Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রাষ্ট্রের ধর্ম থাকবে কেন

প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রাজনৈতিক ভাষ্যকার : রাষ্ট্রের ধর্ম থাকবেই। বিশ্বের ৬০টির অধিক রাষ্ট্রের ‘রাষ্ট্রধর্ম’ আছে। পঞ্চদশ সংশোধনীতে প্রধানমন্ত্রীও রাষ্ট্রধর্ম বহাল রেখেছেন। এ দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ছিল, আছে এবং থাকবে। রাষ্ট্রের ধর্ম থাকতেই হয়, আমাদের রাষ্ট্রেরও রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে। মার্চের ২৭ তারিখ সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দেয়ার বিষয়ে রিটের শুনানি হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতীয় মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ এখন ধর্মীয় পরিচয় থেকে তাদের রাষ্ট্রকে বের করে আনতে চায়। কখন বাংলাদেশীরা এমনটি চাইল তা গুটিকয় চক্রান্তকারী ছাড়া দেশের ৯৯.০৯ মানুষ তো জানতে পারল না। সংবিধান থেকে পঞ্চদশ সংশোধনীর সময় গণভোটের বিধানও তো তুলে দেয়া হয়েছে। না হয় সংবিধানের মূলনীতিসহ অন্য অনেক বিষয়েই জনগণের মতামত জানার জন্য গণভোটের আয়োজন করা যেত। যারা কৌশলে বা পেছনের দরজা দিয়ে কাজ সারতে অভ্যস্ত তারাই প্রকাশ্য মতামত, গণভোট বা প্রত্যক্ষ নির্বাচনকে ভয় পায়। দেশের তওহিদী জনতা ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বহাল রাখার পক্ষে তাদের দাবি তুলে ধরছে। ইতোমধ্যে রিট দায়ের ও এটি খারিজ না করে শুনানির তারিখ নির্ধারণ এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের পক্ষে নানা যুক্তিতর্ক দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় ইঙ্গিতপূর্ণ লেখালেখি থেকে ৯৫ ভাগ মানুষের মনে ক্ষোভ ও উদ্বেগ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। দেশের মুসলমান স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো বক্তৃতা-বিবৃতি, ক্ষোভ, কর্মসূচি ইত্যাদি দিতে শুরু করেছে। সরকার ও বিচারালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নাগরিকরা তাদের আবেদন-নিবেদন করছেন।
একশ্রেণীর জ্ঞানপাপী বলতে শুরু করেছেন, রাষ্ট্র কি কোনো মানুষ, যে তার ধর্ম থাকতে হবে? বলি, এদের মাথায় কি শুধুই গোবর? কোনো ঘিলু কি নেই? ধর্ম থাকতে হলে কি ব্যক্তিকে মানুষ হতে হয়? সেবাই পুলিশের ধর্ম। এখানে তো একটি সংস্থারও ধর্ম পাওয়া গেল। রাষ্ট্র মানুষ না হোক মানুষের জন্যই তো রাষ্ট্র। যদি রাষ্ট্রের ভাষা হতে পারে, তাহলে ধর্ম হতে পারবে না কেন? যদি রাষ্ট্রের ধর্ম না হতে পারে তাহলে রাষ্ট্রের নীতি, আদর্শ, মতবাদ বা দর্শন থাকে কী করে? রাষ্ট্র একটি ব্যক্তি বা মানুষ না হওয়া সত্তে¡ও গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার মতো ইজম যদি রাষ্ট্রের হতে পারে তাহলে তার ধর্ম হতে পারবে না কেন? ব্যক্তি না হলেও যদি রাষ্ট্র স্বাধীন, পরাধীন, মুক্ত, অবরুদ্ধ, দুর্বল, শক্তিশালী, সফল ও ব্যর্থ সবই হতে পারে, তাহলে রাষ্ট্র ধর্মসমৃদ্ধ হতে পারবে না কেন? এসব যুক্তি ধোপে টিকবে না।
মূলত একশ্রেণীর স্বাধীনতাবিরোধী বুদ্ধিজীবী ও বাংলাদেশের স্বকীয়তা বিধ্বংসী একটি দুষ্টচক্র রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দিতে কোমর বেঁধে নেমেছে। তারা চায় যে কোনো মূল্যে শতকরা ৯৩ ভাগ মুসলমানের অস্তিত্ব ও পরিচয় বাংলাদেশের সংবিধান থেকে তুলে দিতে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশী মুসলমানের স্বাধীন রাষ্ট্র ও তার সর্বোচ্চ দলিল থেকে ইসলাম ও মুসলমানের নাম-গন্ধ-অস্তিÍত্ব-চিহ্ন নিঃশেষে মুছে দিতে অনেকেই প্রশ্ন তুলে ধরেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতা আর রাষ্ট্রধর্ম একসঙ্গে চলতে পারে কিনা। তাদের প্রশ্নের জবাবে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা মোঃ আবদুল লতিফ নেজামীর একটি জ্ঞানগর্ভ আলোচনা উদ্ধৃত করা সমীচীন হবে বলে মনে করছি।
ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম একসঙ্গে যায় কিনা, গেলে কীভাবে যায়, বিশ্বে এর নজির আছে কিনা, থাকলে কোন কোন দেশে আছে ইত্যাদি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার জন্যে আনীত একটি রিট পিটিশন আগামী ২৭ মার্চ শুনানির জন্য নির্ধারিত আছে। তাছাড়া সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে না বলে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবর প্রচার হওয়ার পর প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে প্রদত্ত বক্তৃতা-বিবৃতি প্রতিদিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে। স্পর্শকাতর এ বিষয়ে অনাকাক্সিক্ষত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিণাম শুভ হবে না বলে সভা-সমাবেশে মন্তব্য করা হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধান থেকে বাদ দেয়ার যে কোনো উদ্যোগ বরদাশত করা হবে না বলেও কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। কেননা বিভিন্ন জাতীয় প্রশ্নে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির যেমন প্রতিক্রিয়া আছে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের ক্ষেত্রে সেই প্রতিক্রিয়া আরো প্রবল।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, ’৭২-এর সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র সংযোজনের ফলে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা এবং স্বাধীনতার প্রকৃত চেতনার প্রতিফলন যেমন হয়নি, তেমনি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের চিন্তা-চেতনার রূপায়ণ ও অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি ঘটেনি। কেননা এদেশের মানুষের জীবনধারা প্রমাণ করেছে, তারা ধর্মনিরপেক্ষ নন। এই বাস্তব ও সত্য কথাটা ভুলে বুদ্ধিবৃত্তির সিন্ডিকেট করে সুদূরপ্রসারী অভিপ্রায়ে বাংলাদেশের আদর্শিক মূল শিকড় কেটে ফেলে ধর্মনিরপেক্ষতা রাজনৈতিক ও সমাজতন্ত্র অর্থনৈতিক দর্শন হিসেবে সংবিধানে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়।
সংবিধান একটি দেশের রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তা-চেতনা, ঈমান-আক্বিদার রূপায়ণ। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তা- চেতনার রূপায়ণ। তাই গণতান্ত্রিক দায় হিসেবে এবং এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের প্রতিফলন ঘটিয়ে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযোজন করা হয়। তাছাড়া জনগণের অনুভূতির কথা বিবেচনা করে পবিত্র বিসমিল্লাহ, সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ^াসসহ অনেক ধর্মীয় মূল্যবোধকেও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মধ্যে আনা হয়। কেননা পৃথিবীর সব দেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চেতনাকে গুরুত্ব দেয়া হয়। এটাই গণতন্ত্রের কথা। তাই মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশের সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার চিন্তা-ভাবনা অনভিপ্রেত। অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ দেশে রাষ্ট্রধর্ম থাকলে বাংলাদেশের বেলায় এর ব্যতিক্রম কেন?
