Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আপনাদের জিজ্ঞাসার জবাব

| প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

প্রশ্ন : মহাবীর খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) সম্পর্কে জানতে চাই?
উত্তর : ইসলামের ইতিহাসে মহাবীর খালিদ ইবনে ওয়ালিদ ছিলেন আরবের প্রখ্যাত কুরাইশ বংশের সম্ভ্রান্ত শাখা বনী মখজুমের কৃতি সন্তান। তিনি উম্মত-জননী হজরত মায়মুনা (রা.)- এর নিকটাত্মীয় ছিলেন। ৫ হিজরির শেষ ভাগে মদিনায় হাজির হয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে। খালিদ ইবনে ওয়ালিদের রক্তে বংশগতভাবেই সংগ্রামী তেজস্বিতা বিদ্যমান ছিলো। সে কারণেই তিনি ইসলামে দীক্ষিত হবার আগেই ঐ সময়ের অপরাজেয় বীর যুদ্ধা ছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহৎ যুদ্ধ ওহুদে তিনিই মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন।
ইসলামের পক্ষে অনেকগুলি যুদ্ধের ভেতর সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ অভিযান ছিলো মুতার যুদ্ধ। আরব সীমান্তের বাইরে এটি ছিলো সর্বাপেক্ষা ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্ববহ অভিযান। এতে হজরত যায়েদ ইবনে হারেসা (রা.), হজরত জাফর তাইয়াব (রা.), এবং হজরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.) এই তিনজন সেনাপতি একেরপর এক শহিদ হন। এরপর হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) সেনাপতির গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করে হতাশাগ্রস্ত মুসলিম বাহিনীকে সমূহ বিপর্যয়ের হাত থেকে সম্মানজনকভাবে সরিয়ে আনতে সক্ষম হন। এই যুদ্ধের মাধ্যমেই মুসলিম বাহিনীর বহির্জগতে অগ্রাভিযানের সূচনা হয়। হজরত খালিদ (রা.)-এর এই কৃতিত্বে প্রিয়নবী (সা.) অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং তাকে ‘সাইফুল্লাহ’ বা আল্লাহর তরবারি উপাধিতে ভূষিত করেন। পরবর্তীতে তায়েফ, হুনাইন, তাবুক ও ইয়ামান অভিযান প্রধানত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)- এর নেতৃত্বেই সুসম্পন্ন হয়।
রাসুল (সা.)-এর সময়ে হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-এর নেতৃত্বে প্রেরিত যুদ্ধ অভিযানগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ ছিলো ‘উজ্জা’ নামক প্রধান প্রতিমার স্থান ধ্বংস করার দুঃসাহসিক অভিযান। উজ্জা ছিলো কুরাইশ এবং কেনানি গোত্রের একটি প্রধান উপাস্য প্রতিমা। এটি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে প্রিয়নবী (সা.) খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) কে নির্দেশ দেন। একদল মুজাহিদ সঙ্গে নিয়ে হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) সে স্থানটি ধ্বংস করে ফেললেন। রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি সেখানে কিছু দেখতে পেয়েছো? খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) বললেন, ‘না, তেমন কিছু তো দৃষ্টিতে পড়েনি। নবী কারিম (সা.) বললেন, এটি পরিপূর্ণভাবে উৎখাত করা হয়নি। তুমি পুনরায় যাও। মুজাহিদ বাহিনী এবার গিয়ে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ভাংচুর শুরু করলে এক ভয়ংকর আকৃতির স্ত্রীলোক প্রকাশ পেলো। হজরত খালিদ (রা.) তাকে তরবারির এক আঘাতেই হত্যা করে ফেললেন। ফিরে এসে এ ঘটনা বর্ণনা করলে রাসুল (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, এবার তা পূর্ণভাবে উৎখাত হয়েছে।
মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রা.)- এর খেলাফতকাল শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গে একাধিক ভন্ডনবীর আবির্ভাব ঘটে। এদের মধ্যে দুর্ধর্ষ এক গোত্রের সর্দার ছিলো তোলায়হা। তাকে দমন করার লক্ষ্যে হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) কে প্রেরণ করা হয়। তোলায়হার বাহিনী ছিলো খুবই দুর্ধর্ষএবং ভয়ংকর প্রকৃতির। খালিদ (রা.) এদের পরিপূর্ণ উৎখাত করে নবুওয়তের সর্বাপেক্ষা বড় মিথ্যা দাবিদার মুসায়লামাতুল কাজ্জাবের বিরুদ্ধে প্রেরিত বাহিনীর সঙ্গে শরীক হন। পথিমধ্যে আর এক ভন্ডনবী মোজায়নাকেও গ্রেফতার করে মদিনায় নিয়ে আসেন। ভন্ড নবুওতের দাবীদারদের পাশাপাশি মুরতাদ-বিদ্রোহীদের দমনে হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) পরিচালিত সকল অভিযান সফল হয়।
উত্তর দিচ্ছেন : মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