Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিশ্ব ইস্তেমা : দা’ওয়াত ও তাবলীগ

মুফতী মো: আবদুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সূচনা: আরবী ‘ইস্তেমা‘ শব্দটির বাংলা অর্থ হচ্ছে,শ্রবণ-শোনা, মনোযোগসহ শ্রবণ। আর ‘ইজতেমা’ মানে হচ্ছে, সম্মিলন, সাক্ষাৎ, বৈঠক, সভা, সমাবেশ, সম্মেলন, সমাজ, সমাজবদ্ধতা, সামাজিকতা, সমাজজীবন।
শব্দ দু’টির অর্থের প্রতি মনোযোগ দিলে ‘বিশ্ব ইস্তেমা’ ও ‘বিশ্ব ইজতেমা’-বাক্যদ্বয়ের মর্মার্থ বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। অর্থাৎ বিশ্ব মুসলিমের মনোযোগসহ শোনার বিষয় বা অনুষ্ঠান; বিশে^্বর মুসলমানদের সম্মিলন বা সম্মেলন বা সভা-সমাবেশ-বৈঠক। তবে ‘ইস্তেমা’-এর স্থলে ‘ইজতেমা’ শব্দটি অধিক উপযোগী। এ ছাড়া, যেহেতু পরিচিত বিশে^র অনেক বা বেশিরভাগ দেশই এতে অংশগ্রহণ করে, তাই এটিকে ‘বিশ্ব ইজতেমা’ বলতে অবাস্তব বা দোষের কিছু নেই।
দা‘ওয়াত: ‘দা‘ওয়াত’ আরবী শব্দটির অর্থ হচ্ছে, ডাক, আহবান ও প্রচার। ‘তাবলীগ’ শব্দটিও আরবী। এর মানে হচ্ছে, প্রচার, ঘোষণা বা পৌঁছে দেওয়া, ‘দ্বীনী দা‘ওয়াত’ তথা ধর্মের বাণী প্রচার করা বা পৌঁছে দেওয়া। সুতরাং সহজবোধ্যভাবে আমরা বলতে পারি, “‘দা‘ওয়াত ও তাবলীগ’ মানে ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসার এবং ইসলামের বাণী-পয়গাম সারা বিশে^্ব্বশ্বে পৌঁছে দেওয়া, ছড়িয়ে দেওয়া।”
প্রসঙ্গ কথা: ইসলাম ধর্মের মৌলিক ও সেবামূলক যত কাজ আমরা করে থাকি তার সবগুলোর উদ্দেশ্যই হচ্ছে, মুসলমানদের ঈমান-আমল, তাকওয়া-পরিশুদ্ধি, সততা ও যোগ্যতা অর্জিত হয়ে যেন আমরা ইহকাল ও পরকাল উভয় জাহানে সফল ও সোনার মানুষ হতে পারি। আর এ লক্ষ্যে পরিচালিত মসজিদ-মাদরাসা,খানকা,নায়েবে নবী,হাক্কানী আলেমগণ,ওলী-আউলিয়া,পীর-মাশায়েখ,ইমাম-খতীব-বক্তা ও দা‘ঈগণ-এক কথায় সকলের মেহনত,তৎপরতার অবদান ও সফলতা অনস্বীকার্য এবং কমবেশি সকলেই প্রশংসারযোগ্য। অবশ্য, এটি লক্ষণীয় যে, এঁদের সকলের ঈমান-আমল-তাকওয়া ও খাঁটি মুসলমান বানানোর যৌথ মেহনতের পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষার সঙ্গে জড়িতরা মৌলিক দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার দিকটিকে যেমন প্রাধান্য দিয়ে থাকেন তেমনি পীর-মাশায়েখগশ্ব্মেশুদ্ধি ও আল্লাহ্র পরিচয়-প্রেম-ভালোবাসাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। একইভাবে তাবলীগ সংশ্লিষ্টরা ‘দা‘ওয়াত’-এর মেহনতের প্রতি অধিক জোর দিয়ে থাকেন। মহান আল্লাহ্ সকলের মেহনত ও সেবাকে কবূল করুন!
