Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সর্ষের মধ্যেই ভূত!

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি

প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত এমন সন্দেহ করা হচ্ছে। এ তালিকায় একজন ডেপুটি গভর্নরও রয়েছেন। সর্ষের ভিতেরই তাহলে ভূত! কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এসব কর্মকর্তা সবকিছু জানেন বলে প্রাথমিক তদন্তে ইঙ্গিত মিলেছে বলে জানান তদন্তকারী দলের একজন কর্মকর্তা। ইতিমধ্যেই ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে এখনো সন্দেহের তালিকায় থাকা ডেপুটি গভর্নরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি বলে জানা গেছে।
এদিকে রিজার্ভ চুরির বিষয়ে চলমান তদন্তে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা। গতকাল সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। শুভঙ্কর সাহা বলেন, তদন্ত চলমান। তদন্তের স্বার্থে এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না। তবে অগ্রগতি আছে এবং যথেষ্ট অগ্রগতি আছে। আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে তিনি জানান, তালিকাভূক্ত একজন আইনজীবীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আইনানুগ বিষয়গুলো তিনি অ্যাসেস করছেন। অপরদিকে অব্যাহতি দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নরের শূণ্য পদে নিয়োগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী রোববার এই পদে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগের আবেদনপত্র আহবান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। গতকাল সার্চ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানানো হয়। এছাড়া আগের দিনের আশ্বাসের পর গতকালও বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল। তবে বিকেলে আগের দিনের মতোই ক্যামেরাম্যানদের প্রবেশে বাধার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রিপোর্টারদের প্রবেশে কোন বাধা নেই বলে জানানো হয়। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ভালো নেই সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সর্মথকরা। চাকরি হারানোর ভয়ে আতঙ্কে আছেন অনেকেই। সম্প্রতি চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া গভর্নর সচিবালয়ের মহাব্যবস্থাপক আ ফ ম আসাদুজ্জামানকে সহকারী মুখপাত্র পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শ্রীলংকার শালিকা ফাউন্ডেশনের ৬ পরিচালকের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দেশটির আদালত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে টাকা চুরির ঘটনা চাউর হওয়ার পর এ মাসের মাঝামাঝিতে ঘটনার ক্লু বেড় করতে বিভিন্ন সংস্থা কাজ শুরু করে। বেশকিছুদিন ধরে চলমান তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের খোয়া যাওয়া টাকা কেলেঙ্কারির সঙ্গে ব্যাংকের দুটি বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা তথ্য পাওয়া গেছে বলে পুলিশের অপরাধ বিভাগ (সিআইডি) সূত্রে জানা গেছে। সন্দেহভাজন জড়িতদের জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এসব কর্মকর্তা সবকিছু জানেন বলে প্রাথমিক তদন্তে সন্দেহ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও ব্যাংক থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মীর্জা আব্দুল্লাহেল বাকীর নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল বাংলাদেশ ব্যাংকে যায়। দুপুর পর্যন্ত তারা ডিলিং রুম শাখা ও আইটি শাখার বিভিন্ন কম্পিউটার থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছিল। এগুলো থেকে সিডি ও পেন ড্রাইভে তথ্য সংগ্রহ করেন কর্মকর্তারা। দুটি বিভাগের কম্পিউটার যেসব কর্মকর্তারা প্রতিদিন অপারেটর করেন, তাদের কাছ থেকেও তথ্য জানতে চাওয়া হয়। এগুলো কীভাবে বা সর্বশেষ কত দিন আগে পরিচালিত হয়েছে তাও জানার চেষ্টা করেন তারা। তথ্য সংগ্রহ করার সময় প্রায় এক মাস আগের তথ্যও নেওয়া হয় বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
সূত্র বলছে, ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। গত বছরের অক্টোবরেই সুইফট কম্পিউটারের তথ্য পাচার হয়। লেনদেন দ্রæত নিষ্পত্তির জন্য একটি সফটওয়্যার ইনস্টল (সংযোজন) করা হয়। যারা সফটওয়্যার সংযোজন করেছেন তাদের নামও বেরিয়ে এসেছে। এই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গোপন কিছু তথ্য পাচার হয়। এই সিস্টেমের মাধ্যমে চেক জমা দিলে ১ মিনিটের মধ্যে অ্যাকাউন্টে টাকা ক্রেডিট হয়। তবে রিজার্ভ সংরক্ষণের জন্য যে কম্পিউটারের মাধ্যমে সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট) লেনদেন হতো, সেই কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগও ছিল না। সুইফট পরিচালনার জন্য বেলজিয়ামে সুইফটের ওই প্রতিষ্ঠানের মূল সার্ভারের সঙ্গে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক টেকনোলজি ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারের সংযোগ ছিল। কিন্তু সফটওয়্যার ইনস্টল করার পর সুইফটের কম্পিউটারেও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়। এ পদ্ধতি চালুর সময় বিভিন্ন পর্যায়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা কাজ করেন। সিস্টেমে কাজ করতে গিয়ে সুইফট শাখার তথ্য খোয়া গেছে। ডিজিটাল আপগ্রেডেশনের কাজ করেছেন অনেকেই। তারা কী কী তথ্য নিয়েছেন। কোন কোম্পানি এই সফটওয়্যার দিয়েছে। সফটওয়্যার ইনস্টল করার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরের কারা ছিল, তার সব কিছুই পরিষ্কার হয়ে গেছে।
তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা গেছে, ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন ব্যাংকেরই কিছু অসাধু কর্মকর্তা। তাদের কম্পিউটারেও তা দেখা গেছে। তবে তাদের কম্পিউটার থেকে যেসব তথ্য নেওয়া হয়েছে তার সঙ্গে ব্যাংকের মূল সার্ভারের হার্ডডিস্কের সংযোগ আছে। এখন ওই ডিস্কের সিস্টেমের তথ্যের সঙ্গে প্রাপ্ত তথ্য বা ডেটা মেলানো হবে। এর পরই সন্দেহভাজনদের ব্যাপারে আরো নিশ্চিত হওয়া যাবে। ওই ডিস্ক ব্যাংকের লেনদেনের প্রাণকেন্দ্র। সেখানে সব ধরনেরই তথ্য থাকে। ইচ্ছা করলেই যে কেউ ডিস্কের তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন না। এ কারণে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন পড়ে। আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে বলে সূত্রটি আশা করছে। এরপরই সন্দেহভাজন দুই বিভাগের ব্যক্তিদের ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এদিকে গত বুধবার ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য জব্দ করা কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক পরীক্ষা করার অনুমতি দেন। এর আগে সিআইডি আদালতে আবেদন করে। আর গত এক সপ্তাহ ব্যাংকের দুটি বিভাগ থেকে নেওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে অনেককেই শনাক্ত করা হয়। তারই অংশ হিসেবে ব্যাংকের বেশ কয়েকজনকে মালিবাগের সিআইডি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত আছে বলে জানা গেছে। এদের ব্যাপারে এরপরই ব্যাংক বা অর্থ মন্ত্রণালয়ে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে। পরে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ পেলে মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলায় সে ক্ষেত্রে আরো ১০-১২ জন আসামির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে। একজন ডেপুটি গভর্নর সন্দেহভাজন এসব কর্মকর্তার তালিকার প্রথমেই রয়েছেন বলে সূত্রটি জানায়।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের পত্রিকা ইনকোয়ারারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল হ্যাকাররা। এ চেষ্টায় দুই ধাপে প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার লোপাট করলেও ৮৭০ মিলিয়ন ডলার পাচারে ব্যর্থ হয় তারা। এতে আরো জানানো হয়, সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি করা অর্থ ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কার ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়। এর মধ্যে ফিলিপাইনে অ্যাকাউন্টে নেওয়া ৮ কোটি ডলার ক্যাসিনোর মাধ্যমে হংকংয়ে পাচার করা হয়েছে। এ ঘটনা প্রায় এক মাস চাপা দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ঘটনা জানাজানি হলে মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এরপরই নানা তথ্য এবং সন্দেহভাজনদের সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসতে শুরু করে। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে হারানোর খবরটি গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে টের পেলেও এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আলোচনার মধ্যে চাপে থাকা গভর্নর ১৫ মার্চ পদত্যাগ করেন।
আতিউর সমর্থকরা আতঙ্কে
সদ্য সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সর্মথকরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ভালো নেই। অন্যায়ভাবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগকারী অনেকেই চাকরি হারানোর ভয়ে আতঙ্কে আছেন। সম্প্রতি চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া গভর্নর সচিবালয়ের মহাব্যবস্থাপক আ ফ ম আসাদুজ্জামানকে সহকারী মুখপাত্র পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, আসাদুজ্জামানের নিয়োগ মূলত চুক্তিভিত্তিক। আর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ধারা অনুযায়ি তার কাজের সীমা আছে। নিয়োগপত্রে মুখপাত্রের বিষয়টি না থাকায় তাকে সেখান থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে। উল্লেখ্য, আতিউর রহমানের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপে আসাদুজ্জামান একের পর এক পদোন্নতি পান। এমনকি মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও মহাব্যবস্থাপক হিসেবে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮০০ কোটি টাকা চুরির ঘটনায় গভর্নরের পদ থেকে যেদিন ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন, সেদিন সংবাদ সম্মেলনে বেশ তৎপর দেখা যায় আ ফ ম আসাদুজ্জামানকে। সংবাদ সম্মেলনে আতিউর রহমানের কানে কানে পরামর্শও দেন তিনি। শুধু তাই নয়, সেদিন অফিস থেকে ছুটি না নিয়ে তিনি আতিউর রহমানের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন।
