Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্ধু নির্বাচনে ইসলামের নির্দেশনা

ড. মোহাঃ এমরান হোসেন | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মানুষ সামাজিক জীব। সঙ্গবদ্ধভাবে বাস করা মানুষের স্বভাব। তাই সুখে-দুঃখে, আপদে-বিপদে সকল ক্ষেত্রেই সে তার পাশে মানুষ চায়, বন্ধু চায়। মার্ক টোয়েনের একটি উক্তি হল-“যে কোন মানুষের ক্ষেত্রে তার বন্ধু তার জন্য সম্পদ স্বরূপ।” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন-“গোলাপ যেমন একটি বিশেষ জাতের ফুল, বন্ধুও তেমন একটি বিশেষ জাতের মানুষ।” কিন্তু কখনো কখনো মানুষের বন্ধু তার জন্য সম্পদ না হয়ে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একজন উত্তম বন্ধু যেমন উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিতে পারে, তেমনি একজন অসৎ বন্ধু ধ্বংসের চুড়ান্ত সীমায় নিয়ে যেতে পারে। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তি তার চতুর্পাশের মানুষের আচার-আচরণ ও স্বভাব-চরিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। এই জন্যই বাংলায় একটি প্রবাদ বাক্য প্রসিদ্ধি লাভ করেছে-“সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ”। তাই যাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা হবে তাকে আগেই যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। এ বিষয়ে নবী (স.) এর জবানীতে অনেক মূল্যবান উক্তি বর্ণিত হয়েছে।
বন্ধু নির্বাচন সম্পর্কে এক হাদীছে নবী (স.) বলেন- “একজন ব্যক্তি তার বন্ধুর মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন খেয়াল রাখে সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে।” (সুনানুত তিরমিযী, হাদীছ নম্বর- ২৩৭৮, সুনানু আবী দাউদ, হাদীছ নম্বর- ৪৮৫০, মুসনাদু আহমাদ, হাদীছ নম্বর- ৮৪১৭, আল মুসতাদরাক ‘আলাস সাহীহায়ন, হাদীছ নম্বর-৭৩১৯ ও ৭৩২০)। বিশিষ্ট তাবিঈ আবূ কিলাবা একজন কবির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন- “কোন ব্যক্তির (আচরণ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর না। বরং তার সাথী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর। প্রত্যেক ব্যক্তিই তার সাথীর রঙে রঙীন হয়।” (মুসান্নাফু ইবন আবী শায়বাহ, হাদীছ নম্বর-২৬১০৪)।
প্রতিবেশী মানুষের বড় বন্ধু ও সঙ্গী। এ বিষয়েও নবী (স.) সকলকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন- “গৃহ নির্মানের পূর্বেই প্রতিবেশী সম্পর্কে খোঁজ-খবর নাও। আর কোন রাস্তায় চলবে তা নির্ণয় করার আগেই কার সাথে চলবে তা অন্বেষণ কর।” (আল মু‘জামুল কাবীর, হাদীছ নম্বর-৪৩৭৯, কানযুল ‘উম্মাল, হাদীছ নম্বর-৪১৪৯৫)।
ভাল লোকের সাথে চললে কিছু না কিছু উপকার হবেই। আবার খারাপ লোকের সাথে চললে কিছু না কিছু ক্ষতি হবেই। নবী (স.) এক হাদীছে এর একটি সুন্দর উদাহরণ পেশ করেছেন। তিনি (স.) বলেন- “সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হল আতরওয়ালা এবং হাফরে ফুকদানকারীর (কামারের) মত। আতরওয়ালা হয়ত তোমাকে কিছু দান করবে অথবা তুমি তার নিকট থেকে কিছু ক্রয় করবে অথবা তার নিকট থেকে তুমি এমনিতেই সুগন্ধি লাভ করবে। অপরপক্ষে কামারের ভাট্টি তোমার কাপড় পুড়িয়ে দিবে অথবা তার থেকে তুমি দুর্গন্ধ লাভ করবে।” (সাহীহুল বুখারী, হাদীছ নম্বর-৫২১৪)।
