পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : মতিঝিল শাপলা চত্বরের কাছে যাত্রীর জন্য ডাকাডাকি করছিলেন ২/৩জন সিএনজি অটোরিকশা চালক। আগ্রহী একজন যাত্রীকে দেখে এক চালক জানতে চাইলেন, ভাই কোথায় যাবেন? আসেন ওঠেন-এই বলে চালক অটোরিকশার দরজা খুলে টেনে ধরলেন। যাত্রী সেদিকে কর্নপাত না করে জবাব দিলেন, আগে উবারের অবস্থা দেখি, তারপর বলবো। এরপর হাতের মোবাইল ফোন টিপে তিনি বললেন, ওই তো সোনালী ব্যাংকের কর্ণারেই উবার দাঁড়িয়ে আছে। অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সার্ভিস উবার ও পাঠাও-এর কারণে এভাবেই দিন দিন কমতে শুরু করেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চাহিদা। কম ভাড়ায় উন্নত সেবা, সময় বাঁচাতে এখন সিএনজির পরিবর্তে উবার ও পাঠাও-এ ঝুঁকছেন যাত্রীরা। যাত্রীদের অভিযোগ, সিএনজিচালকরা প্রায়ই জিম্মি করেই যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে থাকেন। যাত্রীদের চাহিদামাফিক তারা যেতেও চায় না। ওদিকে যাবো না, জমার সময় হয়ে গেছে –এরকম আরও কতো টালবাহানা করে। এতোদিন অনেকটা বাধ্য হয়েই যাত্রীরা সিএনজি অটোরিকশায় চড়তে বাধ্য হয়েছে। উবার চালু হওয়ায় সেই দিন আর নেই। বর্তমানে অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সার্ভিস উবার ও পাঠাও জনপ্রিয় হতে শুরু করায় সিএনজির চালকদের ট্রিপ আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। আগে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও সিএনজি চালকদের নির্দ্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে রাজি করাতে পারতো না। এখন সেই চালকরাই যাত্রীর জন্য হাঁকডাক করে। সিএনজি অটোরিকশার মালিকরাও স্বীকার করেছেন উবার ও পাঠাও-এর মতো পরিবহন বো জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করায় তাদের ট্রিপ কমে গেছে। যদিও চালকদের অভিযোগ, মালিকপক্ষ তারপরও জমার টাকা ছাড় দিতে নারাজ। বরং আগের মতোই সরকার নির্ধারিত জমার পরিমানের চেয়ে বেশি আদায় করছে মালিকপক্ষ।
সিএনজি অটোরিকশা চালকদের ভাষায়, এখন উবারের দিন। ঢাকার আকাশে উবার রীতিমতো উড়ছে। উবার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কয়েকজন চালক বলেন, হঠাৎ করে নিয়মনীতি ছাড়াই ঢাকার রাস্তায় উবার নামানো হয়েছে। উবার-পাঠাও কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছে, যে কারনে সিএনজি অটোরিকশার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন যাত্রীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও ট্রিপ পাওয়া যায় না। বিশেষ করে রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে সিএনজির কোনো চাহিদাই নেই। রাজধানীর প্রবেশ মুখে কিছুটা চাহিদা থাকলেও সেখানে আবার ঢাকার বাইরের অটোরিকশার দাপট। এতে করে দিন শেষে তাদের জমার টাকা পর্যন্ত তোলা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
গতকাল শনিবার শনিরআখড়া এলাকায় ভাড়া পাওয়ার আশায় অপেক্ষারত সিএনজিচালক আবদুল মালেক বলেন, উবার-পাঠাও-এর কারণে আমাদের ট্রিপ আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। কোনো কোনো দিন জমার টাকাটাও ওঠে না। আবদুল মালেকের অভিযোগ, সিএনজিতে যেখানে ৫০০ টাকা ভাড়া আসে, সেখানে উবার-পাঠাও ১০০-২০০ টাকায় যাত্রী পরিবহন করছে। এতে করে সিএনজির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন যাত্রীরা। উবার-পাঠাও সরকারের অনুমতি ছাড়া কার্যক্রম চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। আর তারা সরকারকে সব ধরনের খরচ দিয়েও ট্রিপ পাচ্ছেন না। অধিকাংশ সিএনজি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছে।
একই প্রসঙ্গে তমা ট্যাক্সির চালক মোবারক বলেন, গত শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত মাত্র ২৪০ টাকার ট্রিপ মেরেছি। একই পরিবহনের আরেক চালক জাহাঙ্গীর বলেন, যেখানে সেখানে গাড়ি রাখা নিয়ে আমাদের নানা ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়। আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে সুবিধামতো উবার-পাঠাও এসে যাত্রী নিয়ে চলে যায়। মীরহাজিরবাগ এলাকার সিএনজিচালক বশির বলেন, আগের চেয়ে এখন ট্রিপ (ভাড়া) অনেক কমে গেছে। মানুষ উবারে বেশি যাতায়াত করছে। অটোরিকশা চালক বশির বলেন, আমাদের অবস্থা অনেক খারাপ। সারা দিনে চার থেকে পাঁচটা ট্রিপ পাই এখন। তাও অনেক কষ্টে। কিন্তু আগে সকাল থেকে সারা দিন খাটলে অনেক ট্রিপ পাওয়া যেত। তার ভাষায়, সিএনজিতে গরম লাগে, ধুলাবালি লাগে। আর উবারে এসি লাগানো ভালো গাড়ি, অল্প ভাড়ায় চলে, তাই মানুষ এখন উবারেই ওঠে। জানতে চাইলে ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, উবার-পাঠাও আসার পর থেকে সিএনজি অটোরিকশার ট্রিপ কমে গেছে। কিন্তু মালিকপক্ষ তাদের জমার টাকা কমায়নি। এতে করে চালকরা বিপদে পড়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, চালকরা এতোদিন যে স্বেচ্ছাচারিতা করেছে এজন্যও মালিকপক্ষই দায়ী। ৬শ’ টাকার স্থলে ৯শ’ টাকা জমা নিয়ে মালিকরা চালকদের স্বেচ্ছাচার হতে বাধ্য করেছে।
উবার ও পাঠাও-এর অ্যাপভিত্তিক সেবার কারণে সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রীসংখ্যা কমেছে, তা স্বীকার করলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারাও। তবে তারা অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবার বিরুদ্ধে নন। বরং ওই ধরনের সেবায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাকেও অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন নেতারা। ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব সাখাওয়াত হোসেন দুলাল বলেন, অ্যাপের কারণে অটোরিকশাচালকরা কম যাত্রী পাচ্ছেন। তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ চলার কার্যক্রম চলছে। আমরা অ্যাপের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু এসব অ্যাপের কোনো নীতিমালাও নেই। নীতিমালা করে সিএনজিচালিত অটোরিকশাকেও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এতে গরীব চালকরা উপকৃত হবে। তিনি আর বলেন, অটোরিকশাচালকরা অনেক কষ্টে জীবনযাপন করে। মালিককে জমার টাকা দিতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হয়। ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, আমরা কোনোভাবেই উবার বা পাঠাও সার্ভিসের বিপক্ষে না। তবে আমরা চাই এ সংক্রান্ত একটা নীতিমালা করা হোক। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।