পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তদন্ত কমিটি হলেও কমিটির সদস্যদের অপারগতা প্রকাশ
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নারী রোগীকে নির্যাতন, অবহেলায় রোগীকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়াসহ নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে থানায় পৃথক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং মামলা করা হয়েছে। এমনকি স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগসমূহ তদন্তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হাসপাতাল প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করলেও অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্তে অপারগতা প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্যরা। জানা গেছে, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর মিন্টুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে রোগীদের পক্ষ থেকে নানা অভিযোগ করা হয়। এর মধ্যে নারী রোগীকে কক্ষে নিয়ে লাঞ্ছিত করা, অবহেলায় রোগীর মৃত্যু ঘটানো উল্লেখযোগ্য। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সমীর কান্তি সরকার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. হুমায়ুন কবির মিন্টুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দাখিল করার অনুরোধ জানানো হয়। গত ১৯ নভেম্বর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ তদন্ত করে তারিখ, সময় ও স্থান অভিযুক্তসহ অন্যান্যদের অবহিত করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি অভিযোগের ওপর মতামত, স্বাক্ষীদের জবানবন্দী ও জেরার লিখিত মূলকপিসহ তদন্ত প্রতিবেদন ১৫ কার্যদিবেসর মধ্যে মতামতসহ মহাপরিচালক বরাবর দাখিল করতে হবে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের দফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উল্লিখিত সময় পেরিয়ে গেলেও এ সংক্রান্ত কোনো তদন্ত প্রতিবেদন এখনো সেখানে পৌঁছায়নি। এ প্রসঙ্গে অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (সমন্বয়) মোহাম্মদ হাসান ইমাম বলেন, এ ধরনের কোনো তদন্ত প্রতিবেদন তার নজরে পড়েনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হৃদরোগ হাসপাতলের পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, অধিদফতরের নির্দেশনা মতো হাসপাতাল পরিচালক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কার্ডিওলজি বিভাগের প্রফেসর ডা. আবদুল কাদের আকন্দের নেতৃত্বে গঠিত এই তদন্ত কমিটিতে সদস্য ছিলেন বায়োক্যামিস্ট্রি বিভাগের প্রফেসর ডা. শাহীনা সুবহান এবং অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের প্রফেসর ডা. আবদুল খালেক বেগ। কিন্তু কমিটির সব সদস্যই তদন্ত কাজে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এমনকি কমিটির একজন সদস্য তদন্ত কাজ এড়াতে দীর্ঘ ছুটি নিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের অপর এক চিকিৎসক বলেন, অভিযুক্ত চিকিৎসকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট অত্যন্ত নেতিবাচক। এসব কারণে হাসপাতালের বেশির ভাগ চিকিৎসক কর্মকর্তা তাকে এড়িয়ে চলেন। এ ছাড়া তিনি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় হাসপাতালে তার বেশ প্রভাব রয়েছে। তাই সম্মান ও আত্মমর্যাদা রক্ষার্থেই তদন্ত কমিটির সদস্যরা তদন্ত কাজে অপরগতা প্রকাশ করেছেন।
অভিযোগসমূহ
গত ১০ অক্টোবরে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন এস এস সেলিম রেজা। অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, ৪ অক্টোবর অভিযোগকারীর ভাইজি (ভাইয়ের মেয়ে) ফেরদৌস অনন্যা শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে চিকিৎসার জন্য হৃদরোগ হাসপাতালে যান। এ সময় ডা. হুমায়ুন কবির মিন্টু তাকে হাসপাতলের ২৬৭ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে কথোপকথনের একপর্যায়ে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এ সময় অনন্যা চিৎকার দিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইলে মিন্টু দরজা বন্ধ করে দেয়। তাকে ভয়ভীতি দেখায়, এমনকি খুন করার হুমকি দেয়। পরে অনন্যা তারা বাবাকে ফোন করলে তিনি থানায় অনুরোধ করে পুলিশ ফোর্সের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করেন। এ বিষয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় ৫ অক্টোবর একটি জিডি করা হয়, যার নম্বর-৪২৯।