এর আগে ড. আতিউর রহমানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ডেপুটি গভর্নর আবুল কাসেম ও নাজনীন সুলতানাকে অব্যাহতি দেয় সরকার। এছাড়া আরও কয়েকজন কর্মকর্তার তালিকা করা হয়েছে, যারা ড. আতিউর রহমানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তাদের ব্যাপারে অচিরেই সিদ্ধান্ত হতে পারে। যদিও গভর্নর হিসাবে যোগ দেওয়ার পর ফজলে কবির সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সুপারিশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংস্কার করা হবে।
সার্চ কমিটির বৈঠক
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২ ডেপুটি গভর্নর (ডিজি) নিয়োগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের জন্য গঠিত সার্চ কমিটির প্রথম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। আগামী রোববার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ পদে নিয়োগের আবেদনপত্র আহবান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। বৈঠক শেষে সার্চ কমিটির প্রধান কাজী খলিকুজ্জমান সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে টাকা চুরির ঘটনায় চাপের মধ্যেই ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের পদত্যাগের পর দুজন ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম ও নাজনীন সুলতানাকে অপসারণ করে সরকার। পরদিন বুধবার পৃথক প্রজ্ঞাপনে সাবেক অর্থসচিব ফজলে কবিরকে চার বছরের জন্য গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর ডেপুটি গভর্নর পদ দুটিতে নিয়োগে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জমানকে প্রধান করে ৫ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত ও বিআইডিএস’র মহাপরিচালক ড. খান আহমেদ সৈয়দ মুরশিদ। এছাড়া কমিটির সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস।
বৈঠক শেষে কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, আগামী রোববার ডেপুটি গভর্নর নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে। ১৩ এপ্রিল আবেদনের শেষ তারিখ। বৈঠকে এই পদের জন্য যোগ্যতার মাপকাঠি নিয়েই আলোচনা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এই নিয়োগের সময় কেউ কারো জন্য সুপারিশ করলে প্রাথমিক বাছাইয়েই বাদ দেয়া হবে। যাচাই বাছাইয়ের পর একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
এর আগেও সার্চ কমিটির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ দেয় সরকার। ওই সময়ও সার্চ কমিটির প্রধান করা হয়েছিল কাজী খলীকুজ্জমানকে। এর জন্য ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিন জন ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছিল। এতে তিনটি ডিজি পদে মোট ৪৮ জন দরখাস্ত করেছিল।
শ্রীলংকার শালিকা ফাউন্ডেশনের ৬ পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শ্রীলংকার শালিকা ফাউন্ডেশনের ৬ পরিচালকের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দেশটির আদালত। শ্রীলংকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গোয়েন্দা সংস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত। কলম্বোর চিফ ম্যাজিস্ট্রেট জিহান পিলাপিতিয়া দেশত্যাগে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। শ্রীলংকার ইমেগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়েছেন ইমিগ্রেশনের মুখপাত্র লাকসন জয়সা। ইনকোয়ারার ডট নেট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। শ্রীলংকা পুলিশ আদালতে বলেন, শ্রীলংকার একটি বেসরকারি ব্যাংকে শালিকা ফাউন্ডেশন গত ২৮ জানুয়ারি একটি অ্যাকাউন্ট খোলে। অ্যাকাউন্ট খোলার ৬ দিন পর প্রায় ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এতে পাঠানো হয়।
শ্রীলংকা পুলিশ জানায়, নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে সাহায্য দেওয়ার জন্য ওই ফাউন্ডেশনটি গড়ে তোলা হয়। কলম্বোর একটি পরিত্যক্ত বাড়িকে এটির ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া যোগাযোগের আর কোনো ধরনের তথ্য নেই।
উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রæয়ারি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০১ মিলিয়ন ডলার হ্যাকড হয়ে যায়। এর মধ্যে ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনে এবং ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলংকায় পাচার হয়। এর মধ্যে শ্রীলংকায় পাচার হওয়া অর্থ এবং ফিলিপাইনের ৬৮ হাজার ডলার বাংলাদেশ ব্যাংক ফেরত পায়। ফিলিপাইনে পাচার হওয়া বাকী প্রায় ৮১ মিলিয়ন ডলারের কোনো হদিস নেই। তবে এ বিষয়ে ফিলিপাইনেও তদন্ত চলছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সর্ষের মধ্যেই ভূত!

২৫ মার্চ, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