বাস্তবতার নিরীখে বিচার করতে গেলে বলতে হবে যে, বর্তমানকার ‘দা‘ওয়াত ও তাবলীগ’ নামের পরিচিত যে-জামাতকে আমরা জানি ও চিনি। এদের মেহনত-তৎপরতার ব্যাপকতার পাশাপাশি, অল্প সময়ে, সকল মহলে, এতো অধিক সংখ্যক মুসলমানের ঈমান-আমল-তাকওয়ার দিকে পরিবর্তন, সুন্নাত-নফলের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি, সত্যিই আল্লাহ্ তা‘আলার বিশেষ দান।
তারপরও, পুরো কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা‘ ও কিয়াসকে সামনে রেখে শরীয়তের মাপকাঠিতে ‘তাবলীগ’ বিষয়টিকে, আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে।
তাবলীগ-এর প্রয়োজনীয়তা: মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বাণী অনুযায়ী যেহেতু মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) সর্বশেষ নবী। তাঁর পরে আর কোন নবী-রাসূল আসবেন না; অথচ তাঁর প্রতি অবতীর্ণ ‘সর্বশেষ ধমর্’ এবং এই ধর্মের যাবতীয় বিধি-বিধান সম্বলিত সর্বশেষ আসমানী গ্রন্থ ‘আল-কুরআন’ কিয়ামত পর্যন্ত আগত তামাম বিশ^বাসীর হিদায়েত প্রাপ্তির সর্বশেষ মূল উৎস। তাই এ ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থের বাণী,তার আহবান বিশ^ মানবতার দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়া এবং এর প্রচার-প্রসার একমাত্র ‘দাও‘য়াত ও তাবলীগ’ এর মাধ্যমেই সম্ভব। এ থেকে, দা‘ওয়াত ও তাবলীগের প্রয়োজনীয়তা ও তাৎপর্য সহজেই অনুমেয়।
তাবলীগ ও আল-কুরআন: পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআনের নি¤েœাক্ত আয়াতগুলোর প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করলে, আমরা দা‘ওয়াত ও তাবলীগের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আরও অধিক উপলব্ধি করতে পারবো। উদাহরণত:
(১) আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন, “তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানব জাতির (কল্যাণের) জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে; তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে, অসৎকাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহ্র ওপর বিশ্বাস রাখবে।(০৩:১১০)
(২) তিনি আরও ইরশাদ করেন,“তোমাদের মধ্যে এমন একদল থাকতে হবে,যারা ভালো কাজের দিকে আহবান করবেএবং সৎকর্মের নির্দেশ দিবে ও অসৎকর্মে নিষেধ করবে; আর এরাই সফলকাম”।(০৩:১০৪ )
(৩) মহান আল্লাহ আরও বলেন,“ওই ব্যক্তি অপেক্ষা কথায় কে উত্তম, যে (মানুষকে) আল্লাহ্র দিকে আহবান করে,নেক আমল করে এবং বলে, ‘আমি তো অনুগতদের অন্তভর্‚ক্ত’।”(৪১:৩৩)
(৪) তিনি আরও বলেন, “আপনি উপদেশ দিতে থাকুন, কারণ উপদেশ মু’মিনদের উপকারে আসে।”(৫১:৫৫)
(৫) তিনি আরও বলেন, “আর আপনি আপনার পরিবার-পরিজনকে নামাযের আদেশ দিন এবং তাতে নিজেও অবিচল থাকুনÑ।”(২০:১৩২)
Ñউপরিউক্ত সবগুলো আয়াত থেকেই আল্লাহ্র দিকে আহবান করা, কল্যাণের দিকে ডাকা, সৎকাজে আদেশদান, অসৎকাজে নিষেধ করা, নামাযের নির্দেশদান ইত্যাদি যা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছেÑএসবই প্রকারান্তরে ‘দা‘ওয়াত ও তাবলীগ’-এর অন্তর্গত।