অসৎ বন্ধু ইহলোকেও কাজেও আসবে না এবং পরকালেও কাজে আসবে না। অসৎ বন্ধু পরকালে শত্রুতে পরিণত হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন- “সে দিন (কিয়ামতের দিন) মুত্তাকীরা ছাড়া সব বন্ধু একে অপরের দুশমন হয়ে যাবে।” (সূরাতুয যুখরুফ ঃ ৬৭)।
কোন ভাল লোক যদি অসৎকর্মের লোকদের সাথে চলাফেরা করে তবে কিয়ামতের দিন তাকেও তাদের কাতারে দাঁড়াতে হবে। এ বিষয়ে এক হাদীছে নবী (স.) বলেন- “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কর্মকে পছন্দ করল, কিয়ামতের দিন সে তাদের দলভূক্ত হয়েই উত্থিত হবে এবং সেও তাদের কর্মকান্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে, যদিও সে নিজে তা করেনি।” (কানযুল ‘উম্মাল, হাদীছ নম্বর-২৪৭৩০)।
কাজে ভাল মানুষ না পাওয়া গেলে সহচর গ্রহণ না করে একাকী চলা উত্তম। বিশিষ্ট সাহাবী আবূ মূসা আল আশ‘আরী ও আবূ জার আল গিফারী (রা.) থেকে বর্ণিত, তারা বলেন-“একাকী থাকার চেয়ে সৎ সঙ্গীর সঙ্গে থাকা উত্তম। তবে অসৎ সঙ্গীর চেয়ে একাকী থাকা উত্তম।” (মুসান্নাফু ইবন আবী শায়বাহ, হাদীছ নম্বর-৩৫৯৬৫, আল মুসতাদরাক আলাস সাহীহায়ন, হাদীছ নম্বর- ৫৪৬৬, শু‘আবুল ঈমান লিল বায়হাকী, হাদীছ নম্বর-৪৯৯৩।
তবে খারাপ মানুষকে ভাল করার উদ্দেশ্যে তার সাথে মেলা-মেশা অতি উত্তম কাজ। তার সাথে চলতে গেলে অনেক ত্যাগ ও ধৈর্যের প্রয়োজন হবে এবং এটি অত্যন্ত পুন্যের কাজ হবে। এক হাদীছে নবী (স.) বলেন-“যে মুসলিম মানুষের সাথে মিশে এবং মিশতে গিয়ে কষ্টের শিকার হয়ে ধৈর্য ধারণ করে সে ঐ মুসলিমের চেয়ে উত্তম যে, মানুষের সাথে মিশেও না এবং এ পথে কষ্টের শিকার হয়ে ধৈর্যও ধারণ করে না।” (শু‘আবুল ঈমান লিল বায়হাকী, হাদীছ নম্বর- ৯৭৩০, কানযুল ‘উম্মাল, হাদীছ নম্বর- ২৪৭৩৮)।
বর্তমান সময়ে অসৎ সঙ্গে মিশে অনেকের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। হিরোইন, ইয়াবা ইত্যাকার জীবন বিনাশী মাদকদ্রব্যের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। অসৎ নারীদের সাথে অবৈধ যৌন সংশ্রবে গিয়ে এইডস নামক মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বহু শিক্ষার্থী বিপদগামী হচ্ছে। কোমলমতি একজন শিক্ষার্থী মাদকাশক্তিতে জড়িয়ে শুধু নিজের জীবন নয়, বরং একটি পরিবার এমনকি একটি মহল্লাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। নামী-দামী পরিবারের অনেক সন্তান সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে। কাজেই প্রতিটি অভিভাবকের উচিৎ তাদের সন্তানদের প্রতি নজর দেওয়া যে, তারা কোথায় যাচ্ছে, কখন যাচ্ছে, কখন বাড়ি ফিরছে এবং কোন ধরনের ছেলে-মেয়ের সাথে ঘুরছে।



 

Show all comments
  • Arzuman Rima ১৭ মার্চ, ২০২১, ৭:২৫ পিএম says : 0
    সাথী
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