Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪, ১৩ আষাঢ় ১৪৩১, ২০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আজ সেই ভয়াল কালরাত

প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৪০ পিএম, ২৫ মার্চ, ২০১৬

ইনকিলাব ডেস্ক : আজ সেই ভয়াল ২৫ মার্চ। অবাক বিস্ময়ে গোটা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করে ইতিহাসের নজিরবিহীন এক নৃশংস বিভীষিকাময় কালরাত্রি। একাত্তরের এ রাতে বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী হায়েনার মত মেতে ওঠে জঘন্যতম নৃশংসতায়। অপারেশন সার্চলাইট নামে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর। স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের অপরাধ তারা নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই গড়তে চেয়েছিল। এ রাতে দখলদার পাকিস্তানী বাহিনী দেশের অনেক স্থানে নির্মমভাবে হত্যা করে ৫০ হাজারের বেশী ঘুমন্ত বাঙালিকে। বঙ্গবন্ধুর দেয়া ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার ক্ষুব্ধ-বিক্ষুব্ধ দামাল ছেলেরা বাধ্য হয় অস্ত্র হাতে তুলে নিতে। এর আগে বঙ্গবন্ধু ও তৎকালীন সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের মধ্যে কয়েক দিন ধরে দফায় দফায় বৈঠক হয়। তবে তা কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। এদিন তড়িঘড়ি করে সন্ধ্যায় জেনারেল ইয়াহিয়া খান তৎকালীন গভর্নর হাউজ (বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভবন) থেকে সরাসরি ঢাকা বিমান বন্দরে চলে যান সমস্যা শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ রুদ্ধ করে। নিরীহ নিরপরাধ বাঙালিদের ওপর কাপুরুষোচিত হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়ে রাত ৮টার দিকে তিনি গোপনে বিমানে করে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে পাড়ি জমান।
গভীর উৎকণ্ঠা নিয়ে মিছিল-মিটিং-শ্লোগানে মুখরিত ঢাকার প্রায় সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। কেউ জানতেই পারেনি ততক্ষণে খুলে গেছে নরকের দরজা। রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা সেনানিবাস থেকে সৈন্যরা ইন্টারকন্টিনেন্টাল (বর্তমানে রূপসী বাংলা হোটেল ঘিরে ফেলে)। রিসিপশনে কালো বোর্ডে চকখড়ি দিয়ে একজন বাচ্চা ক্যাপ্টেন লিখে দিল বাইরে বেরুলেই গুলি। বিদেশি সাংবাদিকরা বেরোতে না পেরে রেডিও শুনতে চেষ্টা করলেন। না কাফ্যুর কোন ঘোষণা নেই। বাইরে ট্যাঙ্কের শব্দ। ছুটে সবাই ১২ তলায় উঠলেন। মেশিনগানের গুলিতে কানপাতা দায়। ভুট্টোর ঘরের দরজায় গিয়ে সবাই থমকে দাঁড়ালেন। কড়া পাহারা, ঢাকা-করাচি টেলিপ্রিন্টার লাইনও কেটে দেয়া হয়। বাইরের পৃথিবী থেকে ঢাকা বিচ্ছিন্ন। বন্ধ করে দেয়া হয় বেতারের প্রচারও। সরকারি কোন ঘোষণাও প্রচারিত হয়নি সেদিন।
রাত সাড়ে ১১টার পরে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। তারা প্রথমে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং এর পর একে একে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ চারপাশ, ধানমন্ডি, পিলখানার ইপিআর সদর দফতরসহ রাজধানীর সর্বত্র নৃশংস হত্যাকাÐ চালায়। পাশাপাশি হত্যাযজ্ঞ চালায় চট্টগ্রামসহ দেশের কয়েকটি বড় শহরেও। আগুন ধরিয়ে দেয় গানপাউডার ছিটিয়ে পুলিশ সদর দফতরসহ বিভিন্ন এলাকায়। রাজারবাগে পুলিশের বাঙালি সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তাদের সামান্য অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই। তবে ট্যাংক আর ভারী মেশিনগানের মুখে এ প্রতিরোধ বেশিক্ষণ টেকেনি। গ্যাসোলিন ছিটিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয় পুরো সদর দফতর। তবে ২৫ মার্চের কালরাতের পর স্বজনের লাশ আর ধ্বংস্তূপের মধ্যে থেকে জেগে ওঠা বাঙালির প্রতিরোধের পালা শুরু হয়।
জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে ২৫ মার্চের সেই কালরাতে নির্মম হত্যাকাÐের শিকার অগণিত শহীদকে। রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কালরাত’ স্মরণে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দিনভর থাকছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আজ সেই ভয়াল কালরাত

২৫ মার্চ, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