তাবলীগ-এর প্রকারভেদ: উল্লেখ্য, ব্যক্তি ও অবস্থাভেদে ‘সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ’-এর দায়িত্ব অর্থাৎ ‘তাবলীগ’ করা ফরয।(আহসানুল ফাতাওয়া:খ-১,পৃ-৫১২) এ ‘ফরয’ মৌলিক বিবেচনায়, অর্থাৎ সত্য-সঠিক ধর্ম ‘ইসলাম’, বিশ^মানবতার জন্য বিশ^প্রভুর একমাত্র মনোনিত জীবনব্যবস্থা, তিনি তা মহাপ্রলয় পর্যন্ত বাকী রাখবেন,অক্ষুন্ন রাখবেনÑএই তাবলীগ এর মাধ্যমেই। সুতরাং তা ফরয হওয়াই স্বাভাবিক ও যৌক্তিক। তবে অবস্থাভেদে উক্ত দায়িত্ব পালনে তারতম্য হতে পারে যেমন, ফরযের তাবলীগ ফরয, ওয়াজিবের তাবলীগ ওয়াজিব, সুন্নাতের তাবলীগ সুন্নাত ও নফলের তাবলীগ নফল। একইভাবে ব্যক্তি পর্যায়ে যিনি যতটুকুর সহীহ জ্ঞান রাখেন, তার ওপর ততটুকুর তাবলীগ করা জরুরী; এবং সামর্থ অনুসারে নিজের অধীনস্থ, আওতাভুক্ত বা আওতা-বহিভর্’তক্ষেত্রে ও পরিবেশের বিবেচনায় ‘তাবলীগ’ ফরযও হতে পারে, ওয়াজিবও হতে পারে, সুন্নাত-মুস্তাহাবও হতে পারে। আবার সহীহ জ্ঞান না থাকলে বা যথাযথ পন্থা-পদ্ধতি অজ্ঞাত হলে কিংবা স্থান-কাল-পাত্রের বিবেচনা করার মত যোগ্যতা-অভিজ্ঞতা না থাকলে কিংবা হিতে বিপরীত হওয়ার মত পরিবেশ হলে; সেক্ষেত্রে বরং তাবলীগ না করাই বিধেয় হবে।
‘ফরয তাবলীগ’ দু’প্রকার। যথা: (১) ‘ফরযে আইন’ ও (২) ‘ফরযে কিফায়া’।
¦‘ফরযে আইন তাবলীগ’ হচ্ছে ওই তাবলীগ যা প্রত্যেক মুসলমানকে করতে হয়। আর তা প্রযোজ্য হয়ে থাকে নিজ অধীনস্থ ও পরিবারস্থদের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ যাদের ভালোমন্দ দায়-দায়িত্ব, জবাবদেহিতা এবং ভরণ-পোষণ ইত্যাদি নিজের ওপর বর্তায়। উদাহরণত, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা প্রমুখ অথবা পরিবার-সমাজ,অফিস-আদালত,দেশ-জাতি-রাষ্ট্রের যে যে-ক্ষেত্রে তার দায়-দায়িত্ব আছে; এবং যেখানে যারা তার অধীনস্থ আছে বা তার নিজের সংশ্লিষ্টতা আছেÑতাদের ক্ষেত্রে ‘ফরযে আইন’ প্রযোজ্য হয়ে থাকে।
‘ফরযে কিফায়া তাবলীগ’ হচ্ছে ওই তাবলীগ যা সরাসরি উপরিউক্তভাবে ব্যক্তির নিজের ওপর বর্তায় না বটে; তবে পরোক্ষভাবে প্রতিবেশী হিসাবে, সমাজ হিসাবে,স্বজন হিসাবে; দেশের স্বার্থে, দশের স্বার্থে সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ তথা তাবলীগ করা ‘ফরযে কিফায়া’ হিসাবে প্রযোজ্য ও দায়িত্বভুক্ত হয়ে যায়; এবং তার প্রয়োজনীয় শক্তি-সামর্থও বিদ্যমান থাকে।
অসৎকাজে নিষেধও ফরয: গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে, কুরআন ও হাদীসের প্রায় সর্বত্রই ‘সৎকাজের আদেশের পাশাপাশি অসৎকাজে নিষেধের নির্দেশ সমান্তরালে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং ‘অসৎকাজে নিষেধ’ বাদ দিয়ে কেবল সৎকাজে আদেশদানের তাবলীগ করলেই উক্ত পারিবারিক, সামাজিক,রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় ফরয দায়িত্ব পালিত হয়েছে বলে গন্য হবে না। দুটি দায়িত্বই পাশাপাশি চালিয়ে যেতে হবে। অবশ্য অসৎকাজে নিষেধ-এর তাবলীগ কালীন, এই-( “আপনি মানুষকে আপনার প্রতিপালকের পথে প্রজ্ঞা-কৌশলের মাধ্যমে এবং উত্তম উপদেশ দ্বারা আহবান করুন”(১৬:১২৫)-আয়াতখানার আলোকে ন¤্রভাবে,দয়াদ্র হয়ে,সংশ্লিষ্টদের কল্যাণ চিন্তায়, কৌশলী পন্থা অবলম্বন করে তাবলীগ করতে হবে। সুতরাং এমন চিন্তা ও বক্তব্য যে,-“অসৎকাজে নিষেধ করতে গেলে হিংসা, হঠকারিতা ও অসন্তোষ জন্ম নিতে পারে; তাই কেবল সৎকাজে আদেশদানের মধ্যেই তাবলীগকে সীমীত রাখতে হবে”- এমন ধারণা আদৌ সঠিক নয়।(প্রাগুক্ত:৫১৩পৃ.)
