারা রউফ, মরহুম কে এম শিহাব উদ্দিনের পক্ষে তার ভাই ডা. কে এম ফরিদউদ্দিন, মরহুম রফিকুল ইসলামের পক্ষে তার স্ত্রী দিলরাজ বুলি ইসলাম এবং মরহুম অধ্যাপক মাকসুদুল আলমের পক্ষে তার স্ত্রী রাফিয়া হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বাধীনতা পুরস্কার গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বেসমারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ’সহ মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিনবাহিনী প্রধানগণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবৃন্দ, সরকারের সামরিক ও বেসামরিক পর্যায়ের পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ, কূটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগী সংগঠনের কর্মকর্তাবন্দসহ দেশের সুধী সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা প্রতিভাদের তুলে এনে তার সরকার সম্মান জানাতে চায় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রাম বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেকেই আছেন যাদের খবর কেউ জানে না। তবে, আমরা চাই যে যেখানে সামাজিক উন্নয়নে বা দেশের সাহিত্য জগতে বা সাংস্কৃতিক জগতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছেনÑআমরা যেন তাদের সম্মান করতে পারি। সেই তথ্য আমাদের জানা থাকা একান্তভাবেই দরকার। কাজেই আমি আশাকরি আগামীতে সেই তথ্য পাব এবং তাদেরকে আমরা সম্মানিত কতে পারবো।
শেখ হাসিনা বলেন, তাদের আমরা সম্মাননা দিতে চাই এই কারণেই যে, দেশের জন্য তারা যে অবদান রাখলেন, জাতির জন্য অবদান রাখলেন, জাতির জন্য একটা পথিকৃৎ সৃষ্টি করে গেলেনÑআমরা সেই স্বীকৃতিটা দিয়ে যেতে চাই। যেন তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে এ দেশের মানুষ আরো সামনে এগিয়ে যেতে পারে। নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে তারা যেন বিশেষ অবদান রাখতে পারেÑসেটাই আমার কামনা, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছর হাতে ক্ষমতা পেয়েছিলেন। যুদ্ধ বাংলাাদেশকে তিনি গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও তিনি শুরু করেছিলেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এই হত্যার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয় । তিনি বলেন, এর ফলে এদেশ আর এগোতে পারেনি। দেশে যদি ১৯টা ক্যু হয় আর প্রতিনিয়ত যদি এভাবে হত্যা চলে তাহলে সেদেশ তখনও আর্থসামাজিক উন্নতি লাভ করতে পারে না বা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সন্মানজনক অবস্থানে যেতে পারে না বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। যে সংগঠন জাতির পিতার নেতৃত্বে দেশের মানুষকে সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে বিজয় অর্জন করেছে। কাজেই আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে তখন থেকেই দেশের উন্নয়ন হয়েছে।
তিনি বলেন, ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর থেকে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে আমরা ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাই। যেহেতু জাতির পিতার ২৩ বছরের সংগ্রাম আর ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ এই ২৪ বছরের ফসল এই বাংলাদেশ এবং যেহেতু আমরা তার আদর্শে বিশ্বাস করি তাই যখনই আমরা ক্ষমতায় এসেছি দেশের মানুষ উন্নয়নের মুখ দেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ আজকে দারিদ্র্যসীমা থেকে উঠে আসছে। ৫ কোটি মানুষ নি¤œবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে। আজকে আমাদের দারিদ্র্যসীমা ২২ ভাগে নেমে এসেছে, ইনশাল্লাহ এটাকে আমরা আরো নামিয়ে এনে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করব।
তিনি বলেন, যে কোন একটি জাতির উন্নয়নের জন্য একটা দিকনির্দেশনা থাকতে হয়, একটা দিকদর্শন থাকতে হয়, ভিশন থাকতে হয়। সেটা মাথায় রেখেই আমরা ঘোষণা দিয়েছি, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করবো। আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশ ইতোমধ্যে নি¤œমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী জাতি। আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে আমরা বিজয়ী জাতি, আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবো। আর সে লক্ষ্য নিয়েই তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
পদকপ্রাপ্তদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে অপনারা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা সম্মাননা পেলেন, আমি আশা করি আপনাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে আগামী প্রজন্ম। সেজন্য আগামী দিনেও সেভাবেই কাজ করবেন। পদক পাওয়ার জন্য কেউ কাজ করে না। তবে, আপনাদের এই পদকপ্রাপ্তি আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।