ধর্মনিরপেক্ষ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অনেক দেশে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত। আলজেরিয়া, বাহরাইন, ব্রæনাই, কমোরস, মিশর, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, ওমান, কাতার, সোমালিয়া, তিউনিসিয়ায় ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম। ইন্দোনেশিয়ায় ইসলাম ছাড়াও অন্য কয়েকটি ধর্মকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ ইউরোপের অধিকাংশ দেশেই খ্রিস্টধর্ম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত। পোল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি ও স্পেনে প্রধান ধর্ম রোমান ক্যাথলিক। ডেনমার্ক, জার্মানী, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডে লুথেরান ধর্ম প্রাধান্য পায়। আর্জেন্টিনা, কোস্টারিকা, মাল্টা, মোনাকো ও সুইজারল্যান্ডের কিছু ক্যান্টন ও ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রধর্ম রোমান ক্যাথলিক। সাইপ্রাস ও গ্রিসে ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অ্যান্ডোরা, ডোমিনিকান রিপাবলিক, এল সালভেদর, প্যারাগুয়ে, পেরু, পর্তুগাল ও সেøাভাকিয়ার সংবিধানে ক্যাথলিক ধর্মকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। আর্মেনিয়ায় অ্যাপোস্টলিক চার্চ রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত। ইহুদী ধর্মই ইসরাইলের চালিকা শক্তি। বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র নেপাল। বিশ্বের ৬০টি দেশে রাষ্ট্রধর্ম আছে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ৪৬টি মুসলিম দেশেরও রাষ্ট্রধর্ম স্বীকৃত।
রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে বিতর্কের জালে নিক্ষেপ করার পরিবর্তে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভক্তি এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা জাতি ও চৈতন্যের তাৎপর্য গভীরভাবে উপলব্ধি করা উচিত। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলে সংখ্যালঘুদের নিজ নিজ রাষ্ট্র সৃষ্টির আশংকা অমূলক। কেননা বিশে^র যেসব দেশে রাষ্ট্রধর্ম আছে সে দেশগুলোতে সংখ্যালঘুদের পৃথক রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে আন্দোলনের বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের দোহাই দিয়ে ইসলামী রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করারও দাবি জানিয়ে থাকেন একশ্রেণীর লোক। অথচ রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে ধর্মের অবিভাজ্যতা এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের উপস্থিতি অন্যান্য দেশেও লক্ষ্য করা যায়। বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ দেশ ভারতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), শিবসেনা, আকালী দল, বজরং, হিন্দু মহাসভা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ প্রভৃতি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব ভারতে বিদ্যমান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিশ্চিয়ান কোয়ালিশন, ক্রিশ্চিয়ান কোয়ালিশন অব ফ্লোরিডা ও ক্রিশ্চিয়ান ফ্যালেঞ্জিস্ট পার্টি অব আমেরিকা, জার্মানিতে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন ও ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন, নিউজিল্যান্ডে ক্রিশ্চিয়ান হেরিটেজ অব নিউজিল্যান্ড ও ক্রিশ্চিয়ান কোয়ালিশন অব নিউজিল্যান্ড, রাশিয়ায় ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটস, অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি, বেলজিয়ামে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক এন্ড ফ্লেযিশ পার্টি, কানাডায় ক্রিশ্চিয়ান হেরিটেজ পার্টি, বেলারুশে কনজারভেটিভ ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টিসহ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যেরও বিভিন্ন দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল আছে। পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মনিরপেক্ষ দেশে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের অস্তিÍত্ব থাকলেও বাংলাদেশে এর বিরোধিতা বিস্ময়কর বৈকি।
সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিস্থাপনের পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচনেরও একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধেরও দাবি জানাচ্ছে কেউ কেউ। অথচ শুধু বাংলাদেশে নয়, বরং ইদানিং বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও পৃথক ধর্মশিক্ষাকে উৎসাহিত করতে দেখা যাচ্ছে। তাই বেসরকারিভাবে গড়ে উঠছে পৃথক পৃথক ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পশ্চিমা বিশ্বের বহু ধর্মনিরপেক্ষ দেশে পৃথকভাবে খ্রিস্টধর্ম শিক্ষা চালু করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ম শিক্ষার জন্যে স্কুল-কলেজ ছাড়াও ওয়াশিংটনে একটি ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি রয়েছে। এককালের কমিউনিস্ট দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নে ৭০ বছর পর আবার ধর্ম শিক্ষা শুরু হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক মহাচীনেও ধর্মীয় শিক্ষা দিতে পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে কোনো বাধা নেই। যুক্তরাষ্ট্রে আলাদা খ্রিস্টধর্ম ও ইহুদি ধর্মশিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। ভারতে পৃথক জৈন স্কুল, বৈশ্য স্কুল, রাজপুত স্কুল চালু আছে। ফ্রান্স ধর্মীয় বিদ্যালয়েও ভর্তুকি দিয়ে থাকে। জার্মানিতে ও গ্রিসে অর্থডক্স খ্রিস্টধর্ম শিক্ষা চালু আছে। কানাডায় ক্যাথলিক ধর্মশিক্ষার জন্যে বাজেট বরাদ্দ বাধ্যতামূলক। তুরস্কে ধর্ম শিক্ষাকে নিঃশেষ করে দেয়ার কামাল আতাতুর্কের প্রয়াস সফল হয়নি। সউদী আরবসহ সব মুসলিম দেশে কোনো না কোনোভাবে পৃথক ধর্মীয় শিক্ষা চালু আছে। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ কওমী মাদ্রাসা ভারতের দেওবন্দে অবস্থিত। কিন্তু বাংলাদেশে ধর্মীয় শিক্ষা বন্ধের দাবি বোধগম্য নয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল বলে এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে একার্থ করে ফেলা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কারণ ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্য ও শোষণমুক্তি এবং তদানীন্তন পাকিস্তানের শাসন-প্রকরণ-আচরণ ও বৈষম্য-বিচ্যুতিতে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। ধর্মনিরপেক্ষতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবি সত্যের অপলাপ মাত্র। কারণ, স্বাধীনতার পূর্বকালে কোনো দল ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে নি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের ঐতিহাসিক যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১১ দফা, ৬ দফা এবং ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনকালেও কোনো দল ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেন নি। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গৃহীত মুজিবনগরের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রেও ধর্মনিরপেক্ষতার উল্লেখ নেই।