অসৎকাজে নিষেধ-তাবলীগ-এর দ্বিবিধ পদ্ধতি: ওপরে বলা হয়েছে যে, যেসব লোকজন আপনার দায়িত্বে ও অধীনস্থে রয়েছে, যেমন স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ও চাকুরে প্রমুখ। এদের পাপ,অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার জন্য যথাসাধ্য,সম্ভাব্য সব উপায়ে চেষ্টা চালানো ফরয। কিন্তু যারা আপনার অধীনস্থ নয়, তাদের পাপ-অপরাধ থেকে ফেরানো সকলের পক্ষে ফরয নয়; তা বরং ফরযে কিফায়া। তেমন লোকদের অসৎকাজে নিষেধের তাবলীগ করার দু’টি পদ্ধতি রয়েছে: (১) বিশেষ সম্বোধন, ও (২) ব্যাপক সম্বোধন।
বিশেষ সম্বোধন: কোন লোক যদি এমন হয় যে, তার সঙ্গে আপনার এমন খোলামেলা সম্পর্ক যে,আপনি যদি তাকে কোন গুনাহ-পাপকার্যে লিপ্ত দেখে সতর্ক করেন, তা হলে সে অসন্তুষ্ট না হয়ে বরং খুশি হবে এবং আপনার সতর্ক করার দরুন,আপনি তার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন বলে, মনে করবে। তা হলে তেমন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পাপকর্মে জড়িত দেখলে, তাকে সরাসরি বিশেষ সম্বোধনের মাধ্যমে অপরাধ থেকে বাধাদান আপনার জন্য ফরয হিসাবে গন্য হবে। কিন্তু কারও সঙ্গে যদি তেমন খোলামেলা সম্পর্ক না থাকে কিংবা অজানা-অচেনা হয়; তা হলে তেমন লোককে বিশেষ সম্বোধনের দ্বারা পাপ থেকে বাধাদান ফরযও নয়, উচিতও নয়।
এমন লোক বাহ্যিকভাবে যদি ধার্মিক হয়, তা হলে আপনার তাবলীগে তার অসন্তোষ জন্ম নেবে এবং আপনার প্রতি তার অন্তরে ক্রোধ ও শত্রæতা জন্ম নেবে; এবং সে তার পাপকর্মের ভুল ব্যাখ্যাও দিতে শুরু করবে।
যদি লোকটি বাহ্যিকভাবে ধার্মিক না হয় এবং ধার্মিকদের প্রতি তার অন্তরে কিছুটা সম্মানবোধ থাকে তা হলে আপনার তাবলীগে তারও কিছুটা অসন্তোষ জন্ম নেবে; কিন্তু অন্তরে কিছুটা সম্মানবোধ থাকায় মুখে সে কিছু বলবে না; কিন্তু তার অন্তর থেকে ধার্মিকদের প্রভাব চলে যাবে এবং সে আগামীতে ধার্মিকদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে। কেননা,তার অন্তরের বক্তব্য হবে, ‘এরা কেবল কথায়-কথায়,পদে-পদে ভুল ধরে, বারণ করে’! আর যদি লোকটি ধর্ম-কর্ম থেকে এমন দূরে হয় যে, তার অন্তরে ধর্ম ও ধার্মিক লোকদের ব্যাপারে কোন সম্মানবোধ ও প্রভাব না থাকে; তা হলে সে আপনার তাবলীগ শুনে তাৎক্ষণিক এমন কুফরী কথা বলে উঠবে যে, তার ঈমানটুকুই চলে যাবে। যেমন কাউকে আপনি দাড়ি রাখার তাবলীগ করলেন, এতে সে বলে উঠলো, “যাও এটা তো মৌলবীদের কাজ!” কিংবা বলে উঠলো, “আরে দাড়ি রাখলে তো চেহারাটা ছাগলের ন্যায় হয়ে যায়!”-তা হলে সে তাৎক্ষণিক কাফির হয়ে গেল এবং আপনি তার কুফরির কারণ হয়ে যাবেন!
