পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : সড়কের দুইপাশ বন্ধ রেখে চলছে ফ্লাইওভারের র্যাম্প ও লুপ নির্মাণ কাজ। পুরো মোড় জুড়েই ভয়াবহ যানজট। জট বিস্তৃত হয়েছে চারদিকের ৮টি সড়কে। যানবাহনের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন ট্রাফিক পুলিশের ৬ জন সদস্য। কয়েক মিনিটে জট ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায়। গতকাল (রোববার) দুপুরে এমন চিত্র দেখা যায় চট্টগ্রাম মহানগরীর ব্যস্ততম জংশন ষোলশহর ২নং গেইট এলাকায়। ৬ মাসে আগে খুলে দেয়া মুরাদপুর ফ্লাইওভারে এখন চলছে লুপ নির্মাণের কাজ। আর এ নির্মাণ কাজের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে ফ্লাইওভারের একপাশ। অন্যপাশে ঝুঁকি নিয়ে দ্বিমুখী যানবাহন চলাচল করছে। মাঝখানে উঠানামার সুযোগ না থাকায় এমনিতেই ফ্লাইওভারে গাড়ি উঠছে কম। তার উপর একপাশ বন্ধ থাকায় যে গাড়িগুলো উপরে উঠছে সেগুলোকেও জটের কবলে পড়তে হচ্ছে। ফলে অহেতুক জট এড়াতে পারতপক্ষে ফ্লাইওভারে উঠছে না কোন যানবাহন।
ফ্লাইওভারের নিচে সড়কে যানবাহনের প্রচন্ড চাপ। ফ্লাইওভার চালুর ছয় মাস পরও চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান ওই সড়কের বিরাট অংশ সংস্কার করা হয়নি। সড়কে বড় বড় গর্ত- দেখে মনে হয় এটি বিধ্বস্ত কোন গ্রামের রাস্তা। সেখানে যানবাহন চলতে গিয়ে উল্টে যাচ্ছে। গর্তে পড়ে হোঁচট খেয়ে যাত্রীসহ আচড়ে পড়ছে রিক্সা-অটোরিকশা। বন্দর নগরীর প্রধান সড়কের ওয়াসা থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় এ বেহাল দশার কারণে তীব্র যানজট হচ্ছে। এর প্রভাবে নগরীর একাংশ স্থবির থাকছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। ওই সড়কে চলাচলকারী মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। সবার প্রশ্ন এ ফ্লাইওভার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে কবে।
প্রাক সমীক্ষা কিংবা বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের মতামত ছাড়াই মুরাদপুর ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের ‘অতি উৎসাহে’ ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শুরু করা হয় পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া। নির্মাণ কাজ শুরুর পর হঠাৎ করে ফ্লাইওভারের নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। এ কারণে প্রকল্প ব্যয়ও বাড়ানো হয় কয়েক দফা। শুরুতে নগরীর ওয়াসা থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত ৫.২ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারে মাঝখানে কোন উঠানামার ব্যবস্থা ছিল না। এর মধ্যে প্রায় ৬৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে মূল ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেয়ার মতো উঠানামার ব্যবস্থা ছাড়াই ফ্লাইওভারটি যান চলাচলের জন্য গত ১৭ আগস্ট উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
এরপর শুরু হয় উঠানামার র্যাম্প ও লুপ নির্মাণ কাজ। বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক থেকে ২নং গেইট হয়ে সানমার ওস্যান সিটি পয়েন্টে নির্মাণ করা হচ্ছে র্যাম্প ও লুপ। এর ফলে বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক হয়ে আসা যানবাহন ২নং গেইট এলাকায় ফ্লাইওভার ক্রস করে ফ্লাইওভারে উঠে যাবে। আর সানমার ওস্যান সিটি পয়েন্টে ফ্লাইওভার থেকে নিচে সড়কে নামার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এ কাজও চলছে কচ্ছপগতিতে। ২নং গেইট এলাকার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, যে গতিতে লুপ নির্মাণ কাজ চলছে তা আগামী ছয় মাসেও শেষ হবে না। ফলে ওই এলাকায় যানজটও সহজে কমবে না। তারা বলেন, ফ্লাইওভারের উপরে কিছু কাজ হলেও নিচে গত দুই মাস ধরে কোন কাজ করছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে না বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। ২নং গেইট অংশে কাজের জন্য পুরো ফ্লাইওভারের একাংশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাকি অংশে যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে। বিশেষ করে লালখান বাজারে ফ্লাইওভারে উঠার অংশে এবং মুরাদপুরে নামার অংশে দ্বিমুখী যান চলাচলের কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ওই ফ্লাইওভারে চলাচলকারী স্থানীয় ব্যবস্থায়ী মোঃ শাহনেওয়াজ আহমেদ বলেন, সড়ক থেকে ফ্লাইওভারে উঠার সময় উপর থেকে গাড়ি আসার বিষয়টি বোঝা যায় না। কিছুদূর উঠার পর কোন গাড়ির মুখোমুখি গিয়ে হঠাৎ ব্রেক কষতে হয়। এর ফলে ফ্লাইওভারের দুইপ্রান্তে দুর্ঘটনার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। ওই ঝুঁকি রোধে সিডিএ কিছু করেনি।
এদিকে ফ্লাইওভারটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হলেও ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য সড়কে যেসব গর্ত করা হয়েছিল তা এখনও ভরাট করা হয়নি। সেখানে রাস্তার কোন অস্তিত্ব নেই। এ কারণেও যানজট তীব্র আকার ধারণ করছে। স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের জন্য গত কয়েক বছর ধরে সড়কের একাংশ বন্ধ রাখায় ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠার জোগাড় হয়েছে। এখন ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হলেও র্যাম্প লুপ নির্মাণের জন্য আবার সড়ক বন্ধ রাখা হচ্ছে। ফলে যানজট থেকে মু্িক্ত মিলছে না। আবার ফ্লাইওভারেও পর্যাপ্ত গাড়ি চলছে না। ফলে এর কোন সুফলও চট্টগাম শহরবাসি পাচ্ছেন না। ফ্লাইওভারের ফিলারে ঢাউস ব্যানারে লেখা মুরাদপুর ফ্লাইওভারে ব্যয় হয়েছে ৮শ’ কোটি টাকা। ওই ব্যানার দেখিয়ে ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন বলেন, সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম লোক দেখানোর জন্য এত টাকা খরচ করলেন কিন্তু তার সুফল কই? ফ্লাইওভার চালুর পরও ওই এলাকার যানজট তো কমেনি, বরং তা আরও বেড়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদ এই ফ্লাইওভারের যৌক্তিকতা নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছিলেন তা যে যথার্থ ছিল এখন প্রমাণ হয়েছে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরীতে গড়ে উঠা এসব ফ্লাইওভারগুলোকে উন্নয়নের জঞ্জাল হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
মুরাদপুর ফ্লাইওভার প্রকল্পের পরিচালক সিডিএ’র প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, ফ্লাইওভার নির্মাণের শুরুতে সেখানে র্যাম্প ও লুপ নির্মাণের কোন পরিকল্পনা ছিল না। পরে প্রকল্প রিভাইজ করা হয়। লুপ নির্মাণের ধীরগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত। আশা করি এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে। প্রকল্প এলাকায় সিডিএর ব্যানারে ফ্লাইওভার নির্মাণ ব্যয় ৮শ’ কোটি টাকা লেখা থাকলেও বাস্তবে ৬৮০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান তিনি। ফ্লাইওভারের নিচে সড়কের বেহাল দশা সম্পর্কে প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, সড়কটি সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে।
২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর চট্টগ্রামের মুরাদপুর ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। তবে বাস্তবে এর নির্মাণকাজ শুরু হয় পরের বছরের মার্চে। শুরুতে এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৪৬২ কোটি টাকা। পরে র্যাম্প ও লুপ যুক্ত হওয়ায় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে হয় ৬৯৮ কোটি টাকা। সেই সাথে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। ফ্লাইওভারটি খুলে দেয়ার সময় সিডিএ চেয়ারম্যান বলেছিলেন ২০১৭ সালের মধ্যে সব কাজ শেষ করব। প্রকল্পটির নির্মাণকাজ চলাকালে বিভিন্ন সময় নির্মাণসামগ্রী পড়ে যানবাহনের ক্ষতি এবং শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে কয়েকবার। মহানগরীর প্রধান সড়কের গুরুত্বপূর্ণ এ অংশে বেহাল দশার কারণে তীব্র যানজটে অচল হচ্ছে বিশাল এলাকা। এতে করে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।