১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদী স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাংলাদেশের অন্যতম রাষ্ট্রীয় মূলনীতি করা হয়। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে গৃহীত সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র প্রভৃতি চার মূলনীতি সংযোজন করা হয়। যদিও স্বয়ং ভারত তার সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ১৯৭৭ সালে। আগেই বলা হয়েছে যে, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের প্রশ্নে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে জনগণের মধ্যে সৃষ্ট মতানৈক্যের ফলে পরবর্তী সময়ে এই বিষয়ে পরিবর্তন সাধিত হয়। গণতান্ত্রিক দায় হিসেবে এবং এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস, মূল্যবোধ এবং সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের প্রতিফলন ঘটিয়ে সংবিধানের মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাদ দেয়া হয়।
১/১১-এর পর গঠিত সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে ঢাকাস্থ ভারতের তদানীন্তন হাই কমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী, ভারতের সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জয়রাম রমেশ ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শিব শঙ্কর রায় বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ মূলনীতি গ্রহণ এবং ধর্মনিরপেক্ষতাসহ সব ক্ষেত্রে ভারতকে অনুসরণ করা উচিত হবে বলে বাংলাদেশকে উপদেশ দেয়া হয়। এর পর আবারো বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিস্থাপিত হয়।
আন্তর্জাতিক অনৈসলামীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই রাষ্ট্রধর্ম ইসলামসহ ইসলামী ধারাসমূহ সংবিধান থেকে বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অথচ ইসলাম ধর্ম এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ গণজনতার পরম আকাক্সক্ষার সাথে মিশে আছে। স্বাধীন বাংলাদেশের বাংলাদেশী জাতিসত্তার মূলেও রয়েছে ইসলাম ধর্ম। আমাদের বাংলাদেশীত্ব ও ইসলাম ধর্মই আমাদের জাতিসত্তার অস্তিত্বের শর্ত। ইসলাম ধর্ম ছাড়া জাতিসত্তার অস্তিত্ব নির্মাণ সম্ভব নয়। ইসলাম ধর্ম আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের গ্যারান্টি। আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্রীয় ভূখÐভিত্তিক বাংলাদেশী চেতনা এবং জীবনভিত্তিক ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গীর ৯০ ভাগ মানবমÐলীর অস্তিত্বের ভিত্তি তৈরি করেছে ইসলাম ধর্ম। এদেশের জনগণের অস্তিত্ব ও স্বাধীন মর্যাদা সবকিছুই ইসলাম ধর্মভিত্তিক জাতিসত্তার ওপরই নির্ভরশীল। তাই ইসলাম ধর্মকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখা যাবেনা।
আজকের পৃথিবীতে রাষ্ট্রীয় ভূখÐগত অবস্থান এবং স্ব স্ব স্রষ্টার সত্তাই বাস্তবে স্ব স্ব জাতির অস্তিত্বের শর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ভিত্তিতে প্রাধান্য পাচ্ছে নিজস্ব সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা। যেমন মার্কিন ডলারে ইন গড উই ট্রাস্টসহ বিদেশে মুদ্রা থেকে শুরু করে তাদের শপথ, শিক্ষা ব্যবস্থা, চার্চ, পোপ, ট্রিনিটি, ক্রুশ, রীতি-নীতি, কংগ্রেস ও পার্লামেন্টের কার্যবিবরণী, রোববারের অনুষ্ঠানাদি, রাষ্ট্রীয় আচার-অনুষ্ঠান, সিলেবাস-কারিকুলাম, পত্র-পত্রিকা, রেডিও-টিভি, চলচ্চিত্র, ব্যক্তিজীবন, সংস্কৃতি, মিশনারীদের কর্মকাÐÑ সর্বত্রই নিজস্ব স্রষ্টা অতি প্রকট। নিজেদের স্রষ্টাকে অস্বীকার করে কোন জাতি কিছু করে না। কারণ, মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাসই সমাজ, সততা, নৈতিকতা, মানবিকতা, সাম্য, সুস্থ জীবন বোধ ও সহাবস্থানবোধ তৈরি করে। ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম ধারণ, চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমে সততায়, নৈতিকতায়, মানবিকতায়, গঠনমূলক চিন্তা-ভাবনায়, দূরদর্শিতায়, ঔদার্যবোধে ও মহত্তে¡ উদ্বুদ্ধ করতে মর্যদাপূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগ সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ইতিহাস ও ধর্মীয় সংস্কৃতির পরম্পরা এবং এই পরম্পরাভিত্তিক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সাংস্কৃতিক জাতিসত্তার লালন ও চর্চা একান্ত কাম্য। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী শিকড় থেকে ক্রমশঃ আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন ও উন্মূল করে দেয়ার নানা চক্রান্ত করা হচ্ছে। ভাস্কর্যের নামে পৌত্তলিকতায় অভ্যস্ত করানো হচ্ছে। এখন আমাদেরকে শিকড় খুঁজতে বাধ্য করা হচ্ছে প্রতিবেশী সংখ্যালঘিষ্ঠ সমাজের ইতিহাস, ধর্মীয় সংস্কৃতি এবং সাংস্কৃতিক জাতিসত্তার মধ্যে। তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র কায়েমের লালিত স্বপ্ন ভেস্তে যাবার উপক্রম হওয়ায় তারা ইসলামের বিরুদ্ধে নেতিবাচক ও অরুচিকর বক্তব্য দিয়ে চলেছে। অভাবিতপূর্ব ইসলামী জাগরণে ভীত হয়ে শিক্ষা-সংস্কৃতি সংকোচনের উদ্যোগ নিয়েছেন সরকার। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও সমাজতন্ত্রীদের সর্বাত্মক বিরোধিতা সত্তে¡¡ও নানা তন্ত্র-মন্ত্র, মতবাদ, ইজম-বিভ্রান্ত মানুষ এখন ইসলামের দিকে হন্যে হয়ে ছুটতে শুরু করেছে। ইসলামের শাশ্বত নীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধের চেতনা নতুন করে সঞ্জীবিত করার প্রেরণা যোগাচ্ছে। ইসলামী আদর্শিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যুব সমাজ বলিষ্ঠ পদক্ষেপে এগিয়ে আসছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেক বিধর্মী ইসলামের তৌহিদবাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
‘বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসা¤প্রদায়িকতা অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতার কোনো বিকল্প নেই’ বলে কেউ কেউ মন্তব্য করে থাকেন। তাদের উদ্দেশে বলতে হয়, ধর্ম বিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালুর পর কি বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? না বিশ্ব সভ্যতা মুখ থুবড়ে পড়েছে। দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে না কি মানবতা ও মানবাধিকার। ভেসে আসছে বৈষম্যের শিকার মজলুমদের আর্তচিৎকার, আঘাত হানছে আকাশের দ্বারে উৎপীড়িতদের আহাজারী এবং ধ্বনিত হচ্ছে ক্রন্দনরোল। শুরু হয়েছে বিশ্বের সর্বত্র নৈতিক অবক্ষয়। অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়েছে এবং নগ্নাশ্রয়ী অপসংস্কৃতির পথ প্রশস্ত হচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষ অপসংস্কৃতির দূষিত জোয়ারে শুধু সুস্থ সংস্কৃতিই ধ্বংস হয়ে যায়নি, বরং ভেসে যায় চিরায়ত মূল্যবোধ, ধ্যান-ধারণা, চরিত্র, ধর্ম ও আদর্শ। বিপন্ন হয় নৈতিক মেরুদÐ। মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে মন-মননে, নীতি-নৈতিকতায় ও চিন্তা-চেতনায়।
ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, বরং ইসলামই কেবল পারে, মানুষের সুকুমার বৃত্তির বিকাশ, নৈতিক উৎকর্ষতা সৃষ্টি, সৃজনশীল প্রতিভার উন্মেষ, স্বশিক্ষিত ও মার্জিত করে তুলতে। চেতনাকে শাণিত. কর্তব্যবোধে উজ্জীবিত, দীপ্ত পথে বলীয়ান ও উদ্দীপ্ত করতে। চিন্তা-ভাবনার জগতে বিরাজমান নৈরাজ্যের উন্নতি ঘটাতে, উন্নত মানবিক জীবন ও সমাজের মনোভূমিতে শৃংখলা আনতে। ইসলাম মানুষের অন্তরে পারস্পরিক ভালবাসা, সাম্য ও মৈত্রীর অনুভূতি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই জাগ্রত করে। মানুষের মনে ন্যায়বোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, শৃংখলা, শিষ্টাচারবোধ, মানবাধিকার, জীবন-যাপনের মানসিকতা, সৌহার্দ্যবোধ, অধ্যবসায় ইত্যাদি নৈতিক ও আত্মিক গুণাবলী অর্জনে সহায়তা করে। মানুষকে সংস্কৃতিমনস্ক করা ও কুসংস্কারমুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে ইসলামের অবদান অনস্বীকার্য। শুধু ইসলামই পারে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করতে এবং সকলকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করতে।
ইসলাম বিশে^ শান্তির একটি মাইলফলক। কারণ ইসলাম একদিন অসভ্য জনতার চিন্তা-চেতনায় গভীর ও ব্যাপক অধিকার বিস্তার করেছিল। এতে ইসলামের স্বরূপ প্রতিভাত হয় বর্ণাঢ্য রূপে, সহজ ও মর্মস্পর্শিতায়। ইসলাম আগমনের পর জনমনে শান্তির চৈতন্যের সাড়া অনুভূত হয়। সূচিত হয় শান্তি, সুস্থিতি, মানবতা ও মানবাধিকারের মর্যাদার পতাকাকে সমুন্নত রাখার নবতর অধ্যায়। এই ইসলামী জাগরণের মাধ্যমে অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার ত্যাগ স্বীকারের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়, যা বিশ^বাসীর মননকে আজো প্রেরণা যোগাচ্ছে।
ইসলামকে বেষ্টন করে বিশে^ জনতার মনন একদিন বিশেষ তাৎপর্য চেতনায় সমৃদ্ধ হয়। ইসলামের ধারক-বাহকরা শান্তি, বিশ্রাম উপেক্ষা করে নেমে পড়লেন দুর্ধর্ষ সংগ্রামে দুর্জয় বিশ^াস নিয়ে। তাঁদের এরূপ অদ্ভুত কর্মোন্মাদনা সত্যিই বিস্ময়কর। অনৈক্য, দ্বিধা, দ্ব›দ্বও সংশয়াগ্রস্ত যখন বিশ^বাসী। তখন ইসলামপন্থীরা অপূর্ব আত্মবিশ^াস, অদম্য উৎসাহ, দুর্জয় সাহস এবং অসাধারণ প্রজ্ঞার সাহায্যে জনতাকে একটি সংঘবব্ধ শক্তিতে পরিণত করার প্রয়াস চালান। এতে বিচ্ছিন্ন, আত্মবিশ^াসহীন, দুঃসহ ও বিঘœসংকুল জনতা দাঁড়ানের সুযোগ পান। অনেকে সেদিন সন্দিগ্ধচিত্ত ছিলেন। কিন্তু বিরাট জনতা সেদিন এক নতুন দিগন্তের, নতুন আলোক রেখার সন্ধান পেয়ে নব উৎসাহে, নব উদ্দীপনায় অনুপ্রাণিত হয়ে উঠেন। সেদিনের জনতার মনে হয়েছিল, তাদের দীর্ঘদিনের মনের নিষ্ক্রিয়তা ও নিরুৎসাহিতা দূর হতে চলেছে। সেদিন তারা এগিয়ে চলেছিল দুর্বার গতিতে; কোন বাধা, কোন প্রতিবন্ধক দেখে তারা ভীত হননি। আর গতিপথে জনতা পেয়েছিল হিমালয় সদৃশ সুদৃঢ়, স্থির, অচঞ্চল, দূরদর্শী অনির্বাণ দীপশিখার মতো সদাজাগ্রত, সদাসচেতন ইসলামের অগ্রণী দল। ইসলাম ঐক্যের নেশা এমনভাবে জাগিয়ে দিতে পেরেছিল যে, দুশমনদের সকল চক্রান্ত সকল বাধা-বিঘœ ব্যর্থ করে দিয়েই তৌহিদী জনতার কাফেলাকে তাঁরা পৌঁছাতে পেরেছিলেন কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে। ইসলামপন্থীদের এই সাফল্যে সেদিন বিশ^বাসী বিস্ময়ে হতবাক হয়েছিলেন।
ইসলাম বিশ^বাসীর জন্যে যে প্রদীপ জ্বেলেছে, তাঁর পথ ধরে বিশ^বাসী কেয়ামত পর্যন্ত চলতে পারে এবং পেতে পারে মুক্তির সন্ধান। ইসলামের সূচিত আন্দোলন বিশ^বাসীকে চালিত করবে ঐক্যের পথে; অন্তরে শক্তি সঞ্চার করবে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায়। ইসলামের প্রদর্শিত পথ অনুশীলন অব্যাহত রাখতে পারলে বিশ^ শান্তির পথে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। ধর্মনিরপেক্ষতা সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, বরং ইসলামী আদর্শ ধারণ, চর্চা ও অনুশীলন করার দ্বার উন্মুক্ত রাখা উচিত। বহাল রাখা উচিত রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সংবিধানে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসও অবিলম্বে পুনর্বহাল করা উচিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাষ্ট্রের ধর্ম থাকবে কেন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