ব্যাপক সম্বোধন: অসৎকাজে নিষেধের তাবলীগ-এর দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে, লোকজনের একত্র অনুষ্ঠানে সমাজে ছড়িয়ে পড়া পাপ-অন্যায় কর্মের ক্ষতি, অপকারিতা, পরিণাম ভালো করে বয়ান করে দেবে। তবে ওই ব্যাপক সম্বোধনেও এ বিষয়টির প্রতি যতœবান থাকা অত্যন্ত জরুরী, যেন বক্তব্য উপস্থাপন এমন কঠোর ও সমালোচনাকেন্দ্রিক না হয় যে, শ্রোতাদের মনে ঘৃণার জন্ম হয় এবং তারা অপমান বোধ করে। বরং উপস্থাপন ও সম্বোধন মহব্বত, স্নেহ ও আবেগঘন অন্তরে হওয়া চাই। তার কারণ, অন্তরের দরদমাখা কথায় প্রভাব অধিক হয়ে থাকে।(প্রাগুক্ত: খ-৯,পৃ-১১১-১১২)
‘তাবলীগ ও শাস্তি’: অসৎকাজে নিষেধের তাবলীগ করতে গিয়ে কখনও সাজা-শাস্তি,শাসনের প্রয়োজন দেখা দেয়, তা হলে কি তেমন প্রয়োজনে কাউকে শাস্তি দেওয়া জায়েয হবে? তার জবাব হচ্ছে, পাপকাজ থেকে বিরত রাখার জন্য যে-কেউ যাকে ইচ্ছা, তেমন শাস্তি প্রদান জায়েয হবে না। যে-কারণে প্রচলিত তাবলীগ জামাতেও তেমন শাস্তির কোন ব্যবস্থা নেই। তবে ‘ফরযে আইন’ তাবলীগের ক্ষেত্রে যাদের দায়-দায়িত্ব নিজের ওপর বর্তায় তাদেরকে ‘তা‘যীর’ প্রকৃতির সাধারণ কিছু সমীচীন শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। উদাহরণত,পিতা-মাতার পক্ষে নিজ নাবালক সন্তানকে, স্বামীর পক্ষে স্ত্রীকে,শিক্ষকের পক্ষে ছাত্রকে এবং শায়খ বা পীরের পক্ষে মুরীদকে। যেমন অবস্থা বুঝে কিছু বকাঝকা, শরীয়তের সীমার ভেতরে থেকে হাল্কা প্রহার ইত্যাদি। এতেও আবার শর্ত হচ্ছে, নিয়ত একান্ত বিশুদ্ধ হতে হবে। একমাত্র মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা উদ্দেশ্য হতে হবে। এমনটি হতে পারবে না যে, তার প্রতি ক্রোধান্বিত অন্য কোন কারণে; অথচ শরীয়তের তেমন বৈধতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করা হচ্ছে!-এমনটি যেন না হয়।
উক্তসব সম্পর্ক ও স¦জন ব্যতীত অন্য কারও পক্ষে তাবলীগ করতে গিয়ে অপরাধী বা অভিযুক্তকে, কোন প্রকার শাস্তিদান জায়েয নেই। আর শাস্তি যদি ইসলামী শরীয়তের ‘হুদূদ’ তথা দন্ডবিধি প্রকৃতির হয়, তা হলে তেমন শাস্তিদান রাষ্ট্র ও প্রশাসন ব্যতীত কারও পক্ষেই জায়েয নেই। (চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