এর আগে ডা. মো. হুমায়ূন কবির মিন্টুর বিরুদ্ধে ঢাকা সিএমএম আদালত একটি মামলা করেন শাহীনুর ইসলাম (বেবী)। পেনাল কোডের ৩০৪ ও ৩০৪(ক) ধারায় করা ওই মামলার নম্বর সিআর মামলা নং ৬৮০/২০১৬। মামলার অভিযোগে বলা হয়, বেবী জ্বরে আক্রান্ত ছোট ভাই রিপন আলীকে নিয়ে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করান। সেখান চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন রোগীর একটি ভাল্ব নষ্ট। যার চিকিৎসার জন্য আড়াই লাখ টাকা প্রয়োজন বলেও জানান। এ অবস্থায় বেবী রোগীর কাগজপত্র নিয়ে হƒদরোগ হাসপাতালে গেলে ডা. মো. হুমায়ূন কবির মিন্টু রোগীকে ‘ভাইটাল ডায়গনস্টিকে’ নিয়ে পূণরায় পরীক্ষা করিয়ে আনতে বলেন। এরপর তিনি সাতদিনের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে আবার আসতে বলেন। নির্দিষ্ট সময়ে গেলে তিনি কিছু ওষুধ পরিবর্তন করে দুই সপ্তাহের বিশ্রাম দেন। নির্দেশনা অণুসরণ করে নির্দিষ্ট সময়ে আবার তার কাছে গেলে তিনি মামলার বাদী বেবীকে বলেন, তার ভাইকে তৎক্ষণাৎ ভাল্ব রিপলেস করতে হবে বলে জানান এবং আল-হেলাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। ডা. মিন্টু ওইদিন (২৫ এপ্রিল ২০১৬) স্বজনদের কাউকে না জানিয়ে রোগীর পিটিএমসি অপারেশন করেন। অথছ ইতোপূর্বে বিএসএমএমইউ থেকে বলা হয়েছিল, রোগীর শারীরিক অবস্থা ভালো না হওয়া পিটিএমসি করা সম্ভব নয়। ২৭ এপ্রিল সেখান থেকে রোগীকে ডিসচার্জ করা হয়। বাড়িতে নেয়ার পর শিশু রিপনের শারীরিক অবস্থার দ্রæত অবনতি ঘটতে থাকলে ডা. মিন্টুকে জানানো হয়। তিনি রোগীকে নিয়ে হƒদরোগ হাসপাতালে যেতে বলেন। ২০১৬ সালের ১ মে রোগীকে সেখানে ভর্তি করা হয়। এরপর রোগীর কিডনি, লিভারসহ অন্যান্য অঙ্গ দ্রæত বিকল হতে থাকে। এ সময় শিশু রিপনের সিবি লাইন করানো হয়। সেটি খোলার পর রোগীর প্রচÐ রক্তপাত হতে থাকে এবং সে দুর্বল হয়ে পড়ে। ওই সময় তাকে আইসিইউতে ও সিসিইউতে রাখা হয়। তার চিকিৎসায় ডা. মিন্টু উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রচুর ওষুধ ব্যবহার করেন। এরপর ২ জুলাই রোগীকে ডিসচার্জ করা হয়। তারই তত্ত¡াবধানে চিকিৎসা চলাকালীন রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম হাসপাতালে নেয়া হয়। রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে সেখানকার ডাক্তাররা বোর্ড বসিয়ে রোগীর স্বজনদের জানান, তার অপারেশন ভুল ছিল। এ পর্যায়ে তেমন কিছুই আর করার নেই। সেই দিনই রোগীর মৃত্যু ঘটে।
ভাইয়ের মৃত্যুর পর মামলার বাদী শাহীনুর ইসলাম (বেবী) ডা. মো. হুমায়ূন কবির মিন্টুর সঙ্গে দেখা করেন। তাদের না জানিয়ে পিএমটিসি অপারেশন করায় তার ভাইয়ের মৃত্যুর হয়েছে বলে তাকে দায়ী করেন। এ সময় ওই ডাক্তার এই ঘটনা অস্বীকার করেন এবং বাদীকে লাঞ্ছিত করে বের করে দেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. মো. হুমায়ূন কবির মিন্টু বলেন, এটি নিয়ে তদন্ত চলছে। তাদের সাথে কথা বলতে পারেন। তিনি বলেন, আমি নিজেই তদন্ত করতে বলেছি। তদন্ত হলে সব প্রমাণিত হবে। ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জিডিকারী এস এম সেলিম রেজা বলেন, ঘটনা সম্পূর্ণ সত্য। মেয়েটিকে যখন লাঞ্ছিত করা হয়, তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন। থানায় গিয়ে তিনি ভায়ে কাঁপছিলেন। সামগ্রিক বিষয়ে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পরিচালক তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। কিন্তু কেউই তদন্ত করতে চান না। তবে হাসপাতাল থেকে উচ্চতর তদন্তের জন্য অধিদফতরকে জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।